কবিতা
--------
কবি পরিচিতিঃ শান্তনু দাস। জন্মস্থান- আগরতলা, জন্ম সন-১৯৭৮, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির হাইস্কুলে শিক্ষার পাঠ। কর্মক্ষেত্র "ত্রিপুরা স্টেট রাইফ্যালস্"এ যোগদান।
অবসর সময়ের সঙ্গী সাহিত্য। গল্প-কবিতা পড়ার পাশাপাশি শেখার চেষ্টা। খেয়ালবশতঃ সাধ্যমতো একটু আধটু লেখালিখি করার ইচ্ছে।
"সাহিত্য স্বপ্ন উড়ান" "আঁচল ঢাকা কাগজফুল" "মনন" "বর্ণতারা" "মন ফাগুনের চুপকথা" ইত্যাদি কয়েকটি পুস্তক ও সাহিত্য পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। "কুসুম সাহিত্য পত্রিকা"র সৌজন্যে বিশেষ "কাব্যজ্যোতি" "কাব্যপথিক" সন্মাননার প্রাপ্তি। সম্প্রতি একক সংকলন "ইপ্সিত ইথার" প্রকাশ পেয়েছে ।
--------------------------------------------------------------
ভালো থেকো প্রিয়.....
ভালো থেকো প্রিয়........
মনের চিলেকোঠরে জমানো টুকরো সম্পর্কগুলোর শেষ নিঃশ্বাস তোমায় শুভকামনা জানায়,
ভালো থেকো প্রিয়........
আবেগী মুহুর্তরা মনের শাসন শিথিল করে নেয় অকারণে,
বিদায়ী অনুরাগ চুপিচুপি ডাকে তোমারই 'প্রিয়' নাম শিহরণে।
বিবাগী বাতাস সোহাগ পাঠায় তোমার নতুন ঠিকানায়,
ভালো থেকো প্রিয়........
চলে গিয়েই কি চলে গেলে?
দোলাচলে না যাওয়ার অনেকটাই যে-
পড়ে রইলো ব্যাকুলতার পরাকাষ্ঠায়,
বিয়োগী দহনে পুড়ে খাটিই হলো ধাতবের মতো ভালোলাগার মায়াবী আস্তরণ,
পরিযায়ী সুখস্মৃতি বারবার বিনাপ্রাপ্তির হিসেব চাইলো বিবেক মন্থনীতে।
আয়াসী ক্ষণের প্রতিদান ডুবে গেল অভিমানের অশ্রুসায়রে-
টানের চিরচেনা সুমসৃণ পথে আগাছার যুগান্ত-জন্ম সম্পর্কের হৃতরাজ্যে হলো আকুতিরত।
বেদনার লাভা প্রস্রবণ ঘৃণার বিভীষিকায় গলিয়ে নিলো গতপ্রেম।
নিবেদিত প্রেমাঞ্জলির আহুতিরা নিরাকার হলো তাপিত ক্রোধাগ্নিতে।
পদস্খলনের চিতায় ক্রমবর্ধমান ভালোবাসা গেল সভয় সহমরণে।
আমি তবুও,
দেনাপাওনার এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলি-
ভালো থেকো প্রিয়...........
----------------------------------------------------------------
স্রোতধারা
এ কোন স্রোতধারায় অচেতন বহে নিরবধি,
সুশোভিত অবনীর উদাসীন পরিযায়ী সুখ।
প্রশ্নের ভিসুভিয়াস বলয়িত অসুখেরা হৃদি,
ব্যাকুল হতাশ ফিরে বারেবারে সময়ের বুক।
হৃদয়ের আর্তি মিশে যায় কপটের হর্ষ নাদে,
দু'কূলে দাঁড়ায়ে রয় চেতনার মূরতি মহান।
অবাক মুদিত চোখে নদীটার পরাজয় কাঁদে,
কেমনে ডুবায়ে চলে বেদনার এতো বোধ মান।
চৈতী হাওয়ায় উড়ে কলিজার খাক অনুভবী,
ফসিল ব্যাথারা উঠে কাতরে কাতরে চোখ বুজে,
চিতার শিখায় সাজে বহমান বিম্বিত জাহ্নবী,
শোভাবিহীন আকাশেতে বিবর্ণ অমানিশা খুঁজে।
পালা করে দোষী করে সময়ের আরোপিত আশা,
করুণা কুড়ায়ে বাঁচে আবার কাঙাল ভালোবাসা।
---------------------------------------------------------------
ঋণগ্ৰস্ত
অনামী কাব্যরা যেন ধার করেই বাঁচতে শিখেছে।
সমৃদ্ধশালী দেনাদার'দের খোশমেজাজী হওয়া ভরসা,
'অসাধারণ', 'অতুলনীয়' এ'সকল বেশকিমতি অলংকারের ভার কি আমার পোষায়?
তার চেয়ে বরং 'হুমম'টা, 'বেশ'টা, 'বাহ্'টা, নিয়েই জব্বর আছি।
চড়া-সুদের ভয় নেই,
অচিনপুরের রাজপথে আমার এই দলা-পাকানো, আমতা-করা, হোঁচট-খাওয়া শব্দগুলো'র কাব্য-সাজার ভীমরতি ধরেছে।
স্মৃতির মেলায় আনমনা বায়- একটু ছন্দে একটু গন্ধে-
মাতল মনে নিজের সনে একটু কথা বলে,
খানাখন্দে কি আনন্দে দোসর খুঁজে চলে।
এতেই বুঝি ভয়.............??
সস্তা বেসাতেই কি তোমার আখের অসুরক্ষিত বোধ হয়??
চিন্তা নেই- জায়গা চাইনা,
তোমার রাজপ্রাসাদে ঘুম ধরবে না আমার।
অভ্যেস নেই- মখমলি গালিচা, বিলাস শয্যা, তুলতুলে উপাধানের।
চলেই যাবো- শোধ দেওয়াও আর হবে না,
অনেকগুলো সান্নিধ্য- ঋণগ্ৰস্তের আরোপ দায়ের করবে, আমার পাওনাগুলোও সব নর্দমায় দিলাম।
যেচেই নগরীর নিয়ম মেনে নীরবে তড়িপার হবো,
সকাতর ঘুমন্ত শহরের বুকে মিঠে মালকোষে আলগোছে স্বরলিপি বাজুক- 'আমি অপরাধী'।
-------------------------------------------------
[22/06, 17:11] Bijoy Sarkar: নামঃ আশিষ মেটে
গ্রামঃ জুবুটিয়া(কীর্ণাহারে পাশে)
পোস্টঃ আলিগ্রাম
থানাঃ নানুর
জেলাঃ বীরভূম
আমি চাষ করতে ভালোবাসি,বাবার কাছে শেখা,লাঙল টানা ,বীজ বপন,সবই পারি,এখানো করি।ছোটবেলা থেকেই চাষ করেই মানুষ, জন্ম আমার কুঁড়ে ঘরে।কারাগারে চাকরি করি,আসামীর সাথে গল্প করি,জানি জীবন তাদের মায়া জালে ঢাকা, আজ আমার বাড়িতে গরু, ছাগল, হাঁস আছে,,তাদের কে খুব ভালোবাসি,আর ভালোবাসি গাছ লাগাতে ।।জীবনে অনেক গাছ লাগিয়েছি।।মাঠে ধানের ক্ষেত আর সরষের জমি আমার প্রেম ।।গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না ।।আমার গ্রাম ...আমার প্রত্যেকটি শিরায় অবস্থান করছে বিন্দু বিন্দু প্রেম,চোখে লেগে আছে স্বপ্নিল ভালোবাসা আর সারা মন প্রাণ জুড়ে আছে অতৃপ্ত ভালো লাগার হাতছানি।।
----------------------------------------------------------------
ঝরা কুসুম
উদ্ভ্রান্ত,ক্ষুধার্ত,অর্ধ উলঙ্গ নারী;
নীড় হারা পাখি সে,তির নিশানায় ঈগল শিকারী ।
রাস্তায় পরে থাকা জীবন তার,রক্ত তাজা পাণ্ডুলিপি;
সত্যের উপর ধুলোর প্রলেপ,সমাজে সে নোংরা ছায়াছবি ।
অরণ্য সমাজে বিচ্ছিন্ন ,জীবন তার ঝরা কুসুম ;
মা-হারা সেই জানে,কত দামী কপালে মায়ের চুম;
ছিঁড়ে যাওয়া পাতায় বার বার লাগে ঝাপটা;
সমাজের নাক রুমালে ঢাকা,শূন্য তার জন্মখাতা।
অলিগলিতে মানুষকীট, নোংরা নালিতে আমি আর প্লাস্টিকের স্তূপ;
বিবেক যন্ত্রণায় কাতর, কলি যুগে দুর্ভিক্ষের রূপ।
ধর্ষিতা নারী,সমাজে চর্চা একটু বাড়াবাড়ি;
ভাতের হাড়ি,দাঁড়ি পাল্লা মেপে ভাই ভাইয়ের কাড়াকাড়ি ।
পারে নি তাঁরা নিজের করে নিতে,
পারে নি তাঁরা বোন বলে পরিচয় দিতে;
বলে কি না পাগলী,
তাড়িয়ে দেয়, দেয় গালাগালি;
এ কিসের পূজো?
বুঝে উঠি না আজও,
শুধুই মদের গন্ধ, পূজার নামে ভণ্ড ।
কে বাঁচলো,কে মরল,চোখ তাদের অন্ধ ।
মন্দিরে পাশে ডাস্টবিন, ভিতরে দুর্গা মূর্তি;
আমি খাই নোংরা খাবার, ওরা করে আনন্দ ফুর্তি ।
খিদেয় জ্বালায় ছটফট,
ওরা বলে যা এখান থেকে, ফোটফোট;
এ তো সেই গন্ধওয়ালা মানুষ,
আমার ভালোবাসাটাকে বিষ মাখিয়ে দিয়েছিল,
তারপর...
আমার শরীরটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিল।
সেদিন আকাশে উড়েছিল ফানুস।
ছেঁড়া কাপড় আজও পরি,
পাগলী বলে লোকে, ফিরিনি বাড়ি ।
সমাজে আমি নিন্দিত, বিক্ষিপ্ত ক্ষেপি;
আজও চোখে ভাসে সেই দিনের পৃথিবীর ছবি ।
সেই দিন দশমীর রাত
গন্ধওয়ালা মানুষগুলো তেড়ে এল,
শরীরের চাপলো লাশের পর লাশ,বুকে পড়ল হাতে পর হাত;
কাঁমড়ে,খাঁমচিয়ে, উপড়ালো ছাল;
উলঙ্গ শরীর, গোপনাঙ্গ রক্ত লাল।
শরীর নিংড়ানো রস,খায় শহরের নেশাখোর বস।
থামেনি রক্ত, এগিয়ে আসেনি কোনো মা দুর্গার ভক্ত।
নিঃশ্বাস বন্ধ, অন্ধ গলি,
এদিকে শুরু হলো অঞ্জলি ।
শরতের এক পশলা বৃষ্টি,
জ্ঞান ফিরলো, ফিরলো চোখের দৃষ্টি ।
বেঁচে আছে মরেনি,
পাগলী বলে কেউ তাকায় নি।
এ তো মূর্তি নয় যে,ভাসিয়ে দিলে গলে যাবে;
সে তো দূর্বাঘাস, শতবার মারিয়ে গেলেও জেগে উঠবে।।
----------------
বেশ্যা ভ্রমর
সমাজের আড়ালে বংশধারা বেশ্যা মেয়ে ভ্রমর,
নরপশুর অত্যাচারে মাড়িয়ে যাওয়া সে তৃণ।
ইটের ফাঁকে চরিত্রহীনের বাস,বারবার পিছলে পড়ে শিকড়,
বনস্পতির ঝরা পাতার বিছানার দাম তাঁর শূন্য ।
গাঁয়ের লোকে বিষ বাক্যবাণে ভ্রমর আরও বেশি রক্তাক্ত,
নিলামে বিক্রি শরীরের অন্তরে জমাট তার স্বপ্নগাঁথা,
স্বপ্ন একটাই ..কেউ যদি একটু ভালোবাসতো?ন
হয়তো লাল শাড়ি দিয়ে বাঁধানো থাকতো জীবনের উলঙ্গ খাতা।
আজও ভ্রমর চেয়ে আছে ভালোবাসার অপেক্ষায়,
পরিচিত আঁধারে নেশাখোর ফড়িং আসে বরাবর।
সুখের তরে পাড়ি দেয় অসুস্থ গোপন নৌকায়,
ভালোবাসার কাঙাল শূন্য মনে আজও দাঁড় টানে ভ্রমর।
------------------
শেষ পরিণতি
ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসের ছায়া, আবারও সেই আঁধার,
সূর্যকে আড়াল করে রাখে কয়েক কোটি কাগজ পত্র,
সাপের ছোবল খেয়ে বিবেকের ঘরে জমাট বাঁধে বিষ মন্ত্র
হয়তো জন্ম নিলো কলি যুগের অবতার ।
মানুষ অমানুষের যুদ্ধ, ভারত আজ প্রাণহীন মরুভূমি,
ঋণের দায়ে ঝোলে চাষি, ফসল শূন্য তাঁর ক্ষেতভূমি ।
তিন ভাগ জলে ভাসবে মৃতদেহ, স্থলভাগটাই হবে একদিন কবর,
রক্তাক্ত পৃথিবীতে সেদিন আমিই দেবো মৃতদেহ পাহারা।
হিংসার বালিঝড় উড়াবে যেখানে সেখানে জন্ম নেওয়া সাহারা।
নুড়ি বদলে মাটিতে পড়ে থাকবে ছিন্ন ভিন্ন মানুষের লাশ,
সেইদিনই অমানুষের কাছে রক্তের গন্ধই হবে সুবাস ।
কোনটা হনুমান, কোনটা মুসলমান, আর কোনটা খ্রিস্টান,
বেলাশেষে এই গুলি হবে বাছাই করা খবর।
নদীতে রক্ত, মাটিতে রক্ত মিশে একাকার;
তুমি পুড়িয়ে ক্লান্ত, আমি গর্ত করে ক্লান্ত,
মানুষের ভাইরাসে সুস্থ মানুষ হবে সেদিন বিষাক্ত ।
ঐ বিষাক্ত জনতরঙ্গের ঢেউ ভাঙবে নিরোগ কারাগার ।
আসছে দিন ভয়ঙ্কর ...
নিজেকে কেউ আর মানুষ ভাবে না,ভাবে তারা ..
আমি মুসলমান, তুমি খ্রিস্টান, তুই হিন্দু,
এই নিয়ে চলবে হয়তো একদিন লড়াই,
লুপ্ত হবে মানবতা ,লুপ্ত হচ্ছে চড়াই ।
সেদিন জলের বদলে বইবে রক্তের সিন্ধু ।
হারিয়ে যাবে হয়তো পৃথিবীর সুখ পাখি,
উলঙ্গ বিষবৃক্ষ দেখে শুরু হবে কুকুরের কলরব,
সেইদিন আসার আগে আমি আজই করবো বিপ্লব ।
হয়তো সবুজ ভারত জন্ম দিবে পথের চরিত্রহীনা অভাগী।
------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment