Friday, 14 January 2022

কবিতার কবিতা -- মানস মাইতি



তোমার ওষ্ঠ অধরের উৎসবে আমার রাত নেমে এলেই, জন্ম নেয় কবিতার শতদল।
কি নরম মায়াবী দুঃখ মাখা সে অক্ষর সাধনা!
কান্নার এতো এতো আনন্দ-অনিন্দ্য- যাপন তখনই অনুভব করি।
সে অধর চুম্বনের এতো রঙ এতো আলাপন আগে কখনো বুঝি নি!!
সৃষ্টির গোলাপ-ভালোবাসা প্রতি রাতের কবিতার ডায়েরি পাতায় আমি এঁটে রাখি।
সৃজনের নীল আকাশ অভিমান এঁটে রাখি পাতায় পাতায়।
কখনো বিহাণ বেলার আলতো রোদ-রঙ সৃজনে আসে,
তাকেও মেখে রাখি,যেখানে আমার কবিতার গোলাপী ঘর।
আর সেই, হৈমন্তী মেঘে অনাহুত বর্ষার অকস্মাৎ আগমন
সেও এক কবিতার রঙিন রঙ, তাকেও যত্নে বুলিয়ে রেখেছি তোমার পরশ মাখা কবিতায়।
নষ্ট হতে দিও না,
সেদিন
যেদিন
আর ওষ্ঠ অধরে উৎসবের আয়োজন থাকবে না।
সেদিন
প্রতিটি কবিতার আখরে তোমার আঙুল নেমে আসুক।
সেদিন
প্রতিটি কবিতায় কান পেতে শোনো,
তারা সমস্বরে বলবেই,
কবিতা কখনও শরীরের পাপ মাখে না
কবিতার ওষ্ঠ অধর চাঁদের কলঙ্কের মতো শাশ্বত
সুন্দর।
এবার, আজ, আরও একবার, ওষ্ঠ অধর রাখো
আমার তুমিতে
দেখো,কবিতার বুকে জন্ম নিয়েছে,
কবিতার কবিতা...


অধ্যাপক মানস মাইতি
কবি-লেখক ও সঙ্গীতসাধক 

----------------------------------------------------------

লাঞ্ছিত প্রকৃতি -- পরেশ চন্দ্র দাস


সর্ব উপদ্রপ সহা অবনি আজ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলি কহিছে,
মানুষ নামক সর্বভূক প্রাণীকে, রেহাই দাও আমাকে ।
এবার আমার পাক ধরেছে বয়সের আলোকবর্ষে ।
কার্বনের পরিমাপ বর্ধনে ,অক্সিজেনের হ্রাসে নিওন,হাইড্রোজেন সবাই দল বেঁধে আমার
বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটিয়েছে ।
যেখানে আমার ব্যালান্স খাদ্যভান্ডার উঃমেরু
দঃমেরুর তুহিন । লাঞ্ছ ,ডিনার, প্রাতরাস্  সারতাম অবলিলায় । যা ধ্বংশের দোরগোরে।
সুপ্ত জীবাণুরা আজ প্রাণ পেয়েছে ,জমিয়ে ভূমন্ডলের প্রাণীদের উপরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় ।
বিজ্ঞানের সমস্ত প্রোটোকল প্রশ্নপদক চিহ্নের
মুখোমুখি । হারজিৎ এর ডামাডোলে প্রকৃতি
চাইছে অব্যাহতি ।
চাহিদার যোগান দিতে জীবনটাই ডেসট্রয়েড ,
'দোষ শুধু ঈশ্বরের' ।।

নগরায়ণ উষ্ণায়ন -- দিলীপ কংস বণিক



নগ্ন পায়ে, আদুল গায়ে, ছুটছে শিশু রাস্তা পানে।
মাটির সুবাস থাকবে না, খোলা পায়ে হাঁটবে না, এই শিশু কি সেই জানে!
কাঁচা মাটির সেই সড়ক, বৃষ্টিতে পঙ্কিল ধারক, সকল ই স্মৃতির অতল।
দু পাশে গাছের সারি, সড়কে ছায়া তার ই, পথিকেরে রাখিতো শীতল।
সে রাস্তা চ‌ওড়া হলো, সকল গাছ কাটা গেল, যেন খাঁ খাঁ শ্মশান।
রৌদ্রের প্রখর তাপ, যেন কার অভিশাপ,  এ হেন হুতাশন।
শিশুটির বয়স বাড়ে, দেখলো একদিন রাস্তা পরে, পাতাহলো ইট।
তার উপরে দিলো পাথর, পাথর ঢাকলো পিচের আস্তর, রাস্তা ই হলো কালকূট!
চলছে এখন বড়ো গাড়ি, ছুটছে কালো ধোঁয়া ছাড়ি, কষ্ট হচ্ছে নিতে নিঃশ্বাস।
আধুনিক এ নগরায়ণ, বাড়ায় শুধু উষ্ণায়ন, কষ্ট লাঘবের নেই কো আশ্বাস।
নানান দেশে সভা হয়, কাটাতে এ বিপর্যয়, থামাতে এ উষ্ণায়ন।
কিন্তু হায়--  সব নিরুপায়, আমরা' ই আমাদের কষ্টের কারণ!
প্রকৃতির এই ধ্বংস লীলায়, কতো মানুষ প্রাণ যে হারায়, হিসেব রাখে কে?
নানান রকম মারণ ব্যাধি, অক্সিজেন বি না ঔষধি,  রুগ্ন সব কে।
বাঁচতে করো সবুজায়ন, তবে ই প্রকৃত বিশ্বায়ন, সুস্থ সবল প্রাণ।
সকল রোগের হবে ক্ষয়, প্রাণোচ্ছল জীবন ময়, কর্মপন্থায় সঠিক বিজ্ঞান।
**************************
লেখমালা র ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
                🙏🌹🌹🙏

ঘৃতকুমারী -- জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায়

 ঘৃতকুমারী    -- জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায় 


বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও মানবজাতিই বোধহয় প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়। পরিবেশের উন্নতি সাধন কল্পে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হয়।  
স্ত্রীবিয়োগের পর সুদিনের একাকিত্বের জীবন শুরু হয়েছিল সহধর্মিনীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন থেকেই। কিছু বলার নেই, সকলেরই বিভিন্ন কারণ ও ব্যস্ততা তো থাকতেই পারে। বহু বছর পর আত্মীয় বা বন্ধুদের কারও সঙ্গে দেখা হলে স্বাভাবিক ভাবেই তারা হয়তো প্রশ্ন করে বসেন, আপনি একা থাকেন কী করে? আপনার ভয় করে না? সুদিনের নির্লিপ্ত উত্তর, আমি তো একা থাকি না, আমার সঙ্গে তো ঠাকুর থাকেন! তিনি হচ্ছেন প্রজ্ঞানপুরুষ শ্রীশ্রীবাবাঠাকুর। আর ভয়ের কথা বলছেন? কীসের? যার জন্য অপেক্ষা তাকে ভয় করব কেন? সুদিন মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে বেঁচে থাকার আর এক নাম মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা। মৃত্যুর বিষয়ে শিখারও কোনো উদ্বেগ ছিল না, এই প্রসঙ্গ উঠলেই বলত, দেখো সময় হলে ঠাকুর আমাদের না ভুগিয়েই নিয়ে চলে যাবেন। প্রকৃতি তার নিজস্ব্ খেয়ালে চলে, তাই প্রকৃতিকে তার মত চলতে দেওয়াই ভাল। 
***
মার্চ্ ২০২০, চারদিকে কোভিড-১৯এর ভ্রুকুটি। শিখার মত সুদিনেরও মৃত্যুভয় নেই। কিন্তু, ওর এক বোনের মনে হল, দাদার বোধহয়, এভাবে একা থাকাটা ঠিক হবে না! ইতিমধ্যে, সুদিনের একাকিত্বের জীবনে স্থান পেয়েছে আরও কয়েকটি প্রাণী যাদের জন্য সুদিনকে রোজই একটু ব্যস্ত থাকতে হয়। ওদের কথা ভেবে সুদিন সাধারণতঃ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাইত না। তাই, এখন সমস্যা দেখা দিল তাদেরকে নিয়ে। বোনের ওখানে চলে গেলে, এদের তখন দেখবে কে? তবে, অনেকের মতে, সামান্য তো ক'টা গাছ, এদের জন্য আবার এত মায়া! বোনের যুক্তি, ঠিক আছে, তেমন হলে মাঝে দু'একদিন এসে জল টল দিয়ে এবং একটু দেখাশুনো করে গেলেই না হয় হবে।
*** 
তারপর তো পরপর বহু ঘটনা ঘটল! বাস বন্ধ, মেট্রো বন্ধ। মাঝে অবশ্য প্রতিবেশীরা খবর দিয়েছেন, সুদিনের ব্যালকনির পুঁই ডগাগুলো বেশ লকলকে হয়েছে। নয়নতারা ফুলও ফুটছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি তো হচ্ছেই, ব্যালকনির কিনারায় রাখা গাছগুলো বৃষ্টির জল পাওয়ার ফলে টিকে আছে। 
***
তারপর সুদিন নিজেই কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হল। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও কয়েক মাস। দেখতে দেখতে নূতন বছরও এসে গেল। 
জানুয়ারি, ২০২১। সুদিনের মনে হল, অনেকদিন হল বাড়ির বাইরে। গাছগুলো তো নিশ্চয়ই শুকিয়ে মরে গেছে। আবার নূতন করে সব শুরু করতে হবে। বোন বলল, অনেক দিনের ব্যবধানে বাড়ি ফেরা তো, আমিও না হয় যাব, ঘর দোর সব পরিষ্কার করে সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়ে আসবো।
জানুয়ারির মাঝামাঝি এক রোববারে দাদাকে নিয়ে বোন এল উত্তর কোলকাতার সেই ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটে ঢুকতেই শিখার চোখে চোখ পড়ে গেল সুদিনের। আগের মত শিখা যেন বলে উঠল, ভালো আছ তো! তারপর সুদিন ঝুলবারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। এখন একটা গাছও আর বেঁচে নেই! তারপর ভিতরে এসে ওর শোবার ঘরে প্রবেশ করল। জানলার পাল্লা খুলতে গিয়ে চোখ পড়ল জানলায় রাখা একটা টবের উপর। প্রায় দশ মাস ওতে কোনো জল দেওয়া হয়নি। অবাক বিস্ময়ে সুদিন দেখলো ওতে রাখা গাছটা তখনও বেশ সতেজ আছে। প্রকৃতির কী অদ্ভুত খেয়াল! টবের গাছটার নাম, ঘৃতকুমারী! গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সুদিনের যেন মনে হল, গাছটা এই দশটা মাস ওর জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করেছে, যেন বলছে, আর পারছি না, এবার একটু জল দাও।
-o-

প্রকৃতির ছবি -- মঞ্জুলা বর


ভোরে রবি বলল ডেকে খোলো এবার দোর 
আলো ঢেলে কালো ঢেকে হলো এখন ভোর, 
 ফুল ফুটেছে কুসুম বাগে গাইছে পাখি গান
 ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে ধরছে অলি তান।

শিশির ঝরে ভোরে বেলায় ভেজা থাকে ঘাস  
চাষি ভায়া  রোদে পুড়ে মাঠে করে  চাষ,
মাঠ ভরেছে সোনার রঙে দুলছে পাকা  ধান
মাঠে মাঠে ভাসছে সদাই পাকা ধানের ঘ্রাণ।

 হিমেল পরশ সদাই নিয়ে  ছুটছে বায়ু খুব 
 মাছরাঙাটি ঝপাস করে দিচ্ছে জলে ডুব,
 গরু ছাগল চরছে মাঠে খাচ্ছে সবুজ ঘাস
 বিলে খালে কাদা জলে খেলছে যত হাঁস।

 বধূরা বেশ কলসি কাঁখে যাচ্ছে নদীর ঘাট
 চাষি ভায়া শস‍্যের তরে যায় গো সদা মাঠ,
পাকা  ধানে  গোলা ভরে  থাকে হাসি মুখ  
পিঠে পায়েস করে ঘরে  পায়গো মনে সুখ  ।

বাড়ি ফিরে কাজের শেষে যাচ্ছে হাটে লোক
কঠোর শ্রমে  সকল কাজে সবার শুভ হোক,
ফলে ফুলে ভরে থাকে  শোভা বাড়ে বেশ
 পাখিরা সব নীড়ে ফিরে বেলা হলো শেষ।।

Wednesday, 12 January 2022

লড়াই --বিজয় সরকার



জীবন পথে এগিয়ে যেতে 
লড়াই হোক বাঁচার সাথী।  
ভয়-কে যদি করো জয়
জিতেন্দ্রিয় হবে তুমি।