কালো?সে তা যতই কালো হোক
দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ
ইতিহাসে কালো হরিণ চোখের প্রেমে কবিরা পড়লেও তা কিন্তু নেহাতই থাকত লেখার অন্তরালে।হিন্দুত্ববাদী গোড়া মানুষরাই নিজেদের সুবিধার্থে তাই বর্ণবৈষম্য সৃষ্টি করে।সেসময় গায়ের রংই যেন সমাজের মুল চালিকা শক্তি।বিবাহের জন্যে খোঁজা হত উজ্জল গাত্রবর্নের পাত্রী।আর কালো হরিণ চোখ,এলো চুল মায়াবী তরুর মত শরীরের বাতাবরনের কালো মেয়ররা চিরকাল ই থাকল লাঞ্ছিত।
ওই যে সেদিন ঘটা করে আক গাড়ি লোক দেখতে এল নিরুকে।এই নিয়ে কম তো ইন্টারভিউ দিলনা মেয়েটা পাত্রপক্ষের সামনে।সব কিছু পছন্দ হলেও যখন শুধু কালো বলে ছেলের বাড়ির লোক মোটা টাকা পন চেয়ে বসে তখনই তো ভেঙ্গে যায় বিয়েটা।বিয়ে নয় মরে যেতে ইচ্ছে করে তখন ওর এই নোংরা সমাজের চোখ রাঙানিতে।তবে এবার আর বিয়েটা ভাঙ্গলনা।ভিটে বাড়ি বন্দক দিয়ে মোটা টাকা পন দিয়ে পাত্রকে কিনতে পেরেছে নিরুপমার বাবা।টাকার ভারে গায়ের রং ঢাকা পরে যায় তাহলে?নিরুর ডাগর চোখ ওর দীঘল চুল ওর মেধা যোগ্যতা কে যেন ওই গায়ের কালো রং বারবার ছাপিয়ে যায়।বিয়ের দিন ও তাই শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয়ার মুখে শুনল তার থেকে নাকি তার বড় জা কেই বেশি বউ বউ দেখাচ্ছে।একজন তো এটাও বলল তোমার ছেলে আর মেয়ে পেলনা!
কথা গুলো থেকে যা বোঝা গেল তা হল কৃষ্ণকলি বলে ডাকলেই ক একটা কালো মেয়ের দুঃখ মোচন হয়।নামের সাথে সেই তো জুড়ে দেওয়া হয় কালোর নাম।কখনও শপিংএ গেলে খুব কাছের প্রিয়জন টিও বলে "এ রংএ মানাবে না তোমাকে"।কালো মেয়েদের যেন জীবনে কোনো রং থাকতে নেই।তাদের জীবনের সব রং শুষে নেওয়া হয় কালো হওয়ার অপরাধে।কিন্তু গায়ের রং সাদা হলেই যেন কোনো মেয়ের আর কোনো যোগ্যতা অর্জন করতে লাগেনা।আর কালো মেয়েরা যতই যোগ্য হোক তাদের আর কদর নেই।
সেই যে উপনিবেশিক কাল থেকে কালো রংকে খাটো করে দেখার প্রবনতা তা আজও বর্তমান।কালো রং যে অযোগ্যতা এটা প্রচার করতে মিডিয়ায় ভুমিকাও কম নয়।বিঙ্গাপনেও একটা মেয়ের উচ্চশিক্ষাকে খাটো করে দেখানো হয় তার রংএর কারনে,দেখানো হয় সে শুধু চাকরি পাচ্ছেনা তার রং ফর্সা নয় বলে।তবে এধরনের মনোভাবের পেছনে পুজিঁবাদী সমাজব্যবস্থাই ভীষন ভাবে দায়ী।
অনেক সময় কিন্তু গায়ের রংকেই সুখী দাম্পত্য জীবনের রসদ মনে করা হয়।যে সমস্ত তথাকথিত সুন্দর পুরুষরা শ্যামলা রংএর মেয়ে কে বিয়ে করে তারাও কিন্তু বারবার বুঝিয়ে দেয় যে সে সুন্দর হলেও কালো মেয়ে বিয়ে করায় তার কোন আক্ষেপ নেই।বেশির ভাগ সময়ই মানুষ না বুঝেই বর্ণবাদী আচরন করে এমন নয়। মানুষ অজান্তেই তার চরিত্রে বহন করে বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ।
ত্বকের কালো রং এমনভাবে আমাদের সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে যে সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বহুযুগ ধরে সুন্দরী নারী মানে দুধে-আলতা বরণ কন্যার বর্ননাই উঠে আসে।ভাবতে অবাক লাগে মানুষ কত অসভ্য হলে এমন চিন্তা করতে পারে।কালো রং যেন এখন আর সামাজিক সংকীর্ণতায় নয়,বৃহত্তর অর্থে বোঝাতে চাইলে রাস্ট্রীয় সমস্যা বললেও কিছু ভুল হবেনা।
কিন্তু বর্তমান সমাজের অবস্থা আরও শোচনীয়।নারীরা এখন নিজেদের জন্য সাজে না।বরং নিজেকে পন্য বানানোর জন্য সাজে।কেউ নিজেকে নিয়ে সুখী নয়। অন্যকে প্রেমে পরানোর আগে নিজেই নিজের প্রেমে পরাটা জরুরি বিষয়।যেখানে নিজের সাথে কালো রংএর বিন্দুমাত্র দ্বন্দ্ব নেই। রুপচর্চায় সাদা হওয়া নয় ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখা জরুরী।নিজের মতো গুছিয়ে সাজসজ্জা জরুরী।তাতে বলুক না লোকে কালো মনটাই সাদা হওয়া জরুরী।
কালো রংটাকে একটি দোষ হিসাবে বিবেচনা করে সমাজ বিশেষত মেয়েদের কেই বিচার করে।এজন্য চাই কালো কে দোষ হিসাবে দেখার মানষিকতার পরিবর্তন।কালো তেই শিক্ষার শুরু সে কথা ভুলে গিয়ে কালো মানে অসুন্দর,কালোকে তাই মুছে সাদা হয়ে উঠতে হবে এমন আদিম চিন্তা যতদিন না শেষ হবে কালো মেয়ের দুর্ভাগ্য ততদিন শেষ হবেনা।গুনের চেয়েও যে সমাজে রংএর কদর বেশি সে সমাজ অসভ্য,বর্বর।
Copyrights@ S Kundu
--------------------------------------------
শতাব্দী কুন্ডু
লেখিকা
উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ
---------------------------------------------------------------
Voice Literary Blog
Editor - Bijoy Sarkar
Sub-Editor - Monowar Hossain
..... Chief Organizer.....
Chandan Mahanta
Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice---------------