Friday, 31 July 2020

গোবিন্দ সিংহ

কবিতা বিভাগ 
---------------

কবি পরিচিতিঃ
গোবিন্দ সিংহ। পিতা ঈশ্বর গনেশ চন্দ্র সিংহ ও মাতা শাস্তি লতা দেবী। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদাহ গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম হয়। বাগদাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে গোবর ডাঙ্গা হিন্দু কলেজের কমার্সে স্নাতক। 
স্কুল জীবনে লেখার প্রতি আগ্রহ ছিল। স্কুল ম্যগাজিনে ছোটো ছোটো লেখার প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া হয়। 


বর্তমানে দিল্লীতে থাকে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করা হয়। সাহিত্যের চর্চা জীবনের এক অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।


---------------------------------------------------------------------

পথ ভুলেছে অনেকেই!
          
             
আমি দেখেছি নিরবে দাঁড়িয়ে,
পথ ভুলেছে অনেকেই!
সোজা আঁকা বাঁকা দুধারে বৃক্ষের ছায়া
সেই পথে আসেনি কেউ ? 
কোয়েল ঘুঘুর ডাকে গাঙ শালিখের পাখার ঝাপটে।
নিরবতার বুকচিরে এক নতুন সুরের সন্ধানে।
সেই পথে আসেনি কেউ!
পথ ভুলেছে অনেকেই!
কংক্রিটের রাস্তার দুধারে উঁচু গগনচুম্বী ইমারতে, 
লক্ষাধিক গাড়ির জ্যাম।
তবুও মানুষ ছুটে চলেছে হন্যে হয়ে
জীবন সুধরাতে হবে?
কেড়ে নিতে হবে অন্যের থেকে অন্নসংস্থান। লড়াই, মিছিল হরতাল অজুহাতের হাজার‌ও বাহানা।

ওই যে,ওরা থাকে উচুঁ তলায় ,জানে ওরা সব?
শোষনের নতুন নতুন পদ্ধতি!
কোন্ কিতাবে লিখা আছে বিশিষ্ট তার নিয়মনীতি।
কালো অক্ষর গুলো নিয়ে ছিনিমিনি খেলে
সাজিয়ে চলেছে কিছু স্বার্থান্বেষী।
নিয়ম নীতি, আইন কানুন,দাবার ছকে বেঁধে
শোষনের রাস্তা খোলা যায় কিসে।
তার নিরীক্ষণ পরীক্ষণ চলেছে অন্ধকূপে বসে।
আমি দেখেছি নিরবে দাঁড়িয়ে!
পথ ভুলেছে অনেকেই।
ক্ষেতের কৃষক ক্ষেতে করে চাষ ভরে না তাতে পেটের ভাত।
বহু যুবক ছেড়ে ঘর দ্বার দূর হয়েছে পরবাস।
তবুও কি মিটেছে আশ ?
ছোটো থেকে বড়ো সব কাজেই চলেছে ধান্ধাবাজি,
লিপ্ত রয়েছে কিছু জ্ঞানী গুণী সমাজসেবী যত পাজি।
মহিলা,বাচ্চা উৎপীড়ন,শোষন, শাসন, ধর্ষণ সব চলছে নিয়মিত!
কারা করছে সৃষ্টি ? ওই মুখোশ ধারী কিছু পরজীবী।
মন্দিরেও বাজে না ঘন্টা নিরপেক্ষ ? 
ওই যে বসে আছে পন্ডিত চোখ ছানাবড়া করে ?
কার থালাটা কত বড়ো দেখে নেয় বুভুক্ষ শৃগালের মতো।
পথ ভুলেছে অনেকেই!
মায়ের চোখের জল শুকিয়েছে..…..
ছেলে বৌয়ের সংসারের রোজ নামতা দেখে,
বৃদ্ধা বয়সে তার আশা হয়েছে ধূমিল..
ক্ষীণ চোখে অসহায়ে চেয়ে রয় সন্তানের প্রতি।
আর কোষে ভগবানে,কেন করলে প্রভু এমন দূর্গতী ?
আমি দেখেছি নিরবে দাঁড়িয়ে
পথ হারিয়েছে অনেকেই,
শুধু পুরুষ নয় !স্ত্রীও ব্যভিচারে লিপ্ত!
কেউ বলেছে পেটের দায়ে,কেউ বলেছে শৌখিনতায়।
কেউ বলেছে নতুন আইন, তুমি করলে আমিও তাই ।
কোথায় কার সমান অধিকার জানিনা নিশ্চয়,তবুও চলেছে সংসার ।

ওই দেখো না সেদিন, দুলে বাগদীর বৌ চলে গেল পরান ভট্টাচার্যের হাতটি ধরে।
নাকি মানবাধিকার ? 
সরকারি আমলা তন্ত্র থেকে নিয়ে হাট বাজারের বখাটে ছেলে গুলো পর্যন্ত,
তারা নিজেরাই উদ্ভট নিয়ম নীতি চালায়।

গুন বিশিষ্ট ভদ্রলোক আত্মসম্মান বোধে, সমাজের কুরিতীর প্রতিরোধ না করে, ঘরের কোণে বসে সম্মানের আস্বাদনের উপভোগ করে।
চাই শোষণ মুক্ত সমাজ। 
চাই পরিচ্ছন্ন পরিবেশের সমাজ। 
চাই নারী মুক্তির সচ্ছতার সমাজ । 
চাই জাতির বিচার না করে শিক্ষিত সমাজ।

-----------------------------------------------------------------


নারী মুক্তির প্রহসন
     
               
নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ...সে কি মিলনের অপেক্ষা..?
নারী মুক্তির বানী চিরন্তন শুনেছি আমি.…
এখনও ঘরের কোনে শিকলে বাঁধা রয় নারী।
মুখে করি নারী মুক্তির আহ্বান, ভিতরে বেঁধে রেখেছি বিরাট বড় পাষাণ।
মুক্তি ওরে মুক্তি কে দেবে...?
যে পুঁজেছে সেই বেঁধেছে সেই করেছে আহ্বান......
নিয়তির পরিহাস দেখ অবলা কে বেঁধে বলে আমি দীন অতি অসহায়।

শৌর্য বীর্য সাহস বাঁধিবার কেহ নাই
আপনাকে মুক্ত করো আগে,
সংস্কার সংস্কৃতির দোহাই দিয়ো না আর,
শুনেছি সে কথা বহুবার।
অনেক বছর আগে শুনেছি নারীর মুক্তি হল বুঝি এই বার.......
এখনো পদে পদে সয় তারা পুরুষের পাশবিক অত্যাচার ।
যে সমাজ যে সম্প্রদায় নারীকে করেছে হেয়
তার উত্থান আজ‌ও বাঁধিত...... 
দেখো বিশ্ব মাঝে আছে তার প্রমাণ যত।
কেবলই মুখে বলা নয়,
অন্তর থেকে কর শাপমোচন।
লাগবে ব্যথা ? লাগুক না !
বলকার মত সুনির্মল আকাশে দাও পাড়ি
নীলাম্বরী মুক্ত আকাশ ঠেকেছে দিগন্তে,
সেথায় পাবে না পাপ পূণ্যের আড়াআড়ি।
ওরে বাঁধন খুলে দে তোরা..!
বাঁধিস না রেখে আর ....
উড়ুক পাখি ডানা মেলে 
ইচ্ছে মতো নিয়ে শ্বাস।

মন আমাদের উদারতায় ভরা,বলতে চাই সকলেই এ কথা !
কিন্তু প্রথম কদম উঠানোর বেলা....!!
শক্ত করে বাঁধা ভাঙে না হৃদয়ের তালা ।
ভাবি সংস্কার যদি ভাঙে ! বির্দীন হোক অন্যের গৃহে আগে ! 
আমি রব পিছে পিছে।
সেই আগে পিছে ঘানির তলে নারী পিষেছে আজন্ম কাল। 
দাও এবার মুক্তি তারে....!!
শিক্ষা দীক্ষায় সমান যদি, তবু কেন করিস পন্যের মত ব্যবহার...?
পৌরুষত্ব বাড়ে না সেথায় বিবেক হয় নির্বিচার।
সবার আগে দেখাও তুমি নিজ শিষ্টাচার...
নারী মুক্তি তোমার হাতে হোক অগ্রসর।

কটাক্ষ !! কে করিবে কটাক্ষ ?
ছিঁড়ে ফেলো বর্ষো পুরানো জীর্ণ জড়ানো তার, হৃদয় হতে হীন ভাবনা......
মুছে ফেলো মিথ্যা কলঙ্কের কালিমা..!
সবাই আমরা এক‌ই হাতের গড়া প্রতিমা।
অহম রেখেছিলে বেঁধে দাম্ভিকের ঠাঁটে 
উড়িয়ে দাও মুক্ত আকাশে।
যে প্রেম ভাবে নারীকে করো সম্ভোগ
সেই সম্মানটুকু দিও তারে !
তবেই হতে পারে নারী মুক্তি!
তোমার অকর্মা হাতের করকমলে।


---------------------------------------------------------------------------

 যেতে নাহি চাই
 


দেব নাহি যেতে             পারিনা কহিতে
               আশায় বাঁধিয়া তারে।
অনেক গোপনে             রেখেছি যতনে
              বক্ষের কুঠি পিঞ্জরে।।

কে আছে এমন              ছাঁড়িবে ভুবন
               অপূর্ণ আশায় রেখে।
ঘুরে দ্বারে দ্বারে              খুঁজি আমি তারে
                পলক বিছায়ে আঁখে।।

দেখিয়া সুরত                 গড়িবো মুরত
                 হৃদ মাঝে দেব ঠাঁই।
বসিয়া দু'জনে                মজিব কীর্তনে
                 নিত্য সুখ যেন পাই।।

অপরূপ রূপ                    বিষ্ণুর স্বরূপ
                  দরশনে কর পূর্ণ।
ভগবতী সাথ                    করি প্রণিপাত 
                  জীবন হোউক ধন্য।।

কহিতে চাইনা                  সুখতো পাইনা
                 সৃষ্টি তোমার ভুবনে।
স্বার্থ পর হেথা                 ঘোরে যথাতথা 
                  মনের চোরা কাননে।।

মৃত্যু রূপ ধরে                   যদি কেহ মোরে
                 প্রভু, ডাকে বারে বারে।
ভীরু এই মন                    রাখে নিবেদন
                 ক্ষমা কর একবারে।।

জাগে আজ নেশা           ল   পূর্ণ করি আশা
                 ভুলিয়া এতেক দিনে।
মজে রঙ্গ রসে                 আত্মা গেছে ভেসে
                   সাধন করি কেমনে।।

বাঞ্ছিত আশায়                   রহিব ধরায়
                  তুমি গোলকের নাথ।
চরণে তোমার                    নিবেদা আমার
                 পুরে অকিঞ্চন সাধ।।


----------------------------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment