Monday, 14 June 2021

আমি মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে - কাজী আনারকলি

 

আমি মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে
অনেক কাঠখড় পোড়াতে পোড়াতে আমি নারীতে পরিণত হয়েছি,
 আমি এখন পূর্ণাঙ্গ নারী।
 আমি সেই নারী যার জন্মের পর তার মাকে
 গ্রামের বউ ঝিরা অলক্ষ্মী বলে গাল দিয়েছিলো ‌।

আমি মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে 
আমি সেই নারী যার জন্মের পর তার বাবা
 তার মাকে তালাক দিতে চেয়েছিলো।
 আমি সেই নারী যার বয়স বারো হতে না হতেই
 বাড়ির চারিদিকে এঁকে দেয়া হয়েছিলো সীমানা প্রাচীর,
 বারণ করা হয়েছিলো বিদ্যালয়ে যেতে,
 বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো তার গাছে উঠা,
 ছি কুতকুত খেলা ,পুকুরে সাঁতার কাটা, আরো কত কি ?

আমি সেই নারী যার কিনা মা-বাবার মৃত্যুর পর
 বাবার বহু স্থাবর সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও বাড়ি বাড়ি কাজ করতে হতো।
ঘনিষ্ঠ স্বজনেরা তাকে বঞ্চিত করেছিলো।
গৃহ কর্তার লোলুপ দৃষ্টি আর তার ছেলের
 শিকারি চোখকে ফাঁকি দেয়া একান্ত ভাবে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিলো ।

আমি মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে
আমি এখন পূর্ণাঙ্গ নারী।
স্বামীর নির্যাতনের কাছে হার না মেনে
 অন্ধকারে বেরিয়ে পড়েছিলাম,
 আমি সেই নারী যার একাকী রাস্তার মোড়ে যেতেই 
ধর্ষকের কাছে জীবন বাজি রাখতে হয়েছিলো ।

আমি সেই নারী, মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে ;
আমি এখন পূর্ণাঙ্গ নারী।
 চোখের তারায় অগ্নি স্ফুলিঙ্গ নিয়ে
 আজ আমি নারীর অধিকারের কথা বলি।
 নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলি,
খোলা বাতাসে নারীর নিঃশ্বাস নেবার কথা বলি,
নারীর চলার পথের আবর্জনা সরিয়ে ফেলার কথা বলি,
 আর লোকে আমাকে নারীবাদী আখ্যা দেয়।

 নারীবাদ কি?  আমি তা জানি না 
নারীবাদ কি ? আমি তা বুঝি না ,
আমি বুঝি আমার প্রতি যে অন্যায় হয়েছে পৃথিবীর আর কোনো নারীর প্রতি যেনো না হয়‌।
শুনছেন , আপনারা ?
আপনারা আমার পাশে থাকুন,
আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই
কখনো মা হয়ে, কখনো বোন হয়ে
কখনো প্রেয়সী হয়ে,কখনো কন্যা হয়ে।

একবিংশ শতাব্দীর এই ডিজিটাল যুগে
আর যেনো কেউ কেড়ে না নেয় আমার দুরন্ত শৈশব
আর যেনো কেউ কেড়ে না নেয়
আমার যৌবনের সদা লাস্যময়ী মুখ
আর যেনো কখনো স্বামীর একটা
চড়ও না পড়ে আমার তুলতুলে গালে
আর যেনো কোনো হিংস্র ধর্ষকের থাবার নীচে পড়ে
জীবনাশঙ্কায় ছটফট করতে না হয়
অথবা জীবনটা দিতে না হয়।

আসুন, প্ল্যাকার্ড- ফেস্টুন হাতে মিছিল নিয়ে
বেরিয়ে পড়ি,
আমরা নারী পুরুষ একসাথে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলি
ঘরে বাইরে নারীর জন্য নিরাপদ বেষ্টনী গড়ি ।


মহা সংকট - দিগন্ত কুমার দাস।




রুটি রুজি আজকে মহা সংকটে,
ফিকে হয়ে আসছে যেন ভবিষ্যৎ,
অন্ন জলের অভাব দেখি চিৎপটে,
কতদিন আর চলবে খুঁড়ে জীবন রথ!

একটা সময় ছিল যখন দুর্দিনে,
কাঁধ মিলিয়ে লড়তো সকল জনতা,
এখন দেখি দাঁড়ায় মানুষ লোক চিনে,
অর্থবানের সাথেই কেবল হয় কথা!

বাঁচবে কে আর, মরবে কে বা, জানে কেউ?
তার মাঝেও কেউ কি করে দুর্নীতি!
'সেবার নামে ব্যবসা' নামক মারণ ঢেউ,
সেই কাজেও মানুষ দেখায় আজ প্রীতি!

জীবন যখন প্রশ্ন চিহ্নের মাঝখানে,
বেঁচে থাকার বাতাস টুকু কিনতে হয়!
হায়রে মানুষ তোমরা এমন দুর্দিনে,
এই পৃথিবীর সবকিছুকে করবে জয়!

আজকে যারা পাপাচারে হাত পাকায়,
কালকে তাদের শমন যদি ডাক পারে,
বাঁচাবে কি তাদের কালো জাল টাকায়?
সময় হলে পাপ বাপেরও প্রাণ কাড়ে!
              
জীবন যুদ্ধে বিপক্ষ আজ বিচিত্র,
হঠাৎ হঠাৎ করছে কাবু আঘাতে!
পক্ষে আছেন উগ্র সেনের দৌহিত্র,
জীবন যুদ্ধের শেষ পরিনাম তাঁর হাতে।

সংগ্রাম চলছেই - 'মুরারি'


                    
পরিচয়ের একটা পাতায় নাম লিখতে সন্ধ্যা প্রদীপের মত জ্বলন্ত এই শরীর থেকে যত ঘাম ঝরেছে
তা প্রদীপের পিলসুজের মত আঁধারেই 
রয়ে গেল
হাপিয়ে গেল শরীর মন সংগ্রামী কলুর বলদের মত
চিনি ভেবে বালিতে মুখ
তবুও নিরন্তর সংগ্রাম সময়ের সাথে
কবে প্রতিষ্ঠা সুর্যের উদয় হবে ভাগ্যাকাশে
'অর্জুন তুমি কর্ম কর'
এই বাণীটাই যেন ঘুরে ফিরে আসে
দেন মন উজ্জিবিত হয়
আবার সংগ্রাম শুরু হয়
কত দূরে কাম্য বস্তু জীবনের উপযোগ
দিশে হারা হই
মন শক্তি হায়ায়
কে যেন বলে কর্ম করে যাও
যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ,,,,,,

বন্যার ভয়াল রূপ - শুভ্রা চন্দ্র




বন্যার করাল গ্রাসে মানুষের জীবনকে
করে দেয় একেবারে ছাড়খার,
ঘর,বাড়ি ভেঙে যায় বন্যার জল ঢুকে
সব হারিয়ে মানুষ করে হাহাকার।

চাষের জমি ডুবে ফসল নষ্ট করে
ভয়ঙ্কর বন্যার জলে ,
বাঁচার তাগিদে সব ফেলে মানুষ ছোটে
কোন নিরাপদ স্থলে।

ভয়াবহ বন্যার জলে নষ্ট করে দেয়
পশু,পাখি ,মানুষের জীবন,
জলের তোড়ে ভাসতে ভাসতে
মারা যায় অজস্র প্রাণ।

সাপ,মানুষ,গবাদী পশু বসবাস 
করে সকলে একসাথে 
জীবনের এ এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার
ছবি বন্যায় মানুষের সাথে।

খাবার সংকোটে দিশাহারা জীবন
ভাবনার অতল সাগরে ডুবে যায়
সরকারী অনুদান মানুষের সাহায্য নিয়ে
বেঁচে থাকায় হয় কঠিন দায়।

গ্রামের পর গ্রাম বন্যার জলে ভাসিয়ে
মানুষকে সর্বশান্ত করে ফেলে,
ঘর,বাড়ি ,সাজানো জীবনের ছবি
এক নিমেষেই শেষ বন্যার জলে।

বন্যা থেমে গেলে নানারকম রোগে
জীবনকে অতীষ্ট করে তুলে,
কলেরা,ডাইরিয়া,জ্বরে ভুগতে থাকে
মানুষ বন্যার দূষিত জলে।

 প্রাকৃতিক দূর্যোগের কাছে আমরা  
দিশাহারা হয়ে পড়ি
ঠিকানা বিহীন জীবন নিয়ে বাঁচাবো
কেমন করে ভেবে মরি।

বন্যায় সুন্দরবন প্রতিবছর কেন ভাসে - ডাঃ অসিত কুমার সরকার


সুন্দরবন কেন ভাসছে ? 
গণ - আওয়াজ উঠছে না তো জোর! 
ওরা ভাসছে বছর বছর , 
মজা লুটবে কয়েক টা এাণ চোর ? 
আর মিডিয়া , সুকৌশলে 
এড়িয়ে গিয়ে বানভাসির কথা 
সেই চোরদের সঙ্গে নিয়ে করে 
সন্ধায় হয় রঙ্গঁ রসিকতা। 
মিডিয়ায তো ছবি দেখছি 
শুধু শাসক বিরোধী কোন্দলের। 
বানভাসির এাণে যুক্ত 
লোকেরা কারা? জিরো পাওয়া দলের! 
বানভাসিরা ভাসছে দেখে 
দূর থেকে তো অনেকে হাত নাড়ায়, 
মানুষ হয়ে সমবেদনায়
সেই মানুষ এর পাশে ক ' জন দাঁড়ায় ? 
অশিক্ষিত  মানুষ বাবু 
ঠিক বুঝি না, মেটাতে কার সাধ 
সুন্দরবনে গড়ে ওঠেনি 
এখনো  পাকাপোক্ত নদী বাঁধ! 
যে বাঁধ গড়ার কাজ শুরু হয়, 
কোন রহস্যে থামে সে উদোম 
কেউ জানে না সারবে কবে
পোড়া দেশের এমন মহারোগ! 
ওদের দিকে কেউ কি দেবে নজর ? 
নাকি চোখের নোনা জলেই
সুন্দরবন ভাসবে প্রতিবছর?

# ঘোষপাড়া বালুরঘাট 

হায় বন্যা - আশীষ কুমার পাল




বেদনার রঙ তুলিতে সৃষ্ট অসিত মেঘ
দুকুল ছাপিয়ে ডেকে এনেছিল বন্যা! 
নীড় হারা মানুষ গুলো অসহায় বড়ো
বাঁধতে বাঁধ বুক পেতে ছিল এক কন্যা। 

সাপের সঙ্গে সহবাসে চরেছিল গাছে
অনিদ্রা আর অনাহারে নষ্ট জীবন, 
মরীচিকা সম সুখ হাতরে বেড়িয়ে
লিখন খন্ডনে বেচেছে গহীন মরন! 

বৃদ্ধ পিতার হাতটা কখন ছেরে গেছে 
ভাইটাকেও পারেনি দিতে জীবনের স্বাদ! 
দুঃখের বন্যায় শুকিয়ে অশ্রু কনা
বেঁচে থাকা মানে জীবন ই বরবাদ! 

মাতা তো সেই কবেই গিয়াছে ছারি
দুঃখের মাঝে খুঁজেছিল গভীর সুখ, 
সম্বল হীন হয়ে  বাবা ভাই হারিয়ে
জীবনের মায়া হারিয়ে বাঁধে পেতেছে বুক!