Sunday, 23 January 2022

অনাদৃত বীর- গাথা -- আশুতোষ শী


হে বীর বঙ্গসন্তান !
হে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র—
যেন পরাধীন ভারত গগন ললাটে 
ভাস্বর অগ্নিটিকা সম
উদিত পাবন-চন্দ্র ।
স্বাধীনতাকামী ভারত যবে
নায়ক হীন ,আশাভগ্ন ,
উতরোল ভারতবাসী যবে ঘোর সংগ্রামে মগ্ন,
তুমি আবির্ভূত কটকনগরে- স্বনামধন্য পিতা জানকী নাথের ঘরে ।
আপামর ভারতবাসীরে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির মানসে
আপনার সুখের জীবন করিয়া উৎসর্গ ,যাত্রা করিলে এক মহৎ উদ্দেশে
সে কোন্ নিরুদ্দেশে।
অতঃপর মনিপুর কোহিমায় উড্ডীন হলো
স্বাধীন ভারতের ত্রিরঞ্জিত পতাকা,
স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় সূচনার
সর্বপ্রথম চিহ্ন রহিল আঁকা ।
১৯৪৫সাল , ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কাল, 
১৮ই আগষ্ট, তাইহোকু বিমানক্ষেত্র,
কোন এক অজ্ঞাত কারণে
বিমান ধ্বংসের অছিলায় গেলে তুমি অন্তর্ধানে,
স্বার্থান্বেষীজন সদর্পে ঘোষে তবে মরণ সন্দেশ ।
কিন্তু,আজও হলোনা রহস্য উদ্ঘাটিত-
সেটা কি মৃত্যু ? না নিরুদ্দেশ !
যারা দায়িত্ব মুক্ত হতে চায় সানন্দ ঘোষনায়
তব সন্দিগ্ধ মৃত্যুকাহিনী,
তারা কি ভুলেছে তব নিস্বার্থ অবদান ,I.N.A বাহিনী ?
স্বাধীনতার সুমিষ্ট ফল যারা ভক্ষে আজি সুখে,
তারা কি পারেনা অনুসন্ধিৎসু-চোখে তাকাতে সম্মুখে ?
তোমার সেই ঐতিহাসিক আহ্বান—
'তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব'—
আজকের এই বিষাক্ত পরিবেশে
অমূল্য সে বারতা প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে 
ভারতের আকাশে-বাতাসে,
নিঃশ্বাসে- প্রশ্বাসে ।
তোমার আত্মত্যাগের বাণী ,
যশোলিপ্সা বিহীন অনাদৃত জীবন কাহিনী ,
বর্তমান ভারতীয় মোরা কৃতঘ্ন, অর্বাচীন,স্বার্থপর,তমশামগ্ন,
তবু স্মরি মোরা প্রতিক্ষণে
তোমার শুভ জন্মদিনে-
তোমারে ভুলিনাই, 
ভুলিবোনা কভু ,জীবনে মরনে ।

উপেক্ষিত বিপ্লবী -- পরেশ চন্দ্র দাস


বাংলামায়ের দামাল ছেলেদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যিনি ক্রীতদাসের আব্রু ভূষিত ,কলঙ্কিত অধ্যায়ের মহানায়ক ।
বাঙালীকে ভয় করেনা এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসের মোড়কে স্বর্ণাক্ষরের ছড়াছড়ি ।
ভারতের ইতিবৃত্তে বাংলার বিপ্লবী অধ্যায় ,বিষ বাঁও জলে ।
ভাষার ষড়যন্ত্রের নাটকের জালে উপেক্ষিত রয়েলবেঙ্গলটাইগার ।
স্বার্থান্বেষী চক্রধারীর গোলক ধাঁধায় ধর্ষিত, শৃঙ্খলে আবদ্ধ মায়াকান্নার বিপ্লব ফাঁসির মঞ্চে ঠেলে দিয়ে , গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে সেকুলার ব্রাণ্ডের আতর ছড়ায় ।
বুদ্ধিমত্তা শোষে হাফ সেঞ্চুরির নেফো, বোকা সেজে টুপি বিক্রির ভয়ে আবোল তাবোল পড়ে ।
আর স্বাধীনতা সংগ্রামের পা চেটে সময়ের অপেক্ষা করে বাক্যবাগীশ ।তারাই বিভূতি গায়ে মেখে মেড ইন জাপানের
তুলোধোনাতে পঞ্চমুখ ।
..........................................
   

মাপ কাঠি -- জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায়



প্রভাতদার সঙ্গে সুদিনের আলাপ, লণ্ডনের ভারতীয় ছাত্রাবাসে। সুদিন ইম্পিরিয়াল কলেজ অফ সায়েন্স অ্যাণ্ড টেকনলজিতে এম ফিল করছে। তখনকার দিনে গুগলস ছিল না, কিন্তু সবজান্তা প্রভাতদা ছিলেন। রোববারের প্রাতঃরাশের টেবিলে সুদিন হয়তো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, আচ্ছা প্রভাতদা, গামছা ভাল? না তোয়ালে ভালো? প্রভাতদা বেশ একটা বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব নিয়ে, আলোচনা শুরু করলেন। সকলে তখন সেই আলোচনায় যোগ দিলেন। জায়গা বিশেষে অনেকে মন্তব্য ছুঁড়ে দিলে আসর আরও বেশ জমে উঠত।
প্রভাতদাকে শুধু উস্কে দেওয়ার অপেক্ষা। এবিষয়ে লোকের অভাব হত না। অনেকদিন এমনও হয়েছে যে, আলোচনাটির অবতারণা যিনি করেছিলেন, তিনি আগেই আসর ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু আলোচনা চলতেই থাকত।
-আচ্ছা, প্রভাতদা, আপনি কি বিশ্বাস করেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এখনও জীবিত আছেন?
-দেখুন, ওনার জন্ম তারিখ অনুযায়ী, ওনার বয়স আজ প্রায় ৭২, তাহলে ধরে নেওয়াই যায়, উনি বেঁচে আছেন। তবে এখন ঠিক কোথায় আছেন বা থাকতে পারেন তা কিন্তু জানি না।
আর একদিন একজন জানতে চাইলেন, আচ্ছা প্রভাতদা, দেশপ্রেম কী? 
-এতো সকলেই জানে, মাতৃভূমির প্রতি এক ধরনের আবেগপূর্ণ অনুরাগ বা ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। সেটা দেশের প্রতি একজন ব্যক্তির বা কোনো এক জনগোষ্ঠীরও অনুভূতি হতে পারে। আবার এভাবেও বলা যেতে পারে দেশপ্রেম হচ্ছে একজনের দৃঢ় প্রত্যয় যে আমার দেশটা অন্যান্য দেশের চেয়ে উৎকৃষ্টতর। এবং আমি এখানেই জন্মগ্রহণ করেছি। 
ফোঁড়ন কাটার লোকের অভাব হয় না, একজন প্রশ্ন রাখলেন, আচ্ছা, প্রভাতদা, আপনার কি দেশপ্রেম আছে?
-কেন থাকবে না? আপনাদের কি সন্দেহ আছে?
-না, মানে, এতদিন আপনি দেশ ছেড়ে, বৌদিকে ছেড়ে লণ্ডনে রয়ে গেছেন, লোকের মনে তো প্রশ্ন উঠতেই পারে।
এই প্রথম প্রভাতদা একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন। পরিবেশটা অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে দেখে সুদিন বলল, না, না, ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্ন এখানে চলবে না। 
উপরোক্ত বক্তব্যটি সভার মাঝে রাখলেও সুদিনের নিজের মনেও কিন্তু অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হতে শুরু করে।সুদিন নিজেই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়াতে, প্রভাতদার কোনো কথা ওর কানে যেন আর পৌঁছয় না। সেই নিষ্পাপ বালিকাটির মুখটা ভেসে ওঠে মনে, ওর না বলা প্রশ্নগুলোও যেন সুদিনের কানে সশব্দে উচ্চারিত হতে থাকে, সুদিনদা, তোমার স্কলারশিপ কবে শেষ হবে? দু বছর তো অনেকদিন শেষ হয়ে গেছে! তোমার তাহলে চলছে কীভাবে? সুদিনের দিকে আঙুল উঁচিয়ে আজ শত শত লোক যেন প্রশ্ন করছে, এক বছরের স্কলারশিপের নাম করে, তুমি কেন লণ্ডনে গিয়ে বসে আছ? এই কি তোমার দেশপ্রেমের নমুনা? 
সুদিনের কিছু আর তখন ভাল লাগে না। চেয়ার ছেড়ে সুদিনকে উঠতে দেখে, অনেকেই প্রশ্ন করল, উঠছেন? 
-যাই, কাজ আছে।
ঘরে এসে, শুয়ে পড়ল সুদিন। নানা চিন্তা ওর মাথায়। অনেকেই ওকে বুঝিয়েছে, আরে ভুলে যান দেশপ্রেম, বিদেশে আসার সুযোগ যখন পেয়েছেন, সুযোগের সৎ ব্যবহার করুন। দেশে না ফিরে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় চলে যান, ওখানে অনেক টাকা। কী আছে, স্কলারশিপের টাকা প্রয়োজন হলে সরকারকে ফিরিয়ে দেবেন। 
কথাগুলোর মধ্যে যুক্তি আছে, কিন্তু মা-বাবার মুখ দু'টো যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ঐ নিষ্পাপ চোখ দুটোর ভাষা যখন শব্দায়িত হয়ে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, তখন সুদিনের সব কিছু ওলোট-পালোট হয়ে যায়। 
না, টাকাটা সব কিছুর মাপ কাঠি হতে পারে না। দেশ ওকে চাইছে। দেশের সেবা, মা-বাবার সেবা তো করতেই হবে। এটা কর্তব্য। সুদিন দেশে ফিরবেই।
সুদিন চিঠি লিখতে বসে গেল।  
-o-

চির ভাস্বর নেতাজী -- দিলীপ কংসবণিক



পিতা জানকী নাথ বসু, রত্নাগর্ভা মাতা প্রভাবতী 
তাঁদের পুত্র রূপে এসছিলে তুমি চির ভাস্বর বঙ্গদ্যূতি।
হে ভারত মাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান তোমায় প্রণমী,
জনমিয়া দেখিয়াছিলে ক্ষুব্ধ স্বদেশ ভূমি।
দেশমাতৃকা শৃঙ্খলাবদ্ধ, শ্বাসনালি তার অবরুদ্ধ বিদেশিদের অত্যাচারে,
মাতৃভূমি র জন্য কাঁদিলো তব প্রাণ বাল্য বয়সে ই করিলে পণ' মায়ের শৃঙ্খল মুক্ত করিবারে।
ভারত মায়ের শান্ত সুবোধ সন্তানেরা মরছে অনাহারে বিদেশিদের তৈরি দুর্ভিক্ষে--
ধানের পরিবর্তে করিয়েছে তারা নীল চাষ, কৃষক পরিবার থাকে অনাহারে তাকিয়ে অন্তরীক্ষে।
বিদেশিদের অপশাসন, দেশি বণিক রা ও করে স্বার্থ অন্বেষণ, করে বিদেশিদের তাঁবেদারী,
দেখে দেশের এই গতি, ভাঙ্গিতে বিদেশি রীতি, বিবেকানন্দ র বাণী স্মরণ করি।
করিলে উদাত্ত আহ্বান, ওঠো জাগো হে ভারতবাসী,
তোমাদের এই অবচেতনে লুটতরাজ করেছে বিদেশি।
বিদেশি উৎখাতে করেছ সশস্ত্র বিপ্লব, আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে করিলে বিদেশিদের আক্রমণ,
ভারতের কিছু ঘাতকের জন্য তোমার অন্তর্ধান, করিতে পারিলেনা বিদেশিদের নিষ্ক্রমণ।
তাদের বংশধরেরা এখনও দাপিয়ে বেড়ায় ভারতে,
ভারত মাতা কে করছে কলুষিত সত্য ঢাকে অসতে।

অনেক ই বলি নেতাজী তুমি ফিরে এসো তোমাকে বড়ো দরকার,
এ যে অসম্ভব! অলীক কল্পনা র কথা ই বলি বারবার।
তোমাকেই চাই' তোমার আদর্শ কে নয়?
গ্রহিলে তোমার আদর্শ মিলিতো স্রষ্টা র বরাভয়।
লিপিবদ্ধ রয়েছে তোমার বাণী, সম্মুখে তব দেখানো পথ,
তোমারি আদর্শে গড়ি না নিজেকে চালাই না সে পথে নিজ মনোরথ।
মোরে ক্ষমা করো হে নেতাজী ক্ষমা করো এই অধমেরে,
জনমিয়া তোমার দেশে গ্রহিতে পারিনি আজ ও তোমারে।

**************************