Tuesday, 28 July 2020

প্রবন্ধ : পাবজি ( PUBG) গেম ও যুবসমাজ - জয়দেব বেরা


প্রাবন্ধিক পরিচিতি:- জয়দেব বেরা একজন তরুণ কবি ও সাহিত্যিক , লেখক , শর্ট ফ্লিম অভিনেতা গল্পকার-চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক।পিতার নাম  রিন্টু বেরা ও মাতার নাম মানসী বেরা।তিনি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বৃন্দাবনপুর গ্রামে ১৯৯৭ সালে ১২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। 


তিনি ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র। তিনি সমাজতত্ত্ব চর্চার পাশাপাশি কবি ও সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত।তাঁর লেখা বই গুলো হলো- "উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের সাফল্য","উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের প্রশ্ন বিচিত্রা","সমাজতাত্ত্বিদের ইতিবৃত্ত","কোভিড-১৯ ও সমাজতত্ত্ব","শিশুদের সমাজতত্ত্ব","কবিতার ভেলা","কবিতায় মার্ক্সবাদ","বাস্তবতা","জাগরণ"প্রভৃতি।এছাড়াও তাঁর লেখা একাধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থ(ভারত ও বাংলাদেশ) রয়েছে।তাঁর পরিচালিত শর্ট ফ্লিম গুলি হলো-রক্তদান, প্রতারণা প্রভৃতি সহ ছিল আরও অন্যান্য ছবি।এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ধরনের গান, গল্প,প্রবন্ধ প্রভৃতি রচনা করেছেন।তিনি CTN টিভিতে ও বিভিন্ন সাহিত্যের সভাগৃহে   সাহিত্য ও সমাজতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।সাহিত্যের লেখালেখির জন্য তিনি বেশ কিছু লেখনী সম্মানও (দুইরত্ন সম্মান,কল্পরত্ন সম্মান, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্মান, কবিরত্ন সম্মান, মুকুর শারদীয়া সম্মান-২০১৯,মুকুর লেখনী সম্মান-২০২০, মুকুর সাহিত্য সংকল্প  সম্মান প্রভৃতি) অর্জন করেন।_____________________________________________ 


 ꧁পাবজি ( PUBG) গেম ও যুবসমাজ꧂        


   বর্তমান সময়ে যে গেমটির নামের সঙ্গে আমরা কমবেশি পরিচিত হয়ে আছি সেটি হল পাবজি (PUBG) গেম। এই গেমের সম্পূর্ণ নাম হল প্লেয়ার আননোনস ব‍্যাটল গ্রাউন্ড (Player Unknowns Battleground)। এই গেমটি আজ বিশ্বের অধিকাংশ যুবসমাজের কাছে অতিপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় সমস্ত যুবসমাজই আজ এই নেশাগ্রস্ত গেমের প্রতি আসক্তি হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ এই পাবজি নামক গেমটি সমস্ত যুবসমাজকে দিনে দিনে গ্রাস করে ফেলছে। এই পাবজি নামক গেমটির প্রতি এতটাই যুবসমাজের ঝোঁক যে তারা ঠিকমতো করে পড়াশোনা, খাওয়া, ঘুমানো, পরিবারের কাজকর্ম করা প্রভৃতি কিছুতেই সময় দিতে পারছেনা। এই গেমটি যেন যুবসমাজকে 'আফিমের' মতো গ্রাস করে রেখেছে। অর্থাৎ এটি হল একটি অত্যন্ত নেশাগ্রস্ত গেম। যার আসক্ত থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন ব্যাপার।                   বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতবর্ষের প্রায় সংখ্যক তরুণরাই আজ এই গেমের আসক্তির শিকার। যদিও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও এই গেমের প্রতি যুবসমাজের ঝোঁক দিনে দিনে হু হু করে বেড়েই চলেছে। এই গেম খেলার ফলে আজকের প্রজন্মের যুবসমাজ প্রায় ধ্বংসের পথে। গবেষণায় জানা যায়, এই গেমের প্রতি সবথেকে বেশি আসক্ত হল যুবসমাজ। বিশেষ করে ১৮ থেকে শুরু করে ২৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা এই গেমের নেশায় মত্ত হয়ে আছে।  
         
    এই নেশাগ্রস্ত ভিডিও গেমটি খেলার ফলে যুবসমাজের ভবিষ্যৎ দিন দিন অন্ধকারের দিকে অগ্রগামী হচ্ছে। যুবসমাজ এই গেমের দরুন শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই আসক্তিযুক্ত খেলাটির ফলে যুবসমাজের পড়াশোনার ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এবং মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এই খেলার ফলে যুবসমাজ এতটাই মোবাইলের প্রতি মগ্ন থাকে যে, যার ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়ে থাকে। এই খেলার ফলে যুবসমাজের ঠিক মতো করে ঘুম হয়না, সারাদিন এই ভিডিও গেমের প্রতি সময় দিয়ে থাকে যার ফলে তাদের ব্রেনেও চাপ পড়ে। ফলে মানসিক দিক থেকে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়াও সারা দিন-রাত এই গেম খেলার দরুন ফোন ব্যবহারের ফলে চোখের ক্ষতির পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। যেমন- মাথা ব্যাথা, হাতে-পায়ে ব্যাথা, মানসিক চিন্তা প্রভৃতি। জানা যায়, এই খেলার নিয়ম নাকি খেলার মধ্যে অন্য খেলোয়াড়কে হত্যা করা। যার ফলস্বরূপ যুবসমাজদের মধ্যে ক্রমে ক্রমে হিংসার মনোভাবও জন্মায়। তার ফলে যুবসমাজ নানান অপরাধমূলক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে।               

   এই খেলাটি এতটাই নৃশংসজনক যে যুবসমাজের প্রাণও নিয়ে নেয়। এই খেলার ফলে মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনি একটি ঘটনা ঘটতে দেখা যায় মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলিতে। জানা যায় ট্রেন লাইনে বসে পাবজি খেলতে খেলতে দুই যুবক এতটাই জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে যে ট্রেন আসার শব্দ তারা শুনতে পায়নি। যার ফলে ওই দুজনের ঘাড়ের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যায়। যার ফলে তাদের মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু ঘটে। এইভাবে প্রতিদিন যুবসমাজের প্রাণ বিসর্জন হচ্ছে এই খেলার দরুন।              
      এছাড়াও যুবসমাজ এতটাই এই খেলার প্রতি নেশাগ্রস্ত যে, তাদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে স্কুল ছুটির সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ এই খেলার ফলে যুবসমাজের পড়াশোনার মারাত্মক ভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এমনি একটি ঘটনা ঘটে কর্ণাটকে। দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্র -- পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না আসায় রাগান্বিত হয়ে পরীক্ষার খাতায় পাবজি খেলার পদ্ধতি লিখে দিয়ে এসেছে। সত্যি এই ঘটনাগুলি খুবই অকল্পনীয়। অর্থাৎ সর্বোপরি আমরা বলতে পারি এই খেলার ফলে যুবসমাজের সামাজিক বিকাশ ব্যহত হচ্ছে। এবং এই খেলার প্রতি যুবসমাজ এতটাই নেশাগ্রস্ত যে পরিবারের মধ্যে, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও ঠিক মতো সম্পর্ক রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার ফলশ্রুতি হিসেবে যুবসমাজের সামাজিকীকরণের উপর দিন দিন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।                     সর্বশেষে উপরিউক্ত বিষয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই বলব যে, পাবজি খেলার ফলে সমগ্র যুবসমাজ আজ ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যুবসমাজের ভবিষ্যৎ দিন দিন অন্ধকারে আবৃত হচ্ছে। তাই সমস্ত অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ ছেলেমেয়েদের মোবাইল থেকে বিরত রাখুন। যদিও'বা মোবাইল দেন তাহলে সর্বদা নজর রাখুন ছেলে-মেয়ে কি করছে, কতটা মোবাইলের প্রতি সময় দিচ্ছে, ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা প্রভৃতি।                   

                 ⫷⫸

No comments:

Post a Comment