অগ্নিশর্মা গ্রীষ্ম!
গরমের সাথে বন্ধুত্বের খাতিরে
বুকপোড়া সিলিং ফ্যানটার ঘোরাঘুরি বেমালুম বন্ধ!
মাত্র এক বছর বয়সেই মালিকের সাথে অহেতুক আড়াআড়ি!
ওকে শায়েস্তা করার গ্যারান্টি কার্ডটা গচ্ছিত ছিল বউয়ের কাছে।
দুর্ভাগ্যবশত বউ তার গ্যারান্টির কথা মনে রাখেনি!
একদিকে কাঠফাটা গরম!
একদিকে হারিয়ে ফেলার দুঃখ!
একদিকে নিজের প্রতি রাগ!
ত্রিমুখী অতৃপ্তির সাড়াশি আক্রমণ!
কিন্তু একটা কথা আছে না- আশায় বাঁচে চাষা!
যেমন কথা তেমন কাজ।
ঢু মারলাম জমিয়ে রাখা দরকারি কিছু পুরোনো কাগজের ডাকবাক্সে।
স্মার্টফোন আসার পর বাক্সটা পুরোপুরি নির্বাসনে!
গোপন কিছু লুকিয়ে রাখার জন্য অসম্ভব নিরাপদ আস্তানা!
একটা একটা করে ভাঁজ করা কাগজের মুখ খুলে খুলে দেখতে বসেছি,
গা বেয়ে দরদর করে ঘাম ছুটেছে!
একটু একটু করে ঘাম চুষতে চুষতে পরনের পাজামাটা আধভেজা!
আমি যে সেদিকটায় একটুখানি দৃষ্টি দেব- তার উপায় নেই!
ততক্ষণে আমি স্মৃতির বাহুবন্ধনে শান্তশিষ্ট শিশু!
হাতে উঠে আসছে একটা করে চিঠি,
খুলে খুলে যাচ্ছে জীবনের ভাঁজগুলো,
কোনটাতে নাচানাচি করছে দুরন্ত শৈশব!
কোনটাতে দুর্গাপূজোয় মামার বাড়ি যাবার ডাক!
কোনটায় ভেসে উঠছে কৈশোরের আকাশ কুসুম কল্পনার স্বপ্নবিলাস!
কোন চিঠিতে, সবচে প্রিয় বন্ধুকে দেওয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ধারাবাহিক বিবরণের উচ্ছসিত প্রত্যাবর্তন!
চাকরির প্রথম ইন্টারভিউয়ের চিঠিও মনে করিয়ে দিল সাফল্যের ইতিহাস!
আর এসব দেখতে দেখতেই আরো কিছু অসংরক্ষিত রোমাঞ্চকর চিঠির অনধিকার বাতুলতা!
অনবরত ঠোকা মেরে চলেছে আমার গুরু মস্তিষ্কে!
আমি ভুলেই গেছি- আমার কী কাজ!
ভুলে গেছি আমার দুঃখ! আমার যন্ত্রণা!
হঠাৎ সুতোয় বাঁধা রঙিন কাগজে মোড়ানো সযত্নে রাখা কিছু একটায় চোখ পড়তেই,
চকচক করে উঠলো আমার স্মৃতিমেদুর চোখ!
রঞ্জনা! আমার রঞ্জনা! আমার হৃদয়ের রঞ্জনা!
মনে পড়ে গেল পঁচিশ বছর আগে তার কোমল হাতের সোনার কলমে লেখা এক গুচ্ছ প্রেমপত্রের মূর্ছনা!
আমার জীবনের পুরোনো প্রেমের দলিল!
জমিটাকে আমি রাখতে পারিনি ঠিকই,
জমির কাগজগুলো কিন্তু হস্তান্তর করিনি আজও!
কারন জমিটা ছিল আমার ভরসা! আমার প্রেরণা!
আমার পথ চলার পাথেয়!
ওর ঐ চিঠি গুলো আমার বেঁচে থাকার গ্যারান্টি কার্ড!
একুশ শতকের অন্তর্জালের ফাঁসে সেই চিঠিগুলো হয়তো পুরোনো কাগজ মাত্র,
কিন্তু সেগুলোর আবেদন যে কতটা জোরালো,
আজকের দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবার মধ্যেই তার অজ্ঞাতবাস!
_________