সাধ ছিল মনে বড় হয়ে মস্তবড় নামিদামি কবি, লেখক কিংবা সাংবাদিক হব।
তোমার- আমার সমাজের, সকলের সুখ-দুঃখ, হাঁসি-কান্না, আনন্দ আমার ছোট্ট বেলার মাসির দেওয়া সেই কালিকলম দিয়ে শক্তহাতে দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরব।
কিন্তু আজ তা আর হলোনা,যত বয়স বাড়তে শুরু করল সংসারের পাওয়া-না পাওয়া, দৈনন্দিন অভাব অনটনের মাঝে ধীরে ধীরে আমি হারিয়ে গেলাম।
তুমি বলেছিলে আমি যেদিন মস্তবড় কবি, লেখক কিংবা সাংবাদিক হব,যেদিন সমাজে আমার অনেক নাম হবে সেদিন তুমি আমাকে তোমার ঐ সুন্দর নরম মনিকোঠায় জায়গা দেবে।
কিন্তু,আজ তা আর হলোনা, কথা-কথা হয়েই থেকে গেল।
আচ্ছা তোমরা বলতে পার গরীব হওয়া কি খুবই অপরাধের?
আমিতো তার কথা অনুযায়ী চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখিনি; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাধ আর সাধ্যের লড়াই-এ আমি পেরে উঠিনি, হেরে গেছি; তাতে আমার দোষ কোথায়?
আসলে আমার দোষ আমি গরীব, আমার মতো গরীব ছেলের সমাজে আজ কোথাও স্থান নেই,তা খবরের কাগজে হোক ,সাহিত্যে হোক কাব্যে হোক কিংবা কারো সুন্দর নরম মনিকোঠায় হোক।
টাকা বুঝলে টাকা,টাকা ছাড়া এই তৈলাক্ত সমাজে তুমি বড় কিংবা নামিদামি মানুষ হতে পারবেনা।
তুমি ঞ্জানী না হও, মেধাবী না হও অথবা লাস্ট বেঞ্চে বসা ছাএ-ই হও না কেন,টাকা থাকলে এই সমাজে তুমি পেছন থেকে সবার আগে অর্থাৎ সামনে স্থান পাবে।
আর যদি টাকা না থাকে তাহলে আর একটা দিক আছে এই সমাজে বড় হওয়ার;তবে ঐ বিষয়ে তোমাকে পি এইচ বি করতে হবে।
ভাবছো বিষয়টা কি,হ্যা ঠিক ধরেছো ঐ কথাটাই, তেল দিতে শিখতে হবে;
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দাদা-দাদা, দিদি-দিদি, কাকু-কাকু কিংবা জ্যেঠু-জ্যেঠু করতে হবে,আর তাদের সামনে- পিছনে ঘুরঘুর-ঘুরঘুর করতে হবে আর ওনাদের জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ করতে হবে।
লজ্জা-ঘৃনা অথবা প্রেস্টিজ যদি দেখিয়েছোতো তুমি কারও সুন্দর নরম মনিকোঠায় স্থান পাওয়াতো দূরের কথা,তোমায় তোমার মা,বাবা, ভাই-বোন পড়িবার-পরিজনদের নিয়ে দু-বেলা উপোস করে থাকতে হবে।
শেষ পর্যন্ত পড়িবার চালাতে স্কুল জীবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ঐ কয়েকটি ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হওয়া কাগজের টুকরোগুলো আজীবন বাড়ির মানদাওা আমলের ছোট্ট ট্রাঙ্কটিতে স্বযত্নে গচ্ছিত রেখে গলির মোড়ে কাপড়ের কিংবা লোহার দোকানে অথবা রাজমিস্ত্রির লেবার গিরি করতে হবে।
তোমার শখ, তোমার সাধ-আহ্লাদ, তোমার স্বপ্ন সমাজের দাদাদের দামি সিগারেটের ধোঁয়া হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যাবে।
যদি তুমি নিজেকে সামলে নিতে পারলে তো সেই যাএায় বেঁচে গেলে,আর যদি নিজেকে সামলাতে না পার তাহলে সমাজের গলা-পচা সেন্টিমেন্ট নিয়ে একটা ছোট্ট দড়ি গলায় ঝুলিয়ে কিংবা অন্য কোন আধুনিক পদ্ধতিতে চিড়তরে ভবের খেলা সাঙ্গ করে অনেক ব্যথা-বেদনা, পাওয়া-নাপাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের লাশকাটা ঘরটাতে তোমার জ্বালাধরা দেহটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে তোমার ঠুনকো পাপী সেন্টিমেন্টকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঘুনধরা সমাজটাকে যেভাবে সেলাই করে টিকিয়ে রাখা হয়েছে,ঠিক তেমনি তোমার দেহটাকেও কোনরকমে সেলাই করে আটকে দিয়ে পাড়ার দাদা,ভাই-বন্ধুদের কাঁধে দুলতে দুলতে রাম নাম সত্য হ্যায়, কিংবা বলোহরি হরিবোল হরি নামের সাথে শ্বশ্মানে চিতার আগুনে তোমার সমস্ত স্বপ্ন তোমার সস্তা সেন্টিমেন্ট দাউ দাউ করে জ্বলে-পুরে ছাড়খাড় হয়ে চিরতরে ছাই হয়ে মাটিতে মিশে নি:শ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
---------------------------------------------------------------
Voice Literary Blog
Editor - Bijoy Sarkar
Sub-Editor - Monowar Hossain
Chief Organizer : Chandan Mahanta
Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------