Sunday, 4 July 2021

মূল্যবোধ - স্বপন গায়েন

 


মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ মানুষের হৃদয় থেকে 
পাখির ডানায় মুক্তি খুঁজছে সব মানুষই -
মধ্যবিত্তের হেঁসেল বড্ড বেশি ছোট্ট হয়ে গেছে।

বিষণ্ণ দুপুরে নিজেদের অজান্তেই মূল্যবোধের মূল্য হারিয়ে ফেলেছে
ফাগুন বাতাস মাটির বুক আঁকড়ে ধরে আছে
কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে হাওয়া বদল হবেই কখনো গরম কখনো ঠান্ডা।


মরা চাঁদের আলো পেরিয়ে জ্যোৎস্নার স্বাদ পেতে চায় সব্বাই
মুক্ত মানুষ অবক্ষয় বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে -
মূল্যবোধ বাঁচিয়ে রাখতে পারে ক'জন মানুষ।


সূর্যাস্তের শেষ আলোটুকু কবে দেখেছে মানুষ মনে পড়ে কী?
জীবনটাকে উপভোগ করবে বলে মূল্যবোধ বিসর্জন দেয় সব্বাই
ভাঙাচোরা তোবড়ানো মুখটা বড্ড বেমানান লাগছে এই একবিংশ শতাব্দীতেও ...


       *********

ভালোবাসার মূল্যবোধ - ডাঃ অসিত কুমার সরকার


ভালোবাসায় 
একটা বেদনা আছে 
যা সবাই বুঝতে পারে না। 
তোর জন্য ফেলা প্রতিটা
চোখের জল আজও
আমাকে বাস্তবতা শিখাচ্ছে। 
কাউকে ভালোবাসা টা কোন 
অপরাধ নয়। 
কিন্তু কাউকে বেশি আবেগ দিয়ে ভালোবাসাটাই, হচ্ছে সবচেয়ে বড় অপরাধ!! 
জীবনে সুখী হতে বেশি 
বেশি কিছু লাগেনা। 
বুঝার মতো একজন মনের মানুষ হলেই হয়। 
কাউকে অতিরিক্ত ভালোবেসে
গুরুত্ব দিলে, 
সে তোমাকে সস্তা ভেবে 
অবহেলা করবে,এটাই বাস্তব। 
দুরত্ব সব সময় শুধু কষ্টই দেয় না
অনেক সময় ভালোও রাখে। 
ভাঙা নৌকা যেমন বেশিখন
ভেসে থাকেনা, ঠিক তেমনি বিশ্বাসহীন প্রেম ও বেশি দিন টিকে থাকেনা। 
ভুল করতে সময় লাগে না 
সময় লাগে ভুল শোধরাতে। 
অন্যের ভুল ধরার আগে নিজে, সেই ভুলটা করেছেন কিনা, সেটা ভেবে দেখুন অন্যের ভুল ধরা যতটা সহজ, 
নিজের ভুল গুলো বুঝতে পারা তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। 
মানুষগুলো বড়ই অদ্ভুত! 
হাসি খুশি জীবন 
কেড়ে নেয় বলে খুশিতে থাকো ভালো থাকো!!! 
জীবন থেকে  যদি ফেলে আসা
দিনগুলো মুছে ফেলা যেতো
তাহলে তোমার জন্য আর কষ্ট পেতে হতোনা ।!! 
তোমাকে ছাড়াই সুখি হতে পারতাম।!! 
যারা ছেড়ে না যাওয়ার 
কথাদেয়, তারাই সবার আগে ছেড়ে চলে যায়।!! 
রাগ করি বা অভিমান করি
দিন শেষে আমি শুধু 
তোমাকেই ভালোবাসি। 
তাইতো প্রতিবার তোমার কাছে ফিরে আসি।

নিধন যজ্ঞ - পরেশ চন্দ্র দাস



নিধন যজ্ঞে মেতেছি মোরা-
                               হয়েছি বিহ্বল,
জ্ঞানপাপী সেজেছি তাই,
                          আতঙ্কেতে গ্লোবাল।
সন্তুলন নিয়েছি কেড়ে-
                        ধরা হয়েছে ম্রিয়মান,
সভ্যতার দাপটে বিশ্ব
                     বদলে দেবে কক্ষস্থান।
বৃক্ষছেদন,দাবানল,ক্ষয়িষ্নু-
                              যুগের অবসান,
নির্মমতায় ভরা পৃথ্বী,
                       সভ্যতার লোকসান।
অনেক বড়ো ঝঞ্ঝা আসবে-
                            তৈরী থাকো সত্তর,
   মুহুর্তেই কেড়ে নেবে,
                       জীবন, জিনিষ পত্তর।
জল নিধনে সবাই পটু,
                          দোষী সুধু অন্যে,
ভূ-নিম্নে জলসঞ্চয় দায় কার?
                           খুজি যে হন্যে।
প্লাস্টিকে ছেয়ে গেছে গোটা মহী,
                                  ভাবনায় বিজ্ঞ,
সচেতনতার স্রোত কমেছে,
                   জ্ঞান পাপীরাই অজ্ঞ।
সমস্যার কাণ্ডারী কে?
                      জন্মেছে কী ভূধরে,
দৈবকি কে কোথায় পাবো-
                          কৃষ্ণ কার উদরে।
শত দোষ নিজে করি
                     ঢেকে রাখি অবগুন্ঠনে,
এই করে দুশো বছর দিয়েছি-
                             শুধুই আত্মহননে।
আধুনিকতার ভারে দুর্বল-
                        এই ভূ-গোলকে,
আলোকবর্ষ দূরে চলে যাবে
                         ছিটকে এক পলকে।
মূল্যবোধের দিন আসছে বন্ধু,
                             অপেক্ষার শরণ,
সভ্যতার চিহ্ন কেউ পাবেনা,
                            হবেই যে মরণ।

                

সোনা মানিক - পরেশ চন্দ্র দাস



নিশির স্বপ্নে ঘুম ভেঙে দেখি,
                   বাঁ চোখ নাচে জোরে,
গিন্নী বলে চিঠি পেয়েছি আজ-
                   শেষ রাতে কিম্বা ভোরে।।
অনুমানটা আগেই ছিল মনে- 
                      পাইনি বলার অবকাশ,
পত্র লিখে আসছে সোনামানিক -
                   জানি!করবেনা বিশ্বাস।।
জীবনের "চরম চিঠি"হয়েছি বিহ্বল,
                খুশিতে আহ্লাদে আটখানা,
বাবা বলে ডাকবে আমায়-
                 মা-বলবে মানিকসোনা।।
এই আশাতেই মানুষ বাঁচে,
                   সুখে-দুখে- দুধেভাতে,
ধনী দরিদ্র সবার ঘরে-
                বাড়বে খোকা হাতেনাতে।।
সংসারের এই চিঠিতে রকমারী,
            অপরের হয়তো নয় দরকারী,
আমরা কেবল খুশিতেই সুখি,
                    বিশ্বপিতার নজরদারী।।
এক জোয়ারে চলছি সবাই-
                          মানছি সব সৈনিক,
বিশ্বজুরে একই খেলায়-
                   চিঠিতেই সোনামানিক ।।

                          

পুরোনো কাগজ - দিগন্ত কুমার দাস।




অগ্নিশর্মা গ্রীষ্ম!
গরমের সাথে বন্ধুত্বের খাতিরে
বুকপোড়া সিলিং ফ্যানটার ঘোরাঘুরি বেমালুম বন্ধ!
মাত্র এক বছর বয়সেই মালিকের সাথে অহেতুক  আড়াআড়ি!
ওকে শায়েস্তা করার গ্যারান্টি কার্ডটা গচ্ছিত ছিল বউয়ের কাছে।
দুর্ভাগ্যবশত বউ তার গ্যারান্টির কথা মনে রাখেনি!
একদিকে কাঠফাটা গরম!
একদিকে হারিয়ে ফেলার দুঃখ!
একদিকে নিজের প্রতি রাগ!
ত্রিমুখী অতৃপ্তির সাড়াশি আক্রমণ!
কিন্তু একটা কথা আছে না- আশায় বাঁচে চাষা!
যেমন কথা তেমন কাজ।
ঢু মারলাম জমিয়ে রাখা দরকারি কিছু পুরোনো কাগজের ডাকবাক্সে।
স্মার্টফোন আসার পর বাক্সটা পুরোপুরি নির্বাসনে!
গোপন কিছু লুকিয়ে রাখার জন্য অসম্ভব নিরাপদ আস্তানা!
একটা একটা করে ভাঁজ করা কাগজের মুখ খুলে খুলে দেখতে বসেছি,
গা বেয়ে দরদর করে ঘাম ছুটেছে!
একটু একটু করে ঘাম চুষতে চুষতে পরনের পাজামাটা আধভেজা!
আমি যে সেদিকটায় একটুখানি দৃষ্টি দেব- তার উপায় নেই!
ততক্ষণে আমি স্মৃতির বাহুবন্ধনে শান্তশিষ্ট শিশু!
হাতে উঠে আসছে একটা করে চিঠি,
খুলে খুলে যাচ্ছে জীবনের ভাঁজগুলো,
কোনটাতে নাচানাচি করছে দুরন্ত শৈশব!
কোনটাতে দুর্গাপূজোয় মামার বাড়ি যাবার ডাক!
কোনটায় ভেসে উঠছে কৈশোরের আকাশ কুসুম কল্পনার স্বপ্নবিলাস!
 কোন চিঠিতে, সবচে প্রিয় বন্ধুকে দেওয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ধারাবাহিক বিবরণের উচ্ছসিত প্রত্যাবর্তন!
 চাকরির প্রথম ইন্টারভিউয়ের চিঠিও মনে করিয়ে দিল সাফল্যের ইতিহাস!
আর এসব দেখতে দেখতেই আরো কিছু অসংরক্ষিত রোমাঞ্চকর চিঠির অনধিকার বাতুলতা!
অনবরত ঠোকা মেরে চলেছে আমার গুরু মস্তিষ্কে!
আমি ভুলেই গেছি- আমার কী কাজ! 
ভুলে গেছি আমার দুঃখ! আমার যন্ত্রণা! 
হঠাৎ সুতোয় বাঁধা রঙিন কাগজে মোড়ানো সযত্নে রাখা কিছু একটায় চোখ পড়তেই,
চকচক করে উঠলো আমার স্মৃতিমেদুর চোখ!
রঞ্জনা! আমার রঞ্জনা! আমার হৃদয়ের রঞ্জনা!
মনে পড়ে গেল পঁচিশ বছর আগে তার কোমল হাতের সোনার কলমে লেখা এক গুচ্ছ প্রেমপত্রের মূর্ছনা!
আমার জীবনের পুরোনো প্রেমের দলিল!
জমিটাকে আমি রাখতে পারিনি ঠিকই,
জমির কাগজগুলো কিন্তু হস্তান্তর করিনি আজও!
কারন জমিটা ছিল আমার ভরসা! আমার প্রেরণা!
আমার পথ চলার পাথেয়!
ওর ঐ চিঠি গুলো আমার বেঁচে থাকার গ্যারান্টি কার্ড!
একুশ শতকের অন্তর্জালের ফাঁসে সেই চিঠিগুলো হয়তো পুরোনো কাগজ মাত্র,
কিন্তু সেগুলোর আবেদন যে কতটা জোরালো,
আজকের দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবার মধ্যেই তার অজ্ঞাতবাস!
               _________

চিঠি এখন স্বপ্ন - শুভ্রা চন্দ্র



চিঠি আজ তোমায় খুঁজি অতীতের স্মৃতির পাতায় ব্যথা ভরা মনে। 
তুমি হারিয়ে গেছ আধুনিকতার 
যাঁতাকলে বহুদূরে নিরুদ্দেশের পথে। 
হ্যায়, হ্যালো, ম্যাসেজে সীমাবদ্ধ 
খবরাখবর আধুনিক কালে। 
পোষ্টকার্ড, ইনল্যান্ড ,ইনভেলপ 
আজ স্বপ্নের দেশে দিয়েছে পাড়ি। 
নববর্ষ, বিজয়া দশমীতে   শ্রীচরণেষু, পূজনীয়, প্রিয়, স্নেহের শুভ বার্তা নিয়ে আসো নাতো উড়ে ।
এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে কাব্য হয়ে।
কত সুন্দর কাব্যমালায় গাঁথা হতো তোমাকে। 
মা, বাবা লিখতো চিঠি ছেলে মেয়েদের কত স্নেহ, মায়া-মমতা ভরে খামের ভিতরে। 
সন্তানের চিঠির আশায় প্রহর গুণতো দরজার কাছে ডাক পিওনের অপেক্ষায়। 
প্রেমের চিঠি জানে নাকো এ যুগের প্রেমিক যুগলেরা। 
প্রেমসুধা ভরে আসতে তুমি প্রেমিক,প্রমিকার 
কাছে  প্রেমের কাব্য হয়ে। 
নববধূরা করতো অপেক্ষা লাজুক আঁখিতে প্রিয়তমের আসবে কখন চিঠি কর্মক্ষেত্র থেকে মনের কথা গোপন কাব্যমালা হয়ে।
চুপিচুপি পড়তো ঘরে গিয়ে খুশির প্লাবনে ভেসে। 
সুখ-দুঃখের খবর বহনকারী চিঠি যুগের ধর্মে 
ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে।  
আবার উঠুক চিঠি সাহিত্য জেগে সুন্দর কাব্য হয়ে মানুষের মননে।
কাগজে কলমে আসুক ফিরে চিঠি লেখার 
মধুর প্রকাশ। 
হৃদয়ে তুলুক  প্রেম, প্রীতি, ভালবাসার সেই পুরোনো বারতা ।
ফিরে এসো চিঠি তুমি  আবার চির আনন্দ 
নিয়ে। 
চির অম্লান হয়ে থেকো মাধুর্য ভরা পোষ্ট 
কার্ড, ও খামে এই পৃথিবীর বুকে।