Wednesday, 29 July 2020

শতানীক ভট্টাচার্য

কবিতা
--------

কবি পরিচিতি : শতানীক ভট্টাচার্য
পেশা- শিক্ষকতা( পদার্থবিদ্যা শিক্ষক)

গ্রাম+পোস্ট -বাইনান, থানাঃ- বাগনান,  জেলা- হাওড়া।

-------------------------------------------------------------

পৃথিবী কাঁদছে
             

আজ পৃথিবী বড় একা.....
তার চোখে জল, শূন্য হৃদয়ে ঘটে চলেছে
অব্যক্ত রক্ত ক্ষরণ!
সত্যিই ভালো নেই তার মন,
ভালো নেই তার  মানুষ;
করোনার করাল গ্রাস                                           কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য অসহায় প্রাণ...
মৃত্যুর বেগ আলোর গতিকেও ছাপিয়ে গেছে!
এই কদিন আগেও যে দেশটা ছিল প্রাণচঞ্চল, সদা হাস্যময়ী, উৎসবমুখর---
সেই স্বপ্নের দেশ ইতালি আজ অভিশপ্ত,
হয়ে গেছে নিছক মৃত্যুপুরী, নয়তো মৃত নগরী    
চারিদিকে শুধুই শ্মশানের নিস্তব্ধ নীরবতা,
আইফেল  টাওয়ার কিংবা প্যারিসের
সুখী উপত্যকা আজ মৃত্যু খাদে পর্যবসিত,
লন্ডনের বিগ বেন এর কাঁটা স্তব্ধ, তার গতি রুদ্ধ,
স্বয়ং ভগবানও আজ ভয়ে শঙ্কিত!
করোনার আয়নায় সারা  বিশ্বের নগ্ন রুপ প্রতিফলিত...
ভ্যাটিকান সিটি এখন প্রাণী শূন্য,             হতাশ পোপ, তার নিস্তেজ হাতের আশীর্বাদ রাজপ্রাসাদের জানালা অতিক্রম করে
পৌঁছায় না জনপদে,
পবিত্র কাবা ঘরের কৃষ্ণপাথর এখন অস্পৃশ্য ,অনাদরে পায় না চুম্বন!
নীলা চলের মহাপ্রভু জগন্নাথ ও ঘরবন্দী,
রক্ত মাংসের যীশু রা কোয়ারেন্টাইন আইসোলেশন এ বিশ্রাম রত,
আসমুদ্রহিমাচলে এখন লক ডাউন !
সারা বিশ্ব সন্ত্রস্ত্র,  চারিদিকে  বিশ্বজুড়ে চলছে মৃত্যুমিছিল,
মানুষ মুখ লুকোয়, বাঁচে মুখোশের আড়ালে!
আর সময় শিকল ভাঙ্গে ঐক্যের,
মানুষ-- সে তো সংখ্যা.. অংক  মাত্র!
বিচ্ছেদ নিয়ম শেখাবে বাঁচার মূলমন্ত্র,        পথ দেখাবে জনহীন জনতার কারফিউ,                  ওরে গৃহবাসী , হও সব গৃহবন্দী
দ্বার খুলে আজ লাভ নেই;
মুক্ত করো ভয়,
দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে চলবে বাঁচার সংগ্রাম!
'একদিন ঝড় থেমে যাবে 
পৃথিবী আবার শান্ত হবে'!!


-----------------------------------------------------------

কোথায় পাব তারে
               

সামনে  সবুজ ধানক্ষেত,
যতদূর চোখ যায়-
 সবুজ রশ্মি সমানে পথ বায়!
প্রাণে জোয়ার আসে
ভেসে যাই বালি হাঁসে চড়ে
স্বপ্নের মায়াচরে,
এখানে নেই কোন কোন্দল
হিংসার জটিল বাক্যে গাঁথা চালাকির
শব্দছক ,
কিংবা ছলনার দুর্বোধ্য আলপনা! 
এখানে শিরিষ গাছের ডালে হলুদ ফিংয়ে
তোলে মধুর বিটোফেনের সুর,
পাকা ধানের সোনালী শীষ হার মানায় ভরি ভরি অলঙ্কার এর প্রাচুর্য কে ,
মন-খারাপ দুপুরে মন্দিরের মেঝেতে কচি আমের কিংবা পাকা তেঁতুলের ভাগ
মনে করায় ফেলে আসা শৈশব  !
আটচালার মঞ্চে সন্ধ্যেবেলায় রাম যাত্রা
শেখায় অনেক গল্প কথা...
চৈত্রের খা খা দুপুরে গাজনের ঢাকের চড়া গর্জন
গোবিন্দের বহুরূপী সাজ
    নিয়ে যায় রূপকথার জগতে
পড়ে থাকে ভাঙ্গা মেলা... অগোছালো ঘর 
যেন স্থান নেয়
        অতীতের ইতিহাসের সমাধিতে,
গ্রাস করে বিষন্নতা ,
পাড়ি দেয় মন খারাপের দেশে!



-----------------------------------------------------------------

কতটা পথ হাঁটলে তাকে মানুষ বলা যায়?
              

রুপা গলা জ্যোৎস্না,
চকচকে আলোর স্রোত সারারাত তাড়া করে বেরিয়েছে ছেলেটাকে,
ভালো করে ঘুমাতে দেয়নি তাকে!
ছেলেটার বয়স তখন মাত্র দশ বছর!
বাস দুর্ঘটনায় মারা যায় তার বাপটা,
স্থান হয় অনাথ আশ্রম
দেখতে দেখতে গড়িয়ে যায় আরো পাঁচ,
হারায় মাটির শিকড়!
এখন সে ভিনদেশী
 ঠিকানা দিল্লির এক অচেনা বস্তির দরমা ঘেরা ছোট্ট ছাউনি,
দিনের বেলায় সেখানে পৌঁছায় না বাঁচার আলো
চার দেওয়ালের অন্দরেই একে একে স্বপ্নগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়
চারিদিকের পুঁতিগন্ধময় পরিবেশের সাথেই চলে সহমরণ
নিঃশব্দের অহংকারে শুরু হয় অসহায় দিনগুজরান,
শুধু এক মুঠো স্মৃতি ও এক বুক লড়াই লড়াই বুক লড়াই লড়াই নিয়ে এই পরিযায়ী বেঁচে থাকা,
না মরে বাঁচা
    যেন লুডোর ছকে বাঁধা এক্কাদোক্কা জীবন!
চুরি করা সংবিধান -
পায়ের তলায় পিষিয়ে মারা মৌলিক অধিকার-
আর রাষ্ট্র--- শোষণ যন্ত্রের যাঁতাকলে এক্কেবারে বন্দি হয় সে!
কেউ দেয় না বাঁচার নিরাপত্তা,
বাস্তবের গোলকধাঁধায় চলে মগজ ধোলাই!
চলে প্রশ্ন পর্ব--
কে সহায়- কে সম্বল?
কে আপন কে পর?
কে মানুষ আর কে অমানুষ?

ফিরে চলে মন উত্তরের খোঁজে--
অবশেষে 
নিরবতার বুক চিরে শুরু হয় পথ চলা!
প্রশ্ন করে মনে- পথিক তুমি কি পথ হারিয়েছে?
সব পথই শেষে 
        অসীম দিগন্তে মেশে!
প্রতিধ্বনিত হয়----
কতটা পথ পেরোলে তবে তাকে মানুষ বলা যায়?

---------------------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment