Saturday, 11 December 2021

ঝুলন্ত ঘড়ি --সপ্তশ্রী কর্মকার



  অভিশপ্ত সেই যম দিকের দেওয়ালে,
ঝুলন্ত ঘড়িতে আটকানো দমবন্ধ প্রাণ।
স্বপ্ন ছিলো তুমি হবে শীতপাখি, 
আমি সেই শব্দের ছাদে শস্য ছিটিয়ে দেবো। 
কেউ মনকে কাছে নিয়ে ভালোবাসে,
আর কেউ ছোঁয়ার বাহানায় ।
অবাক হওয়ার কিছু নেই, 
একটা রাতে কবিতার বিরুদ্ধে গিয়ে 
শ্রীহীন হয়ে আজকে আমাদের পাতলা চামড়ার হৃদয়ে আজ বিশাল তালা।
পেছনে ফিরে আর চাইব না, 
রাখব না কোনো আবদার ,
গুটিয়ে রাখব নিজেকে শুঁয়োপোকার মতো ,
একাকীত্বের জীবনে বাহারি নেশার রং মেশাবো না। 
শিশির ভেজা রাত দুঃখরা বেরিয়ে যাক 
চোখের জলে,
মন তুলির ক্যানভাসে
তুলির টানে তোমার মুখ আঁকবো,
 পটচিত্রের স্বয়ম্বর সাজিয়ে সেই তোমাকেই
নতুন আলোর দিশা খুঁজে
 আমার আমিতে ভীষণ খুশি থাকতে শিখবো।

সপ্তশ্রী কর্মকার 
কবি-লেখিকা 
ত্রিপুরা, ভারতবর্ষ 

Friday, 10 December 2021

একদিন সেদিন -- ধীমান দাস


একদিন দেখা হবে
চাদরে জড়িয়ে ধরা ভালোবাসার উত্তাপে
একদিন দাঁড়িয়ে থাকবে
পলাশের মালা হাতে মনের খোলা দুয়ারে
একদিন কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে অজানা অনুভূতি পরশে
একদিন মিলন হবে
দুটি আত্মার ওই ধ্রুবতারার দেশে
একদিন বিরহ ডাক দেবে
এলোমেলো কালবৈশাখী হৃদয় হয়ে
একদিন ক্লান্তি আসবে
দীর্ঘ পথ চলার টানাপোড়েনের মাঝে
একদিন ঘুমিয়ে পড়ব
দুটি শরীরে চিরন্তন জীবিত হয়ে। 

@ ধীমান দাস

Sunday, 5 December 2021

অসহায় প্রতিবন্ধী - ডাঃ অসিত কুমার সরকার



জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়া 
সে এক ক্লান্ত সৈনিক , 
সমাজের চোখে বোঝা সে 
দুঃখ যন্ত্রণা করে ভোগ দৈনিক । 
অসহায় অবস্হায় কাটে তার জীবন, 
পায়না সে সুবিচার , 
কথা আর কাজে বিশাল অমিল 
খাতা কলমে বন্দী তার অধিকার। 
সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিনিয়ত 
সে বৈষম্যের শিকার, 
উপহাস, অনাদর আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে, 
জীবনে তার ঘোর অন্ধকার। 
চায়না সে কারো দয়া করূণা 
চায়না কারো অনুদান, 
মাথা উঁচু করে চায় সে বাঁচতে 
চায় যথাযথ সম্মান। 
সাহায্যের নামে করছে 
কিছু ভাঁওতাবাজির সংগঠন, 
প্রজন্মের প্রতিবাদী হয়ে রুখে দাঁড়াই 
বন্ধ করি এই অমানবিক আচরণ। 
ওতো আছে আমাদের চারিপাশে 
ওতো আমাদেরই ভাই বোন, 
আর নয় হেলাফেলা, নয় কোনো অবহেলা 
করি তার ভালো থাকার আয়োজন। 
হাঁসি ফুটাই ওর মুখে 
ভুলে যাক সে প্রতিবন্ধী 
যোগালে সাহস,দিলে ভরসা
থাকবেনা সে আড়াল বন্দী। 
শত বাঁধা, শত বন্ধুর পথ পেরিয়ে 
জীবন যুদ্ধে হবে সে জয়ী, 
মনুষ্যত্বের দাবী নিয়ে দাঁড়াই ওর পাশে 
হইনা কিছুটা বিনয়ী।

ভারসাম্য - পরেশ চন্দ্র দাস



'ল্যাংড়া খোঁড়া বদের গোরা'
আমাদের সামাজিক জীবন ধারার কল্পনাপ্রসুত
উদ্ধৃতি পীড়াময় ।
অধিকার যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের তিক্ত ভর্ৎসনার
দুর্বৃত্তায়ন বৃশ্চিকদংশন । 
সক্ষমতার দাম্ভিক মনোবৃত্তির বজ্জাত্
উদাহরণ।
প্রতিবন্ধী শব্দটি প্রতিবন্ধকতার কষাঘাতের
মর্মবেদনা ।
অপর পক্ষে 'মানবিক চাহিদা সম্পন্ন'
বাক্যদ্বারা আস্বস্ত করতে মানসিক বিপ্লব সংগঠিত
নেতিবাচক প্রস্তাব ।
ভিক্ষার চেয়ে মৃত্যুযন্ত্রণা  শিরোধার্য্য,
ভালোবাসার সহমর্মিতায় বাঁচুক আমার 
শারীরিক চাহিদা সম্পন্ন সংগ্রামীবন্ধু।
সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় সাম্মানিক পাবার অধিকারের বঞ্চনাবৃত্ত মানুষের বার্তা,
বধিরকর্ণের শ্রবণশক্তির বিরূপপ্রতিক্রিয়া ।
ভাগ্যের পরিহাসে যাহারা চাহিদা হারিয়াছে
তাদের অধিকারগুলো নির্বিকারে
ধর্ষনেপ্রবৃত্ত ।
দিশাহারা বাকশক্তি হারিয়ে চাপাকান্নায়
কূপমুণ্ডুকের চারিত্রিকরুপে নিমজ্জিত ।
লক্ষ একটাই কে আমার বিপদভঞ্জন
রাষ্ট্রনায়ক ।

জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায় - প্রতিবন্ধী


 

আমাদের এক প্রতিবেশী হচ্ছেন শ্রীঅপরাজিত সরকার। ওনার স্ত্রীবিয়োগের পর থেকে এক প্রকার প্রতিবন্ধী জীবন যাপন করছেন। উনি নিজে রান্না তো দূরের কথা এক কাপ চা-ও তৈরি করতে পারেন না। হ্যাঁ, তাই বলে কি আর চা তেষ্টা পায় না? নিশ্চয়ই পায়, কয়েক বছর আগে আমরা ওনাকে একটা ইলেকট্রিক কেটলি কিনে দিয়েছি, তাতে জল গরম করে টি-ব্যাগ ডুবিয়ে চা বানিয়ে নিতে পারেন। এইটুকু করতে পেরেই উনি যথেষ্ঠ খুশি।
কোভিড-১৯এর প্রাদুর্ভাবের পর, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ওনার দুর্দশা আরও বৃদ্ধি পেল। পায়ের ব্যথার কারণে, উনি বাজারেও খুব একটা যেতেন না। এখন করোনার ভয়ে সেটাও বন্ধ করে দিলেন। আমরা পাড়ার সকলে মিলে ওনার বাজার করে দিচ্ছিলাম। খাওয়া দাওয়ার জন্য উনি হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। একই ধরনের রান্না খেতে অসুবিধে হচ্ছিল বলে উনি পালাক্রমে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে খাবার নিতেন। প্রাতঃরাশ নিতেন বিশেষ কোনো এক পরিবার থেকে আর বিকেলের জলখাবার আসত পাড়ার এক দোকান থেকে।
এত প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও উনি কিন্তু প্রতিবন্ধী নন, কারণ সরকারের চোখে উনি প্রতিবন্ধী হিসাবে স্বীকৃত নন।
যাইহোক, একাকিত্বের ও করোনার কারণে ওনার এই প্রতিবন্ধী জীবনযাপন আমাদের ভাল লাগত না, তবু সকলে নিশ্চিত ছিলাম যে ওনার হয়তো কিছু হবে না।

***

এত সব সাবধানতা সত্ত্বেও কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। করোনার কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, শুকনো কাশি, গলাব্যথা, শরীরে ব্যথা এসব কিছুই ছিল না। থাকার মধ্যে আমাশয়ের মত পায়খানা ও পেটে ব্যথা। ওনার হাউস ফিজিসিয়ান সব শুনে পিয়ারলেস হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললেন। ওনারা ভর্তিও করে নিলেন।
ভর্তি হওয়ার পরের দিনই করোনা পজিটিভ ধরা পড়ল। হাসপাতালে থাকাকালীন, ওনার বিশেষ কয়েকটি উপলব্ধি হয়েছিল। উনি এমনিতে প্রজ্ঞানপুরুষ শ্রীশ্রীবাবাঠাকুরের আশ্রিত। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে উনি সবসময় শ্রীশ্রীবাবাঠাকুরকে স্মরণ করতেন আর বলতেন, হে ঠাকুর, আমি সব কিছু তোমার উপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত আছি। আমি বন্ধনমুক্ত, আমার কোনো পিছটান নেই। তুমি আমাকে নিয়ে যেতে পারো, আমার কোনো আপত্তি নেই। আর যদি মনে কর পৃথিবীতে আমার কাজ আছে, তাহলে আমায় বলে দাও কী করবো আর আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চল। এই প্রতিবন্ধী জীবন আর আমার ভাল লাগছে না।
সপ্তাহ দুয়েক বাদে কোভিড-১৯ এর নিগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেল। হাসপাতাল থেকে যিনি ফিরলেন তিনি কিন্তু সম্পূর্ণ এক নূতন ব্যক্তি। ওনার স্মৃতিশক্তি অনেক হ্রাস পেয়েছে। মোবাইল কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা তিনি কিছুতেই মনে করতে পারছিলেন না। ভারসাম্য রক্ষা করতে অপারগ হওয়ার কারণে হাঁটতে ওনার অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু, ঈশ্বরের উপর ওনার বিশ্বাস এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে উনি নিশ্চিত যে এইসব দুর্বলতা খুবই সাময়িক এবং ক্রমশঃ সব দূর হয়ে যাবে। 
এই চিন্তাধারার কারণে, ওনার মধ্যে সব সময় শান্ত সমাহিত এক ভাব বিরাজ করতো। উল্লেখ করেছিলাম, উনি মোবাইল কী করে ব্যবহার করতে হয় তা প্রায় ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু, উনি নিশ্চিত ছিলেন যে ক্রমশঃ সব কিছু একদিন আবার ফিরে আসবেই। মাঝে মাঝেই উনি বলতেন, আজ সকালে মোবাইল চালু করতেই ঐ জিনিসটা মনে পড়ে গেল। জয় শ্রীশ্রীবাবাঠাকুর। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর কথা বলতে গেলেই ওনার কাশি হত। সেটাও ক্রমশঃ হ্রাস পেল |