Saturday, 15 October 2022

মহা জাগরণ -- সিরাজুর বড়ভূইয়া

ত্যাগের মন্ত্রে গড়বো মোরা
শান্তি মৈত্রীর দৃঢ় বন্ধন,
প্রীতির পথেই আনবো ত্বরা
মানবতার মহা জাগরণ।

মহৎ মনে সর্বজনে
গড়বো ঐক্যের সোপান,
দৃঢ় পণে সাম্যের গানে
হোক মানবতার উত্থান।

মেহনতী জনতার এ লড়াই
মোদের যাবেনা বিফল,
জাগবে দেশে আশার আলো
ভাঙ্গবে সব বিভেদের শৃঙ্খল।

দীপ্ত মশাল লড়াই বিশাল
নেই ভয় উদ্বেগ শংকা,
শক্ত শপথ দৃঢ় মনোরথ
বাজাবো মুক্তির জয় ডঙ্কা।
🌹🌹🌹✍️✍️🌹🌹🌹

মায়া ত্যাগ -- সুস্মিতা রায়

আজ বিজয়া দশমী, সন্ধ্যায় চারিদিকে ঢাকের আওয়াজ,শঙ্খধ্বনিতে বিদায় সুর জানান দিচ্ছে মায়ের বিসর্জনের বার্তা। এদিকে 'মা দুর্গার' সঙ্গে বিদায় নিলেন পার্বতীদেবী। আশি বছরের পার্বতীদেবী ইহলোক ত্যাগ করলেন।পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এল।
পার্বতীদেবী আঠারো বছর বয়সে সংসারী হয়েছেন।উনি ছিলেন 'রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী'। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যেই দুই ছেলে মেয়ের মা হ'ন। সন্তানদের মানুষ করার সঙ্গে পরিবারের সকলকে নিয়ে মানিয়ে গুছিয়ে সংসার করেছেন। ছেলে মেয়েকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে সংসারী করেছেন। নিজের স্বার্থত্যাগ স্বীকার করে সুখের সংসার গড়ে তুলেছেন।
মায়ের সব কাজ সম্পন্ন করে মুম্বাই ফিরে যান ছেলে অভিরূপ। যাওয়ার আগে মা বাবার জিনিস গোছাতে গিয়ে নজর পড়ে মায়ের খাটের তলা। মায়ের যত্ন করে রাখা পুরনো টিনের বাক্স। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছেন, তবে কোনদিনই কৌতূহল জাগেনি, তার ভিতর কি আছে জানার জন্য। মা সব সময় বাক্সে তালা লাগিয়ে রাখতেন, আর চাবিটা নিজের মাথার বালিশের তলায় রাখতেন। নিরিবিলিতে মাঝেমধ্যেই খুলে দেখতেন।
আজ সেই বাক্স খুললেন অভিরূপ। অনেক স্মৃতি বিজড়িত জিনিস সযত্নে রাখা, বিয়ের বেনারসী, ধুতি পাঞ্জাবী। শাড়ির তলায় পাওয়া গেল একটা লাল ডাইরি। ডাইরি খুলতেই ওনার চোখদুটো ঝাপসা হয়ে যায় অশ্রুজলে, স্বর্ণাক্ষরে লেখা বিশেষ ঘটনা, তারিখ ও সাল। পাতা উল্টাতেই স্বরচিত কবিতা ও গল্প দেখে অবাক হয়ে যান । অনেক কবিতার মধ্যে ফুটে উঠেছে ওনার মনের অপূর্ণ সাধ বা ইচ্ছা। ডাইরির সঙ্গে পাওয়া গেল একটা প্যাকেট যার মধ্যে রাখা আছে বাবার চিঠি। বাবা ছিলেন জাহাজের নাবিক, জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে জলে, নিয়মিত চিঠি পাঠাতেন পার্বতীদেবীকে। ওনার দেওয়া ছোটছোট বিদেশী উপহার ওনার কাছে ছিল খুব যত্নের।
আজ এই সব পার্থিব মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

ত্যাগেই শান্তি -- অমরনাথ ঘোষাল

ভোগেতে বাড়ায় রিপু আসক্তি, 
ত্যাগের আছে যে মহা নিদান, 
দেহ মনে রিপু জয় করতে,
ত্যাগ ই  দিচ্ছে সঠিক  বিধান।
জ্বলন্ত আগুনে ঘৃতাহুতি দিলে
হু হু ক'রে ওঠে জ্বলে, 
আগুনের যে হয়  জ্বলন,
শান্তি  হবেই নিভিয়ে দিলে। 
শ্বাসজয় হয়   অনুশীলনে, 
প্রাণশক্তি বাড়াবে  শ্বাস্,
মধুর এ আলাপন আছে, 
নাসিকা রন্ধ্রে শ্বাস প্রশ্বাস। 
সম্ভোগ হ'লে রিপুর তাড়ন, 
অতি সম্ভোগ করতে বারণ, 
শাস্ত্রে লিখেছে মানুষ  দেখেছে, 
প্রাণশক্তি দেহে আবরণ। 
লোভের সঙ্গী সরস জিহ্বা, 
খাবারে বাড়ায় আসক্তি, 
ধ্যান করলেই মঙ্গল হয়, 
  ত্যাগেতে বাড়ায় মহাশক্তি। 
সংযত করে সবার প্রকৃতি ,
ত্যাগের আছে যে শান্তি, 
প্রকৃত শান্তি পেতে হ'লে, 
ত্যাগের স্বস্তি প্রশান্তি। 
সঙ্গত নাহ'লে  দাবীর সনদ, 
অতীব বিবাদ বাড়ায় এসে, 
ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের বিবাদ, 
অর্থলোভকে ভালবেসে ।

ভালোবাসার উপসংহার -- শৈবাল কর্মকার

তোমাকে ভালোবাসি বলে
নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম
শামুকের খোলকে,
ত্যাগ করেছিলাম নিজস্বতাকে
আপন করেছি একাকীত্ব।
হাতে হাত রেখে
ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে
ভালোবাসা আমাকে স্পর্শ করেছিল,
আমি ও প্রত্যুত্তরে
জাগিয়েছি কামরূপ চেতনা।
এখন,
অনুভূতিগুলি অতীত মৃত-অগ্নিদ্বগ্ধ
আমার আর ভালোবাসার অহরহ বাঁধে দ্বন্দ্ব,
নিজের সবটুকু যার জন্য করেছি ত্যাগ
সে আমায় প্রশ্ন করে
কেন করেছিলে?
এখন,
শুধু কথার পিঠে কথা বসে
যুক্তি-তর্কের পাহাড় আকাশ ছুঁতে চায়
সূচ ফুটানো কথাগুলি হৃদয়ের রক্ত ঝরায়।
এখন,
প্রতিদ্বন্দ্বিতা!
ত্যাগের হিসাব অঙ্ক কষতে বসায়,
ব্যস্ততার অজুহাত দাঁড়ায়-
দু 'জনের মাঝে প্রাচীরের মত,
সেদিনের অমলিন ভালোবাসা
এখন শুধু বোঝাপড়া
আর স্পষ্ট চাঁদের ক্ষত।
এখন,
প্রেমাতুর মন খুঁজে
একলা সন্ধ্যে,
একটা নিশ্চিন্ত অপরাহ্ন,
অবাধ্য মন আজীবন ভালোবাসতে চায়
মুছে যায় অতীত রজনীর স্মৃতি চিহ্ন।
এখন,
আমার আর ভালোবাসার করুণ পরিণতি
ভালোবাসা বৈরাগ্য চায়!
আমি চাই হতে -
ভালোবাসার যতি।


নিরাসক্তি -- পরেশ চন্দ্র দাস



ভোগাসক্তি লোভ জন্মদাতা ভবে
                           তীব্র আকাঙ্ক্ষার তরী ,
তম গুনে আসক্ত হয়েছি মোরা
                              নিজেই  নিজের অরি ।
ত্যাগের ভাবনা স্বত্তগুণে রয়
                                  আশ্চর্যের কিছু নাই ,
ত্রিগুণে জগৎ চলে নিত্যদিন
                                    দোষ গুণ সবটাই ।
ভোগের পরে ত্যাগ তাড়না দেয়
                                  আদ্যোপান্ত অনুমান ,
অজ্ঞের ভিড়ে বিজ্ঞ অসহায়
                                      চাইছেন পরিত্রাণ ।
চাহিদা বেড়েছে যুগ বিবর্তনে
                                 স্বার্থ যেখানে অধরা ,
নারী যেখানে ভোগের বিজ্ঞাপন
                                     মগ্ন হয়েছে পসরা ।
কোষাগার শূন্য হয়েছে সংসারে
                                    বারবনিতার লোভে ,
নিস্ফল ক্রন্দনে মাতেন রমণী
                                বিপথ গামীর ক্ষোভে ।
ত্যাগ আগে রক্তরোষ ক্ষয়ে শেষে
                                    বয়সের যায় অস্ত ,
মহিমা তখন শীত ঘুমে ব্যস্ত
                                ত্যাগের দুয়ারে ন্যস্ত  ।
শৈশবে করিয়া ব্যয় উদ্দীপক
                              যৌবনে আজ কাঙাল ,
সামনে ভবিষ্যৎ করিছে কেলি
                                বৈরাগ্য হলো নাকাল ।

--------------------------------------------------