গল্প
-----
প্রেম- বিরহ
ক্যান্টনমেন্টের এক কোণে বসে ছিল পলাশ। তার পর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে,কি যেন মনে মনে বলছিল।
কিছু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল পলাশের বন্ধুরা।
পলাশ ও শাপলা কে নিয়ে ওদের কথা হচ্ছিল।
শাপলা কে নিয়ে বান্ধবীরা মজা করছিল, বান্ধবীদের ভিতর থেকে একজন বলে উঠল,,
কি রে শাপলা সবাই বলাবলি করছে,তুই নাকি প্রেমে পরেছিস?
শাপলা ওর কথায় রেগে যাচ্ছিল বটে, তবে মনে মনে সুখের ভেলায় ভাসছিল।
শাপলা অনেক দিন ধরেই পলাশ কে মনের মণিকোঠায় ঠাঁই দিয়ে ফেলেছে, শুধু বলার অপেক্ষা!
একি সহপাঠী ওরা তাই হয়তো দ্বিধাবোধ করে।
এদিকে পলাশও শাপলা বলতে অস্থির।
ঠাট্টার ছলে যদি বন্ধুরা শাপলা কে নিয়ে কথা বলে, তাহলে পলাশ বলে প্রেম করে বন্ধুত্বের কবর দিই কি করে।
আবার উদাস কবির মতো বলে, তবে মনও যে মানে না।
আমি শাপলা কে ভালোবাসি ,সে কথা শাপলা ও হয়তো বা জানে।
তবে শাপলা ও তো আমায় বলতে পারে!
বন্ধুদের মধ্যে একজন বললো,
ওরে গাধা, মেয়েদের বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না! তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, শালা হনুমান!
আচ্ছা কলেজে তুই তো খুব ভালো ছাত্র, তবে এ সব কথা তোর মাথায় এলো কি করে। দেবদাসের মতো চেহারা টাও করছিস।
পলাশ এতক্ষণ চুপ ছিল,স্ব বেগে ওর মুখ টা চেপে ধরে,
আচ্ছা-আচ্ছা হয়েছে, এবার একটু থাম দেকি।
এই কেমন বন্ধু তোরা , একটু উপকার না করে শুকনো ডাইলক দিবি।
আরেক জন বন্ধু বলে,, তাহলে আজকেই বলি কি বলিস তোরা?
সবাই এক বাক্যে,
তবে তাই হোক।
পলাশ দারুন চমকে, সত্যি বলবি?
প্রথম বন্ধু বললো, কেনো শাপলা কে ভয় করিস বুঝি?
পলাশ লজ্জা পেলো, এবং বলল কেন ভয় কেন পাবো?
বাজে কথা রাখ চল সবাই।
পলাশ যেতেই মুখোমুখি শাপলার, ভয়ে ভয়ে বললো,
শাপলা তুমি, তুমি কতক্ষণ?
শাপলা কোন কথা বলে না, শুধু প্রিয় মানুষটির আননে অপলকে চেয়ে থাকে। মনে হয় দুজন দুজনার চোখের ভাষায় কত আপন কত চেনা।
দুজনে গোপনে গভীর ভাবে জেনে গেছে ওরা।
শুধু জানে না আকাশ বাতাস পাহাড় সাগর নদী। নীরবতা ভেদ করে শাপলা বললো,
এভাবে চেয়ে রয়েছো যে?
কিছু বলো?
মনে মনে পলাশ বললো,বলার তো অনেক কথাই ছিল, কিন্তু ভরসা হয় না।
শাপলা আবার বললো, কি হল?। পলাশ থতমত খেয়ে বললো,কি ? কিছু না?
কিছুই না শাপলা বললো।
পলাশ ঘার নাড়ল,
মুচকি হেসে আবার নিজেকে সামলিয়ে শাপলা বললো,
সত্যি বলছো?
পলাশ দুরু দুরু বুকে বললো সত্যি টা তাহলে তুমিই বলো।
শাপলা লাজুক হয়ে বললো, আমি জানি না!
মৃদু স্বরে পলাশ বললো সেটা আমারো তো জানা নেই শাপলা।
শাপলা দুহাত মসলাতে মসলাতে বললো আমি আসি।
অমনি পলাশ শাপলার ডান হাতটা খপ করে ধরে ফেলে স্বজরে বুকে টেনে নেয়।
শাপলা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,হাত ধরলে কেন?
পলাশ শাপলার কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বলল হাত না ধরলে যে হৃদয় ছোঁয়া যাবে না।
শাপলা বললো কেনো হৃদয় ছোঁয়া যাবে না আমি হৃদয় দিয়ে হৃদয় কে কিনেছি।
পলাশ গভীর ভাবে বুকে জড়িয়ে বলে ওঠে ওরে দুষ্টু তলে তলে এতো কিছু। কেন এতো দিন বলনি।
তুমি ও তো বলনি?
পলাশ বললো আমি ভয়ে বলিনি, যদি তোমায় চেয়ে না পায়।
আচ্ছা পলাশ এখন ভয় করছে না।
না এখন কোন ভয় করছে না পলাশ বললো।
পলাশের তৃষ্ণার্ত অধর প্রিয়তমার গোলাপের পাপড়ি মতো অধরে ঘসতে ঘসতে মনে হল যেন এক পশলা বৃষ্টি নামলো উষ্ণ মরুর বুকে।
শাপলা এক দৌড়ে পালিয়ে গেল।
ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ টা একটু আগে প্রেমিক পুরুষ হয়ে উঠেছিল।আবেগ ভরা হাসি নিয়ে লজের দিয়ে রওনা দিল পলাশ।
এমনি করে নব যৌবনের তারণ্যে উদ্ভাসিত হল দুটি সবুজ হৃদয়।বিনা সূতোর মালা যেন একে অন্যে গাঁথা ।এ যেন জন্ম জন্মান্তর এ বাঁধন যদি কভু ছিঁড়ে যায় দুজন এই ধূলির ধরা হতে হয়তো বিলিন হয়ে যাবে।
এমনি করে বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেল।
তার পর এক দিন পলাশ বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মগ্ন ছিল।
আর এদিকে শাপলা কে কথা দিয়ে ছিল যে দুজনে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাবে।
কিন্তু পলাশের। সে কথা একটু খেয়াল ছিল না।আর যখন মনে হল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। শাপলা একা সমুদ্র সৈকতে হাঁটছে, রোদ্দুর নড়বড়ে শান্ত বিকেল।
পলাশ পিছন থেকে ডাকলো শাপলা আ আ!
শাপলা শুধু একটিবার পিছন ফিরে দেখলো।
তার পর আবার হাঁটতে শুরু করলো, পলাশ দৌড়ে সাথ ধরলো
রাগে গজগজ শাপলা, অবিরাম হাঁটছে হেঁটেই চলেছে।
সমভাবে পা ফেলতে ফেলতে পলাশ বললো রাগ করেছো শাপলা।
ইমন রাগের রাগিনী সাবলীল ভাবে বললো না!
তাহলে দাঁড়াও, আমার কথা শোন।
উত্তেজিত হয়ে শাপলা বললো তুমি ফিরে যাও পলাশ।
সত্যি বলছো? সত্যিই ফিরে যাবো?
কাঁদু কাঁদু সুরে শাপলা বললো, আমি যে তোমার সাথে ঠাট্টা বা মজা করছি না সে তুমি ঠিক বুঝতে পারছো।
পলাশ এক বুক অভিমান নিয়ে বললো আমি সত্যি সত্যিই ফিরে যাচ্ছি। আমাকে কিন্তু আর ফেরাতে পারবে না।
দুজন চলেছে দুই মেরুতে। কিছু দূর গিয়ে শাপলা পিছন ফিরে দেখলো পলাশ অনেক দূর চলে গেছে ওকে ফেরাতে হবে বলে ছুট ধরলো।
শাপলা দৌড়াই আর নাম ধরে ডাকে পলাশ দাঁড়াও । দাঁড়াও প্লিজ। পলাশ সৈকত ছেড়ে শিশু বাগান , সেও ছাড় ছাড়। শাপলা উন্মাদের মত ছুটছে।
পলাশ কানে শুনেও না শোনার ভান করে চলেছে।একবারো পিছন ফিরে দেখলো না।
শাপলা উন্মাদের মত ছুটতে ছুটতে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ওখানেই পড়ে রইলো।
এদিকে শাপলা ডাকছে না দেখে পলাশ পিছন ফিরে তাকালো কিন্তু কেউ নেই গেল কোথায় শাপলা।
পলাশ দূর থেকে দেখতে পেল শুধু সমুদ্রের মাতামাতি, পলাশ ছুট ধরলো। শাপলা আ আ আ।
জনমানবহীন শূন্যস্থান শুধু একটি শব্দের প্রতিধ্বনি ভাসছে বাতাসের কানে কানে। পলাশ একছুটে সমুদ্রে নেমে পড়লো।
উন্মাদের মত হাতরাচ্ছে আর চিৎকার করে করে বলছে, শাপলা তুমি কোথায়?
কলকল ধ্বনির সাথে সমুদ্র যেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয়ার খোঁজ বলে দিচ্ছে।
পলাশের কোমরে আছরে পরছে ঢেউ ।আর ভাঙা ভাঙা তরঙ্গের সাথে ইমন রাগের অনুরাগ চলছে।হীতগ্যান হীন পলাশ যেন দুমড়ে মুচড়ে পড়ছে।
পিছনে নির্মিত হয়ে যাওয়া তরঙ্গে। পলাশ শুধু হেঁটে চলেছে গভীরে আরো গভীরে।
অশান্ত ঢেউ চিরদিনের মতো পলাশ কে নিয়ে গেল তার প্রাণপ্রিয়ার খোঁজে অনন্ত কালের জন্য সেই স্বপ্ন পুরীতে।
দিশাহীন অলৌকিক রাজ্যে সমুদ্রে বিলিন হয়ে গেল পলাশ। পলাশ নামের সেই ছেলেটির যার কৃষ্ণচূড়া মন, কঠিন মরন তারে বন্দি করলো সারাক্ষণ।
Copyrights@ P Khatun
-----------------------------------------------------------------------
পাপিয়া খাতুন
লেখিকা
নাকাশি পাড়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ
---------------------------------------------------------------
Voice Literary Blog
Editor - Bijoy Sarkar
Sub-Editor - Monowar Hossain
..... Chief Organizer.....
Chandan Mahanta
Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------
No comments:
Post a Comment