Saturday, 15 August 2020

শিপ্রা দেবনাথ (টুলটুল)



আমরা কতটা স্বাধীন
*******************


কী অর্থ বহন করে এই শব্দ "স্বাধীন"?
স্বাধীন অর্থাৎ স্বীয় অধীন অথবা আমি বা আপনি নিজের অধীনে। এর অর্থ দাঁড়ায় আমরা অন্যের অধীনে নয়। এই স্বাধীন শব্দের সাথে জড়িত শব্দ স্বাধীনতা। এ শব্দে আমরা নিজের দেশ স্বাধীন এই কথাই বুঝি।নিজের দেশে যখন আমরা নিজেরা স্বতস্ফুর্ত ভাবে চলাফেরা করতে পারি, নির্দ্বিধায় নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে পারি, অন্যায় প্রতিরোধ করতে পারি, স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারি তখন আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্থক হয়। বস্তুত সেটা দেখা যায় না, তাই সন্দেহ থেকেই যায় আমি বা আমার দেশ কতটা স্বাধীন?

   স্বাধীনতা শব্দটির ব্যাপ্তি বিরাট পরিসরে।কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে পরিবারে সমাজে বা দেশে আমরা কে কতটা স্বাধীন সে কথা কিন্তু সকলেই কম বেশি উপলব্ধি করতে পারি।
   
   দেশের স্বাধীনতার পূর্ব ইতিহাসে এখানে তুলে এনে লাভ নেই। অনেক কষ্টের বলে আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এ কোন নতুন কথা নয়। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীন দেশে আমরা কে কতটা স্বাধীন?
   
   আমরা সেই স্বাধীন দেশে আছি যেখানে যোগ্যতা মূল্যহীন। সুচারু মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ তার যোগ্য পদ মর্যাদা পায় না, কেন? আমরা স্বাধীন? তাই? দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব কাদের উপর? স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব কারা নিয়েছেন? সাধারন একটা অসুখের বিল লক্ষ  টাকায় দাঁড়ায়, কেন? এটা স্বাধীন দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা?একজন গরিব পরিবারের রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাকে অনেক হেনস্থার শিকার হতে হয়, কেন? কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে সেই রোগী মারা যায়, এবং তারা দায় অস্বীকার করেন, কেন?
   
   সরকারি স্কুলের শিশুদের দু'জোড়া ইউনীফর্ম দেওয়া হয় বছরে। কিন্তু একবারও বিচার করে দেখা হয় না যে ইউনিফর্ম জোড়া সরকারের তরফে বাচ্চাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে সেটা আদৌ বাচ্চারা পড়তে পারবে কিনা? এটা স্বাধীন দেশের সিস্টেম? যদি বাচ্চাদের দু'জোড়া জামা না দিয়ে একজোড়া একটু ভালো কোয়ালিটির দেওয়া হতো অথবা যদি প্রতিটি স্কুলে বাচ্চাদের মাথা পিছু কিছু টাকা দিয়ে দেওয়া হতোঅথবা বাচ্চাদের শরীরের মাপ নিয়ে একটা নির্দিষ্ট দর্জির দোকান থেকে সেই ইউনিফর্ম জোড়া  বানিয়ে দেওয়া হতো তাহলে হয়তো সরকারের ইউনিফর্ম দেওয়ার পেছনে খরচ করা টাকা জলে যেত না। একটি বাচ্চা একজোড়া ইউনিফর্ম দিয়েই কোনরকমে একটা বছর কাটিয়ে দিতে পারত। ওই ঢিলে ঢালা পোশাক পড়ে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। এবং বাচ্চারা পড়তেও চায় না সেই পোশাক অতঃপর বাবা-মাকে খরচ করে বাচ্চার জন্য পোশাক বানাতে হয়। এত লক্ষ টাকা খরচ করে বাচ্চাদের পোশাক দেওয়ার পর যদি সেটা কাজেই না লাগে তবে সে দেওয়ার মানেটাই কি আর খরচ করার মানেটাই কি?এই অপব্যয় কাজে লাগলে বুঝতে পারতাম যে আমরা স্বাধীন দেশে রয়েছি আমাদের বাচ্চারা স্বাধীন দেশের স্কুলে যাচ্ছে।
   
   স্বাধীন দেশের সরকারি স্কুলের অনলাইন ক্লাসের রুটিন এগারোটা থেকে একটা আবার তিনটা থেকে পাঁচটা। সপ্তাহে 5 দিন। কিন্তু শিক্ষকদের কোনদিন দেখা যায়নি। শুধু 1-2 পাতা
 জেরক্স মেসেজ আকারে।আর এই মেসেজটা করতে মাত্র 2-4 সেকেন্ড ব্যয় হয়। এভাবে কি পড়া হয়?
 
 প্রশ্ন হল স্কুল চলাকালীন কত ঘন্টা পড়ানো হয় এবং কিভাবে পড়ানো হয়? এটা কি অনলাইন ক্লাসের নামে প্রহসন নয়? এই হলো আমাদের স্বাধীনদেশের সরকারি স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা।
 
স্বাধীন দেশে অবৈধ প্রেমেও ছার। ডাস্টবিনে স্তূপাকারে অবৈধ প্রেমের পরিণতি। এটাই স্বাধীনতা?

একটা মেয়ে একা পড়তে অথবা অন্যকোন কাজে যাওয়া আসা করার সময় যে ছেরখানির সম্মুখীন হয় সেটা কি ওই দুর্বৃত্তদের স্বাধীনতা? ছেলের সামনে মায়ের শ্লীলতাহানি বাবার সামনে মেয়ের ইজ্জত লুট এটাই তো আমাদের স্বাধীন দেশের চিত্র! ছ বছর বয়সী মেয়ের ধর্ষণ করে খুন এটা কোন স্বাধীন দেশের চিত্র হতে পারে? স্বাধীনতা মানে কি যা ইচ্ছে তাই করা যায়? উশৃংখলতা কে স্বাধীনতার আওতায় পড়ে? যদি না হয় শক্ত হাতে কেন অন্যায় দমন করছে না প্রশাসন?

স্বাধীনতা মানে কি সাম্প্রদায়িকতা? ধর্মের নামে রাজনীতি, স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা, সামাজিক অরাজকতা এসব স্বাধীনতার কোন স্তরে পরে! কেউ কি বলতে পারে?

 স্বাধীনতা হোক  সম্প্রীতি, সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য। স্বাধীনতা হোক ভালোবাসার বন্ধন। স্বাধীনতা হোক মানবতা। স্বাধীনতা হোক ভাতৃত্বের দৃঢ় বন্ধন। স্বাধীনতা হোক  বন্ধুত্ব। সব অরাজকতা দূর করে সবাই প্রাণের টানে মিলিত হোক। শান্তি আর ঐক্য বিরাজ করুক সর্বত্র। শাসক এবং জনগণের মধ্যে গড়ে উঠুক এক নিবিড় বন্ধন। মানুষের সাথে মানুষের আত্মিক বন্ধন ঘটুক। মানুষ মানুষের জন্য এই কথাই সত্যি হোক। স্বাধীনতা নিয়ে আসুক শান্তি হাসিখুশি আনন্দ নিয়ে আসুক বিশ্বাস ভরসা।

------------------------------------------------------------------


 শিপ্রা দেবনাথ (টুলটুল) 
কবি ও লেখিকা 
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ 

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------

Friday, 14 August 2020

সুব্রত মিত্র

গল্প 

কথা শুনি মাধবীর


আজ ৬ই মার্চ। কচি পাতাদের কত গল্প মাথার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তা কখনো তাকিয়ে দেখা হয়নি।দেখা হয়নি জীবনের সাথেসাথে আজও যেসকল পাখিরা আমাদের গান শোনায় তাদেরকে।সেইভাবেখোঁজ নেওয়ার অবকাশও হয়নি আসলে।এখন আমি আমার বাগানের লাগোয়া বাড়ির প্রধান দরজায় গাছের নিচে একটি মাদুর বিছিয়ে তাতে অর্ধ নিদ্রায় শুয়ে আছি।সারা পৃথিবীর সাথে আমাদের ভারতবর্ষও মহামারী করোনার মোকাবিলায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লকডাউন ঘোষণা করেছে।এখন সকলে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক পাখার তলায়।আমি একটা বালিশ নিয়ে মাদুরের ওপরে শুয়েশুয়ে মাধবীলতার কচি পাতার সাথে মাধবীর কিছু হাসিমুখের কথা আড়ি পেতে শুনছি।মাধবীলতার সাথে পাশের জাম গাছটিরও খুব মিল।জাম গাছেও খুব কচি পাতা এসেছে।এসেছে মুকুল।দুপুরের এই আগুনের মতো উত্তাপ নিয়েও কেমনভাবে ওরা হেসে আছে ওরা আমাকেও হাসায়।আজ দুপুরে আর ঘুম হবেনা।চোখ বন্ধ করলেই পাখিদের কলকাকলি।চোখ মেললেই কি চমৎকার সবুজ আলোতে যেন একটা নতুন আকাশের তলায় আমি শুয়ে আছি।গাছের ডালে সবুজ আলোর মাঝে পাখিগুলোও কথা বলছে ,নেচে বেড়াচ্ছে অবিরত।মাধবীর তলায় দখিনা বাতাসের সাথে সবুজ পাতাদের কথা শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়েই পড়লাম।ওমা!সন্ধ্যে ছটা বেজে গেছে!অতি নিকটেই আমার ঘর থেকে স্ত্রী ডাকছে,চা খাবে এসো।চা খেতে ইচ্ছে করছে ঠিকই,কিন্তু----------।আমি যে এখন থেকে যেতেই পারছিনা।এখনই যে মাধবীর আসল জাদু।একটু অবাক লাগলেও সত্যি।আমার মাধবী প্রতিদিন সন্ধ্যে থেকে সারারাত তার রূপ ও গুণের জাদু দেখায়।ওকে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি।আমি জানি।আজকাল আমার স্ত্রীও মাধবীকে খুব ভালোবাসে।ইতিমধ্যেই মাধবীকে বলে চা পর্বটা সেরে নিলাম।রাতের অন্ধকার যত গাঢ় হয় মাধবীর ফুলগুলো অন্ধকারের মাঝে যেন তারার মতো জেগে থাকে।সারাটাদিন যেন মাধবী রোদে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল।তাই ও রাতে জেগে ওঠে।সেজে ওঠে।তাহলে আমিতো সারাদিন বাড়ির প্রধান দরজায় মাধবীর মাচার তলায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম সবুজের সাথে ওরা হাসছিল।উত্তরে আমাকে মাধবীলতার ফুলগুলো ডেকে বললো,"শোনো"।দিনেরবেলা আমার শরীর এবং হাত,পা,হাসে।তখন আমি রোদের প্রখরতায় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি।আমার পাশে ঐ জাম গাছের কচি পাতা গুলো আমাদের আত্মীয় হয়।সেই জন্যইতো সব পাখিগুলোও একবার এডাল,একবার ওডাল, করতে থাকে।ওরা আমাকে বলেছে,তুমি আর মা (আমার স্ত্রী)আমাকে খুব ভালোবাসো।যাও বাবা।এবার ঘুমিয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।আমি সারারাতই এখানে জেগে থাকবো।তোমাদের সুগন্ধ দেব। 

-----------------------------------------------------------------------

শ্রী সুব্রত মিত্র 
কবি ও লেখক 

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------

Sunday, 9 August 2020

পাপিয়া খাতুন

গল্প
-----

প্রেম- বিরহ

ক্যান্টনমেন্টের এক কোণে বসে ছিল পলাশ। তার পর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে,কি যেন মনে মনে বলছিল।
কিছু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল পলাশের বন্ধুরা।
পলাশ ও শাপলা কে নিয়ে ওদের কথা হচ্ছিল।
শাপলা কে নিয়ে বান্ধবীরা মজা করছিল, বান্ধবীদের ভিতর থেকে একজন বলে উঠল,,
কি রে শাপলা সবাই বলাবলি করছে,তুই নাকি প্রেমে পরেছিস?
শাপলা ওর কথায় রেগে যাচ্ছিল বটে, তবে মনে মনে সুখের ভেলায় ভাসছিল।
শাপলা অনেক দিন ধরেই পলাশ কে মনের মণিকোঠায় ঠাঁই দিয়ে ফেলেছে, শুধু বলার অপেক্ষা!
একি সহপাঠী ওরা তাই হয়তো দ্বিধাবোধ করে।
এদিকে পলাশও শাপলা বলতে অস্থির।
ঠাট্টার ছলে যদি বন্ধুরা শাপলা কে নিয়ে কথা বলে, তাহলে পলাশ বলে প্রেম করে বন্ধুত্বের কবর দিই কি করে।
আবার উদাস কবির মতো বলে, তবে মনও যে মানে না।
আমি শাপলা কে ভালোবাসি ,সে কথা শাপলা ও হয়তো বা জানে।
তবে শাপলা ও তো আমায় বলতে পারে!
বন্ধুদের মধ্যে একজন বললো,
ওরে গাধা, মেয়েদের বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না! তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, শালা হনুমান!
আচ্ছা কলেজে তুই তো খুব ভালো ছাত্র, তবে এ সব কথা তোর মাথায় এলো কি করে। দেবদাসের মতো চেহারা টাও করছিস।
পলাশ এতক্ষণ চুপ ছিল,স্ব বেগে ওর মুখ টা চেপে ধরে,
আচ্ছা-আচ্ছা হয়েছে, এবার একটু থাম দেকি।
এই কেমন বন্ধু তোরা , একটু উপকার না করে শুকনো ডাইলক দিবি।
আরেক জন বন্ধু বলে,, তাহলে আজকেই বলি কি বলিস তোরা?
সবাই এক বাক্যে,
তবে তাই হোক।
পলাশ দারুন চমকে, সত্যি বলবি?
প্রথম বন্ধু বললো, কেনো শাপলা কে ভয় করিস বুঝি?
পলাশ লজ্জা পেলো, এবং বলল কেন ভয় কেন পাবো?
বাজে কথা রাখ চল সবাই।

পলাশ যেতেই মুখোমুখি শাপলার, ভয়ে ভয়ে বললো,
শাপলা তুমি, তুমি কতক্ষণ?
শাপলা কোন কথা বলে না, শুধু প্রিয় মানুষটির আননে অপলকে চেয়ে থাকে। মনে হয় দুজন দুজনার চোখের ভাষায় কত আপন কত চেনা।
দুজনে গোপনে গভীর ভাবে জেনে গেছে ওরা।
শুধু জানে না আকাশ বাতাস পাহাড় সাগর নদী। নীরবতা ভেদ করে শাপলা বললো,
এভাবে চেয়ে রয়েছো যে?
কিছু বলো?
মনে মনে পলাশ বললো,বলার তো অনেক কথাই ছিল, কিন্তু ভরসা হয় না।
শাপলা আবার বললো, কি হল?। পলাশ থতমত খেয়ে বললো,কি ? কিছু না?
কিছুই না শাপলা বললো।
পলাশ ঘার নাড়ল,
মুচকি হেসে আবার নিজেকে সামলিয়ে শাপলা বললো,
সত্যি বলছো?
পলাশ দুরু দুরু বুকে বললো সত্যি টা তাহলে তুমিই বলো।
শাপলা লাজুক হয়ে বললো, আমি জানি না!
মৃদু স্বরে পলাশ বললো সেটা আমারো তো জানা নেই শাপলা।
শাপলা দুহাত মসলাতে মসলাতে বললো আমি আসি।
অমনি পলাশ শাপলার ডান হাতটা খপ করে ধরে ফেলে স্বজরে বুকে টেনে নেয়।
শাপলা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,হাত ধরলে কেন?
পলাশ শাপলার কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বলল হাত না ধরলে যে হৃদয় ছোঁয়া যাবে না।
শাপলা বললো কেনো হৃদয় ছোঁয়া যাবে না আমি হৃদয় দিয়ে হৃদয় কে কিনেছি।
পলাশ গভীর ভাবে বুকে জড়িয়ে বলে ওঠে ওরে দুষ্টু তলে তলে এতো কিছু। কেন এতো দিন বলনি।
তুমি ও তো বলনি?
পলাশ বললো আমি ভয়ে বলিনি, যদি তোমায় চেয়ে না পায়।
আচ্ছা পলাশ এখন ভয় করছে না।
না এখন কোন ভয় করছে না পলাশ বললো।
পলাশের তৃষ্ণার্ত অধর প্রিয়তমার গোলাপের পাপড়ি মতো অধরে ঘসতে ঘসতে মনে হল যেন এক পশলা বৃষ্টি নামলো উষ্ণ মরুর বুকে।
শাপলা এক দৌড়ে পালিয়ে গেল।
ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ টা একটু আগে প্রেমিক পুরুষ হয়ে উঠেছিল।আবেগ ভরা হাসি নিয়ে লজের দিয়ে রওনা দিল পলাশ।
এমনি করে নব যৌবনের তারণ্যে উদ্ভাসিত হল দুটি সবুজ হৃদয়।বিনা সূতোর মালা যেন একে অন্যে গাঁথা ।এ যেন জন্ম জন্মান্তর এ বাঁধন যদি কভু ছিঁড়ে যায় দুজন এই ধূলির ধরা হতে হয়তো বিলিন হয়ে যাবে।

এমনি করে বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেল।
তার পর এক দিন পলাশ বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মগ্ন ছিল।
আর এদিকে শাপলা কে কথা দিয়ে ছিল যে দুজনে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাবে।
কিন্তু পলাশের। সে কথা একটু খেয়াল ছিল না।আর যখন মনে হল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। শাপলা একা সমুদ্র সৈকতে হাঁটছে, রোদ্দুর নড়বড়ে  শান্ত বিকেল।
পলাশ পিছন থেকে ডাকলো শাপলা আ আ!
শাপলা শুধু একটিবার পিছন ফিরে দেখলো।
তার পর আবার হাঁটতে শুরু করলো, পলাশ দৌড়ে সাথ ধরলো‌
রাগে গজগজ শাপলা, অবিরাম হাঁটছে হেঁটেই চলেছে।
সমভাবে পা ফেলতে ফেলতে পলাশ বললো রাগ করেছো শাপলা।
ইমন রাগের রাগিনী সাবলীল ভাবে বললো না!
তাহলে দাঁড়াও, আমার কথা শোন।
উত্তেজিত হয়ে শাপলা বললো তুমি ফিরে যাও পলাশ।
সত্যি বলছো? সত্যিই ফিরে যাবো?
কাঁদু কাঁদু সুরে শাপলা বললো, আমি যে তোমার সাথে ঠাট্টা বা মজা করছি না সে তুমি ঠিক বুঝতে পারছো।
পলাশ এক বুক অভিমান নিয়ে বললো আমি সত্যি সত্যিই ফিরে যাচ্ছি। আমাকে কিন্তু আর ফেরাতে পারবে না।
দুজন চলেছে দুই মেরুতে। কিছু দূর গিয়ে শাপলা পিছন ফিরে দেখলো পলাশ অনেক দূর চলে গেছে ওকে ফেরাতে হবে বলে ছুট ধরলো।
শাপলা দৌড়াই আর নাম ধরে ডাকে পলাশ দাঁড়াও । দাঁড়াও প্লিজ। পলাশ সৈকত ছেড়ে শিশু বাগান , সেও ছাড় ছাড়। শাপলা উন্মাদের মত ছুটছে।
পলাশ কানে শুনেও না শোনার ভান করে চলেছে।একবারো পিছন ফিরে দেখলো না।
শাপলা উন্মাদের মত ছুটতে ছুটতে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ওখানেই পড়ে রইলো।
এদিকে শাপলা ডাকছে না দেখে পলাশ পিছন ফিরে তাকালো কিন্তু কেউ নেই গেল কোথায় শাপলা।
পলাশ দূর থেকে দেখতে পেল শুধু সমুদ্রের মাতামাতি, ‌পলাশ ছুট ধরলো। শাপলা আ আ আ।
জনমানবহীন শূন্যস্থান শুধু একটি শব্দের প্রতিধ্বনি ভাসছে বাতাসের কানে কানে। পলাশ একছুটে সমুদ্রে নেমে পড়লো।
উন্মাদের মত হাতরাচ্ছে আর চিৎকার করে করে বলছে, শাপলা তুমি কোথায়?
কলকল ধ্বনির সাথে সমুদ্র যেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয়ার খোঁজ বলে দিচ্ছে।
পলাশের কোমরে আছরে পরছে ঢেউ ।আর ভাঙা ভাঙা তরঙ্গের সাথে ইমন রাগের অনুরাগ চলছে।হীতগ্যান  হীন পলাশ যেন দুমড়ে মুচড়ে পড়ছে।
পিছনে নির্মিত হয়ে যাওয়া তরঙ্গে। পলাশ শুধু হেঁটে চলেছে গভীরে আরো গভীরে।
অশান্ত ঢেউ চিরদিনের মতো পলাশ কে নিয়ে গেল তার প্রাণপ্রিয়ার খোঁজে অনন্ত কালের জন্য সেই স্বপ্ন পুরীতে।
দিশাহীন অলৌকিক রাজ্যে সমুদ্রে বিলিন হয়ে গেল পলাশ। পলাশ নামের সেই ছেলেটির যার কৃষ্ণচূড়া মন, কঠিন মরন তারে বন্দি করলো সারাক্ষণ।

Copyrights@ P Khatun  
-----------------------------------------------------------------------

পাপিয়া খাতুন 
লেখিকা 
নাকাশি পাড়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ,  ভারতবর্ষ  

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------