শিক্ষা ব্যতীত জাতির ক্রমমুক্তি নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অগণিত শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত, শিক্ষা পিপাসু জনসাধারণ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। শিক্ষা এবং শিক্ষণ ব্যবস্থা অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের যোগমিলনের ক্ষেত্রে অনন্ত বিশ্বের বিপুল জ্ঞানরাজি, ভাব ও চিন্তার আদান-প্রদানে পরিশীলিত ভাবীকালের রূপরেখা তৈরী করে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই। ছাত্র অর্থাৎ আগামী প্রজন্মের ভাবাবেগ ও চিন্তন শক্তিকে সুচারুভাবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নামই শিক্ষা, যা অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে মুক্তির সঠিক পথ নির্দেশ করে। অতীতের গুরুকূল শিক্ষা ব্যবস্থা এখন আর নেই, এখন শিক্ষার আদান-প্রদান পর্ব স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির মধ্যে ন্যস্ত। প্রাথমিক থেকে ক্রমশঃ উচ্চতর শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতের সোপান গড়া হয়ে থাকে স্কুল-কলেজেই। পুঁথিগত বিদ্যা ছাড়াও আদর্শ, নীতিগত ধ্যান-ধারণা ও মূল্যবোধের পরিকাঠামো নির্মিত হয় শিক্ষা প্রাঙ্গণে ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমেই।
কিন্তু বর্তমানের অতিমারী কোভিড-১৯ বা নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপে সারা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেছে। অবরুদ্ধ জনজাতি সম্ভাব্য ধ্বংসের আশঙ্কায় প্রহর গুনছে। প্রতিষেধক অনাবিষ্কৃত থাকায় সংক্রমণ প্রতিরোধে একমাত্র উপায় স্বাস্থ্য সচেতন ভাবে পরিচ্ছন্ন থেকে দূরত্ব বিধি মেনে চলা। এই পরিস্থিতি বর্তমানে সমগ্র মানবজাতিকে নির্বাসিত করেছে এক অন্ধকূপে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ বর্তমান শিক্ষাবর্ষের প্রায় শুরু থেকেই, এর ফলে যেমন শিক্ষা দান ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে প্রগতির পথ। শিক্ষা প্রাঙ্গণগুলি বন্ধ থাকায় শুধুই যে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যেকার আদান-প্রদান বন্ধ হয়েছে, তা নয়, চরমভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সামগ্রিক বিকাশের পরিসরটুকুও।
চির-দারিদ্র্য-নিপীড়িত ভারতবর্ষের অর্থনৈতিকভাবে নিম্নবর্গীয় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এক শিক্ষাগ্রহণের সম্ভাবনাময় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল স্কুলে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন বা ‘মিড-ডে মিল’-এর ব্যবস্থা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থাপনার সুফল-কুফলের বিতর্ক পরিহার করে যদি দেখা যায়, সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী হওয়ার সেই সম্ভাবনাও বিনষ্ট হয়েছে। যদিও সরকারের তরফে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে খাদ্য-সামগ্রীর প্রয়োজনীয় রসদ জোগানোর প্রচেষ্টা চলছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনেক সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট নির্ভর ‘অনলাইন’ পঠন-পাঠনের ব্যবস্থায় উদ্যোগী হয়েছে, যদিও যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাত্র-ছাত্রীরা এই শিক্ষাগ্রহণে অপারগ। কারণ, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সহজলভ্য নয়। তাছাড়া শহরাঞ্চল ব্যতীত অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকায় উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকার দরুন, নিয়মিত অনলাইন পঠন-পাঠনে অংশগ্রহণ ও সবার পক্ষে সম্ভবপর হয় না। এছাড়াও এই অনলাইন শিক্ষণ ব্যবস্থায় পুঁথিগত বিদ্যা বা থিওরী পড়ানো সম্ভব হ’লেও কারিগরিবিদ্যা বা প্রাকটিক্যাল কোনোভাবেই সম্পাদন সম্ভব নয়। সর্বোপরি, হঠাৎ করে পরিস্থিতির চাপে শুরু হওয়া এই নতুন ব্যবস্থাপনায় ছাত্র এবং শিক্ষক - উভয়েরই নিজেদেরকে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হ’তে হচ্ছে। শিক্ষকদের যোগ্যতা বা ছাত্রদের আগ্রহ - দুইয়ের কোনোটারই অভাব না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পরিকাঠামোহীন ব্যবস্থাপনার সাথে মানিয়ে না নিতে পারার জন্য ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু আদান-প্রদান।
এই স্তব্ধ পরিস্থিতিতে ব্যাহত হয়েছে পরীক্ষা ব্যবস্থাও। শুধুমাত্র সংক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে হয়েছে বহু পরীক্ষা। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও। মূল্যায়ন ক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কারণে সুযোগ ও সংস্থান থেকে বঞ্চিত হ’তে হয়েছে বহু পরীক্ষার্থীকেই।
ভয়াবহ করোনা কবলিত আবহে সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা, যার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হ’ল, অগ্রসরের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া। যদিও শিক্ষা ও চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞান এই মারণ ভাইরাসের প্রতিরোধের উপায় খুঁজতে সচেষ্ট, তবুও বর্তমানের থমকে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে বর্তমানসহ আগামী প্রজন্ম যে বেশ কিছুটা পিছিয়ে গেল, সে কথা বলাই বাহুল্য। এই দমবন্ধ-করা পরিস্থিতির কবে আর কোথায় শেষ, তার উত্তর সময়ই দেবে, এবং সেই শেষের পর আবার নতুন করে শুরুর আশা বুকে নিয়ে দিন গুনছে সবাই।।
Cppyrights@ S Mandal
-------------------------------------------------
শিবানী মন্ডল
কবি-লেখিকা
ঝাড়খন্ড, ভারতবর্ষ
---------------------------------------------------------------
Voice Literary Blog
Editor - Bijoy Sarkar
Sub-Editor - Monowar Hossain
..... Chief Organizer.....
Chandan Mahanta
Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice---------------