নারী কথাটি নিছকই ছোট্ট শব্দ, যার গভিরতাকে আজও উপলব্ধি করেনি কন পুরুষ।সময়েরকালে নিজের স্বার্থে নারী হয়েছে মা নারী হয়েছে দাসী। ভারতবর্ষের প্রকৃত নারী মানা হয় তাকেই যে তার স্বামীকে সন্তুষ্ট করে, পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় আর স্বামীর কথার ওপরে কথা বলেনা।
প্রাচীনকাল থেকে বতর্মান সমাজে নারীর অবস্থান সর্বনিম্নে।দুঃখজনক, যার গর্ভে ধারণ করে, পুরুষ তাকেই বসায় পশুর সাথে একাসনে। পুরুষ পুরুষের বীজ হলেও ধারন করে মা।লালন করে মা।শারীরিক পরিতৃপ্তি দেয় তার স্ত্রী।বৃদ্ধে আবেগঘনীত হয় মেয়ের সাথে।তবুও পুরুষ সদর্ভে বলে কুকুরের মত রাখাই নাকি পুরুষের উচিত।মেয়েদের মাথায় তুলতে নেই।ঘৃন্যসেই সব পুরুষ যারা মাতৃছায়া কে অস্বীকার করে।
অবলা নারী শুধু ভালবাসার কাঙ্গাল হয়ে ব্যবহৃত হয়ে গেল আজীবন।দাস প্রথার আগেই দাসত্ব শুরু করেছে সে।লক্ষন স্ত্রী উর্মিলা চৌদ্দ বছর ভগ্ন হৃদয়ে অন্তপুরবাসিনি থেকে বধুত্ব বরন করেছিলেন আবার সীতার মত সতিকেও দিতে হয়েছিল অগ্নিপরিক্ষা।নারীদের প্রতি না কখনও সহানুভূতি ছিল আর না এখন আছে।নারী শরীর শুধুই ভোগপন্য।
সংসার চাকায় আবদ্ধ নারীর অবস্থা হল খাচার পাখির মত।বদ্ধ অবস্থায় যারডডানা মেলবার জায়গা থাকে না কেবল ডানা ছটফটানির মত এক অসহায় মর্মবেদনাই অনুভব করে।
বিবাহের মন্ত্রে যদিদং হৃদয়ং মমঃ তদিদং হৃদয়ং তবঃ যত ই উচ্চারিত হোকনা কেন বাস্তবে পুরুষ নারী কে তার ক্রীতদাস রুপেই গন্য করে।প্রায়শই শুনতে হয় তোমাকে আমি যথেষ্ট স্বাধিনতা দিয়েছি।আশ্চর্য এইটাই যে পুরুষ ই কি শুধু স্বাধীনতা কে মৌলিক অধিকার হিসাবে পেয়েছে আর নারী কি স্বাধীনতা অর্পন করেছে পুরুষের হাতে।তবে এই যে পুরুষের নারী কে স্বাধীনতা দানের অধিকার সংবিধান কবে দিল তা ঠিক জানা নেই।
কখনও বৈবাহিক ধর্ষন আবার কখনও শ্লিলতাহানি থেকে পাশবিক নির্যাতনসহ্য করেও সমাজের ভয়ে সংসার করে নারীকুল।মর্মান্তিক ভয়াতা রাত কাটিয়ে সকালে ওঠে হাসি মুখে।প্রচুর অপমানিত হয়েও আবেগঘন কথায় আপ্লুত হয় আবার।কারন নারী কে বোঝানো সহজ।দুর্বল হৃদয়ের অধিকারীনী বলেই একটা মেয়ে তার শরীরের কথা না ভেবে সুখের কথা না ভেবেই সন্তান জন্ম দিতে পারে।তাই হয় স্নেহময়ী সুশীলা কথা গুলো মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য।
সহজ পাঠেও একটা সাধারণ লাইন ডাক পাড়ে ও ঔ,ভাত আনো বড় বউ। যথেষ্ট,বৈষম্য ফুটে ওঠার জন্য।ভাত রান্না করা খাওয়ানোর দায়িত্ব যেন নারীদের ই।সেই কাজটা পুরুষের নয়।শিশুকাল থেকেই আমাদেরকে বিষাক্ত করছে সমাজ ব্যবস্থা।কোন কোন পুরুষ আবার মনে করে নারী উপার্জন করুক। অর্থাৎ পুরুষের চাওয়ার ওপরেই নারীর ভবিষ্যত।তার প্রয়োজন হলে সে চাকরি থেকে ছাড়িয়েও দিতে পারে।যে মেয়েটি শিক্ষিত সেও সংসারের যাতাকলে মুখ খোলার সাহস পায়না পাছে সংসার ভাঙ্গে।শ্বশুরবাড়ির সেখানে বিরাট দাবি সব কাজ সামলাতে হবে আবার তাদের সন্মানিত করতে চাকরিও করতে হবে।যাতে তারা আত্মীয় পরিজন কে গলা বাড়িয়ে বলতে পারে আমার বউমা সব দিক সামলে চাকরি করে।আসলে সেসব নারী কে বোঝানোর পদ্ধতি আলাদা।তাদের বলা হয় তুমি স্বাধীন তোমাকে আমরা সংসারের মধ্যে বদ্ধ করে রাখিনি।কিন্তু সেই চাকুরিরতা বউটি যখন সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ফেরে তাকে কেউ চা টুকুও খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেনা।বরং তার জন্য পরে থাকে রাতের কাজ।যা তার ই সামলানোর কথা।নারী দশভুজা নামক যন্ত্র শুধুমাত্র।তার শরীরের ক্লান্তি থাকতে নেই।তাহলে যে লক্ষীমন্ত বয় হওয়া যাবেনা। আর এই লক্ষীমন্ত বউ হয়ে ওঠার জন্যই আজ নিজেদের সর্বনাশ করছে নিজেরাই।কারন সব অবহেলা ভুলে যায় ভালবাসায়।
পুরুষ সাধারণত মনে করে যে তার স্ত্রী তার বাইরের জগত বুঝবেনা।তাই তার এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। সেইজন্য কখনও বোঝাতেও যায়না।স্ত্রীর অনুযোগ তাই দোষারোপ মনে হয়।শুরু হয় অবহেলা।আর তখনই একজন বিবাহিত পুরুষ মনে করে তার আর ঘরের দিকে মন দেওয়ার কিছুই নেই।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া টাই তখন আনন্দ।ফলে যৌন আবেগ স্তিমিত হয়ে আসলেও মানষিক ঐক্যের প্রয়োজন হয়।সংসার জগতের বাইরে বহু মানুষের সাথে মেলামেশা করার ফলে একজন পুরুষের মানষিক জগত প্রসার লাভ করলেও যে মেয়েটা সারাদিন ঘরে থাকে তার গন্ডী কিন্তু শুধুই তার স্বামী আর রান্নাঘর।তাই সে ভোগে চরম হিনমন্যতায়।আর বাচ্চা দেওয়কেই পুরুষ কুল মনে ভাবে মুক্তি।তারা ভেবেই নেয় বিয়ের পর বাচ্চা দিয়ে দিতে পারলেই সেই মা টা তার বাচ্চার পেছনেই সময় ব্যয় করবে স্বামীর পেছনে তার আর ছোটা হবেনা।এই সময়ই সবথেকে মুক্তির সময়।কখনো ভাবেনা একটা মেয়ের মানষিক উতকর্ষের কোনো অবকাশ নেই।কারন স কিছুর শুরুতে এই ঠুনকো অভ্যেস গুলো একজন পুরুষ তার স্ত্রীর মধ্যে তৈরী করে।পরে একঘেয়েমি দুর করতে নতুন রাস্তা বেছে নেয়।আর এইভাবেই একটা মেয়ের জীবন ছিন্নভিন্ন নিস্পিস্ট হয়ে যায়।খারআপ লাগার কারন কেউ খোঁজেনা।
যৌবনের রুপ রস আনন্দ কে স্বহাতে বিসর্জন দেয় সেই পুরুষটির রান্নাঘরে।আর তারপরও শুনতে হয় না পোষালে থেকোনা। যার জন্য জীবনের দিপ্তিময়তাকে হাসতে হাসতে ত্যাগ করে সময়ের অভাবে এক সময় সেই পুরুষ ই আসক্ত হয় অন্যের দিপ্তিতে।তাদের মনেই হয় ঘরের নারী যত অজ্ঞ থাকবে ততই তাদের চলতে সুবিধা হবে।
দোষটা আমাদের মেয়েদের ই।আমরা মেয়েরাই অনেক সময় পুরুষের অধিনস্ত থেকে আত্মপ্রসাদ লাভ করি। পুরুষের ঠিক ভুলে পা মিলিয়ে পাই আত্মসন্তুস্টী।নারী হিসাবে নিজেকে ভাবতে ভালবাসি। পুরুষের অঙ্গুলি হেলনে নড়াচড়া করার মধ্যেও অনেক মানষিক প্রশান্তি খুজেঁ পাই তা সে ন্যায় হোক বা অন্যায়।
আফশোষ এখানেই যে নিজেদের অধিকার আজ সামান্য বুঝে সচেতন হলেও মেয়েরা নিশ্চিত বুঝত যে জগতে যত নির্যাতন আছে মেয়েদের বিরুদ্ধে সব থেকে বড় নির্যাতন হল মেয়েদের সুন্দর হওয়ার জন্য লেলিয়ে দেওয়া। মায়ের জাত তবু আপাদ মস্তক বুঝেও নির্বাক।
Copyrights@ S Kundu
-------------------------------------------------------------
শতাব্দী কুন্ডু
কবি-লেখিকা
উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ
---------------------------------------------------------------
Voice Literary Blog
Editor - Bijoy Sarkar
Sub-Editor - Monowar Hossain
..... Chief Organizer.....
Chandan Mahanta
Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice---------------