Friday, 31 July 2020

গোবিন্দ সিংহ

কবিতা বিভাগ 
---------------

কবি পরিচিতিঃ
গোবিন্দ সিংহ। পিতা ঈশ্বর গনেশ চন্দ্র সিংহ ও মাতা শাস্তি লতা দেবী। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদাহ গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম হয়। বাগদাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে গোবর ডাঙ্গা হিন্দু কলেজের কমার্সে স্নাতক। 
স্কুল জীবনে লেখার প্রতি আগ্রহ ছিল। স্কুল ম্যগাজিনে ছোটো ছোটো লেখার প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া হয়। 


বর্তমানে দিল্লীতে থাকে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করা হয়। সাহিত্যের চর্চা জীবনের এক অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।


---------------------------------------------------------------------

পথ ভুলেছে অনেকেই!
          
             
আমি দেখেছি নিরবে দাঁড়িয়ে,
পথ ভুলেছে অনেকেই!
সোজা আঁকা বাঁকা দুধারে বৃক্ষের ছায়া
সেই পথে আসেনি কেউ ? 
কোয়েল ঘুঘুর ডাকে গাঙ শালিখের পাখার ঝাপটে।
নিরবতার বুকচিরে এক নতুন সুরের সন্ধানে।
সেই পথে আসেনি কেউ!
পথ ভুলেছে অনেকেই!
কংক্রিটের রাস্তার দুধারে উঁচু গগনচুম্বী ইমারতে, 
লক্ষাধিক গাড়ির জ্যাম।
তবুও মানুষ ছুটে চলেছে হন্যে হয়ে
জীবন সুধরাতে হবে?
কেড়ে নিতে হবে অন্যের থেকে অন্নসংস্থান। লড়াই, মিছিল হরতাল অজুহাতের হাজার‌ও বাহানা।

ওই যে,ওরা থাকে উচুঁ তলায় ,জানে ওরা সব?
শোষনের নতুন নতুন পদ্ধতি!
কোন্ কিতাবে লিখা আছে বিশিষ্ট তার নিয়মনীতি।
কালো অক্ষর গুলো নিয়ে ছিনিমিনি খেলে
সাজিয়ে চলেছে কিছু স্বার্থান্বেষী।
নিয়ম নীতি, আইন কানুন,দাবার ছকে বেঁধে
শোষনের রাস্তা খোলা যায় কিসে।
তার নিরীক্ষণ পরীক্ষণ চলেছে অন্ধকূপে বসে।
আমি দেখেছি নিরবে দাঁড়িয়ে!
পথ ভুলেছে অনেকেই।
ক্ষেতের কৃষক ক্ষেতে করে চাষ ভরে না তাতে পেটের ভাত।
বহু যুবক ছেড়ে ঘর দ্বার দূর হয়েছে পরবাস।
তবুও কি মিটেছে আশ ?
ছোটো থেকে বড়ো সব কাজেই চলেছে ধান্ধাবাজি,
লিপ্ত রয়েছে কিছু জ্ঞানী গুণী সমাজসেবী যত পাজি।
মহিলা,বাচ্চা উৎপীড়ন,শোষন, শাসন, ধর্ষণ সব চলছে নিয়মিত!
কারা করছে সৃষ্টি ? ওই মুখোশ ধারী কিছু পরজীবী।
মন্দিরেও বাজে না ঘন্টা নিরপেক্ষ ? 
ওই যে বসে আছে পন্ডিত চোখ ছানাবড়া করে ?
কার থালাটা কত বড়ো দেখে নেয় বুভুক্ষ শৃগালের মতো।
পথ ভুলেছে অনেকেই!
মায়ের চোখের জল শুকিয়েছে..…..
ছেলে বৌয়ের সংসারের রোজ নামতা দেখে,
বৃদ্ধা বয়সে তার আশা হয়েছে ধূমিল..
ক্ষীণ চোখে অসহায়ে চেয়ে রয় সন্তানের প্রতি।
আর কোষে ভগবানে,কেন করলে প্রভু এমন দূর্গতী ?
আমি দেখেছি নিরবে দাঁড়িয়ে
পথ হারিয়েছে অনেকেই,
শুধু পুরুষ নয় !স্ত্রীও ব্যভিচারে লিপ্ত!
কেউ বলেছে পেটের দায়ে,কেউ বলেছে শৌখিনতায়।
কেউ বলেছে নতুন আইন, তুমি করলে আমিও তাই ।
কোথায় কার সমান অধিকার জানিনা নিশ্চয়,তবুও চলেছে সংসার ।

ওই দেখো না সেদিন, দুলে বাগদীর বৌ চলে গেল পরান ভট্টাচার্যের হাতটি ধরে।
নাকি মানবাধিকার ? 
সরকারি আমলা তন্ত্র থেকে নিয়ে হাট বাজারের বখাটে ছেলে গুলো পর্যন্ত,
তারা নিজেরাই উদ্ভট নিয়ম নীতি চালায়।

গুন বিশিষ্ট ভদ্রলোক আত্মসম্মান বোধে, সমাজের কুরিতীর প্রতিরোধ না করে, ঘরের কোণে বসে সম্মানের আস্বাদনের উপভোগ করে।
চাই শোষণ মুক্ত সমাজ। 
চাই পরিচ্ছন্ন পরিবেশের সমাজ। 
চাই নারী মুক্তির সচ্ছতার সমাজ । 
চাই জাতির বিচার না করে শিক্ষিত সমাজ।

-----------------------------------------------------------------


নারী মুক্তির প্রহসন
     
               
নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ...সে কি মিলনের অপেক্ষা..?
নারী মুক্তির বানী চিরন্তন শুনেছি আমি.…
এখনও ঘরের কোনে শিকলে বাঁধা রয় নারী।
মুখে করি নারী মুক্তির আহ্বান, ভিতরে বেঁধে রেখেছি বিরাট বড় পাষাণ।
মুক্তি ওরে মুক্তি কে দেবে...?
যে পুঁজেছে সেই বেঁধেছে সেই করেছে আহ্বান......
নিয়তির পরিহাস দেখ অবলা কে বেঁধে বলে আমি দীন অতি অসহায়।

শৌর্য বীর্য সাহস বাঁধিবার কেহ নাই
আপনাকে মুক্ত করো আগে,
সংস্কার সংস্কৃতির দোহাই দিয়ো না আর,
শুনেছি সে কথা বহুবার।
অনেক বছর আগে শুনেছি নারীর মুক্তি হল বুঝি এই বার.......
এখনো পদে পদে সয় তারা পুরুষের পাশবিক অত্যাচার ।
যে সমাজ যে সম্প্রদায় নারীকে করেছে হেয়
তার উত্থান আজ‌ও বাঁধিত...... 
দেখো বিশ্ব মাঝে আছে তার প্রমাণ যত।
কেবলই মুখে বলা নয়,
অন্তর থেকে কর শাপমোচন।
লাগবে ব্যথা ? লাগুক না !
বলকার মত সুনির্মল আকাশে দাও পাড়ি
নীলাম্বরী মুক্ত আকাশ ঠেকেছে দিগন্তে,
সেথায় পাবে না পাপ পূণ্যের আড়াআড়ি।
ওরে বাঁধন খুলে দে তোরা..!
বাঁধিস না রেখে আর ....
উড়ুক পাখি ডানা মেলে 
ইচ্ছে মতো নিয়ে শ্বাস।

মন আমাদের উদারতায় ভরা,বলতে চাই সকলেই এ কথা !
কিন্তু প্রথম কদম উঠানোর বেলা....!!
শক্ত করে বাঁধা ভাঙে না হৃদয়ের তালা ।
ভাবি সংস্কার যদি ভাঙে ! বির্দীন হোক অন্যের গৃহে আগে ! 
আমি রব পিছে পিছে।
সেই আগে পিছে ঘানির তলে নারী পিষেছে আজন্ম কাল। 
দাও এবার মুক্তি তারে....!!
শিক্ষা দীক্ষায় সমান যদি, তবু কেন করিস পন্যের মত ব্যবহার...?
পৌরুষত্ব বাড়ে না সেথায় বিবেক হয় নির্বিচার।
সবার আগে দেখাও তুমি নিজ শিষ্টাচার...
নারী মুক্তি তোমার হাতে হোক অগ্রসর।

কটাক্ষ !! কে করিবে কটাক্ষ ?
ছিঁড়ে ফেলো বর্ষো পুরানো জীর্ণ জড়ানো তার, হৃদয় হতে হীন ভাবনা......
মুছে ফেলো মিথ্যা কলঙ্কের কালিমা..!
সবাই আমরা এক‌ই হাতের গড়া প্রতিমা।
অহম রেখেছিলে বেঁধে দাম্ভিকের ঠাঁটে 
উড়িয়ে দাও মুক্ত আকাশে।
যে প্রেম ভাবে নারীকে করো সম্ভোগ
সেই সম্মানটুকু দিও তারে !
তবেই হতে পারে নারী মুক্তি!
তোমার অকর্মা হাতের করকমলে।


---------------------------------------------------------------------------

 যেতে নাহি চাই
 


দেব নাহি যেতে             পারিনা কহিতে
               আশায় বাঁধিয়া তারে।
অনেক গোপনে             রেখেছি যতনে
              বক্ষের কুঠি পিঞ্জরে।।

কে আছে এমন              ছাঁড়িবে ভুবন
               অপূর্ণ আশায় রেখে।
ঘুরে দ্বারে দ্বারে              খুঁজি আমি তারে
                পলক বিছায়ে আঁখে।।

দেখিয়া সুরত                 গড়িবো মুরত
                 হৃদ মাঝে দেব ঠাঁই।
বসিয়া দু'জনে                মজিব কীর্তনে
                 নিত্য সুখ যেন পাই।।

অপরূপ রূপ                    বিষ্ণুর স্বরূপ
                  দরশনে কর পূর্ণ।
ভগবতী সাথ                    করি প্রণিপাত 
                  জীবন হোউক ধন্য।।

কহিতে চাইনা                  সুখতো পাইনা
                 সৃষ্টি তোমার ভুবনে।
স্বার্থ পর হেথা                 ঘোরে যথাতথা 
                  মনের চোরা কাননে।।

মৃত্যু রূপ ধরে                   যদি কেহ মোরে
                 প্রভু, ডাকে বারে বারে।
ভীরু এই মন                    রাখে নিবেদন
                 ক্ষমা কর একবারে।।

জাগে আজ নেশা           ল   পূর্ণ করি আশা
                 ভুলিয়া এতেক দিনে।
মজে রঙ্গ রসে                 আত্মা গেছে ভেসে
                   সাধন করি কেমনে।।

বাঞ্ছিত আশায়                   রহিব ধরায়
                  তুমি গোলকের নাথ।
চরণে তোমার                    নিবেদা আমার
                 পুরে অকিঞ্চন সাধ।।


----------------------------------------------------------------------

দীপ্তাংশ রায় মুখার্জী

কবিতা 
--------

কবি পরিচিতিঃ দীপ্তাংশ রায় মুখার্জী''র জন্ম ২৪শে জুলাই ২০০৩ সালে  কলকাতায়। বাবা দেবব্রত আর মা অনিতার উৎসাহে কবিতা লেখায় হাতেখড়ি। স্কুলের দেওয়াল পত্রিকার জন্য কবিতা লেখা শুরু মাত্র ১৩ বছর বয়সে। আস্তে আস্তে কবিতা ও পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। বর্তমানে বয়স ১৬ বছর এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত।

 "বৃষ্টি আসুক অন্য দিন " বলে একটি কাব্যগ্রন্থ সপ্তর্ষি প্রকাশনী থেকে ২০২০ বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাঙ্গণ সাহিত্য পত্রিকা, অনির্বাণ, ছায়ামান, নবসাহিত্য কমল, স্বপ্নের কনভয় , সোনারতরী , বঙ্গীয় সাহিত্য দর্পণ প্রমুখ পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা ছাড়া সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগ। প্রিয় উপহার বই ও কলম।

----------------------------------------------------------------

ক্যালেন্ডার


সকালে উঠে গেলাম দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারের কাছে ;
কান পাতলাম এপ্রিলের তারিখগুলোর দিকে। 

কানে কাদের যেন কান্না ছুটে আসে ;
কানে ছিটকে ছিটকে আসছে কাদের যেন রক্ত। 

ওপরে বড়ো হাতে লেখা ২০২০ চেঁচিয়ে শুধু বলে --- 
" এপ্রিল এখনো নৃশংস। এপ্রিল এখনো মানুষ মারতে ভোলেনি... "

তোমারা তাই ক্যালেন্ডারের গা'য়ে কেউ কান পেতোনা। 
প্রতিটা মৃত্যু রয়েছে তার গ্রথিত। প্রতিটা মৃত্যু তার তারিখ দিয়ে বোনা....


----------------------------------------------------------------------

চিরসখা হে !!! 


মাগো! তোমার কঙ্কালমাখা গা'য় ;
রেললাইন দিয়ে শ্রমিকেরা হেঁটে যায়। 

তাদের; পায়ের নীচে আগুন জ্বলে, পায়ের নীচে রুটি, 
ভিক্ষার হাতে রক্ত, তবু আলগা হচ্ছে মুঠি 
পায়ের নীচে আগুন জ্বলে, পায়ের নীচে রুটি। 
হাজার মাইল হেঁটে আজও রেললাইনের ধারে 
ভারতবর্ষ!! ভারতবর্ষ!! মানুষ মারতে পারে। 
অশোক চাকা, ফাঁকা পেটের নীলচে রক্ত খায় ---

রাস্তায় যতো মৃত্যুর ব্যারিকেড ; 
আর রেললাইন দিয়ে শ্রমিকেরা হেঁটে যায়। 

এখন আসে দূরের চিঠি। এখন বাড়ি ফেরা 
তাদের দেহ মায়ের আঁচল ঘেরা 
তাদের রক্ত সিমেন্ট বানায়, তাদের রক্ত বাড়ি, 
তাদের চাপা দিয়েছে আজ তাদেরই রেলগাড়ি 
তাদের রক্ত আমায় বানায়, বানায় আমার বাড়ি। 

মহামারী বা অনাহার সবই মরে ;
মৃত্যুর পর ওরা তবু কাজ করে, তোমার-আমার ঘরে। 

মাগো! ওরা দিনের শেষে খাবার খেতে চায়... 

আমার বুকের রেললাইনে শ্রমিকেরা হেঁটে যায়। --- 

--------------------------------------------------------------------

পোড়া পাউরুটি


এতদিন পর পেয়েছো একটা পাউরুটি, 
তাও আবার পোড়া। 
কপালে হাত দিয়ে দেখলে বোঝা যায় অনেকটা তার মতো, 
কিংবা যেমন তোমাদের ডোমঘর। 

তবে শুধু পাঁউরুটিটা পোড়া ছিল না, 
তার থেকে দু'পা এগোলেই গড়ে উঠেছিল 
যে পাঁচ তারার নীল রক্তের কোলাহলে ভরা কাঁচের রেস্তোরাঁ 
সেখানেও পোড়ানো হচ্ছিল বাদশাহী চিকেন তন্দুর। 

একটা লোহার রডে লেগে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী মাংস ;
যা কয়েকদিন আগে মালিকের পারদর্শীতায় 
রক্তরঞ্জিত হয়েছিল তার পিঠে, 
আজ সেই লোহার নীচেই তপ্ত আগুন। তুমি দেখতে পাওনা?? 
পাওনা শুনতে হাতুড়ির চিৎকার?? 

এভাবেই চলে যায় দিন, বসন্ত চলে যায় ক্ষতচিহ্নের উপর দিয়ে, 
ধীরে ধীরে জমাট বাঁধে রক্ত। 
এখন তাই দিন বদলেছে। সময়ের কপালে লাল স্বপ্নের টিপ। 
এখন তাই চল্লিসটা ফুটপাথ বদল হওয়ার পর 
একশোচল্লিসটা রেস্তোরাঁয় ঘাম ঝরানোর পর 
হাজার চল্লিসটা লোহার রডে কাটা মাংস ঝোলানোর পর 
চল্লিস লক্ষ ব্যারেল রক্ত ঝরিয়ে ---

একটা পোড়া পাঁউরুটি হয়ে যায় ঘিঞ্জি বস্তির আধ-খাওয়া মানচিত্র। 
পাউরুটিতে জন্ম নেয় চল্লিস কোটি বিপ্লব... 

[শ্রেণিহীন সমাজের চিরবাসনায় ]


--------------------------------------------------------------------

কবিতা : আভা সরকার মন্ডল

কবি পরিচিতিঃ আভা সরকার মন্ডল।
 পিতাঃ নীলকমল সরকার
মাতাঃ অঞ্জলী বালা সরকার
জন্মঃ ৪ ঠা জুলাই।
বিজ্ঞানের ছাত্রী। 
ছোটোবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি আকর্ষণ। 
ধীরে ধীরে কবিতার সাথে একাত্মতা। 
আশির দশকের শেষে লেখালেখির সূচনা ।  
বিরতির পর দ্বিতীয় পর্বে প্রত্যাবর্তন।

  
দেশ বিদেশের অজস্র নামি দামি পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি। প্রচুর সংকলনেও লিখেছেন।
লিখে চলেছেন ছোটদের জন্যও। মূলতঃ
কবিতা,  ছড়া এবং ছোটগল্প  লেখিকা।
সহ সম্পাদক.. উষার আলো পত্রিকা। 
সহ সম্পাদক.. রায়গঞ্জ বই মেলা  কমিটি (সাহিত্য বিভাগ)
বর্তমান নিবাস-- রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর।

*****************************************

জীবন নদীর মত
 

রং ছড়িয়ে সূর্য যখন অগ্নি কোণে ঢলে
আকাশ বাতাস কানে কানে মনের কথা বলে
নদী অভিমানে---
মুখ ফুলিয়ে ছুটে চলে দূর সাগরের পানে।।

চলতে চলতে দু'ধারে সে দ্যাখে ভাঙা-গড়া
ছুটতে  থাকা মানুষজনের নিত্য ওঠাপড়া,
মন হারায় তার শোকে---
দু'দিনের এই জীবনটাকে তবু বাঁধে চোখে।।

বয়ে চলাই ধর্ম যে তার গোটা জীবন ধরে
থেমে যাওয়া চলবে না ঝড়, যতই আসুক জোরে
জীবন নদীর মত---
বাঁচতে হবে দূরে রেখে দুঃখ ব্যথা যত।।

********************************************

উৎসর্গ

তোমার প্রয়োজন অগ্রাধিকার পেয়েছে
তোমার খুশির ঝুলিতে বিলি হয়েছে 
আমার সমস্ত সুখ।
আকাঙ্ক্ষার উচ্চাসন পাহারায় বিকিয়েছে
 নিজের সত্তা।
কষ্টের প্রতিটি বাঁকে
আগ বাড়িয়ে,আগেই আক্রান্ত হয়েছি আমি।
নিষ্ফল প্রতীক্ষা শেষের প্রহর 
তবু প্রতিবাদে হয়নি মুখর।
বুকের গভীরে বইতে থাকা চাহিদার ঘূর্ণি
পাক খেয়ে প্রবেশ করেছে আরো গভীরে,
না পাওয়ার হাহাকার 
তবু পিচ্ছিল করেনি তোমার পথ।
একাগ্রচিত্তে, চরম সততায়
বুনেছি যাপন নীড়
এড়িয়ে গেছি প্রলয়ংকর প্রলোভনের
 প্রচন্ড সব  ভিড়।
ব্যাস ----
এতোটুকুই প্রেমিক আমি....
এতোটুকুই বেসেছি ভালো।
যদি এর চেয়ে ভালো
বেসে থাকে অন্য কেউ
তবে নিঃসংকোচে যেতে পারো।
আমি উৎসর্গ করলাম
আমার  ইহজন্ম,
পরজন্ম ও...
শুধু  তোমাতে।।


********************************************

ঋণ

ব্যক্তিগত দুখেরা লুকিয়েছে মুখ
সুখগুলো আজ সার্বজনীন,
তোমার ভালো থাকা মুহূর্তটিতেই
আমার জমেছে যত ঋণ ।।


*******************************************

কবিতা : অর্পিতা মিত্র

কবি পরিচিতিঃ অর্পিতা মিত্র উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি তে ছোটো থেকে বড়ো হয়ে ওঠা।বাবা,মা,ছোটো ভাই এর সাথে ভালোলাগা খারাপ লাগা সবটা মিশিয়ে বেশ ভালোই কেটেছে।জন্ম কলকতায়।১৯৯২ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর, জন্মদিন টাও সবার থেকে বেশ খানিকটা অন্যরকম হয়েছিলো, বছরের শেষ পর্বে হলেও আনন্দ টা বরাবরই নতুন ছিলো। পরিবারের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো সমস্ত প্রিয় সময়ের মধ্যে সোনালী রঙের স্বপ্ন ছিলো। ভাটপাড়া সেন্ট্রাল হিন্দু গার্লস হাইস্কুল থেকে স্কুল জীবনের পথ চলা শেষ হলেও,এক নতুন শুরু হয়েছিলো। অন্য রকম স্বপ্ন নিয়ে বোধহয় সবাই কলেজের গল্প হতে চায়, আমার ও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ থেকে গ্ৰাজুয়েশন শেষ করি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান,তার নামাঙ্কিত কলেজে পড়াশোনা করতে পারাটা ভীষণ  গর্বের বিষয়।বাংলার প্রতি ভালোবাসাটা সেই ছোট্টোবেলা থেকেই ছিলো,লেখার সাহস হয়তো করে উঠতে পারি নি,তবে চেষ্টাটা চালিয়েছিলাম। খুব পরিচিত এক দাদা আর দিদিকে দেখে লেখার প্রতি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম সাথে খানিকটা দুঃসাহস ও বটে। বাংলায় মাষ্টার্স কমপিল্ট করি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানে নতুন করে ভালোলাগা ও ভালোবাসার এক অনন্য সৃষ্টি। রবি ঠাকুরের লেখার প্রতি নতুন করে ভালোবাসা জন্মেছিলো।আজ ও ভীষণ মনখারাপে সঞ্চয়িতা খুলে বসতে ইচ্ছে করে বারংবার । নতুন করে প্রানের আশ্বাস পাই রবি ঠাকুরের লেখার মাঝে। 

ভালোবাসি বই পড়তে,গল্প করতে, গান শুনতে,কখনো বা কবিতা লিখতে,আর ভালোবাসি বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে বিরিয়ানী কে সঙ্গে নিয়ে। জীবনে বন্ধু গুলোকে পাশে পেয়েছি উৎসাহ দিয়েছে নতুন করে লেখার। নিজের লেখারই প্রেমে পড়েছি একাধিকবার। নিজেকে অনেকটা ভালোবাসলে বোধহয় লেখাতে ভালোবাসা ও বিচ্ছেদ উভয় পক্ষই ধরা দেয়। জীবনে প্রেম এসেছে সহস্রবার,তবে প্রেমের স্বার্থকতা বোধহয় বিচ্ছেদেই।তবে দুঃখ নিয়ে কখনো লিখি নি একরাশ ভালোবাসা নিয়ে আমার লেখার শুরু, এভাবেই হোক কোনো এক গল্পের পথচলা।লেখার সমালোচনা-ই বোধহয় লেখকের স্বার্থকতা........।



-------------------------------------------------------------------

শেষবার
    

ঘাড়ের কাছে কালচে ছোপটা আজ ও স্পষ্ট।
সুদূর ভবিষ্যতের বিভোরতায় মগ্নতা গ্ৰাস করেছিলো...
কল্পনার পথ চলতে চলতে বুঝতে পারিনি,
সূর্যালোকে ও হোঁচট খাচ্ছি ক্রমশ...
পিরামিড এর চূড়ায় দাঁড়িয়ে সশরীরে ভবিষ্যত দেখতে চেয়েছিলাম।
কাঙ্খিত স্বপ্ন তো লাঞ্ছনার ই শিকার হয়...
রক্তাত্ত মুহূর্ত গুলোতে ও ঝড় উঠেছে প্রশ্নোত্তরের...
এমনকি নিয়মিত সন্ধ্যা প্রদীপে ফুটে উঠেছে লেলিহান শিখা।
এবার কি সত্যিই থামবে
সুদীর্ঘ লাঞ্ছনা কি মুক্তি পাবে, পনেরো বছরের রক্তাত্ত পরিনতি কি এক আকাশ জোড়া জবাব চাইবে ??
ওরাও কেমন যেন বিশ্বাস ঘাতক হয়ে উঠেছে,
প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে উদ্যামতার মানচিত্র।
কালচে দাগটা ও ক্রমশ গাঢ় হয়ে উঠেছে..
পরিনতি দুঃসাহসী হলে মুক্তিযোদ্ধারাও ঘুম চাই
শীতের স্নিগ্ধতায় তবে এভাবেই হোক
বদলানোর স্বাদবদল।

-----------------------------------------------------------------

কবিতা : সামিম ইসলাম মির্দ্দে

কবি পরিচিতিঃ সামিম ইসলাম মির্দ্দে হাওড়া এর বাসিন্দা। বর্তমানে নরসিংহ দত্ত কলেজের কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের ২য় বর্ষের ছাত্র।  

কবি বং পেজের কন্টেন্ট রাইটার ও ডিজিটাল পেইন্টিং আর্টিস্ট, এবং সমাপ্তি পেজের অ্যাডমিন। 

------------------------------------------------------------------


হোক স্বাধীন!

হোক স্বাধীন!
নামেই দেশ আমার গৌরব, আমার গর্ব;
গায়ে চাপিয়ে মিথ্যার চামড়া,
বুঝলাম না আজও ইহার মর্ম।

হোক স্বাধীন!
মরছে মানুষ, চলছে শোষণ;
উন্নতির অজুহাতে, বিচ্ছিন্ন সাধারণের ভরণ-পোষণ।

হোক স্বাধীন!
দেশের ন্যায়, দেশের বিচার;
সত্যের নামে, আজও অন্যায় অবিচার।
নেতা-মন্ত্রীদের ছায়ার তলে,
জ্বলছে দেশ তিলে তিলে।

হোক স্বাধীন!
জ্ঞান ও জ্ঞানীর অন্তরালে,
মরছে কৃষক, ভাতের চালে চালে।

হোক স্বাধীন!
দৌড়াচ্ছি অর্থের মায়াজালে,
শিক্ষার অভাবে, শিক্ষাই যে আজ গভীর জলে।

হোক স্বাধীন!
4G-5G এর জমানায়
কেই বা আর হিসাব নেই,
দেশ কি টাল-মাটাল?
তাতে কি!! দেশ আমার ডিজিটাল।

জীবন আছে, জীবন তালে;
চলো এগিয়ে চলি ধর্ম ভুলে,
ছিল যে সেই একতা,
আজ হতে দিওনা লাপাতা।

আর নয় মিছিল, নয় হরতাল;
হোক স্বাধীন - এর করতালে,
করবো দেশ সঠিক-বহাল।

---------------------------------------------------------------

গল্প : অর্পিতা মিত্র

লেখিকা পরিচিতিঃ অর্পিতা মিত্র উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি তে ছোটো থেকে বড়ো হয়ে ওঠা। বাবা, মা, ছোটো ভাই এর সাথে ভালোলাগা খারাপ লাগা সবটা মিশিয়ে বেশ ভালোই কেটেছে। জন্ম কলকতায়।১৯৯২ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর, জন্মদিন টাও সবার থেকে বেশ খানিকটা অন্যরকম হয়েছিলো, বছরের শেষ পর্বে হলেও আনন্দ টা বরাবরই নতুন ছিলো। পরিবারের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো সমস্ত প্রিয় সময়ের মধ্যে সোনালী রঙের স্বপ্ন ছিলো। ভাটপাড়া সেন্ট্রাল হিন্দু গার্লস হাইস্কুল থেকে স্কুল জীবনের পথ চলা শেষ হলেও,এক নতুন শুরু হয়েছিলো। অন্য রকম স্বপ্ন নিয়ে বোধহয় সবাই কলেজের গল্প হতে চায়, আমার ও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ থেকে গ্ৰাজুয়েশন শেষ করি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান, তার নামাঙ্কিত কলেজে পড়াশোনা করতে পারাটা ভীষণ গর্বের বিষয়।


বাংলার প্রতি ভালোবাসাটা সেই ছোট্টোবেলা থেকেই ছিলো,লেখার সাহস হয়তো করে উঠতে পারি নি,তবে চেষ্টাটা চালিয়েছিলাম। খুব পরিচিত এক দাদা আর দিদিকে দেখে লেখার প্রতি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম সাথে খানিকটা দুঃসাহস ও বটে। বাংলায় মাষ্টার্স কমপিল্ট করি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানে নতুন করে ভালোলাগা ও ভালোবাসার এক অনন্য সৃষ্টি। রবি ঠাকুরের লেখার প্রতি নতুন করে ভালোবাসা জন্মেছিলো।আজ ও ভীষণ মনখারাপে সঞ্চয়িতা খুলে বসতে ইচ্ছে করে বারংবার । নতুন করে প্রানের আশ্বাস পাই রবি ঠাকুরের লেখার মাঝে।
ভালোবাসি বই পড়তে,গল্প করতে, গান শুনতে,কখনো বা কবিতা লিখতে,আর ভালোবাসি বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে বিরিয়ানী কে সঙ্গে নিয়ে। জীবনে বন্ধু গুলোকে পাশে পেয়েছি উৎসাহ দিয়েছে নতুন করে লেখার। নিজের লেখারই প্রেমে পড়েছি একাধিকবার। নিজেকে অনেকটা ভালোবাসলে বোধহয় লেখাতে ভালোবাসা ও বিচ্ছেদ উভয় পক্ষই ধরা দেয়। জীবনে প্রেম এসেছে সহস্রবার,তবে প্রেমের স্বার্থকতা বোধহয় বিচ্ছেদেই।তবে দুঃখ নিয়ে কখনো লিখি নি একরাশ ভালোবাসা নিয়ে আমার লেখার শুরু, এভাবেই হোক কোনো এক গল্পের পথচলা।লেখার সমালোচনা-ই বোধহয় লেখকের স্বার্থকতা........।

------------------------------------------------------------------

স্বীকারোক্তি
    

রাই....…...…
কেমন আছিস, তোর সাথে কোনো এক দুপুরে দেখা হবে, সেই আশায় আজ ও বুক বেঁধেছি...
না বলে চলে গিয়েছিলি....
আগে তো চোখের দিকে তাকিয়ে সবটা বুঝতে পারতিস তবে আজ এই প্রশ্ন ?
অবাঞ্চিত প্রশ্ন করলাম বুঝি,আমিই হয়তো তোর জীবনে অবাঞ্ছিত হয়ে‌ পড়েছিলাম।
পিল্জ চুপ কর ...…মিথ্যে বলিস না।
এয়ারপোর্টে আমি হাত ঘন্টা অপেক্ষা করেছি,তুই এসেছিলি অবশ্য তবে অন্য কারোর সাথে।
আবার ও ভুল ভাবছিস,সব দেখা গুলো কে নাই বা সত্যি ভাবলি....
কোনটা ভুল আমার দেখা টা নাকি, অন্য কারোর সাথে ফেরা টা??
বিশ্বাস কর আমি সবটা জানতাম, তবু তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম।
শেষবারের মতো তোর চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকাতে চেয়েছিলাম।
আজ ও চুপ করে থাকলি,সত্যিই কিছু বলতে চাস না??
এটা হয়তো তোর না শোনা কথা গুলোর শেষবারের মতো জানতে চাওয়া,
শেষবেলায় প্রশ্নোত্তোরের পালাবদল.....।

----------------------------------------------------------------------


দেবযানী রায়


গল্প
-----

লেখিকা পরিচিতিঃ দেবযানী রায়। জন্ম বর্ধমানের পানাগর মিলিটারি হসপিটাল। স্কুল জীবন খড়গপুর। ছোটবেলা থেকে গান, নাচ, কবিতা, সাহিত্যে আগ্রহ। বিবাহের পর কলেজ জীবন। (বিরাটি)।


             কবিতা কুটির, প্রাঙ্গণ সাহিত্য পত্রিকা, সুজন সখির সাহিত্য পরিষদ, মহা বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ ট্রাস্ট আরও অনেক গুলো কবিতার পরিবারের আমাকে পুরস্কৃত করেছে এবং আমার কবিতা ছাপানো হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক কবিতার পরিবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
----------------------------------------------------------------

ভয় 
   

বয়স কম হয়নি, তবুও ভয়টা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। একা থাকলেই ভয়। ছোট বড় কাউকে পাশে চাই। পেলাম একটা খুব সুন্দর সুযোগ। ফেসবুকে একটি পরিবারের সাথে লাইভে আসার। কিন্তু ওই যে ভয়। আজও সেই পরিবারে আমার লাইভে আসা হলো না। শুধু ভয় বললে ভুল হবে। জ্ঞানের অভাব মানুষকে ভীত করে তোলে। আজকাল ছোট ছোট বাচ্চারাও স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে জানে। তবে ভাঙলো আমার ভয়। কিছু নারী শক্তি আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করল। কিছু বন্ধুরা ছিলেন সাথে। হ্যাঁ আজ নারীরা একহাতে রান্নাঘর সামলাচ্ছে, আর একহাতে কলমকে বন্দুকের মত ব্যবহার করছে। সেই নারীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। অবশেষে একদিন বসে গেলাম মোবাইল ফোনের সামনে। অনেক কবিতা, অনেক গান, অনেক মনের কথা আদান-প্রদান। ভীষন তৃপ্তি পেলাম সেদিন। আমি পেরেছি লাইভে এসে নিজের ভাবনাকে প্রকাশ করতে। অনেকের ভালোবাসা পেয়েছিলাম সেদিন ‌ কিন্তু মনের কোণে কোথায় যেন একটা কষ্ট বেঁধেছিলো। যারা আমাকে প্রথমে বারবার লাইভে আসবার জন্য অনুরোধ করেছিল , আমি তাদের সঙ্গে সুবিচার করিনি। কারণটা ছিল আমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভয়। কিন্তু তারা আমাকে আজও তাদের পরিবারের সদস্য হিসাবে খুবই ভালোবাসেন। আজ আমি কলমের কালিতে তাদের আন্তরিক ভালোবাসা জানাচ্ছি।।


----------------------------------------------------------------

**সত্যি, আমার সত্যি।**


মনসামঙ্গল কাব্যের কথা আমরা অনেকেই জানি। চাঁদ সওদাগর , বেহুলা, লক্ষিন্দর। এদের গল্প অনেক শুনেছি। ঠাকুমার মুখে। বাংলাদেশের বরিশাল জেলা সব ঘরে মোটামুটি মনসামঙ্গল পাঠ করা হতো। এবং নাগপঞ্চমী দিনে বাড়ি বাড়ি মা মনসা পুজো করা হতো।
                এবার আসি আমার কথায়। দক্ষিণ শিয়ালদা ট্রেন ধরে বারুইপুরের স্টেশনে নেমে একটি অটো ধরে চলে গেলাম। একটি ছোট্ট স্কুল এবং তার পিছনেই একটি শ্মশান। কোনরকম বৈদ্যুতিক উনুনে মৃতদেহ দাহনে সুবিধে সেখানে ছিল না। কাঠের আগুন ই শবদাহ হচ্ছে।
মায়ের পুজো সেখানে হচ্ছিল। আমি কিছুক্ষণ পুজো দেখেই চলে গেলাম চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখতে। সেখানেই পেলাম একটি পুকুরের ঘাট। যারা শব দাহ করছিল, তাদের প্রশ্ন করাতে তারা বলল, এই পুকুর আগে গঙ্গার সাথে মিলিত ছিল। এখানেই বেহুলা শিখেছিল কি করে মৃত স্বামীকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। কিছুটা অবাক হলাম। কিছুটা কৌতুহলী। থেকে গেলাম সেইদিনটা সেখানেই। শবদাহ শেষ করার পর, ওই ছেলেগুলো আমাকে ওখানে দুপুরে খেয়ে যেতে নিমন্ত্রণ জানালো। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। পুকুর পাড় থেকে তোলা মান কচু, কিছু আলু, কিছু ফুলকপি, সব মিশিয়ে একটি তরকারি ওরা রান্না করলো। সঙ্গে ডাল এবং ভাত।
         ‌‌ ‌ আমার পরিবার ভীষন (orthodox) জাতপাতের বিচার করেন। এমনকি বাইরে কারোর বাড়িতে বা নিমন্ত্রণ বাড়িতেও খাওয়া-দাওয়া করেন না।
        সেদিন দুপুরে আমি কিন্তু খুব আনন্দের সাথে মধ্যাহ্নভোজন সম্পন্ন করেছিলাম।
             জানি আমাদের সমাজ যারা নাকি মৃতের দাহন করে তাদের স্পর্শ করাটাও ঘৃণার মনে করে। আমি সেদিন ওদের ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে ওদের সাথেই পাশাপাশি বসে অন্ন গ্রহণ করেছিলাম।
       ‌‌        জানিনা স্বর্গের দ্বার বা নরকের দ্বার আমার জন্য কোনটা খোলা থাকবে?। আমার জীবনের এক অতি সত্যকে আজ ধরে তুললাম।

-----------------------------------------------------------------------

শান্তনু দাস

কবিতা
--------

কবি পরিচিতিঃ শান্তনু দাস। জন্মস্থান- আগরতলা, জন্ম সন-১৯৭৮, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির হাইস্কুলে শিক্ষার পাঠ। কর্মক্ষেত্র "ত্রিপুরা স্টেট রাইফ্যালস্"এ যোগদান। 

অবসর সময়ের সঙ্গী সাহিত্য। গল্প-কবিতা পড়ার পাশাপাশি শেখার চেষ্টা। খেয়ালবশতঃ সাধ্যমতো একটু আধটু লেখালিখি করার ইচ্ছে।
 "সাহিত্য স্বপ্ন উড়ান" "আঁচল ঢাকা কাগজফুল" "মনন" "বর্ণতারা" "মন ফাগুনের চুপকথা" ইত্যাদি কয়েকটি পুস্তক ও সাহিত্য পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। "কুসুম সাহিত্য পত্রিকা"র সৌজন্যে বিশেষ "কাব্যজ্যোতি" "কাব্যপথিক" সন্মাননার প্রাপ্তি। সম্প্রতি একক সংকলন "ইপ্সিত ইথার" প্রকাশ পেয়েছে ।     

--------------------------------------------------------------

ভালো থেকো প্রিয়.....

       


ভালো থেকো প্রিয়........ 
মনের চিলেকোঠরে জমানো টুকরো সম্পর্কগুলোর শেষ নিঃশ্বাস তোমায় শুভকামনা জানায়, 
ভালো থেকো প্রিয়........ 
আবেগী মুহুর্তরা মনের শাসন শিথিল করে নেয় অকারণে, 
বিদায়ী অনুরাগ চুপিচুপি ডাকে তোমারই 'প্রিয়' নাম শিহরণে। 
বিবাগী বাতাস সোহাগ পাঠায় তোমার নতুন ঠিকানায়, 
ভালো থেকো প্রিয়........ 

চলে গিয়েই কি চলে গেলে?
দোলাচলে না যাওয়ার অনেকটাই যে-
পড়ে রইলো ব‍্যাকুলতার পরাকাষ্ঠায়,
বিয়োগী দহনে পুড়ে খাটিই হলো ধাতবের মতো ভালোলাগার মায়াবী আস্তরণ, 
পরিযায়ী সুখস্মৃতি বারবার বিনাপ্রাপ্তির হিসেব চাইলো বিবেক মন্থনীতে।
আয়াসী ক্ষণের প্রতিদান ডুবে গেল অভিমানের অশ্রুসায়রে-
টানের চিরচেনা সুমসৃণ পথে আগাছার যুগান্ত-জন্ম সম্পর্কের হৃতরাজ্যে হলো আকুতিরত।
বেদনার লাভা প্রস্রবণ ঘৃণার বিভীষিকায় গলিয়ে নিলো গতপ্রেম।
নিবেদিত প্রেমাঞ্জলির আহুতিরা নিরাকার হলো তাপিত ক্রোধাগ্নিতে।
পদস্খলনের চিতায় ক্রমবর্ধমান ভালোবাসা গেল সভয় সহমরণে। 
আমি তবুও, 
দেনাপাওনার এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলি-
ভালো থেকো প্রিয়........... 

----------------------------------------------------------------

স্রোতধারা


এ কোন স্রোতধারায় অচেতন বহে নিরবধি, 
সুশোভিত অবনীর উদাসীন পরিযায়ী সুখ। 
প্রশ্নের ভিসুভিয়াস বলয়িত অসুখেরা হৃদি,
ব্যাকুল হতাশ ফিরে বারেবারে সময়ের বুক। 

হৃদয়ের আর্তি মিশে যায় কপটের হর্ষ নাদে,
দু'কূলে দাঁড়ায়ে রয় চেতনার মূরতি মহান। 
অবাক মুদিত চোখে নদীটার পরাজয় কাঁদে, 
কেমনে ডুবায়ে চলে বেদনার এতো বোধ মান। 

চৈতী হাওয়ায় উড়ে কলিজার খাক অনুভবী, 
ফসিল ব্যাথারা উঠে কাতরে কাতরে চোখ বুজে,
চিতার শিখায় সাজে বহমান বিম্বিত জাহ্নবী,
শোভাবিহীন আকাশেতে বিবর্ণ অমানিশা খুঁজে। 

পালা করে দোষী করে সময়ের আরোপিত আশা,
করুণা কুড়ায়ে বাঁচে আবার কাঙাল ভালোবাসা। 
---------------------------------------------------------------

ঋণগ্ৰস্ত


অনামী কাব্যরা যেন ধার করেই বাঁচতে শিখেছে। 
সমৃদ্ধশালী দেনাদার'দের খোশমেজাজী হওয়া ভরসা, 
'অসাধারণ', 'অতুলনীয়' এ'সকল বেশকিমতি অলংকারের ভার কি আমার পোষায়? 
তার চেয়ে বরং 'হুমম'টা, 'বেশ'টা, 'বাহ্'টা, নিয়েই জব্বর আছি। 
চড়া-সুদের ভয় নেই, 
অচিনপুরের রাজপথে আমার এই দলা-পাকানো, আমতা-করা, হোঁচট-খাওয়া  শব্দগুলো'র কাব্য-সাজার ভীমরতি ধরেছে। 
স্মৃতির মেলায় আনমনা বায়- একটু ছন্দে একটু গন্ধে-
মাতল মনে নিজের সনে একটু কথা বলে, 
খানাখন্দে কি আনন্দে দোসর খুঁজে চলে। 
এতেই বুঝি ভয়.............?? 
সস্তা বেসাতেই কি তোমার আখের অসুরক্ষিত বোধ হয়?? 
চিন্তা নেই- জায়গা চাইনা, 
তোমার রাজপ্রাসাদে ঘুম ধরবে না আমার। 
অভ্যেস নেই- মখমলি গালিচা, বিলাস শয্যা, তুলতুলে উপাধানের। 
চলেই যাবো- শোধ দেওয়াও আর হবে না, 
অনেকগুলো সান্নিধ্য- ঋণগ্ৰস্তের আরোপ দায়ের করবে, আমার পাওনাগুলোও সব নর্দমায় দিলাম। 
যেচেই নগরীর নিয়ম মেনে নীরবে তড়িপার হবো, 
সকাতর ঘুমন্ত শহরের বুকে মিঠে মালকোষে আলগোছে স্বরলিপি বাজুক- 'আমি অপরাধী'। 
-------------------------------------------------
[22/06, 17:11] Bijoy Sarkar: নামঃ আশিষ মেটে 
গ্রামঃ জুবুটিয়া(কীর্ণাহারে পাশে)
 পোস্টঃ আলিগ্রাম
থানাঃ নানুর 
জেলাঃ বীরভূম 

আমি চাষ করতে ভালোবাসি,বাবার কাছে শেখা,লাঙল টানা ,বীজ বপন,সবই পারি,এখানো করি।ছোটবেলা থেকেই চাষ করেই মানুষ, জন্ম আমার কুঁড়ে ঘরে।কারাগারে চাকরি করি,আসামীর সাথে গল্প করি,জানি জীবন তাদের মায়া জালে ঢাকা, আজ আমার বাড়িতে গরু, ছাগল, হাঁস আছে,,তাদের কে খুব ভালোবাসি,আর ভালোবাসি  গাছ লাগাতে ।।জীবনে অনেক গাছ লাগিয়েছি।।মাঠে ধানের ক্ষেত আর সরষের জমি আমার প্রেম ।।গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না ।।আমার গ্রাম ...আমার প্রত্যেকটি শিরায় অবস্থান করছে বিন্দু বিন্দু প্রেম,চোখে লেগে আছে স্বপ্নিল ভালোবাসা আর সারা মন প্রাণ জুড়ে আছে অতৃপ্ত  ভালো লাগার হাতছানি।।

----------------------------------------------------------------

ঝরা কুসুম 
       

উদ্ভ্রান্ত,ক্ষুধার্ত,অর্ধ উলঙ্গ নারী;
নীড় হারা পাখি সে,তির নিশানায় ঈগল শিকারী ।
রাস্তায় পরে থাকা জীবন তার,রক্ত তাজা পাণ্ডুলিপি;
সত্যের উপর ধুলোর প্রলেপ,সমাজে সে নোংরা ছায়াছবি ।
অরণ্য সমাজে বিচ্ছিন্ন ,জীবন তার ঝরা কুসুম ;
মা-হারা সেই জানে,কত দামী কপালে মায়ের চুম;
ছিঁড়ে যাওয়া পাতায় বার বার লাগে ঝাপটা;
সমাজের নাক রুমালে ঢাকা,শূন্য তার জন্মখাতা।

অলিগলিতে মানুষকীট, নোংরা নালিতে আমি আর প্লাস্টিকের স্তূপ;
বিবেক যন্ত্রণায় কাতর, কলি যুগে দুর্ভিক্ষের রূপ। 
ধর্ষিতা নারী,সমাজে চর্চা একটু বাড়াবাড়ি;
ভাতের হাড়ি,দাঁড়ি পাল্লা মেপে ভাই ভাইয়ের কাড়াকাড়ি ।
পারে নি তাঁরা নিজের করে নিতে, 
পারে নি তাঁরা বোন বলে পরিচয় দিতে;
                বলে কি না পাগলী,
তাড়িয়ে দেয়, দেয় গালাগালি;
            এ কিসের পূজো?
                             বুঝে উঠি না আজও, 
শুধুই মদের গন্ধ, পূজার নামে ভণ্ড ।
কে বাঁচলো,কে মরল,চোখ তাদের অন্ধ ।
মন্দিরে পাশে ডাস্টবিন, ভিতরে দুর্গা মূর্তি;
আমি খাই নোংরা খাবার, ওরা করে আনন্দ ফুর্তি ।
খিদেয় জ্বালায় ছটফট, 
ওরা বলে যা এখান থেকে, ফোটফোট;
এ তো সেই গন্ধওয়ালা মানুষ,
আমার ভালোবাসাটাকে বিষ মাখিয়ে দিয়েছিল, 
          তারপর...
আমার শরীরটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিল।
সেদিন আকাশে উড়েছিল ফানুস।

ছেঁড়া কাপড় আজও পরি,
পাগলী বলে লোকে, ফিরিনি বাড়ি ।
সমাজে আমি নিন্দিত, বিক্ষিপ্ত ক্ষেপি;
আজও চোখে ভাসে সেই দিনের পৃথিবীর ছবি ।
         সেই দিন দশমীর রাত
গন্ধওয়ালা মানুষগুলো তেড়ে এল,
           শরীরের চাপলো লাশের পর লাশ,বুকে পড়ল হাতে পর হাত;
কাঁমড়ে,খাঁমচিয়ে, উপড়ালো ছাল;
উলঙ্গ শরীর, গোপনাঙ্গ রক্ত লাল।
শরীর নিংড়ানো রস,খায় শহরের নেশাখোর বস।
থামেনি রক্ত, এগিয়ে আসেনি কোনো মা দুর্গার ভক্ত।
নিঃশ্বাস বন্ধ, অন্ধ গলি,
এদিকে শুরু হলো অঞ্জলি ।
শরতের এক পশলা বৃষ্টি, 
জ্ঞান ফিরলো, ফিরলো চোখের দৃষ্টি ।
বেঁচে আছে মরেনি, 
পাগলী বলে কেউ তাকায় নি।
এ তো মূর্তি নয় যে,ভাসিয়ে দিলে গলে যাবে;
সে তো দূর্বাঘাস, শতবার মারিয়ে গেলেও জেগে উঠবে।।
    


----------------
বেশ্যা ভ্রমর 
         

সমাজের আড়ালে বংশধারা বেশ্যা মেয়ে ভ্রমর, 
নরপশুর অত্যাচারে মাড়িয়ে যাওয়া সে তৃণ।
ইটের ফাঁকে চরিত্রহীনের বাস,বারবার পিছলে পড়ে শিকড়,
বনস্পতির ঝরা পাতার বিছানার দাম তাঁর শূন্য ।

গাঁয়ের লোকে বিষ বাক্যবাণে ভ্রমর আরও বেশি রক্তাক্ত, 
নিলামে বিক্রি শরীরের অন্তরে জমাট তার স্বপ্নগাঁথা,
স্বপ্ন একটাই ..কেউ যদি একটু  ভালোবাসতো?ন
হয়তো লাল শাড়ি দিয়ে বাঁধানো থাকতো জীবনের উলঙ্গ খাতা।

আজও ভ্রমর চেয়ে আছে ভালোবাসার অপেক্ষায়, 
পরিচিত আঁধারে নেশাখোর ফড়িং আসে বরাবর।
সুখের তরে পাড়ি দেয় অসুস্থ গোপন নৌকায়,
ভালোবাসার কাঙাল শূন্য মনে আজও দাঁড় টানে ভ্রমর।



------------------
শেষ পরিণতি 
    

ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসের ছায়া, আবারও সেই আঁধার, 
সূর্যকে আড়াল করে রাখে কয়েক কোটি কাগজ পত্র, 
সাপের ছোবল খেয়ে বিবেকের ঘরে জমাট বাঁধে বিষ মন্ত্র 
হয়তো জন্ম নিলো কলি যুগের অবতার ।
মানুষ অমানুষের যুদ্ধ, ভারত আজ প্রাণহীন মরুভূমি,
ঋণের দায়ে ঝোলে চাষি, ফসল শূন্য তাঁর ক্ষেতভূমি ।

তিন ভাগ জলে ভাসবে মৃতদেহ, স্থলভাগটাই হবে একদিন কবর,
রক্তাক্ত পৃথিবীতে সেদিন আমিই দেবো মৃতদেহ পাহারা।
হিংসার বালিঝড় উড়াবে যেখানে সেখানে জন্ম নেওয়া সাহারা।
নুড়ি বদলে মাটিতে পড়ে থাকবে ছিন্ন ভিন্ন মানুষের লাশ,
সেইদিনই অমানুষের কাছে রক্তের গন্ধই হবে সুবাস ।
কোনটা হনুমান, কোনটা মুসলমান, আর কোনটা খ্রিস্টান, 
বেলাশেষে এই গুলি হবে বাছাই করা খবর।
নদীতে রক্ত, মাটিতে রক্ত মিশে একাকার;
তুমি পুড়িয়ে ক্লান্ত, আমি গর্ত করে ক্লান্ত, 
মানুষের ভাইরাসে সুস্থ মানুষ হবে সেদিন বিষাক্ত ।
ঐ বিষাক্ত জনতরঙ্গের ঢেউ ভাঙবে নিরোগ কারাগার ।
আসছে দিন ভয়ঙ্কর ...

নিজেকে কেউ আর মানুষ ভাবে না,ভাবে তারা ..
আমি মুসলমান, তুমি খ্রিস্টান, তুই হিন্দু, 
এই নিয়ে চলবে হয়তো একদিন লড়াই, 
লুপ্ত হবে মানবতা ,লুপ্ত হচ্ছে চড়াই ।
সেদিন জলের বদলে বইবে রক্তের সিন্ধু ।

হারিয়ে যাবে হয়তো পৃথিবীর সুখ পাখি, 
উলঙ্গ বিষবৃক্ষ দেখে শুরু হবে কুকুরের কলরব, 
সেইদিন আসার আগে আমি আজই করবো বিপ্লব ।
হয়তো সবুজ ভারত জন্ম দিবে পথের চরিত্রহীনা অভাগী।


------------------------------------------------------------

ভ্রমন কাহিনী : বাসব দেবনাথ

লেখক পরিচিতিঃ লেখক শ্রী বাসব দেবনাথ মহাশয় জন্ম গ্রহন করেন ১৫ ই অক্টোবর,  ১৯৭৪ সালে কোচবিহার জেলায়। 


তিনি বর্তমানে ঘুঘুমারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করেন। 


------------------------------------------------------------

গুজরাত ভ্রমণ 


সময়টা ২০১৫ সালের অক্টোবর মাস। নিউ কুচবিহার স্টেশন থেকে  রওনা হয়ে যখন দ্বারকা স্টেশন এ নামলাম তখনও ভোর হতে একটু বাকি। পূর্ব আকাশ ধীরে ধীরে লাল রঙ এ রঙীণ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ছোট্ট, পরিষ্কার,পরিচ্ছন্ন দ্বারকা  স্টেশন  দেখেই বেশ ভালো লেগে গেল। আমরা তিন দিনের দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা করে ভারতের প্রায় পশ্চিম প্রান্তে এসে পৌঁছেছি দেবভূমি ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এর বাসভূমি দ্বারকা ধাম এ । আচার্য গুরু শঙ্কারা আচার্য ভারতের চার প্রান্তে যে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তারই পরবর্তী কালে নাম হয় চার ধাম। ভারতের  পূর্ব প্রান্তে পুরী ধাম, পশ্চিম প্রান্তে দ্বারকা ধাম ,উত্তর প্রান্তে বদ্রিনাথ ধাম,দক্ষিন প্রান্তে রামেশ্মরম ধাম। হিন্দুদের কাছে এই চার ধাম খুবই পবিত্র তীর্থ ভুমি মনে করা হয়। বিশ্বাস আছে এই চার ধাম দর্শন করলে মোক্ষ ( salvation) লাভ হয়। 
সকালের আলো ফোঁটার সাথে সাথে আমরা বেরিয়ে পড়লাম হোটেল এর উদ্দেশ্যে । কাছেই পেলাম বেশ সুন্দর  ধরমশালা । বিশ্রাম সেরে আমরা সবাই উৎসুক হয়ে উঠলাম দ্বারকা ধাম অর্থাৎ দ্বারকা  মন্দিরে প্রবেশের অপেক্ষায়। হাঁটা পথে মুহূর্তেই পৌঁছালাম মন্দিরের সদর ফটক এর সামনে।  বিশালাকার মন্দির ,তার ওপর পাঁথরের আসাধারন কাজ। শিল্পীর নিপুণতা সকলকে যে মুগ্ধ করবে  তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গোমতী নদী আরব সাগরে মিলিত হয়েছে যেখানে তার প্রায় কোল ঘেঁসে গড়ে উঠেছে এই দ্বারকা শহর এবং এই সুসদৃশ মন্দির খানি। ঐতিহাসিক শহর দ্বারকা ই হোল ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এর শাসন ভুমি। কথিত আছে দ্বারকা শহর আরব সাগরে তলিয়ে যায় ছয় ছয় বার। বর্তমান দ্বারকা শহর সপ্তম বার নির্মিত শহর। দ্বারকা শহরের অনতি দূরেই রয়েছে “ভেট দ্বারকা” । ভেট দ্বারকা যাওয়ার জন্য রয়েছে জাহাজ ,ছোট ছোট ট্রলি। নির্দিষ্ট সময়ে ভিড়ময়  এক জাহাজে কোনক্রমে আমরা চড়ে পড়লাম ভেট দ্বারকার উদ্দেশ্যে। আরব সাগরের জল কে ভেদ করে ২০-২৫ মিনিট যাওয়ার পর এলো সেই ভেট দ্বারকা । এটি একটি ক্ষুদ্র জনপদ। বিষ্ণু মন্দির ই এর প্রাণ কেন্দ্র। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে মন্দির প্রাঙ্গন হয়ে উঠেছে আরও বেশি প্রাণময়। কথিত আছে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তার বন্ধুবর সুধাম কে দ্বারকার এই অংশ ভেট হিসাবে দান করেছিলেন তাই এর নাম “ভেট দ্বারকা”। দ্বারকায় এছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। রুক্মিণী মন্দির এর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য  । সারাদিনের শেষে মন্দির প্রাঙ্গন সংলগ্ন বিশাল আহার গৃহে পেলাম সুমধুর প্রসাদ। সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক লওমায় সব উবে গেল সাথে সাথে। শান্ত এবং উৎফুল্ল মনে গোমতী আর আরব সাগরের পাড় ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ধরমশালায় এসে পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। দেবভুমির প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলো অবিস্মরণীয় । আগামীকালের গন্তব্য হল সোমনাথ...... 
  ……রাত্রের ট্রেন এ দ্বারকা থেকে আবারও ভোঁর হওয়ার আগেই পৌঁছে গেলাম সোমনাথ।মন্দিরের কাছেই পেলাম ধরমশালা। সকালের স্নান সেরে সবাই ছুটে গেলাম পৃথিবী বিখ্যাত শিল্প নৈপুণ্য ভরা গুজরাতের পশ্চিম কুলে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত সোমনাথ মন্দিরে। ১২ টি জ্যোতির লিঙ্গের মধ্যে প্রথম এই মন্দির। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং অনুপ্রবেশকারী দের হাতে এই মন্দির ধ্বংস হয়েছে একবার দুবার নয় ,ধ্বংস হয়েছে ১৮ বার। বর্তমান মন্দির ১৯ তম তৈরি মন্দির। বর্তমান মন্দির টি স্থাপনা হয় ১৯৫১ সালে।  ইতিহাস আর অবস্থানগত  দিক দিয়ে সোমনাথ মন্দিরের গুরুত্ব অপরিসীম । হাল্কা গেরুয়া বর্ণের ৫০ ফুট মন্দিরের চুড়োয় ১০ টনের সোনার জল করা কলস। মুল মন্দিরে ঢোকার মুখে ৫১ ফুটের দিগ্বিজয় দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই অপরুপ কারুকাজ চোখে পড়বে। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের অনুমতি নেই। বাইরে থেকেই দেখা যাবে চন্দন চর্চিত স্বয়ম্ভূ মহাদেবের বিগ্রহ, যার মাথায় ছত্রাকারে ফণা তুলে ধরেছেন সর্পরাজ। যেমন সুন্দর তেমনি মূল্যবান। প্রতি প্রান্তেই যেন সোনা ছড়ান । মন্দিরের একপ্রান্ত এসে ঠেকেছে সাগরের কোলে। সাগরের ঢেউ বারবার এসে যেন কথা বলে । এই সাগর দেখেছে বহিঃ শত্রুর পৈশাচিক আক্রমণ, লুণ্ঠন, ধ্বংস লিলা। শুনতে পেয়েছে কত স্বজন হারা মানুষের চিৎকার ,কত মায়ের কোল হারাবার তীব্র আর্তনাদ। তবুও এই মন্দির দাড়িয়ে আছে স্ব মহিমায়।  মুল মন্দিরের ব্যারিকেড এর কাছেই গোলাপি রঙা আদি সোমনাথ মন্দির। ইন্দরের রানি অহল্যাবাঈ ১৭৮৩ সালে এই মন্দির তৈরি করেছিলেন। এখানেও রয়েছে নানান গল্প কথা। রয়েছে শিবলিঙ্গ। রয়েছে অহলেশ্বর শিবের মূর্তি । কাছেই ত্রিবেণী সঙ্গম। হিরন,কপিলা ও অন্তঃ সলিলা সরস্বতী নদীর মিলন স্থল। দারুন মনোরম পরিবেশ। ঘুরতে ঘুরতে এলাম শঙ্কর আচার্য এর ধ্যান গুহা, কামনাথ মহাদেব মন্দির, সূর্য দেবতার মন্দির, পাণ্ডব গুহা,গীতা মন্দির, পরশু রাম মন্দির,বলরাম গুহা, শশিভূষণ  মন্দির এর চত্বরে । চলে এলাম ভালুক তীর্থ এ। প্রবাদ আছে এখানেই জরা নামের এক ব্যাধ বিশ্রামরত অবস্থায় শ্রীকৃষ্ণ কে হত্যা করে। জরা ব্যাধ আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এর মূর্তি রয়েছে এখানে । ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এর পাদুকাদ্বয় এর পূজা হয় এখানে। পিছনেই আরব সাগরের বিস্তার। মন্দিরের প্রসাদ নিয়েই দুপুরের আহার মিটে গেল। মন্দির, শ্রীকৃষ্ণ,ভারতের  সনাতনী ইতিহাস এর পাতায় আমরা যেন বারবার হারিয়ে গেলাম। ফিরে এলাম আবার সোমনাথ মন্দির এর আঙিনায়।  পুরাকাল থেকেই সোমনাথ হিন্দুদের পবিত্র  তীর্থভূমি । হাজার হাজার মানুষের নিত্যদিনের ভিড় ,শাঁক ,শঙ্কের শব্দ, পুরোহিতদের সন্ধ্যা আরতি,  সাথে হাজার হাজার ভক্তের ভক্তি ভাব …এ সোমনাথ অনন্য। সন্ধ্যায় এক প্রান্তে চলে “লাইট অ্যান্ড সাউন্ড” শো। ইতিহাস যেন রক্তে মাংসে মানুস হয়ে আমাদের বিবেকে আঘাত করছে বারবার। এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আর প্রাণ চঞ্চল ভরা রুপকথার কাহিনি যেন এই সোমনাথ। ইতিহাসের পাতায় যেতে যেতে মনটা বেশ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। সারদিনের ক্লান্তি আর ভারাক্রান্ত মনে ফিরে এলাম ধরমশালায়। রাতের খাবার নিলাম বটে কিন্তু মন পরে রইল সোমনাথ আর সোমনাথের ইতিহাসের পাতায়। আগামী কালের “গীর” আর “দিউ” যাওয়ার প্ল্যানে আমার কোন মনই বসলো না। ইতিহাস কে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না... 

সাত সকালেই সোমনাথ এর ধরমশালা থেকে একটা গাড়ি বুক করলাম “গীর অরণ্য” এবং “ দিউ”ঘুরে আবার সোমনাথ এ ফিরে আসবার জন্য । চা এবং সামান্য কিছু স্নাক্স খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। গুজরাতের গীর অরণ্য যাওয়ার অভিপ্রায় আমার দীর্ঘ দিনের। সিংহের দেখা পাওয়ার আসায় আমার ৪ বছরের শিশু কন্যা ও ১০ বছরের ভাগ্নের উৎসাহ সত্যি সবাইকে যেন আরও ব্যাকুল করে তুলল। ঘণ্টা ৩ যাওয়ার পর প্রবেশ করলাম বহু প্রতিক্ষিত  গীর অরণ্য সাফারী সেন্টার এর সামনে। আমরা ৮ জন। একসাথে ২০-২৫ জনের টিম। আমরা উঠে পড়লাম সাফারি বাস এ। বাসের দরজা ও জানালা ভালো ভাবে আটকে দিল গাড়ির চালকের সহকর্মী । গাড়ি চলতে শুরু করল। ধীরে ধীরে গাড়ি পৌঁছে গেলো অরণ্যের অনেকটা ভিতরে । চলেছি ত চলেছি……….। ওই যে ওই যে ….সমস্বর চিৎকারে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি একটি গাছের নিচে বনের রাজা সিংহ তার শাবক দের নিয়ে বেশ সুন্দর ভাবে বসে আছে। গাড়ি থেকে দূরত্ব ৫০ মিটার হবে হয়তো। গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল।  যে যেভাবে পারছে বনের রাজা কে ক্যামেরা বন্দী করতে ব্যাস্ত হলাম। মিনিট কয়েক পর গাড়ি চলতে শুরু করে এক বাঁক নেওয়ার পরই হঠাৎ  করে গাড়ি দাড়িয়ে পড়ল।  কি হল কি হল  ভাবতেই দেখি গাড়ির খুব কাছেই এক সিংহ । গাড়ি আর সিংহ এর মধ্যে অন্তরায় শুধু একটি ছোট গর্ত। এত কাছ থেকে বনের রাজাকে দেখার উন্মাদনায় সবাই বেশ হুড়োহুড়ি করতে লাগলাম। মোবাইল ,ক্যামেরার ফ্ল্যাশে সবাই যেন আত্মহারা । চালক ইশারায় সবাইকে চুপ করতে বলল। মুহূর্তেই বাস এর মধ্যে  সবাই চুপ। চারিদিকে শুধুই    দীর্ঘশ্বাস। । বাচ্চারা যেন কিছুটা হতবাক…….। নিঃস্তবতা যেন আর কাটছেই না। ধীরে ধীরে সিংহ সরে গেলো। চালকের সহকর্মীর কথা থেকে বুঝলাম এত কাছে  সিংহ সাধারণত আসে না।  গাড়ি আবারও চলতে শুরু করল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে  সবাই আবার যেন আনন্দ উচ্ছাসে এই এক অসাধারন অভিজ্ঞতাকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করতে ব্যাস্ত হয়ে উঠলাম।  অনেক আনাচে কানাচে ঘুরে আর কোনও সিংহ এর দেখা পেলাম না। অনেক হরিণ, ময়ূর দেখতে পেলাম। আরও অনেক জীবজন্তু। দেখতে পেলাম খাঁচায় বন্দী বাঘ আর শুনতে পেলাম অসম্ভব  তাঁর গর্জন । বনে থেকেও বাঘ যে কেন খাঁচায় বন্দী বোধগম্য হোল না।  গভীর বনের নিস্তবতা থেকে ধীরে ধীরে হালকা বনে আসতেই বুঝলাম  আমাদের বন সাফারি শেষ হতে চলেছে। আরও আরও দেখার ইচ্ছে নিয়েও বাস থেকে নেমে পড়তে হল। সময় যে অনেকটা কেটে গেছে কারো কোন খেয়ালী নেই। “গীর অরণ্যে” এর এই অভিজ্ঞতা জীবন সম্ভারে যে এক নতুন মাত্রা যোগ করলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । বেলা ২ টা বাজে। খুদায় পেট যে চো চো করছে।  আমরা আমাদের গাড়ির ড্রাইভার কে নিয়ে খাওয়ার হোটেলের দিকে এগিয়ে গেলাম। 

খাওয়া শেষে ছুটে চললাম সমুদ্র সৈকত “দিউ” এর উদ্দ্যেশে। ড্রাইভার  বেশ জোরে গাড়ি চালাচ্ছিল । গাড়ির জানালা দিয়ে আসা সমুদ্রের হাওয়ায়  সবাই প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। সূর্য এর প্রখর তেজ, আকাশ বাতাস এ যে রুক্ষতা  ধীরে ধীরে যেন বদলে যেতে লাগলো। বুঝলাম আমরা আমাদের গন্তব্যে এসে গেছি। জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম পাম,ঝাউ গাছের সারি। পড়ন্ত বেলায় সূর্যের সোনালি আলোয় সৈকত এর বালি যেন  সোনার মতো চিকচিক করছে। পিচের রাস্তা সোজা চলে গেছে ওই দূরে । দুধারে রয়েছে অসংখ্য ঝাউ,পাম এর সুন্দর মেল বন্ধন । ঘেরাটোপে গাড়ি রেখে আমরা সবাই এগিয়ে চললাম বালিকাময় পথ ধরে সমুদ্রের ধারে। ছোট কিন্তু রুপ রঙে এই বীচ যেন বড় মায়াবী। দ্বারকা ,সোমনাথ এর পর দিউ এর সমুদ্র সৈকত যেন এক স্বপ্ন পুরী। বেশ ভিড় কিন্তু বড় কোন কোলাহল নেই। স্নান ,স্নলকেলিং,স্কেটিং সবই হচ্ছে আনন্দের সাথে ,সবই যেন সুন্দর এক নিয়মের বাঁধনে। আমাদেরও অর্ধ স্নান প্রায় হয়ে গেলো। মেয়ে আর ভাগ্নে তো  জল থেকে আসতেই চায় না। পাড়ে বসে বসে সমুদ্রের ঢেউ আর বাচ্চা দের জলের সাথে খেলার  দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে  ঘড়িতে যে ৭ টা বেজে গেছে খেয়াল হোল ড্রাইভারের ডাকে। এদিকে সন্ধ্যে হয় দেড়িতে। ধীরে ধীরে নিঃশব্দে সন্ধ্যে হোল কিন্তু কৃত্রিম  আলোর রশনায় সহজে বোঝাই গেলো না।   কিছু খাবার খেয়ে আলোর রশনা কে পিছনে ফেলে সবাই ছুটে চললাম সেই সোমনাথের ধরমশালার পথে। কাল সাত সকালে সোমনাথকে চির বিদায় জানিয়ে এই গাড়ি নিয়ে যাব পোরবন্দর । আজ ধরমশালা  পৌছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। ব্যাগ পত্তুর কিছুই গোছানো হয়নি । কখন যে  হবে, কিভাবেই বা হবে তা  শুধু ঈশ্বরই জানেন। 

সোমনাথ থেকে পোর বন্দর পৌছতে বেশ দেরি হয়ে গেলো। রাস্তায় নিজেদের কিছু সমস্যার কারনে  আবার কিছুটা  অকারনে  এই  দীর্ঘ পথে বারবার দাঁড়াতে দাঁড়াতে  যাওয়ায়  আমরা যখন  পোরবন্দরের “হোটেল মুন” এ ঢুকলাম তখন বিকেল ৪ টা । পথের ক্লান্তিতো  ছিলই, এছাড়া সবার শরীরও সমান সাথ দিচ্ছিলও না। রুমে একটু রেস্ট নিয়েই ছুটলাম আগামীকালের “ভুজ” এ যাওয়ার টিকিট কাটতে । পেয়েও  গেলাম প্রত্যাশা মতোই। আগামীকাল বিকেল ৪ টায় ট্রেন। যাব ভুজ ,আমেদাবাদ হয়ে। আজকে আর কারো কোথাও যাওয়ার মতো ইচ্ছেও নেই, সময়ও নেই। 
পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম পোরবন্দর ঘুড়তে ।  গান্ধীজীর জন্ম ভিটা আমাদের প্রথম দর্শন স্থান। এখানেই বেশ সময় লেগে গেল। অনেক দর্শক । গান্ধিজির বিভিন্ন ঘর বেশ সুন্দর ভাবে  সংরক্ষিত আছে। মিউজিয়াম টাও খুব সুন্দর। স্বাধীনতা আন্দলনে গান্ধীজীর বিভিন্ন ছবি আজও যেন কথা বলে। দেশ  বিদেশের দর্শকে এ যেন এক জীবন্ত লাইব্রেরি । এর পরে আমরা গেলাম কীর্তি মন্দির। এটি গান্ধীজীর প্রকৃত জন্ম স্থান। মন্দির  সংলগ্ন পৈতৃক ভিটাতে ২ রা অক্টোবর ১৮৬৯ সালে মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী জন্ম গ্রহন করেন। অনেক ইতিহাস কে সাক্ষী রেখে মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী এবং তাঁর ধর্ম পত্নী কস্তূরবা গান্ধীর স্মৃতিতে তৈরি হয় এই কীর্তি মন্দির।   এর পরে যাই সন্দীপনী বিদ্যানিকেতন এ। এ এক অপূর্ব গুরুকুল যা ইংলিশ এবং স্থানীয় গুজরাতি ভাষায় শিক্ষা দান  করে থাকে। অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভায় শোভিত  প্রাঙ্গন , ছাত্রাবাসের সনাতনী পোশাকে পাঠরত শিক্ষার্থী, তাদের শৃঙ্খলা ,নিয়মাবর্তিতা আমাদের কে দারুন ভাবে হৃদয় স্পর্শ করল। অনতি দূরেই রয়েছে  ভারত মন্দির। এর স্থাপত্য ও শিল্পকলাকে বুঝতে ও  উপভোগ করতে বেশ সময় লাগে।  বিপরীতে  নেহেরু্ প্ল্যানেটরিয়াম । চলে এলাম পোর বন্দর বীচ এ। হাতে আজ আর বিশেষ সময় নেই। আরব সাগর এর পাড়ে বেয়ে ওঠা বন্দর সত্যিই বড় সুন্দর। এই সৌন্দর্য উপভোগ কে অপূর্ণ রেখে  ছূটে এলাম হোটেল এ। ট্রেন এর সময় যে হয়ে এলো। হোটেলের ডাইনিং এ যা পাওয়া গেলো গোগ্রাসে তাই সবাই খেলাম। পেট ভোরে কারো খাওয়াই  হোল না। সবাই প্রায়  পাগলের মতো  ছুটলাম পোর বন্দর রেল স্টেশনে। ট্রেন প্রায় ছেড়ে দেয়  দেয় । তাড়াতাড়ি করে সবাইকে ট্রেন এ  উঠিয়ে ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে হাফ ছেড়ে বসলাম। ট্রেন ও চলতে শুরু করল। আরেক টু দেরি হলে কি যে ক্যলেঙ্কারি হতো তা ভাবতেই পারছি না......  
এমনিতেই গরম তাঁর ওপর এতো হুড়োহুড়ি করে ট্রেন এ উঠে একদমই সারা শরীর ঘামে ভিজে গেলো। শরীর ও মন শান্ত হলে বুঝলাম ট্রেন বেশ জোরেই  ছুটছে। এখন যাচ্ছি আমেদাবাদ। রাতে ট্রেনে  যা পাওয়া গেলো তাই খেয়ে নিলাম। আমেদাবাদ স্টেশনে ট্রেন বদল করে যখন ভুজে  যাওয়ার ট্রেন এ উঠলাম তখন রাত্রি ১.৩০ । 
পরের দিন সকাল ৮ টায় এসে পৌছালাম ভূজ স্টেশনে। স্টেশন এর বাইরে আসতেই ভুজের নীল আকাশ, রোদ্রকরউজ্জ্বল সকালের হালকা মন মুগ্ধকর হাওয়া যেন আমাদের সবাইকে স্বাগত জানাল । ভারতের সবচেয়ে বড় জেলা হল কচ্ছের রণ। আর তাঁর সদর শহর হল “ভুজ”।.২০০১ সালের ভয়ানক ভূমিকম্পের ক্ষয় ক্ষতি সামলে এ শহর আজ বেশ আধুনিক আর সুন্দর। আর একে কেন্দ্র করে ঘুরে নেওয়া যাবে কচ্ছের বৈচিত্র্যের বিশাল সম্ভার।
“পঙ্কজ গেস্ট হাউস” থেকে আমরা বিশ্রাম সেরে বেড়িয়ে পড়লাম। শহরের সমস্ত রাস্তা এসে মিলেছে “জুবিলি গ্রাউন্ডে”। আমরা সবাই একটি স্করপিও নিয়ে রওনা দিলাম মান্ডবী বীচের দিকে। দূরত্ব ৬০ -৬৫ কিমি হবে। পড়ন্ত বিকেলে বীচে উট বা ঘোড়ায় চড়ার মজাই আলাদা। বেশ কিছুক্ষণ বীচে কাটিয়ে চললাম মাণ্ডবী প্যালেস বা বিজয় বিলাস প্রাসাদের দিকে। সৈকত থেকে প্রাসাদে যাওয়ার পথে হঠাৎ  চোখ আটকে গেলো পথের পাশে এক ছোট্ট জলাশয়ে। সুন্দর পাঁচিল ঘেরা জলাশয়ে যেন চাঁদের হাট বসেছে। গাইড জানালো জলের বুকে বসে আছে এক ঝাঁক ডাল মেশিয়ান পেলিকান  নানান ভঙ্গিমায়। রঙ্গিন ডানা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পেইন্টেড স্টর্ক। ফ্লেমিঙ্গ সেই অর্থে অনেক কম। স্পট বিলড  ডাক,স্পুন বিল  আর স্টিন্ট অসংখ্য। একসঙ্গে এতো পাখী  এতো কাছের থেকে দেখে এবং এদের এতো সুন্দর সুন্দর নাম শুনে আমরা  আনন্দে আত্মহারা।  গাইড এর তাড়নায় এগোতে হল রাজবাড়ীর দিকে। দূর থেকে নজরে আসে প্রাসাদের উপরিভাগ। ভিতরে যেতেই নজরে এলো মাঠের মাঝে জমিদার বাড়ির মতো এই প্রাসাদ.। ১৯২০ সালে কচ্ছের জাদেজা বংশীয় রাজাদের গ্রীষ্ম কালীন আবাস হিসাবে এটি নির্মিত হয়। বর্তমানে রাজা আর রানিমা থাকেন উপরিতলায়।  এখন লিফট সহ সব আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। প্রাসাদের কিছুটা অংশে চলছে হোটেল ব্যবসা। বলিউড এর বহু সিনেমার শুটিং হয় এখানে। আজ এখান থেকেই ফিরে যেতে হবে ভুজে। সন্ধ্যের পর পর ফিরে এলাম ভুজে। শহরের এক পাশে প্রাগমহল প্যালেস  আর আয়না মহল। অন্যদিকে ভুজের স্বামী নারায়ণ মন্দির। মন্দিরে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম গেস্ট হাউসে। আগামীকাল এই ড্রাইভারকে নিয়েই যাব বৃহৎ রণের দিকে। 

ভুজ দর্শন শেষ করে আজ আমরা পাড়ি জমালাম বৃহৎ রণ এর পথে। স্থানীয় শব্দ “রণ” কথার অর্থ বালুময় পতিত জমি। বিস্তীর্ণ এই লবণাক্ত নিচু জমি ঘিরে রয়েছে উপদ্বীপের মতো জায়গাটাকে। বর্ষার সময়ে জলে ভরে ওঠে রণ অঞ্চল। বর্ষা শেষে আবার দেখা যায় কাদামাটি মেশানো বেলাভুমি। উপদ্বীপের মাঝখানটা তুলনায় উঁচু, অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মত। তার থেকেই এর নাম “কচ্ছ”। 

সকালের চা খাবার খেয়েই রওনা দিলাম খাবড়া হয়ে কালাদুঙ্গার এর পথে। পথের দূরত্ব ৯০-১০০ কিমি হবে। ভুজ থেকে যতই এগিয়ে যাচ্ছি পথেরপাশে কাঁটা ঝোপের প্রাবল্য ততই বাড়ছে। রণ উৎসবের জন্য তোরণ বানানো চলছে।  অল্প কিছুদিন পরেই  রণ উৎসব। হড়কার পথ ফেলে আমরা আরও এগিয়ে চলছি খাবড়ার দিকে।  কাঁটা ঝোপঝাড়ের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যাচ্ছে লবণাক্ত সাদা বেলাভূমি। খাবড়া থেকে কালা দুঙ্গার আরও ২৮-৩০ কিলোমিটার। দুপুরেই পৌঁছে গেলাম কালা দুঙ্গার। কালা দুঙ্গার বা কালো পাহাড় কচ্ছের  রণের উচ্চতম অঞ্চল। গাড়ি থেকে নেমে হেটে বা উটের পিঠে চড়ে ওপরে ওঠা যায়।  এখান থেকে পাখির দৃষ্টিতে বৃহৎ রণের অনেকটা অংশ দেখা যায়।  সীমানার ওপারে পাকিস্থান। তাই এখানে রয়েছে সামরিক ছাউনি। টিলার মাথায় প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো মন্দির “দত্তাত্রেয়” । ব্রক্ষা, বিষ্ণু,মহেশ্বর এই ত্রয়ী এর মিলিত অবতার হল “দত্তাত্রেয়”।  কথিত আছে “দত্তাত্রেয়”তার পৃথিবী পরিভ্রমণ কালে এই কালো পাহাড়ের প্রতি আকৃষ্ট হন। এখানে এসে দেখেন একদল শিয়াল অনাহারে মৃত প্রায়। তখন তিনি তাঁর দেহ উৎসর্গ করেন এই অনাহারক্লিষ্ট শিয়ালদের। কিন্তু শিয়ালরা ভগবান “দত্তাত্রেয়” এর দেহাংশ ভক্ষণ করলেও  পুনরায় তাঁর শরীর পূর্ণগঠিত হতে থাকে। সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই এই মন্দির স্থাপন।    আর প্রতি সন্ধ্যেয় পূজোর শেষে পুরোহিতেরা প্রসাদ আর ভাত সাজিয়ে দেন সেই সকল শিয়ালদের জন্য। এই প্রথা চলে আসছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। এই টিলা ধাপে ধাপে নেমে গেছে সামনের বিস্তীর্ণ বেলাভূমিতে। টিলার ওপরেই রয়েছে সামরিক বাহিনীর দূরবীন। অনেক অনুরোধে তা ব্যবহারের অনুমতি মেলে তাদেরই তত্ত্বাবধানে। দূরবীন দিয়ে ওপর থেকে নজরে আসে সেই লবণ মাটির উপর দিয়ে চলে গেছে এক লম্বা ব্রিজ আরও ভিতরে। তবে সেটা কেবল সামরিক প্রয়োজনেই ব্যবহার হয়ে থাকে। নেমে এলাম টিলা থেকে। এবার ছুটলাম রণের অনেকটা ভিতরে যেখানে রণ উৎসব চলে। ড্রাইভার জানাল উৎসব এখনও মাস দু এক দেরি। উৎসবের কেন্দ্র স্থল ধোরদাতে এসে পৌঁছালাম। ফাঁকা জায়গায় দূর থেকেই নজরে এলো  পরপর রিসোর্ট এর সারি। তাঁবুর আকারে সজ্জিত “গোরেওয়ালি” ঘর পরপর । এখান থেকে আরও ৫ কিমি দূরে মরুভূমির  পারকিং   স্পট। গাড়ি এ পর্যন্তই যাবে। পথ কিন্তু এগিয়ে গেছে আরও বেশ কিছুটা। দু পাশে জলাভুমিতে সাদা স্ফটিকাকার লবনের বিস্তার যেন দিগন্ত ছোঁয়া। কেউ পায়ে হেটে ,কেউ বা ঘোড়া বা উটের টানা গাড়িতে চলেছেন সাদা ধু ধু মরুভূমির আরও গভীরে। আমরাও উঠে পড়লাম একটি উটের টানা গাড়িতে । সামনেই বিভিন্ন উচ্চতায় অনেক গুলো প্ল্যাটফর্ম ।  সেখানে অনেকেই উপভোগ করছেন পাখির দৃষ্টিতে বৃহৎ রণের লবণের সমুদ্র, শ্বেতশুভ্র মরুভূমি আদি দিগন্ত বিস্তৃত। বরফ সদৃশ সেই লবণের মহাসাগরে প্রাণের বড় অভাব। পায়ের নীচে মুচমুচে লবন যেন বরফ, কোথাও পায়ের পাতা ডোবা ,কোথাও বা কঠিন ক্রিস্টাল এর মতো শক্ত।  রাস্তা ছেঁড়ে আমরা আরও এগিয়ে গেলাম বরফের মতো পড়ে থাকা নুনের ওপর। নুনের এই বিস্তার কেমন যেন নেশা জাগানো। এ এক অন্যরকম অনুভুতি, কল্পনাতীত। যতদূর চোখ যায় চারিদিকেই সেই বরফের মতো লবণের সমুদ্র । আমরাও সেই লবণ সাগরে হারিয়ে গেলাম যে যার মতো।  বৃহৎ রণের এই বিস্তীর্ণ সাদা ধু ধু মরুভূমির বুকে হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়ি অনেকটা ভিতরে , একাকী। বাধাহীন দৃষ্টি সীমানায় শুধুই সাদা সাদা লবণ মহাসাগরের বিস্তার হারিয়ে গেছে দিগন্তের ওপারে। চেনা জগতের বাইরে, বইয়ের পাতায় পড়া বা দেখার থেকেও অচেনা অদেখা, ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ঘড়িতে নজর পরতেই চেতনা ফিরে এলো। বেলা প্রায় ২ টা বাজে। এখান থেকে আমরা যাব নারায়ণ সরোবরে।  এখান থেকে দূরত্ব প্রায়   ১৮০ কিমি। রাস্তার ধারের হোটেল থেকে খাবার খেয়ে গাড়ি ছুটল হু হু করে। কিন্তু মনটা পড়ে রইল সেই লবণ মরুভূমির শ্বেত শুভ্র প্রাঙ্গণে। 

কচ্ছের কর্কশ রুক্ষ লবণাক্ত অনাবাদী জমি ছুঁয়ে এ চলা  অন্যরকম। সাদা নুন বিছিয়ে থাকা বরফের মতো প্রান্তরে চড়া রোদের ছটা চোখে বেশ জ্বালা ধরায়। এখানে সেখানে ডিবির মতো উঁচু উঁচু করে রাখা নুনের স্তূপ। রাস্তায় কোন ভিড় নেই। রাস্তাও বেশ মসৃণ। গাড়ি ছুটে চলছে দুরন্ত গতিতে। হাল্কা নিদ্রা ভাঙতেই দূর থেকে নজরে এলো কোরি ক্রিক বা খাঁড়ি।  খাঁড়ির ঢুকে আসা জলের মাঝ দিয়ে রাস্তা সোজা পৌঁছে গেছে নারায়ণ সরোবরে । এখানে সন্ধ্যে নামে বেশ দেরীতে। ঘড়িতে ৬ টার বেশি বাজে। সূর্য পশ্চিম প্রান্তে হেলে গেছে অনেকটাই। পড়ন্ত সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে বেশ। ভারতের পশ্চিমতম প্রান্তে কোরি ক্রিক বা খাঁড়ি লাগোয়া নারায়ণ সরোবর এক পবিত্র হিন্দু তীর্থ । সরোবর এর এক পাশে আদি নারায়ণ আর বিষ্ণু মন্দির। জলে নানান পরিযায়ী পাখী। অল্প দূরে খাঁড়ির মুখের দিকে অতি প্রাচীন কোটেশ্বর মহাদেবের মন্দির। মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে দেখলাম দোকানীর অধিকাংশই বাঙালী। ভারী  আনন্দ হল মনে।  চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর লেখনীতে পাওয়া যায় কোটেশ্বর মহাদেবের এই প্রাচীন জনপদের নাম। মন্দির চত্বর থেকেই নজরে আসে এর প্রায় তিনদিক নুন মিশ্রিত জলে ঘেরা, দূরে এক লাইট হাউস।  পড়ন্ত সূর্যের আলোয় মন্দিরের ছাঁদ থেকে সাগরের মতো খাঁড়ির বিস্তারকে দেখতে  অপূর্ব  লাগে। চারধারের পরিবেশ অসাধারণ। জলের মাঝে মন্দিরের অবস্থান সত্যি অনবদ্য। অস্তমিত সূর্যের লালাভ আলোয় এ যেন এক সাগর পাড়ের  রূপকথা।   এবার আমাদের ফিরে চলা ভুজে। হোটেলে  খাবার খেয়ে গাড়ি ছুটল হু হু করে। গেস্ট হাউসে যখন ঢুকলাম তখন রাত্রি ১১ টা। আজ অনেক পথ ঘুরেছি । সবাই আজ খুব  ক্লান্ত । শোওয়ার সাথে সাথে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। বৃহৎ রণের অনেকটাই আজ দেখে নিয়েছি । তবুও আরও কতো কি যে দেখা  রয়ে গেলো বাকি।   

গতকালের বৃহৎ রণের অখণ্ড অনাবিল আনন্দ আর  সৌন্দর্য উপভোগ করে সবাই আজও বেশ ক্লান্ত। ক্ষুদ্র রণের “এস স্যাঞ্চুরি” ভ্রমণের আজকের প্ল্যানের কারো কোন ইচ্ছাই দেখতে পেলাম না।পথের ক্লান্তি যখন মনের অন্তঃস্থলে বেশি প্রভাব ফেলে তখন ভ্রমণের আস্বাদন সদর্থক হয়ে ওঠে না। তাই আমিও কাউকে আর বাইরে বের হবার জন্য জোরাজুরি করলাম না। ছুটির মেজাজে হোটেলের ঘরে  শুয়ে বসে,হাসি ঠাট্টায় আর আলস্যতায় দিনটি  কাটাতে বেশ ভালই লাগলো।
পরদিন খুব সকালেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ভুজের বাজার ,জুবিলী গ্রাউন্ড ,শহরের আনাচে কানাচে মর্নিং ওয়াকেই একা একাই একটু ঘুরে নিলাম। সমস্ত ক্লান্তি ঝেরে ফেলে খাওয়া দাওয়া সেরে  “পঙ্কজ গেস্ট হাউস” কে বিদায় জানিয়ে চললাম ক্ষুদ্র রণের দিকে। বৃহৎ রণের বিশাল সম্ভারের কাছে একে দেখে মন খুব একটা  ভরল না। দু একটা গাধা আর কিছু ফ্লেমিঙ্গ দেখেই খান্ত হলাম।  আমাদেরও উৎসাহ এর কিছুটা খামতি ছিল। একরকম ক্ষুদ্র রণকে বুড়ি ছোঁওয়া করেই সন্ধ্যে সন্ধ্যে চলে এলাম ভূজ স্টেশনে ।  গন্তব্য আমেদাবাদ।  টিকিট কাটাই ছিল। রাতের খাবার  খেয়েই ট্রেন এ উঠে পড়লাম। ট্রেনে অতিরিক্ত কোন ভিড় নেই। ট্রেন ছুটে চলল আমেদাবাদের পথে। পৌঁছাব কাল ভোরে।   

হৈ চৈ শুনে ঘুম ভেঙে দেখি ট্রেন আমেদাবাদ স্টেশনে ঢুকছে। ভোরের আলো এখনও ফোটেনি। সকাল হলে আমরা ৮ জন শহরের জনবহুল এলাকায় “গুজরাত হোটেল” এ ঠাই নিলাম। গুজরাত ভ্রমনে এটাই আমাদের সর্বশেষ ঠিকানা।  সকালের খাবার খেয়ে যথারীতি একটা গাড়ি ভাঁড়া করে বেড়িয়ে পড়লাম। প্রথম লক্ষ্যই হল “সবরমতি আশ্রম” বা “গান্ধী আশ্রম” । যাওয়ার পথেই শহরের উপকণ্ঠে এক জৈন মন্দির দেখে দাড়িয়ে পড়লাম। শ্বেতপাথরের  তৈরি  মন্দির আর তার প্রাঙ্গণে বসে থাকতে  এতো ভালো লাগলো যা এক লহমায় শরীর মনকে শান্ত করে দিলো। শহরের ওপরে মন্দির অথচ নির্জনতা ,গাম্ভীর্যতায় সে যেন অনন্য। অবাক হওয়া তখনও বাকি ছিল  যখন সারিবদ্ধ ভাবে প্রসাদ গ্রহণ করতে গিয়ে দেখলাম প্রসাদের সাথে সবাইকে একটা করে সাদা এনভেলপ প্রদান করা হচ্ছে।  এনভেলপ খুলতেই পেলাম পরিষ্কার ২০ টাকার নোট। বাচ্চা ,বুড়ো, যুবক, যুবতী, ধনী, দীন সবাইকে এই রাশি প্রদানের হেতুটা কি কিছুতেই বোধগম্য  হল না। কিছুটা আনন্দ কিছুটা অবাক হয়েই চললাম আমাদের গন্তব্যে। 
পৃথিবী বন্দিত সবরমতি নদীর তীরে গান্ধী আশ্রমে মুহূর্তেই এসে পৌছালাম। এ যেন এক তীর্থক্ষেত্র। দেশ বিদেশের নামি দামী লোকের সমাবেশ এ যেন  নিত্যদিনের ঘটনা। স্বাধীনতা আন্দলনের ভারতবর্ষে গান্ধীজী ভারত পরিভ্রমন বা কারাগার থাকা  ছাড়া দু জায়গায়  বেশি সময় কাটাতেন। একটি হল আমেদাবাদ এর এই সবরমতি আশ্রম,  আরেকটি হল মহারাষ্ট্রের ওয়াড়ধায় সেবাগ্রাম।  গুজরাতের এই সেই আশ্রম যেখান থেকে গান্ধীজী ডান্ডি অভিযান শুরু করেন ১২ ই মার্চ ১৯৩০ সালে যা লবণ সত্যাগ্রহ নামে বিশেষ ভাবে খ্যাত। এই অভিযান স্বাধীনতা আন্দোলনে দারুন প্রভাব ফেলে। তারই স্মরণে  স্বাধিনত্তর ভারত বর্ষের কেন্দ্রীয় সরকার এই “সবরমতি আশ্রম”কে জাতীয় স্বারক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। আশ্রম প্রাঙ্গনের  মধ্যে   রয়েছে “নন্দিনি” (গেস্ট হাউস),”ভিনবা কুটীর” ,”উপাসনা মন্দির”, “মগন নিবাস”ইত্যাদি অনেক আশ্রম কুটীর ।  রয়েছে অতি উত্তম  একটি মিউজিয়াম । মিউজিয়ামে রয়েছে  “মাই লাইফ ইজ মাই ম্যাসেজ”নামে একটি গ্যালারি। এতে রয়েছে গান্ধীজীর অসংখ্য দুর্লভ ছবি। পুরো আশ্রম ঘুরতে অনেক সময় লাগে। এই আশ্রম শুধু ইতিহাস নয় এ যেন নিজেই এক সভ্যতা । এলাম সবরমতি নদীর পারে। নদীর ঘাঁট তার সাবেকীয়ানা ছেড়ে আজ অনেক আধুনিক। গাছের ছাওয়ায় নির্মল হাওয়ায় যে যেভাবে পারলাম বসে পড়লাম এখানে। বিশ্রামের সময়ের বাঁধন কে মানতেই চাইছে এ মন। তথাপি  অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবার গাড়িতে উঠে বসলাম সবাই।  এর পর এলাম আমেদাবাদের কাছে গান্ধীনগর জেলায় আডালাজ গ্রামে। এখানে রয়েছে “আডালাজ স্টেপ অয়্যল” বা “রুদাবাই সিঁড়ি কুয়া”। এই সিঁড়ি কুয়া নির্মাণ ভারতীয় স্থাপত্য শিল্পের এক অদ্ভুত নিদর্শন। ঘুরতে ঘুরতে এলাম বৈষ্ণা দেবী মন্দির। একটা  বড়ো পাঁথর কে কেটে কেটে  বিভিন্ন পথ বেয়ে অনেক চড়াই উতরাই কে সঙ্গে করে পৌঁছাতে হবে দেবীর মুল কক্ষে । এ যেন জম্মুর কাটরার বৈষ্ণাদেবী দর্শনের স্মৃতি কে উসকে দেয়। এই অভিযান এক রোমাঞ্চকরও বটে।  “টেক্সটাইল মিউজিয়াম”,”জামা মসজিদ”  ঘুরে চলে এলাম “অক্ষরধাম মন্দিরে”। “অক্ষর ধাম” শব্দের অর্থ হল ভগবানের স্বর্গীয় আবাস স্থল । এখানে মানুষ ত্যাগ আর অনন্ত শান্তির প্রার্থনা করে থাকে । আমেদাবাদের  এই মন্দিরটি স্থাপিত হয় ১৯৯২ সালের ৩০ শে অক্টোবর।  মন্দিরে হিন্দুদের কাছে ভগবান “স্বামী নারায়ণ”  পূজিত হন। প্রতিদিনই প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় ।  মন্দিরের অসাধারণ কারুকার্য , অতি সুন্দর ফুলের বাগান , ভক্তি,  নিষ্ঠা আর নিয়মাবর্তিতা সবার মনকে দারুণ ভাবে আকর্ষণ করে।  বিকেল হয়ে এলো। মন্দিরের বাইরে এসে গুজরাটি কিছু খাবার খেয়ে গাড়িতে চললাম। গাড়ি এসে দাঁড়ালো “কানকেরিয়া লেক” এর পাশে। আমেদাবাদ এর সবচেয়ে বড় লেক এটি। বহু পুরনো এই লেককে ঘিরে  এক বিশাল সাম্রাজ্যের যেন বিস্তার ঘটেছে। কি নেই এতে। কানকেরিয়া চিড়িয়া খানা(নেহেরু জুলজিকাল গার্ডেন), বালভাটিকা(চিলড্রেন পার্ক) ,বেলুন সাফারি, অ্যামিউসমেন্ট পার্ক, টয় ট্রেন, নাগিনা বদ্বীপ, স্টোন পার্ক  আরও কতো যে কি আছে ঘুরে শেষ করতে পারা গেলো না। অটল এক্সপ্রেস এ ( টয় ট্রেন) ৪.৫ কিমি লেকের চারধার ঘুরতে বেশ রোমাঞ্চকর লাগলো। ২০০৮ সালের ২৫ এ ডিসেম্বর  ভারতের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিবসে এই খেলনা ট্রেন টিকে লন্ডন থেকে এনে এখানে বসানো হয়েছে। এক সাথে আনন্দের এতো বাহার, উপভোগের এতো বৈচিত্র্য আর  কোথাও পেয়েছি বলে ত মনে পড়ে না।   এই লেকের  কাছে এসে যুবক বুড়ো সবাই যেন শৈশবের স্মৃতিতেই থেকে যেতে চায়। শুনতে পেলাম প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে  লেকের ধারে “কানকেরিয়া উৎসবে” দেশ বিদেশের আবাল বৃদ্ধবণিতা  সবাই মেতে ওঠে আনন্দে।   অনেক অনেক আনন্দকে সঙ্গে করে ফিরে এলাম হোটেল এ। আসবার পথে খুঁজে খুঁজে ভাত সব্জির হোটেল পেলাম বটে কিন্তু বাঙালী রান্নার স্বাদের অভাবে খাওয়াতে উদর আর ভরল না। 
আজকের আমেদাবাদ ভ্রমণ দারুণ উপভোগ্য ছিল । গুজরাট ভ্রমণের   আজই শেষ দিন। এবার বাড়ি ফিরবার পালা। গুজরাতে প্রকৃতির এতো সৌন্দর্য, এতো বৈচিত্র্য, স্থাপত্তের এতো নিপুণতা দেখলেও যেন দেখা শেষ হয়না। ফিরে ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে বারবার। রাত্রেই ব্যাগ পত্তুর সবাই গুছিয়ে নিলাম।  কাল সকালে প্রস্তুত হয়ে বেড়িয়ে যাবো স্টেশনে। আমেদাবাদ থেকে দিল্লী । তারপর দিল্লী হয়ে বাড়ি । একদিকে বাড়ি ফেরার আনন্দ অপরদিকে এই দীর্ঘ ১৭ দিনের গুজরাট ভ্রমনের ইতি টানতে কোথায় যেন একটা বিষাদের ছোঁওয়া লাগলো মনে।  শুয়ে শুয়ে ভাবতে ভাবতে মনের ভাবনায় মন্দির,সমুদ্র, বন্দর, লেক,মরুভূমি  সব যেন  একসাথে  ভিড় করে এলো। সব কেমন যেন এলোমেলো হতে লাগলো। রেল লাইন ধরে কোথায়  যেন  ছুটে চলেছি আমি। অচেনা অদেখা এই পৃথিবীতে আমি যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম।

------------------------------------------------------------------------------

গল্প : ইমরান খান রাজ

 প্রথম দেখা
     --ইমরান খান রাজ

ঘড়ির সময় ঠিক বিকাল ৪টা বাজতেই অহনার মোবাইলে সেট করা এলার্ম বেজে ওঠলো। অল্প শব্দেই আজ তার দুপুরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। অবশ্য তার একটা বিশেষ কারনও আছে বটে। বিগত একবছরের অপেক্ষা, ধৈর্য আর ভালোবাসা আজকে তার ফল দিবে। সে জানে যে, "অপেক্ষার ফল অতি মিষ্ট"। ঘুম ভাঙ্গতেই খুব তাড়াহুড়ো করে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে গেলো। মোবাইলটা হাতে নিতেই সে দেখতে পায়, অপরপ্রান্ত থেকে তার মনের মানুষ তার জন্য একটা ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে। বেশ আগ্রহ এবং মনের মধ্যে খানিকটা কৌতূহল নিয়েই মেসেজটার দিকে চোখ বুলায় অহনা।

মেসেজ দেখেই তার চোখ কপালে ওঠলো! আর কারো নয়, তার মনের মানুষ আরিয়ান তাকে মেসেজ পাঠিয়েছে। ঠিক ৪:৩০ মিনিটে রমনা পার্কে থাকতে হবে। কোনভাবে দেরি করলে আর কখনো দেখা হবেনা তাদের ! এমনি এক কঠোর বার্তা পাঠায় আরিয়ান। ছেলেটা কঠোর হলেও মনের দিক থেকে অনেক বেশিই নরম। যাই হোক, আরিয়ানের মেসেজ দেখে দ্রুত পার্কে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠে বসলো অহনা। চালক প্যাডেল দেওয়ার সাথে সাথে একটু মৃদু হাওয়া এসে লাগছিলো অহনার গায়ে। এরকম স্নিগ্ধ বাতাস ঢাকা শহরে সচরাচর অনুভব করা যায়না। রিক্সার চাকার সাথে ঘুরছে অহনার মাথায়ও নানান চিন্তাভাবনা। আরিয়ানকে নিয়েই ভাবছে। এইতো কিছুদিন আগের কথা, হঠাৎ ফেসবুকে পরিচয় হলো তাদের। শুরুতে আরিয়ানের মেসেজের উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকতো সে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেও আরিয়ানের নরম হৃদয়ে প্রবেশ করতে শুরু করলো। সেই থেকেই শুরু। আজ দেখতে দেখতে একবছর পার হয়ে গেছে। সম্পর্কের এতটা সময় অতিবাহিত হবার পরেও তারা কেউ কাউকে দেখেনি। কিভাবেই বা দেখবে? দুজনেরই ফেসবুক প্রোফাইলে ছিলো পাখির ছবি। আর এই দিকটাতেই মিল থাকার কারনেই হয়তো সে আরিয়ানের প্রেমে পড়ে যায়। অহনার পাখি পোষার শখ ছিলো সেই ছোটবেলা থেকেই। তার এখনো মনে পরে সেই চড়ুই পাখিটার কথা। যখন তারা গ্রামে ছিলো তখন তাদের ঘড়ের টিনের চালার কোনোএক কোনে ছিলো চড়ুই পাখিটির বাসা। অহনা প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পূর্বে এবং স্কুল থেকে বাসায় ফিরে বিকেলে ধান ছিটিয়ে দিতো। দুইবেলা খাবার দেওয়ার কারনে চড়ুই পাখি দুটি হয়তো অহনার বাধক হয়ে গিয়েছিল। পাখি দুটিও ঠিক সময়মত বাসা থেকে নিচে মাটিতে নেমে ছুটোছুটি করতো। পাখির সাথে তখনি তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। বাবা-মার একমাত্র মেয়ে অহনা। তাই তার কোনো বায়না'ই বাবা-মা ফেলে দিতে পারতো না। তাই মেয়ের চড়ুই পাখির জন্য বাজার থেকে ধান কিনে আনতো বাবা।

অহনা যেতে যেতে প্রায় পার্কের কাছেই চলে
এসেছে। সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই তার। তখনো সে শুধু তার আরিয়ানকে নিয়েই ভাবছে। কেমন হবে আরিয়ান? আমাকে কি তার পছন্দ হবে? আমিতো দেখতো তেমন সুন্দর নই! নানান প্রশ্ন করছে সে নিজেকেই। একবছরের দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আজ অবশেষে দুটি ভালোবাসার মানুষের প্রথম দেখা হতে যাচ্ছে। কিভাবে শান্ত রাখবে মনকে? অহনা সেটাই বুঝতে পারছে না। তার অবুঝ মন বারবার শুধু প্রথম দেখার অপেক্ষা করছে।

কল্পনার জগৎ থেকে বের হতেই পার্কের গেটের কাছাকাছি এসে অহনা লক্ষ করে নীল শার্ট আর একগুচ্ছ লাল ফুল নিয়ে পিছু হয়ে কেউ একজন দারিয়ে আছে। তখনো রিক্সায় বসে আছে অহনা। মুহূর্তেই বুকের ভেতরটা কেমন জোরে জোরে শব্দ করছে তার। মুখে কিছুটা হাসি নিয়ে ভাবছে আরিয়ানের কথা। এটাই তার আরিয়ান। লাল গোলাপ হাতে দারিয়ে আছে। দূর থেকে প্রথম দেখেই আন্দাজ করে ফেলে সে। অবশ্য তার ব্যাক্ষাটাও খুব সহজ। নীল রঙটা দু'জনের কাছেই খুব প্রিয়। তাই গতকাল রাতেই তারা নীল শার্ট আর নীল শাড়ী পড়ে প্রথম দিন দেখা করার প্লানিং করে ফেলে।

পার্কের গেটের অপরপ্রান্তে রিক্সা থামার শব্দ পেয়েই আরিয়ানের বুকের ভেতরটা কেমন যেনো কেপে ওঠলো। তার অহনা এসে গেছে। পিছন ফিরে তাকাতেই সে দেখলো নীল শাড়ী পড়া একটি মেয়ে রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়ালো। মুখে কিছুটা হাসি ছিলো দু'জনেরই। অহনা চোখে কাজল দিয়েছে আর তার কথামতো কপালে একটি লালটিপও আছে। আরিয়ান তা দেখেই যেনো অহনার চোখের মায়ায় পড়ে যায়। হাত উঁচু করে ইশারা করে অহনাকে। প্রথম দেখা হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সে। অহনাও হাত তুলে তার ভালোবাসার মানুষের ডাকে সাড়া দেয়। আরিয়ান দারিয়ে আছে রাস্তার ওপারে। একটা অবর্ণনীয় মুহুর্তের অপেক্ষায় দু'জন দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। তখনো তারা দু'জনে দু'জনার দিতে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ হয়ে কি যেনো দেখছে তারা। হয়তো শতজনম পর তাদের দেখা হয়েছে, তাই শুধু পাথর হয়ে দারিয়ে আছে দুটি মানুষ। আরিয়ান হাত ইশারা করে অহনাকে, রাস্তার এপার আসার জন্য। সময় চলে যাচ্ছে! পার্কে বসে হাতে হাত রেখে তারা গল্প করবে। দু'জনের ছোটবেলার স্মৃতিগুলো শেয়ার করবে। আরো কত কি! আরিয়ানের ইশারা বুঝতে পেড়ে রাস্তা পাড় হচ্ছে অহনা। একপা-দু'পা করে এগুচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে, এইতো সেই মুহুর্ত। যার জন্য দীর্ঘদিন মনে কষ্ট নিয়ে পড়ে থাকতে হয়েছে। আজকের পর থেকে আর এমনটা হবেনা। এরপর যখন ইচ্ছা সে আরিয়ানকে দেখতে পাবে। আর তাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষারত থাকতে হবেনা।

অহনা ধীরে ধীরে আরিয়ানের দিকে তাকাতে তাকাতে রাস্তা পাড় হচ্ছে। রাস্তা পাড় হবার সময় সে কোনদিকে খেয়াল করছে না। বিন্দুমাত্র ভয় করছেনা তার। কারন, তার মাথায় এখন শুধু আরিয়ানের চিন্তা ছাড়া অন্য কিছুই নেই। তাকে স্বাগত জানাতে পার্কের গেট থেকে আরিয়ান হেটে হেটে রাস্তার কিনারার দিকে এগুচ্ছে। হঠাৎ আচমকা একটা গাড়ী এসে অহনাকে তীব্র ধাক্কায় ফেলে দিলো রাস্তার এককোনে। একমিনিট এর জন্য আরিয়ান স্তব্ধ হয়ে গেলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। কি দেখলো? অহনা এক্সিডেন্ট হয়েছে? নাকি সে ভুল দেখছে! তার অহনা কই? দৌড়ে সে অহনার কাছে ছুটে গেলো। একমুহূর্তের মধ্যেই চারিদিকে মানুষের ভিড় জমে গেলো। সবাই শুধু দেখছে আর যে যার মতো কথা বলছে। মানবসৃষ্ট ভীর ঠেলে আরিয়ান সামনে যেতেই দেখলো তার অহনা মাটিতে পড়ে আছে। যেকিনা তার সাথে দেখা করার জন্য গত একটি বছর অপেক্ষা করেছে। অহনার মাথা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। আরিয়ান চিৎকার দিয়ে মাটিতে নেমে পড়ে। অহনার মাথাটি তার কোলে রেখে শুধু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অহনার দিকে। চোখের কোন থেকে কখন যে ফোটায় ফোটায় জল গড়ানো শুরু হয়েছে আরিয়ান তা লক্ষ করেনি। অহনাকে বুকে টেনে নিয়ে ভাবছে, তোমার সাথে শুধু প্রথম দেখাটাই হলো। প্রথম কথাটা বলা হলো না।


--------------------------------------------------


ইমরান খান রাজ 

কবি ও লেখক 

নারিশা, দোহার-ঢাকা,  বাংলাদেশ 


---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization 
---------------------Voice---------------

Wednesday, 29 July 2020

কবিতা : মৃত্যুঞ্জয় কর

কবি পরিচিতি : আমি মৃত্যুঞ্জয় কর, কালদিঘী, গঙ্গারামপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর নিবাসী। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পাড়ি, পেপার থেকে লোকের কবিতা টুকে নিয়ে বন্ধুদের কে শুনিয়ে বলতাম এটা আমি লিখেছি। ওরা শুনে খুব বাহবা দিত।আমি আবার ভাবলাম যে ওরা কেউ যদি পেপার পড়ে তাহলে তো আমি ধরা পরে যাব, তাই নিজে লিখতে চেষ্টা করলাম। সেই থেকেই লেখা শুরু। 

যদিও খুব একটা ভালো লিখতে এখন ও পারিনা।এখন আমি বাবার ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত। আমি জুলজি নিয়ে স্নাতক হয়েছি।লেখালেখির পাশাপাশি আমার পড়াতে খুব ভালো লাগে।

----------------------------------------------------------------------

শূন্য জীবন
            

জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে
মুক্ত দুয়ারে বসে,
ঝাপসা হয়ে আসে অশ্রুজলে 
স্মৃতির আনাগোনার ত্রাসে।
শৈশব কালে মায়ের কাছে
বায়না করিতাম কত-
কাগজের নৌকা বানাইয়া দিত,
জলে ভাসাইতাম শত।
পরন্ত বিকেলে মাঠের মাঝে
ঘুরি ওড়াইতাম সকলে, 
দিঘির মাঝে ঝাপিয়ে পড়িয়া 
নাইতাম ভর দুপুরে। 
মা যখনই লাঠি লয়ে
পুকুর পাড়ে আসে, 
দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে
ছুটিতাম বাড়ির দেশে।
এমনি করিয়া কখন জানি 
বড় হয়ে উঠেছি আমি,
শৈশবের দিনে ভাটা পড়েছে 
পোক্ত মানুষ মানি।
মা- বাপের বড় সাঁধের লাগি
বউ আনিআনিলেন ঘরে, 
লক্ষী মন্ত বউ আমারে
ভালবাসিত বিঘোরে।
কথার সাথে হাসি যে তার 
রইত সদা ঠোঁটে, 
মায়ের সাথে তাল মিলায়ে
দ্রুত সংসারী হয়ে ওঠে।
সকালে যখন কাজে যাইতাম 
খাবার দিত বেঁধে, 
বাইরের দোরে দাড়াইয়া থাকিত
আমার পানে চেয়ে। 
সাঁঝ বেলায় যখন ঘরে ঘিরিতাম 
কাঁধে এলিয়ে দিত মাথা,
সারাদিন পরে মুখ খানি দেখে
ক্লান্তি বিদায় গাঁথা। 
প্রকৃতির নিয়মে ভর করিয়া
একদিন প্রাঃত কালে,
পূত্র সন্তান ভূমিষ্ট হইল 
আনন্দিত সকলে।
সেইদিন হতে কালো দিন মোর
শুরু হয়েছিল সবে,
ভাবিনি আমারে ছারিয়া যাইবে
ভালবাসার প্রতিদানে।
সন্তানরে বুকে আগলে ধরে 
নিজ হাতে পরিশেষে, 
দূর দেশে তাকে পাঠাইয়া দিয়েছি
অগ্নি বায়ুতে মিশে।
তারপর কত দিন যে আমি
ঝরিয়েছি অশ্রুধারা, 
মোদের সুখের জীবন দেখে
হিংসায় জ্বলিত ধরা।। 
তাইতো তাকে কেড়ে নিল
একা না রাখার জন্য, 
জীবন দিয়ে সন্তান দিল
ভালবাসারই চিহ্ন।
সন্তান সবে বছর পাঁচেক 
দুরন্ত অতি ভারি,
খেলা ধুলা আর বুদ্ধিমত্তায়
তার কাছে আমি হারি।
ছেলেকে লয়ে দিনক্ষণ মোর
কাটত বেশ সারা,
মুখের পানে চেয়ে থাকিতাম 
আমি যে "সে" হারা।
একদিন দুপুরে রান্না সেরে
সবে ঠেকিয়েছি পিঠ,
খবর আসিল ছুটে চল
পুকুর পাড়ের দিক।
গিয়ে সেথা আমি বাঁক রুদ্ধ 
দম বন্ধ হয়ে আসে,
ছেলে যে আমার কথা কয়না
রয়েছে জলে ভেসে।
হায়রে বিধি নিঠুর তুমি 
কেড়ে নিলে ছোট্ট প্রাণ, 
কি অপরাধ ওর হাসিতে ছিল?
করলে মলিন চিরকাল। 
সন্তান কে বুকে আগলে ধরে 
বেঁচেছিলাম আমি,
বুক খানি খালি করিয়া
কি সুখ পাও তুমি?
তোমার বিধান বড়ই নিঠুর 
আমার,এ ধরাধামে, 
ভাবিলাম এ জীবন রেখে কি লাভ
শুন্য ধরাধামে। 
তারপর যতবার মরিতে গেছি
বিধি বাঁচায়ে দিছে,
কস্টের ভরা পূর্ণ হয়নি
আমার পাপের ত্রাসে।
এমনি করিয়া আশির কোটায়
পা দিয়েছি সবে,
জানিনা আর কতদিন
বাঁচিয়ে রাখবে মোরে।
চলতে ফিরতে ভালো মতো 
আর পারিনা প্রভু,
এবার তুমি নাও আমারে
দয়া কর কভু।
শাখের আওয়াজে ফিরিল জগতে
স্মৃতির অবসানে, 
ঝাপসা চোখে সূর্যাস্ত গেল
আরও একটি দিন শেষে।

----------------------------------------------------------------

ভক্তের পরীক্ষা
                      

শহরতলীর  এক সে মন্দির, 
রোজ পুজো হয় আড়ম্বনায়,
ভক্তবৃন্দের ঢল নামে বেশ
কীর্তন হয় নানা ভঙিমায়।
রোজ সকাল,আর সন্ধ্যাবেলা
বাড়ির সব কাজ সেরে হায়-
ছুটতে ছূটতে আসেন মন্দিরে
ভক্তি কত যে দেখাতে হয়।

কদিন হল পুরুত মশাই 
লক্ষ্য করছেন বাহির আঙিনায়, 
লম্বা দাড়ি, নোংরা মতন -
পাগল মনে ঠায় বসে রয়।
এদিকে সব ভক্তবৃন্দ-
বেজায় ক্ষীপ্ত নোংরা নব্য,
তবুও,তারা জোট বেধে রয়
দেখাতে হবে সব ভক্তিময়।

ভক্তবৃন্দের ভক্তি ভারে
দেবতার কাঁধ নড়ে না যে,
তাই তিনি ধার্য্য করলেন 
পরীক্ষা নেবেন ভক্তগনে।
একদিন ঠিক সন্ধ্যা ক্ষনে
দেবতা এলেন স্বয়ং মাঝে,
কহিলেন সব ভক্তগনে-
কেমন ভক্ত পরীক্ষা দাও মোর সনে।

মোর একখানা চক্ষু লাগিবে
ত্রিনয়ন খানা ঘাটের জলে,
হারিয়ে ফেলেছি স্নানকালে
যে জন পারিবে প্রথমে দিতে-
চক্ষুখানা জোগার করে,
সেই হবে মোর আসল ভক্ত
সন্দেহ নেই স্বর্গে রবে।

ভক্তগন সবাই ছুটিল
নানা গাঁয়ে গিয়ে হেরিল,
কেহনা দিতে রাজি হইল
ক্লান্ত হয়ে সকলে ফিরিল।
খালি হাতে সবাই ফিরে
দেবতারে কইল করুন সুরে-
চক্ষু সে-যে অমূল্য রতন 
কেউ তা নাহি দিতে পারে।

দেবতা স্মিত হাসিয়া কহে
চক্ষু সে তো পেয়ে গিয়েছি,
দিয়েছে দেখ দুরে বসে 
জীর্ন ময়লা নোংরা বেশী। 
তোমরা যখন ছুটিলে খুঁজিতে 
পাগল মতন ভক্তটি এসে,
নিজ চক্ষু হাতে লয়ে
শপিল প্রাণ মোর চরনে।

দেবতা হইয়া চাইলাম যাহা
সে তো তোমারই এক অঙ্গ যথা,
ভক্ত হওয়া কি এতই সোজা?
ত্যাগ আগে করিতে শেখ সখা।

------------------------------------------------------------------

রাজার ভয়
                   

গাঁয়ের পথ  ধরি রাজা চলিছে 
সে এক বিরাট আড়ম্বনায়,
নগর, বাজার, সেজেছে দেখ_
রং বাহারী নানা শোভায়।
রাজা চলিছে স্বর্ন রথে
সাথে,শত শত প্রহরী, 
আগে পিছে তার চলিছে যত
সেনা সেনানী দের সারি।
রাজার এহেন বিলাসিতা
চাক্ষুষ  করিবার তরে,
পথ ধারে ভীড় জমেছে,
গরিব মানুষ দলে দলে। 
ক্ষমতার অশেষ প্রতিপত্তি
লুটিয়া প্রজার সম্পত্তি, 
প্রজার ভালো করিবার জন্য
যায়না শোনা মুখে কোনো উক্তি।
প্রজাদের তবু রাজার প্রতি 
অশেষ  মনে  ভক্তি,
প্রয়োজনেতে, রাজার কাছে
যাইবার নেইকো শক্তি। 
প্রজাদের সব লুটিয়া লয়ে
দূর্বল করেছে মনে, ধনে,
দুবেলা তাদের অন্ন জোটেনা
প্রতিবাদী নয়  মনে।
ঈশ্বরের কাছে মোর প্রার্থনা 
কোনো এক প্রাতঃকালে,
প্রজাদের মনে সাহস আসুক
ফিরুক মনোবলে।
কোনো একজন সাহস করিয়া,
ভীড়ের মাঝে হতে,
চেঁচিয়া বলিবে রাজা তোর
কিসের এত ভয় লাগে?
তুঁইতো চলেছিস নিজ রাজ্যে 
প্রজাদের  ভগবান।
কেন তবে এত নিরাপত্তা লাগে,
ভাবিস তুঁই কত গুনবান।


-----------------------------------------------------------------*-

কবিতা : কমল ঘোষ

কবি পরিচিতি :  শ্রী কমল ঘোষ। 
পিতা- শ্রী পরাণ চন্দ্র ঘোষ, মাতা- অনিমা দেবী। জন্ম- ইংরেজি ১৯৯৫ সনে। মালদহের ইংলিশ বাজারের এ. কে. গোপালন কলোনী গ্রামে। শিক্ষা জীবন- প্রাথমিক শিক্ষা বিবেকানন্দ শিশু মন্দির থেকে। মাধ্যমিক গৌড়ীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্পন্ন করার পর বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক  মিল্কি উচ্চ বিদ্যালয়ে (উ: মা ) ভর্তি। তারপর গৌড় মহাবিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী।


 ছোটবেলা থেকে লেখালেখি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেওয়াল পত্রিকা সহ বিভিন্ন পত্রিকায় কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। কবি বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। পরিবেশ সচেতনতার উপর বিভিন্ন রকম কাজ করে চলেছেন।


------------------------------------------------------------------

দ্যাশের ভাষা 


উত্তর বাংলার লোক হামি
ম্যালাই ভাষাতে কথা কহি,

কেউ বুঝুক আর না বুঝুক

হামরা তো বুঝি,এই ভাষাতেই হয় লাজুক।

ভদ্দরলোকের কথা বুইঝতে পারি না,

ত্যাতে হামার কিচ্ছুই ক্ষতি হয় না।

জীবনের থ্যাকা ভালোবাসি তোকে,

এই ভাষা কহলে মনের ভীতর জুড়িয়্যা যায়।

এই চৈত মাসে শিমোলের ফুল দিয়্যা,

তোকে কোহ্যাছিনু গোটা জীবন পাশে থাকিস জীবন ভইরা।

---------------------------------------------------------------

অভিমানি 


বিস্তীর্ণ সাদা ফুলে ঢেকে রেখেছি মাঠ,
গন্ধ নেই সাদা আমি ,আমিই কাশ।
কিছু ফুল ঝড়েছে, আপন খেয়ালে;
হিসেব রাখেনি কেউ,এতো কিছুর।
তবুও রূপ দিয়েছি শরতের প্রকৃতিকে,
কেন হারিয়ে যেতে বসেছি পৃথিবীর বুকে?
উৎখাত হয়ে চলেছি প্রতি ক্ষণে ক্ষণে,
তবুও কি হিসেব রাখবে না এতো কিছুর?
ইট পাথরের বেড়া জালে আটকে গেছি,
কেউ এক বারও বলে না আমরা আছি। 

---------------------------------------------------------------

আজও তোর অপেক্ষায় 


আছি বসে আজও আমি তোর অপেক্ষায়
তোকে পড়ছে মনে, হৃদয়ের মণিকোঠায়।
ধরেছিলাম হাত; তখন দিয়েছিলি কথা,
আজ সেসবের,স্বপ্নে পাই শুধু বুক ভরা ব্যথা।
এই তো সেদিন, নবম শ্রেণীর ক্লাসের ভেতর,
তোর দিকেই তাকিয়ে,খেয়েছিলাম স্যারের চড়।
মনে হয়নি তখন কিছুই ,শুধু হয়েছিলাম অবাক,
সবার মাঝে স্যার মারল কেন চড় এসে হঠাৎ?
বুঝতে পেরেও ছিলাম অবুঝ,তোর জন্যই শুধু, টিফিনের সময়, ভাগ করে খেয়েছি কত কিছু।
কদম,কৃষ্ণচূড়ার নিচে, বসে কেটে যেত সময়, কদম আর লাল রঙা ফুলের আলতো ছোয়ায়।
আবেগী মনে গল্প কথায়,কেটে যেতো দিনগুলো,
ঘন্টার শব্দে স্কুল ছুটি, প্রতিদিন এটাই যে ছিলো।
স্কুল ছুটির আনন্দটা যেন অন্য রকম হোতো,
আনন্দ যেন বিষন্নতায় পরিণত হয়ে যেতো।
বাড়ি ফেরার সময় পেছন ফেরে দেখাটা নেই আর,
কৃত্রিম ভাবে আছি ভালো, ভালো হওয়ার চেষ্টায়
আছি বসে আজও আমি তোর অপেক্ষায়
---------------------------------------------------------;;;/;

কবিতা : শ্যামল কুমার রায়

কবি পরিচিতি : শ্যামল কুমার রায়।  
জন্ম : ৪ ঠা আগষ্ট , ১৯৪৯ সালে। 
পিতা :  গিরিজা কান্ত , মাতা : নীহারবালা ! 
মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি থানার বাজিতপুর গ্রামে শৈশব , কৈশোর কাটে । 
শিক্ষা :: এম এ (বাংলা ),পি জি বি টি 
পেশা ::  শিক্ষকতা .প্রথমে সহ শিক্ষক , পরে প্রধান শিক্ষক হিসাবে ২০০৯ সালে অবসর গ্রহণ ! 

নেশা :: বই পড়া , সাহিত্য চর্চা ও ভ্রমন 
বর্তমান স্থায়ী নিবাস ::  কাঁঠালপোতা , কৃষ্ণনগর , নদীয়া -৭৪১১০১
মোবাইল নং :: ৮০০১৩০৮৯৭২
প্রকাশিত গ্রন্থ : ১)ভাষায় ছবি আঁকা ( সংকলন , ২০১৮)
২) হৃদ সাগরে ঢেউ তোলা ( সংকলন , ২০১৮)
৩) ছায়াগীতি ( একক , ২০১৯)। 

-------------------------------------------------------------------

মরীচিকা


   সুনীল আকাশ ডাকে 
       ডাকে সুনীল সাগর, 
    কাছে গিয়ে ভাঙ্গে ভুল 
          ওরা ভীষণ বর্ণচোর। 

    বর্ণে গন্ধে ফুটে থাকে 
         কাননে কুসুম রঙীন, 
    অকাতরে দেয় সব 
          উদার প্রতিটি দি। 

    আকাশের চাঁদ তারা 
           বিলায় রম্য জোছনা , 
    রাতের মাধুরী ওরা 
           ছদ্মবেশ কখনো ধরে না। 

     নয়নে মদিরা অঞ্জনরেখা 
           গভীর স্বপন আঁকা, 
      ভালোবাসা ভেবে ভুল 
          ও যে শুধু মরীচিকা। 

    প্রেমের কুসুমের রঙ 
         গন্ধ কখনো মেকী,
    সংশয় জাগে মনে 
         নিতে হয় কত ঝুঁকি। 

    মুখ আর মুখোশে 
         রাখে দুস্তর ফারাক ; 
     নিখাদ পরিচয়ে মানুষ 
          কেন হয় না নিপাট।। 

 ------------------------------------ ---------------------------

ঝড় 


 পথের শেষে তোমার বাড়ী 
      পাই নে খুঁজে আর,  
  ঝড় উঠেছে কাল বৈশাখী 
        বন্ধ হলো দুয়ার। 
   ধূলার ধোঁয়ায় পথ লুকায় 
        অন্ধ নয়ন কাঁদে,  
    মেঘের 'পর মেঘ যে ডাকে 
          মাদল বেসুর বাজে। 
     বিজলী আলো ঝিলিক মারে 
           বাজ গর্জায জোরে,
      জোনাক ত্রাসে নিভে গেছে 
           ডুব দিলো আঁধারে। 
      পাগলা ঝড়ে কথার মালা 
           লুটায ছিঁড়ে পথে, 
      শুকনো কথা উড়লো কোথা 
             দেয় না জবাব রাতে। 
      যাত্রা শুরু যেখান হতে 
             ফিরতে হবে সেথা , 
       নষ্ট সময় বিলাপ করে 
             বক্ষে জাগে ব্যাথা।।
    
-----------------------------------------------------------------

সম্বিত 

তোমার সাথে আমার লড়াই নয় , 
এ লড়াই আমার সাথে আমার ;
জয়ের পতাকা ওড়াই লড়াই করে 
দূর করি মনের কালো আঁধার। 

বুকে জমা যত নোংরা জঞ্জাল 
দল বেঁধে করে কুমন্ত্রণা , 
বিবেক গঙ্গা জলেতে ধুয়ে 
লাঘব করি হৃদয়ের যন্ত্রনা। 

ভালোবাসি ঊষার মিষ্টি হাসি 
ভোরের পাখির মধুর কাকলি গীত , 
অমানিশা রাতের মোহ ঘুম কাটে 
নব আহ্বানে ফেরে আমার সম্বিত ॥

-----------------------------------------------------------

কবিতা : পূর্ণিমা বিশ্বাস

কবি পরিচিতি : শ্রীমতি পূর্ণিমা বিশ্বাস। জন্ম ১৯৯৫ সালে। স্বামী বিশিষ্ট শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী ও সমাজ সেবক। স্নাতকোত্তর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। বি.এড (WBUTTEPA)। 


তিনি একাধারে কবি, গল্পকার, নাট্যকার এবং সংগীত শিল্পী।bঅবাণিজ্যিক পত্রিকা,ভয়েস, অঙ্কুর, কুসুম, মুক্তি ও বিভিন্ন ম্যাগাজিন প্রভৃতিতে নিয়মিত লিখে চলেছেন। তিনি মূলত গল্প লিখতে বেশি ভালোবাসেন ।তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্প 'মণি', 'সেই মেয়েটি', 'বাল্য বিবাহ','আঠারো বছর', 'সৎ মা', 'শুচিবাই' প্রভৃতি।

-----------------------------------------------------------------

সুপ্ত ভালোবাসা
        


তুমি সেদিন আমাকে দেখছিলে...
আমি তোমাকে আড়চোখে দেখছিলাম।
দেখি,তুমি দাঁড়িয়ে আছো মোড়ে 
আমার সঙ্গে একটি কথা বলবে বলে।
কিন্তু কি কথা?ভাবলাম সেই কথা!
মনের মধ্যে রোমাঞ্চ জাগে।
আচ্ছা!তুমি যদি সেই কথাটা বলই,
তখন তার উত্তরে আমি কি বলবো?
ইস! লজ্জা লাগছিল।
তুমি ধীরে ধীরে আমার কাছে এলে।
আমার শরীর শিউরে উঠল
ভাবছিলাম কি বলবে,ইস!
হটাৎ শরীর কম্পিত হলো 
তোমার কথা শুনে,

তুমি কি বলতে পারবে?
আমি 'ওকে' কত ভালোবাসি।

শুনে কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে রইলাম। 
আমার পাশে যে বান্ধবী
ও ওকে ভালোবাসে,আমায় না।
চোখে জল ভোরে গেল
কষ্টে বুক ফেটে গেল ভালোবাসা বুকেই রইলো
মুখে আর এলো না।
আমি নিজেই যেন নিজের কাছে হেরে গেলাম।


----------------------------------------------------------------

কবিতা : অহনা রায় চৌধুরী

কবি পরিচিতি : অহনা রায় চৌধুরী (অহনালিভিয়া )হচ্ছেন , এই শতাব্দীর একজন লেখিকা, তিনি ১০ বছর বয়স থেকে লেখালিখি করেন, তিনি ছোটবেলাতে St. Joseph's Convent Higher Secondary School থেকে পড়াশোনা করেছেন, তারপর  Little Flower's School থেকে ক্লাস একাদশ ও দ্বাদশ এ পড়েন। 


বর্তমানে তিনি কলকাতার গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস কলেজের "Education" honours এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, উনি মূলত শাস্ত্রীয় নৃত্য শিল্পী, উনি কলকাতেই থাকেন। ওনার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ২০১৯ কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলাতে, যেই বইটির নাম "হৃদয়ের ধ্রুবতারা" ।

------------------------------------------------------------------

বেদনা যেথায় পাষাণ


তোমারে ভালোবাসার ছলে ভুলাইনি আমি
তুমি কি ভুলাইছো মোরে ভালোবাসার ছলে?
যাহারা মন পাইয়া ভাবে, এ মন নয় দামী,
তুমি কি লিখাইয়াছো নাম তাদের দলে ?

বিদায় বেলায়,
শান্ত পাখিরা সুদূরে মিলায়,
আমি সেই শান্ত পাখি ,
যাহার প্রেমে  মগ্ন থাকিত তোমার দুই আঁখি,
তুমি কি আজ সবই ভুলিয়াছো?
নতুন কোনো ডালে,বুঝি বাসা বাঁধিয়াছো!

বেশ বেশ,
আমি তবে করবোনা তোমায় দোষী,
বলবোনা  তুমি সর্বনাশী,
তবে এ পরিচ্ছেদ যদি হয় শেষ,
তবু জানিয়ও আমি তোমারেই শুধু ভালোবাসি।

তব জীবনে যতটুকু পাইয়াছি স্থান,
তাহাতেই করিয়াছি তোমারে অসীম,
করিয়াছে মোরে তব প্রেম পরিত্রাণ,
বিচ্ছেদ তবু দেয়নি মোরে বেদন অপরিসীম।

আজি কুহু তাই আবার দিতেছে তান,
শত মেঘপুঞ্জ ভাঙিয়াছে তাহাদের অভিমান,
তাহারি মাঝে মোরা,
কাছে আসিয়াছি দিব বলে অন্তিম ধরা,
শুধু বলিতে এ কথা যাহা যাইবে না আর কভু বলা
"আমিও পাষাণ, তুমিও পাষাণ;
তুমি কেবল বিরহ ব্যথায়,
আর আমি ভালোবাসায়"।
                            
--------------------------------------------------------------------

বিরহীনি


বেদনা দিয়ে যে মালা রেখেছি গেঁথে,
খেলার শেষে, আপনি হেসে, কাছে এসে 
পরিয়ো তা মোর  গলে,
আঁখির পরে, চিরতরে যে ছবি রেখেছিলেম পেতে,
জেনো তা গেছে চলে|
 দিবসরজনী, ওগো সজনী, যে খেলায় ছিলাম দুজনে বিভোর,
সে খেলা ফুরিয়েছে আজ, থেমেছে কাজ, ছিন্ন হয়েছে বাহুডোর |  

------------------------------------------------------------------

আমাদের প্রাত্যহিক বোঝাপড়ার শেষে, আজ যখন শূন্য ঘর খাঁ খাঁ করছে; তখন  আরো স্পষ্ট করে জোরে জোরে শুনতে পাচ্ছি আমাদের মুক্তি যুদ্ধের বাণী গুলো | 

--------------------------------------------

কবিতা : ধীমান দাস

কবি পরিচিতি :  ধীমান দাস


শিক্ষাজীবন - বাংলা, এম.এ (উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়)
কর্মজীবন- বর্তমানে সরকারী প্রোজেক্টে কর্মরত।
বালুরঘাট,দক্ষিণ দিনাজপুর।
ফোন নং - 8617681811/ 9614125170 (হোয়াটস্অ্যাপ)


-----------------------------------------------------------------

মায়াবী সময়ের হাতছানি


চাঁদ গহ্বরে বসে মায়াবী প্রেমের চমকানি
বাইপাসের বুকে মৃত স্মৃতিরা ঘুমিয়ে
রাত ঢেকে যায় রাতের মোহময়ী অন্ধকারে
জাল বিন্যাসে ব্যস্ত গভীর ঠোঁটের লিপস্টিক ।
অদৃশ্য বোবা কান্না বেরিয়ে আসছে চামড়া ফেটে
হ্যারিকেনের নিভু আলোয় অচেনা সব থমথমে পথ
ঘুমঘুম চোখের স্বপ্নে আঁচড় কাঁটে সময়ের বিষাক্ত নখ
জল রংয়ের ছবিতে ভাসে ঘোমটা দেওয়া পৃথিবীর ব্যাথা।

----------------------------------------------------------------

অকাল প্রেম ও পৃথিবী


অসমাপ্ত মাফলারের সুতোয় ঝুলছে,একফালি চাঁদ
জীর্ণকায় ঘড়ির কাঁটায় দুলছে জং ধরা সময়,
আমাজনের দাবানলে জ্বলছে শকুনির পাশা,
স্নানের জলে সারা শরীর স্পর্শ করে,প্রেমের নাগপাশ।
ধূপের ধোঁয়ার পাঁকে হারিয়ে 
যাওয়া পৃথিবী চলেছে,লাঠিতে ভর করে,সভ্যতার বিবর্তনে।
ঠুনকো কাঁচের পাহাড়ি ঝর্ণা ভিজিয়ে দেয় আতস কাঁচের বিছানা।
কুয়াশায় পাকানো দড়িতে বাঁধা পড়েছে,মরুভূমির একরাশ তপ্ত বালির আর্তনাদ।

----------------------------------------------------------------

অব্যক্ত অভিসার


বকুলের মালায় গাঁথা সাজানো প্রেম
খোলা দুয়ারে দাঁড়িয়ে
শ্যাম ও শ্রীমতির 
তীর্যক প্রতিবিম্ব|
হাতের তালুতে স্নান করে দাহ করা শরীর|
বিধ্বস্ত অভিসারে ছিন্নভিন্ন যমুনা হারায়
তার নিজস্ব সত্ত্বার প্রতিধ্বনি
অব্যক্ত চাঁপা অভিশাপের হাসিতে ডাক প্রহরী জাগে
নিশুতি সময়ের অন্তিম সুরের মূর্ছনায়|


----------------------------------------------------------------