Thursday, 20 May 2021

ভোগ --তমাল ঘোষ



(প্রথম পর্ব)  

রাত তখন প্রায় এগারোটা।সত্যি অফিস থেকে বেরতে  অনেকটা দেরি হয়ে গেছে নিশার।আর তার সাতে দোসর হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি।গাড়ি স্টার্ট করার আগেই প্রায় ভিজে স্নান হয়ে গেল।অফিস থেকে বাড়ি প্রায় আড়াই ঘন্টার রাস্তা।এই রাস্তাটা এমনিতেই  নির্জন।বৃষ্টির মধ্যেই বেশ জোরেই গাড়ি চালাতে শুরু করল সে। মোহনপুরের মাইলস্টোন টা পার হবার কিছু পরেই হঠাৎ সামনে কি একটা দেখে একটু স্পিড টা কমাল,একটা লোক হাত নাড়ছে....।সে গাড়ি টা দার করিয়ে উইন্ডো টা ওপেন করতেই লোক টা যেন গাড়ির কাচে একপ্রকার ঝাপিয়ে  পরে বলল
-মা আমায় দয়া করেএকটু সাহায্য করো, আমি খুব বিপদে পড়েছি।
নিশা একটু ইতস্তত করতে লাগল,একে এই রাস্তা দিয়ে সে বাড়ি ফেরে না,তার ওপর এই ঝড় জল বৃষ্টিতে এক অচেনা অজানা লোককে আশ্রয় দেওয়া কি ঠিক হবে?ভাবতে ভাবতে তার ফাকেই লোক টা বলতে থাকল,
-মা আমি এইখানে নতুন এসেছি,আমার এক বন্ধুর বাড়ি যাব,আমার সাইকেল টার হাওয়া পরে গেছে,আমি খুব বিপদে পড়েছি মা।
বলতে বলতে লোক টা কেদেই ফেললো।লোকটা কে দেখে সত্যি মায়া হলো নিশার। বয়সে প্রায় পিতৃসমান।এই বৃষ্টি তে ভিজে নাজেহাল অবস্থা।
-কোথায় যাবেন আপনি?
-ঐ যে ঐ বিলাশ্গঞ্জের ব্রিজের ওপারে।
-উঠে আসুন। বলল নিশা।
লোকটা ওঠার সময় নিশা চট করে চুল টা খুলে ক্লিপ টা হাতে নিয়ে নিল...সাবধানের মার নেই।লোকটা উঠে এলে গাড়ি স্টার্ট দিলো  নিশা। একবার  ড্রাইভিং মিররে নিশা দেখল লোক টা চুপ করে বসে আছে, বড়ো বড়ো চুলে মুখ টা ঢেকে আছে। যাক লোকটার কোন দুরভিসন্ধি নেই। লোকটা কে দেখে সত্যি ভদ্র খারাপ মনে হবার কোন কারন নেই,শুধু ভয়েসটা একটু কর্কশ...কেমন যেন একটু ধরা ধরা।মোহনপুর থেকে বিলাশ্গঞ্জ যেতে সময় লাগল পয়তাল্লিশ মিনিট।পথে নিশা জিজ্ঞেস করে 
-আপনার নাম কি?থাকেন কোথায়?
-প্রমধ কর। বাড়ি কেশপুরে।
পথে সেইভাবে আর কোনো কথা হয়নি।বিলাশ্গঞ্জ ব্রিজ মেইন রাস্তার বামদিকে। ব্রিজের সামনে আসতে নিশা বলল,ব্রিজ এসে গেছে...আপনি যেতে পারবেন তো এখান থেকে।
-নিশ্চই পারব, শুনেছি ব্রিজ টা পার করলেই ওর বাড়ি।তোমায় অশেষ ধন্যবাদ মা..ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুক।
বলে গাড়ি থেকে নেমে গেল প্রমধ বাবু।নিশা দেখল মোবাইল বলছে রাত সারে বারোটা, এইটুকু আসতেই এতটা সময় লেগে গেছে।যাক একদিকে ভাল বৃষ্টিটা একটু ধরেছে,গুগল ম্যাপ বলছে এখান থেকে আরভি পৌছাতে আর দেড় ঘন্টা লাগবে।নিশা কোনদিকে না তাকিয়ে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল।বাড়ি পৌঁছাতে পৌছাতে পৌনে দুটো হয়ে গেল।ঠান্ডা লেগে গেছে নিশার। এই ভিজে ড্রেসে এতক্ষণ গাড়ি চালিয়েছে সে। গাড়ি থেকে নামতে যাবে এমন সময় হঠাৎ কি একটা যেন চোখে পরল ব্যাক সিটে।তুলে নিল জিনিসটা,একটা তাবিজ...তার মাঝখানে একটা পাথর।বেশ বড়ো পাথর।নিশা প্রথমে ভাবল এই তাবিজ টা এখানে কোথা থেকে এল,কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো এটা নিশ্চই ঐ লোকটার।আর উনি তাড়াহুড়োয় এটা ফেলে গেছেন।নিশা তাবিজ টাকে সঙ্গে নিয়ে নিল।ক্ষুদিরাম নেই,বাড়ি গেছে,কাল আসবে।নিশা চাবি খুলে রুম এ ঢুকল।ফাইল র তাবিজ টাকে টেবিল এ রেখে ফ্রেশ হতে গেল।ফ্রেশ হয়ে রুম এ এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল।নীলকে ওয়াটস্যাপ এ পিন করে দিল যে সে বাড়ি পৌছে গেছে।
ঘুম ভাংলো সকাল ন'টায়।মাথাটা ধরেছে।কেমন যেন বিশ্রী রকমের গরম পরেছে আজ,তার ওপর এসী টাও খারাপ।ক্ষুদিরাম এর আসতে আসতে বেলা হবে।শরীর টা যেন চলছে না আজ।অফিস এ ফোন করে জানিয়ে দিলো যে সে আজ যেতে পারবে না।ক্ষুদিরামের বেলায় চলে আসার কথা। সবে ভাবছিল ফোন করবে তখনই ক্ষুদিরামের ফোন এল
-হালো।
-দিদিভাই আমি ক্ষুদি বলছি,এখানে ট্রেন চলছে না..আমার মনে হয় না আজ পৌছাতে পারব....
-হালো হালো!
ফোনটা কেটে গেল।আবার ফোন করল নিশা।আউট অফ নেটওয়ার্ক বলছে।ফোনটা কেটে শুয়ে পরল সে।
শরীরটা সত্যি খারাপ লাগছে। বিকেলের দিকে শরীরটা একটু অবস্থার উন্নতি হলো।নিশা ভাবল একটু বেরবে।বেরনোর সময় ভাবল তাবিজটা নিয়ে যাবে, যদি পথে ভদ্রলোকের সাথে দেখা হয় তাহলে তাবিজটা দিয়ে দেবে।বিশালগঞ্জের ব্রিজের সামনে এসে গাড়িটা থামল,উনি তো বলেছিলেন যে ব্রিজটার ওপরেই ওনার বন্ধুর বাড়ি।গাড়ি থেকে নেমে এল নিশা।ব্রিজটা ক্রস করল।ব্রিজটা ঠিক যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে রাস্তাটা একটু ঢালু হয়ে নিচে নেমে গেছে।বাড়িটা নিচু রাস্তাটার একটু কোনঘেসা।ওপরে টিনের চালের আবরণ।প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে চারিদিকে।নিশা বাড়িটা লক্ষ করে এগিয়ে গেল।কোন এক মায়াবি শক্তি যেন তাকে সম্মহিত করছে।কোন এক মায়াবলে সে এগিয়ে চলেছে ঐ অজানার উদ্দেশ্যে।বাড়িটার সামনে এসে দারালো।চারিদিক নিস্তব্ধ।নিশা বুঝতে পারল কোনো এক বিভীষিকা তার সামনে উপস্থিত হয়েছে।কিন্তু সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো প্রবেশ করল ঘরের মধ্যে।দরজাটা যেন আগে থেকেই আগুন্তুকের জন্য খোলা রাখা ছিল।ঘরের মধ্যে অতিরিক্ত গরম।একটু এগিয়ে যেতে ডানদিকে একটা ঘর নজরে পরল। মনে হচ্ছে যেন আগুন জলছে।নিশা শরীরের সমস্ত জোর খাটিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল।কিন্তু সে বুঝতে পারল কোনো এক সর্বনাশা বেরাজালে আবদ্ধ হয়েছে সে। ভেতরে ঢুকে দেখল কালকের সেই লোকটা বসে যগ্গ করছে।আজ তার বেশভূষা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে।খালি গা,বড়ো বড়ো মাথায় চুল,গলা অবধি দাড়ি,মাথায় তিলক।নিশা বুঝতে পারল ইনি তান্ত্রিক।নিশা তার সামনে এসে বসল।এই ঘরের তাপমান এমনিতেই বেশি।অগ্নিকুন্ডের সামনে বসে ঘামতে শুরু করল সে।এক নিদারুণ ভয়ে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত।তান্ত্রিক চোখ খুলল।নিশা যে অপরুপা সুন্দরী টা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই।সেটা সে কালই দেখেছে। তার  গায়ের রঙ,তপকৃস্টো মুখ,ঘন কালো চোখ,রক্তিম ঠোট ঘিরে জল্জল করছে এক দুর্ভেদ্ধ জোতি।প্র্মধ তান্ত্রিক তার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।তার যজ্ঞ সাধনার জন্য এরকমই তো শিকার দরকার।সে বাড়িয়ে দিল তার হাত দুটো তার শিকারের উদ্দেশ্যে।চোখ বন্ধ হয়ে এল নিশার।ততক্ষণে প্রমধ তান্ত্রিকের পৈশাচিক হাত দুটো জাপটে ধরেছে নিশাকে।এবার শুধু ভক্ষণের পালা।



(দ্বিতীয় পর্ব)  

             নিশার পিঠটা খামচে ধরেছে তান্ত্রিক।আধবোঝা চোখে নিশা দেখল একটা সর্পিল লকলকে জিভ থেকে যেন লালারস নিসৃত হচ্ছে।মুহূর্তের মধ্যে তার শরীরের সমস্ত আবরণ যেন খড়কুটোর মতো উবে গেল।কেমন যেন এক বিস্তৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে সব।দেহের সমস্ত শক্তি যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে।নিশা বুঝতে পারল তার হাতের পাথরের নীল রংটা যেন আরও উজ্জল হয়ে উঠেছে।পিশাচটা হাত থেকে তাবিজটা নিয়ে নিল।তারপর সেটাকে তার বুকে ঠেকাল।মুহূর্তের মধ্যে তার সমগ্র শিরা উপশিরায যেন এক নিলাভ স্রোত বয়ে যেতে শুরু করল।নিশা থরথর করে কাঁপতে লাগল প্রমধ তান্ত্রিকের হাতের ওপর।
    এক ঘন্টা পর ক্ষুধা  নিবৃতি হলো প্রমধ করের।উঠে দাড়ালো তান্ত্রিক।মনে মনে হাসতে লাগল,এমন ভোগ সে কোনোদিন ও গ্রহণ করেনি।মনে মনে বলল,আর দিন দুএকের অপেক্ষা! ব্যাস,তারপর..........।নিশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-জানিস মা,আমার সাধনার অন্তিম ভোগ যে এত উপাদেয় হবে টা আমি কল্পনাও করিনি।নিশার ঠোট শুকিয়ে গেছে,ঢোক গিলছে।কাপা কাপা গলায় বলল
-আ...আ...আমি একটু জ..ল খাব।
-এই তো মা এক্ষুণি আনছি।আগে এই তাবিজটা তোকে পরিয়ে দিয়ি।
এই বলে সে একটা কালো কার নিয়ে তাবিজটা কে নিশার কোমরে বেধে দিল।তারপর অগ্নিকুন্ডের পাশে রাখা শাড়িটা তুলে নিয়ে ওর সামনে গিয়ে বলল,
-এই নে মা, এটা পরে নে।আমি জল আনছি।
উঠে বসল নিশা,কাপা কাপা হাতে শাড়িটা তুলে নিয়ে পরে নিল।
           রাত আটটায় মিটিং শেষ হয়েছে নীলের।অফিস থেকে বেরিয়ে কল করল নিশাকে।টানা সাত বার কল করার পর ও ফোনে পেলো না। এরকম তো কোনোদিন ও হয় না।প্রথমে একটু রাগই হলো নীলের।গোয়াহাটিতে আসা থেকে অফিস এর চাপে তার সাথে একবারও কথা হয়নি নিশার।পরক্ষণেই কেমন একটা ভয় করল নীলের।এমনিতেই নতুন অফিস, তার ওপর জায়গাটাও নির্জন,একথা সে নিশার মুখেই শুনেছে।আকাশকে কল করল,
-হালো,বল।
-হালো,আকাশ,এই শোন না!বলছি তোর সাথে কি কাল থেকে নিশার কোনো কথা হয়েছে রে।
-মানে,কই না তো,কেনো ফোন কি সুইচ অফ?
-না রে, আমি সাত বার কল করেছি,ও ফোন তুলছে না।
-আচ্ছা আমি দেখছি,তুই টেনশন নিশ না,কবে আসবি কলকাতায়?
-কালই সকালে ফ্লাইট।
-আচ্ছা আমি দেখছি।
   কিছুক্ষণ পর আকাশের কল এল
-না ভাই,ও ফোন তুলছে না।
-আচ্ছা ওর কোন বিপদ হলো না তো রে।
-শোন ও বুদ্ধিমতী,আমার মনে হয় না ওর কোন বিপদ হয়েছে।বাট আজ যদি ওকে ফোনে সত্যি না পাই,কাল আমি আর তুই আরভি চলে যাব।
ওকে বলে ফোনটা কেটে দিল নীল।কেমন একটা যেন হয় হচ্ছে,ওর সত্যি কোন বিপদ হলো ন তো।রাতে আরো দশ বার কল করল কিন্তু ব্যর্থ হলো নীল।সারারাত ঘুম হলো না।পরের দিন সকাল সাড়ে ছ'টার  ফ্লাইট।কলকাতা আসতে লাগল একঘন্টা কুড়ি মিনিট।রাতেই কল করে দিয়েছিল আকাশকে।আকাশ এয়ারপোর্ট এ গাড়ি নিয়ে চলে এসেছিল।গুগল ম্যাপ এ দেখল এখান থেকে আরভি পৌছাতে ছ'ঘন্টা লাগবে।আকাশ উঠে এলেই গাড়ি স্টার্ট করে দিল।বেশ জোরেই গাড়ি চালাতে লাগল আকাশ।
  আরভি পৌছাতে গেলে নিকুঞ্জপুর স্টেশনে নেমে মুখুজ্যে মশাই কাছ থেকে সাইকেল নিয়েই আসে ক্ষুদিরাম।ক্ষুদিরামের বয়স আঠারো,সে বনহরি লাল এর বাড়ি কাজ করছে এই মাস দুয়েক হবে।মুখুজ্যের বাড়ি থেকে বনহরিলাল মশাইয়ের বাড়ি প্রায় একঘণ্টার পথ।পথে সাধুবাবা কে ফল মিষ্টি দিয়ে সে যাবে গন্তব্যস্থলে।সাধুবাবা জঙ্গলে গেছে।ক্ষুদি যথাস্থানে আহারের দ্রব্যাদি রেখে ফিরে গেল বনকুথির উদ্দেশ্যে।
  গুগল ম্যাপ বলছে আরভি পৌঁছাতে আরও আধ ঘন্টা লাগবে।আরভি পৌছে বনকুঠি খুজে পেতে অসুবিধা হলো না।ছবির মতো সুন্দর বাড়ি,কিন্তু সেই সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো মনের অবস্থা দুজনের কারোরই নেই।আকাশ তড়িঘড়ি নেমে দৌড় দিল।কিন্তু বাড়ির সদর দরজা তালা দেওয়া।নীল বুঝতে পারল নিশা বাড়ি নেই, আর ফোনটা ও ফেলে গেছে।ভয় করছে আকাশের।নিশা যদি সত্যি বাড়ি না থাকে তাহলে সারারাত ও কোথায় কাটলো।হঠাৎ পেছনে সাইকেল এর আওআজ শুনে চমকে তাকালো আকাশ।দুজন অচেনা লোক দেখে একটু হতবাক এ হয়েছে সে।আকাশ জিগেস করল,
-তুই এই বাড়ির চাকর?
-আজ্ঞে হ্যাঁ।
-তোর দিদিমণি কোথায়?
- আগে বলুন আপনারা কারা?
-আমি নীল, নিশার বন্ধু।
-দাদাবাবু!
নিশার মুখে নীলের কথা ক্ষুদি শুনেছে,নিশা ক্ষুদিকে ছোট ভাইয়ের মতো ভালবাসত,তাই চিনতে অসুবিধা হয়নি।ক্ষুদি দেখল দরজায় তালা দেওয়া।সে বলল,
-আজ তো রবিবার,আজ তো দিদিভাই বেরন না।
আকাশ জিগেস করল,
-তুই কোথায় গেছিলিস?
এরপর সে তার দেশের বাড়ি যাওয়া থেকে নিশার সাথে কথা বলা অব্ধি সবটাই বলল।সব শুনে আকাশ বলল,
-বিকেল হয়েছে,আমাদের এখনি নিশাকে খুজ্তে বেরতে হবে।
ক্ষুদি বলল,
-দাদাবাবু,একটা কথা বলবো,এখানে দুর্গাশঙ্কর আচার্য বলে একজন সাধুবাবা আছেন,খুব এ জাগ্রত,ওনার কাছে যাবেন?দিদিভাইয়ের সত্যি যদি কোনো বিপদ হয় উনি নিশ্চই আমাদের সাহায্য করবেন।
-তুই জানিস উনি কোথায় থাকেন?
-হা দাদাবাবু।
-গাড়িতে উঠে আয়।
       বিকেল গড়িয়ে এসেছে,প্রমধ তান্ত্রিক সাধনার সমস্ত উপকরণ সংগ্রহ করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে লাগল কুটিরের উদ্দেশ্যে।কিছু প্রেত সাধনার ফলে অস্বাভাবিক রকম জোরে হাটতে পারেন তিনি।দুর থেকে মনে হয় যেন হওয়ায় ভেসে যাচ্ছেন।মনে মনে ভাবছেন আর একটা, মাত্র একটা,তারপর........,এতদিনের গূঢ় তপস্যায় সিধ্বিলাভ করবেন তিনি।কালই হবে সেই দিন,তিনি জানেন যে এর চেয়ে ভাল আমাবস্যা আর নেই।
     সাধুবাবার ডেরাইটা রাখাজঙ্গলে।এক গুহায় তিনি একাই থাকেন,ক্ষুদি ওদের নিয়ে গেল।সাধুবাবা ধ্যান করছিলেন।ওরা সাধুবাবার সামনে গিয়ে বসল।সাধুবাবা চোখ খুলল।ক্ষুদিকে দেখে বলল,
-কি ব্যাপার ক্ষুদি?
- গুরুদেব, আমার দিদিমণি কে পাওয়া যাছে না।আমার দিদিমণির কি কোন ক্ষতি হয়নি তো?ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল ক্ষুদি।
তিনি একদৃস্টে তাকিয়ে রইল তিনজনের দিকে।তিনি বললেন,
-তোমরা কি তাকে উদ্ধার করতে এসেছ?
নীল বলল,
-মানে কি বলতে চাইছেন আপনি,নিশা কোথায় আপনি জানেন?
-সে এক ভয়ানক পিশাচের লালসার শিকার হয়েছে।
আকাশ বলল,
-আপনি যদি আমাদের দয়া করে বলেন যে নিশা কোথায় আছে,তাহলে আমরা ওকে বাচাতে পারব।
-তাকে বাচানো একপ্রকার অসম্ভব।
-কেন?প্রশ্ন করল আকাশ।
-সে তুমি বুঝবে না।তন্ত্র নিয়ে কোন ধারনা আছে তোমাদের?নিশাকে বাচান একপ্রকার অসম্ভব।তুমি কি ভাবছ তোমার বন্ধু এই তান্ত্রিকের প্রথম শিকার,তার তন্ত্র সাধনার অন্তিম শিকার সে।মৈথুন সাধনা বোঝো?তন্ত্র সাধনার সবচেয়ে কঠিনতম সাধনার মধ্যে এটি অন্যতম।খুব কম সাধক ই জানে এই বিদ্যা। কিন্তু কেউ ভুলেও প্রয়োগ করার কথা  দুঃস্ব্প্নেও ভাবে না।আর ইনি একশত সাতটি শিকার সম্পন্ন করেছেন নির্ভুল লক্ষে,মাপা ছক কেটে।আর তাকে বহু পণ্ডিতই আটকানোর চেষ্টা করেছে,কেউ সফল হয়নি।
নীল বলল,
-আমরা  আপ্রাণ চেষ্টা করব গুরুদেব।আপনি শুধু বলুন আমদের কি করণীয়।
-শোনো তাহলে........



(অন্তিম পর্ব)

       মৈথুনবিদ্যা সম্পর্কে জানতে হলে তন্ত্র সম্বন্ধে ধারনা রাখাটা আবশ্যক।তন্ত্র শব্দের উত্পত্তি "তত্ত্ব" এবং মন্ত্র" এই দুই শব্দের সমন্নয়।"তত্ত্ব"সৃষ্টির যাবতিয় নিয়মাবলির বৈজ্ঞানিক আধার আর "মন্ত্র"জগতের রহস্যময়ী শব্দ এবং সুরের বৈজ্ঞানিক মুখচার।ত্ন্ত্রের কেন্দ্রে রয়েছেন দেবাদিদেব মহাদেব।কথিত আছে,শিবের  ডুমরু থেকেই তন্ত্রের উত্পত্তি।আর সেই তন্ত্রের আধার গঠিত হয় মা দুর্গার দশ হাত দিয়ে তৈরি দশমমহাবিদ্যার ওপর।তন্ত্র প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী করে তলে।সে প্রাকৃতিক শক্তিকে মা রূপে পূজা করে।তাই সাধক প্রাকৃতিক শক্তিকে পূজা করে শিব্ত্ব অর্জনের জন্য।এই তন্ত্র সাধনার অতি গূঢ়হ সাধনার মধ্য এ অন্যতম সাধনা মৈথুনবিদ্যা।
   এই পর্যন্ত বলে থামলেন গুরুদেব,আবার শুরু করলেন,
-মৈথুনতত্ত্ব সম্বন্ধে 'অতি জটিল' বিশেষণ আরোপ করা হয়েছে আগমসার গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে, মৈথুনসাধক পরমযোগী। কারণ তাঁরা "বায়ুরূপ লিঙ্গকে শূন্যরূপ যোনিতে প্রবেশ করিয়ে নিজ লালসা নিব্রতির মাধ্যমে সাধনায় ব্রতী হয়।কিন্তুএটি আবার
 সৃষ্টির উৎস বলেও পরিগণিত করা হয়।এমনকি এও বলা হয়, এটি পরমতত্ত্ব এবং   মৈথুন ক্রিয়াতে  সুদুর্লভ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়।কিন্তু কিছু মানুষ এই তন্ত্র বিদ্যার প্রতি ঘোরতর নিন্দা এবং অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।তন্ত্র পরিবেষ্টিত ছিল পঞ্চ ম-কারের ওপর।
-মানে,?প্রশ্ন করল নীল।
-গুরুদেব হেসে বলল,তাই তো বললাম এখনকার মানুষের ত্ন্ত্রের প্রতি কত কম ধারনা লব্ধ হয়েছে।পঞ্চ ম-কার নিয়ে আর্যরা সমাজে বিদ্বেষ  ছড়াতে শুরু করে।ম-কার হল মদ্যপান।আর্যরা প্রচলন করে,যে মদ্যপান শরীরে আবেগের সঞ্চার করে,যা শারিরীক উত্তেজনা ঘটিয়ে লালসা প্রব্রতীর পথকে সুচারু করে।তারা মৈথুন ক্রিয়াকে কদর্য,কুত্সিত রূপে গণ্য করেন এবং এর পরোক্ষ প্রভাবে নারিজাতিকে সমাজে পণ্য রূপে স্বীকৃতি দেয়া হয়।শারীরিক মৈথুনের বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন আলিঙ্গন, চুম্বন, শীৎকার, অনুলেপ, রমণ ও রেতোৎসর্গ - তেমনই আধ্যাত্মিক মৈথুন ও যোগক্রিয়ায় তার সমান্তরাল কৃত্য, সেখানে 'তত্ত্বাদিন্যাসের' নাম আলিঙ্গন, ধ্যানের নাম চুম্বন, আবাহনের নাম শীৎকার, নৈবেদ্যের নাম অনুলেপন, জপের নাম রমণ আর দক্ষিণান্তের নাম রেতঃপাতন। এই সাধনাটির নাম 'ষড়ঙ্গসাধন' এবং শিবের ইচ্ছায় একে 'অতীব গোপন' মোহর দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া "কলির জীব পঞ্চ ম-কারের মর্ম বুঝিতে পারবে না বলে কলিযুগে একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অতএব ইতরজনের জন্য এইসব দর্শন 'নিষিদ্ধ' হয়ে গেল।তাই এই সাধনা কলীযুগে অতিপ্রাকৃতিক এবং নিতিবিরুদ্ধ।
   থামলেন গুরুদেব,বললেন,
-কলিজূগে ভালবাসার নামে যৌন লালসাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। 
    -তাহলে উপায়?প্রশ্ন করল আকাশ।
-উপায় আছে, তবে আজ অনেক রাত হয়েছে।কাল সবই জানতে পারবে।
রাতে ওখানেই শুয়ে পরল ওরা তিন জন।
সকালে ঘুম ভেঙে ওরা দেখল গুরুদেব মন্ত্র পাঠ করছেন।তার সামনে এক বাক্স।মুখ, হাত,পা ধুয়ে তার সামনে বসল তিন জন।মন্ত্র পাঠ শেষ হতে বাজল দশটায়।চোখ খুলল গুরুদেব।আজ সেই দিন,আজই কৌশিকী অমাবস্যা।আজই তান্ত্রিকের সিধ্বিলাভের অন্তিম দিন।গুরুদেব বাক্স খুললেন, তারপর একটা জিনিস নীলের হাতে তুলে দিলেন।রুদ্রাক্ষ!হা রুদ্রাক্ষ।নীল সেটাকে হাতের মুঠোয় আব্দ্ধ করল।গুরুদেব বললেন,এবার মন দিয়ে শোনো,
-তান্ত্রিকের আস্থনা বিলশ্গঞ্জ ব্রিজের ওপারে কুটিরে।তোমরা এখান থেকে বিকেল বিকেল রওনা দেবে,তান্ত্রিক জঙ্গলে গেলেই তোমরা ঐ কুটিরে প্রবেশ করে যজ্ঞের ঘরের অগ্নিকুণ্ডে ঐ রুদ্রাক্ষটা রেখে দেবে।খবরদার,এমনভাবে প্রতিস্থাপন করবে যেন সাধক তার উপস্থিতি কনমতেই টের না পায়।
    আজ সকাল থেকেই ব্যস্ত প্রমধ কর।আজ তার শেষ সাধনা।গত হাজার বছরেও এই সাধনা করার চেষ্টা কেউ করেনি, আগামি হাজার বছরেও কেউ করবে না।গত পঞ্চাশ বছর ধরে তিনি যে দুর্লভ পূজাপকরন গুলি তিনি সংগ্রহ করেছেন আজ তা পুঞ্জিভূত করার পালা।আজ কোন ভুল চুখ বরদাস্ত করার প্রশ্নই ওঠে না।সমস্ত আয়োজন গুলোতাই পুন্খানুপুঙ্ক্ষ ভাবে দেখে নিলেন তিনি।সব সাজতে সাজতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল।
     বেরনোর সময় হয়ে গেছে ওদের।তিন জনই প্রাণ ভরে আশীর্বাদ নিলেন গুরুদেবের কাছ থেকে।বেরনোর সময় গুরুদেব নীলের হাতে একটা শাড়ি তুলে দিয়ে বললেন,
-যুদ্ধে জয়ী হলে এই শাড়ি ওক পরিয়ে দিয়ো।
ক্ষুদিরাম বলল,-" আর যদি তান্ত্রিক সফল হন?"
-তাহলে উনি চিরকুমারত্ত লাভ করবেন,ভেবে দেখ যা বিজ্ঞান ও পারেনি,তা উনি ত্ন্ত্রবলে লাভ করবেন।সমগ্র নারীজতি ওনার ভোগ্যপণ্য-এ পরিণত হবে।
মুখটা শুকিয়ে গেল তিন জনের।গুরুদেব বললেন,
-চিন্তা কর না,মনে রাখবে ভালবাসাই সবচেয়ে বড়ো তন্ত্র,বাকিটা মা এর ইচ্ছা।
         প্রমধ করের সমগ্র সাজ সরঞ্জাম করতে বিকেল গড়িয়ে গেল।এবার জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।জঙ্গলে এক গাছের সাথে একশত সাতটি খুলি বাধা আছে।ওটা নিয়ে আসার সময় হয়ে  গিয়েছে। সবে কুটির থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের উদ্দেশ্য এগোবেন, এমন সময় হঠাৎ থমকে গেলেন তিনি,একটা সাপ বামদিক থেকে ডানদিকে রাস্তা পার হচ্ছে।শঙ্ক্ষচুর!বিশদর সাপেদের রাজা।দেখেই চিনতে পারলেন তিনি,কিন্তু এই নিয়ে বিচলিত হলেন না তিনি,হলেন এই ভেবে যে তন্ত্র সাধনায় ব্রতী হবার আগে এটি একটি অত্যন্ত বাজে লক্ষণ।কিন্তু এই বাধা এড়িয়ে জায়া ওনার কাছে কিছুই না।এগিয়ে গেলেন উনি।কিছুক্ষণ যাবার পরই স্পষ্ট শুনতে পেলেন, কোন এক গাছের ডালে ঘুঘু ডাকছে।মুহূর্তের মধ্যে গতি শ্লথ হয়ে এল,রাত্রিবেলা ঘুঘুর ডাক শ্রাস্থ্ত্ত দুর্লক্ষণ গুলির মধ্যে অন্যতম।কি হচ্ছে এই সব,আজই কেনো,একশত সাতটি শবদেহ সম্পন্ন করেছেন তিনি, তার মতো সাধক এই ভূ-ভারতে নেই,আর মাত্র একটা....একটা।মনটা খুত খুত করতে লাগল প্রমধ করের।যদিও তিনি জানেন এই সব বাধা পেরনোর অজস্র উপায় তিনি জানেন,এইগুলি তন্ত্র সাধনার অতি নিম্ন স্তরের শিক্ষা।এগিয়ে গেলেন গহিন জঙ্গলের পথে।
       এই মুর্হুতেরই অপেক্ষা করছিল তিন জন।গুরুদেব বলেছিলেন তান্ত্রিক জঙ্গলে গেলেই কুটিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে ওদের।ওরা ছুটে কুটিরের ভেতর প্রবেশ করল।যজ্ঞের ঘরটি খুজে পেতে অসুবিধা হল না,অগ্নিকুন্ডের ভেতরে রুদ্রাক্ষটা এমনভাবে রেখে দিল যাতে কনমতেই সেটি দৃষ্টিগোচর না হয়।কিন্তু নিশাকে দেখতে পেলো ন ওরা।কিন্তু সে সময় নেই,ওরা তত্ক্ষণাত্ পাশের একটা ঘরে লুকিয়ে পরল,আর মনে মনে ভগবানকে ডাকতে থাকল যাতে ওদের অস্তিত্ত তান্ত্রিক টের না পায়।
    ফেরার সময় কিছুতেই নিজের মনকে শক্ত করতে পারছিল না প্রমধ তান্ত্রিক।বার বার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছিল।তিনি ভাবতে লাগলেন যদি কোন অলৌকিক শক্তিবলে তিনি সাধনা শেষ না করতে পারেন?........সেই পরিণতি ভাবতেও ঘাম ছুটে গেল তার।শ্রাস্ত্র মতে যে সাধনায় সাধক ব্রতী হয়েছেন সেই সাধনা যদি সম্পন্ন করতে না পারেন,তাহলে য তগুলো সম্পন্ন হয়েছে তারা ভয়ংকর প্রতিশোধ নেয় তান্ত্রিকের ওপর।ভেবেই গা শিউরে উঠল প্রমধ তান্ত্রিকের।মনকে শক্ত করলেন তিনি,একাগ্র না হলে সাধনা সম্পন্ন হবে না।কুটিরে প্রবেশ করলেন তিনি,অন্যমনস্কতার দরুন খেয়ালই করলেন না, বাকি তিন জনের উপস্থিতি।যজ্ঞের ঘরে প্রবেশ করে অগ্নিকুন্ডের ভেতর খুলিগুলকে সজত্নে রাখলেন।পাশের ঘর থেকে এইঘরটা মোটামুটি দেখ যায়,ওর তিন জনই দেখতে পেলো সাধুকে।চোখের পলক পরতেই এরপর তিন জন দেখল ঘরে প্রবেশ করল নিশা,তার পরনে একটা শাড়ি,আচলটা মাঠিতে লুটতে লুটতে এগিয়ে চলল সে।আজ তাকে ভারি সুন্দর লাগছে।তার অগছাল চুল গুলো মুখের ওপর পরে আছে।কিন্তু সে যে কোথায় ছিল তা কেউই টের পেলো না।তান্ত্রিক তার সামনে এসে কোমরের তবিজ্টা খুলে নিল।তারপর নিশা অগ্নিকুন্ডের সামনে গিয়ে বসল।মনকে শক্ত করে আহুতি শুরু করলেন তিনি।একবার নিশার দিকে তাকিয়ে হাসলেন,আজ সেই দিন,তার স্বপ্নপূরণের দিন।হঠাৎ জ্বলে উঠল অগ্নিকুন্ড।ইস্টদেবতার নাম স্মরণ করে সাধনা শুরু করল প্রমধ কর। মন্ত্র উচ্চারণ এর সাথে অগ্নিকুণ্ডে ঘি ঢালতে লাগলেন,আর সেই লেলিহান শিখা যেন আরও বড়ো আকার ধারণ করতে শুরু করল।সেই শিখায় তিন জনের মনে হলো যেন তারা সঙ্গা হারাবে।কিন্তু নিশা,না সে নিরুত্তর,তার সমগ্র শরীর দিয়ে যেন গলিত লৌহ স্রোত বয়ে যেতে লাগল।সমগ্র শরীর ঘামে ভিজে গেল।কিন্তু সে যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইল প্রমধ সাধকের দিকে।এই লেলিহান শিখা যেন তাকে স্পর্শ করতে পারছে না।ওরা ত্জ্ঞ জন এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেল।দেখতে দেখতে তান্ত্রিক তার হাতের সেই তাবিজটা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করল।আর তার সাথে সাথে এই লেলিহান শিখা যেন আরও বীভত্স রূপ ধারণ করল।সবাই দেখল তান্ত্রিকের অঙুলিহেলনের ফলে সেই শিখা থেকে বেরিয়ে এল আর এক তাবিজ।তার অগ্রভাগে এক পাথর,চকচক করছে।প্রমধ তান্ত্রিক গলায় পরে নিল সেই পাথর।উঠে এল নিশাকে লক্ষ করে।নিশার চোখের পাতা পরছে না,সে সেই ভাবে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,যেন খাদ্য খাদকের জন্য প্রতীক্ষারত।প্রমধ তান্ত্রিক তার হাত দুটো দিয়ে জাপটে ধরল নিশাকে।মুহূর্তের মধ্য নিশা টের পেলো তার শরীরের উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে যেন এক শীতল স্রোত বয়ে গেল।ততক্ষণে প্রমধ কর তার আদিম খেলায় মত্ত হয়েছে।ঐ পৈশাচিক নরপিশাচ নিশার শরীরের প্রতিটা মাংসপিণ্ড যেন ছিড়ে ছিড়ে খেতে লাগল।চোখের কোন দিয়ে জল বেরিয়ে এল নিশার,এর চেয়ে তো মরণও শ্রেয়।হঠাৎ এক লাল স্ফটিক সবাইককে অবাক করে দিল।প্রমধ কর দেখতে লাগলেন এক লাল স্ফটিক সারা ঘরে বিচ্ছুরিত হতে লাগল।উঠে দারালেন তিনি।লাল স্ফটিক নির্গত হচ্ছে তার বুকের ঐ পাথরটা থেকে।মাথা কাজ করছে না ওনার,তিনি বিস্মিত,হতবাক, কথা থেকে এল এই রশ্মি।রুদ্রাক্ষ!এ যে রুদ্রাক্ষ।কিন্তু কথা থেকে এল এই জিনিস তার গলায়।সে প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলেও এর পরিণতি সম্পর্কে তার ধরনা স্পষ্ট।যৌনসঙ্গমের সময় রুদ্রাক্ষ পরলে মহাপাতক হয়,এটা তার অজানা নয়।তার তন্ত্র সাধনার অন্তিম লগ্নে এ কি ভুল করলেন তিনি।মুহূর্তের মধ্যে তার সমগ্র শরীরের প্রতিটা অংশ ফেটে রক্ত বেরতে শুরু করল,আর তার সাথে ঘরের বাকি চার জন দেখল সেই একশত সাতটি খুলি যেন নড়ে উঠল।ভোগের আয়োজন হয়েছে,ভারতের শ্রেষ্ট পিশাচসিদ্ধ তান্ত্রিকের রক্তই হবে তাদের মহাভোগ।অসহ্য জন্ত্রণায় চিত্কার করতে করতে সেই অগ্নিকুন্ডের ভেতর গিয়ে পড়লেন তিনি।
        ছুটে ঘরে প্রবেশ করল তিন জন।নীল নিশার দেহটা মায়ের কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল।জড়িয়ে ধরল নিশাকে।আকাশ দেখল,অগ্নিকুন্ডের প্রতিটা খুলির মুখে লেগে আছে তাজা রক্ত।নীল বুকে জড়িয়ে ধরল নিশাকে।গুরুদেব ঠিকই বলেছিল,ভালবাসার চেয়ে বড়ো তন্ত্র আর কিছু নেই, ভালবাসাই সবচেয়ে বড়ো তন্ত্র।



গল্পঃ ভোগ 
লেখকঃ তমাল ঘোষ
দক্ষিন ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ,  ভারতবর্ষ 

দুঃসময় - শিপ্রা দেবনাথ (টুলটুল )


দেখছো কি গোপন হিংসা কপট রাত্রি ছায়ে
কিভাবে হেনে যায় নিঃসহায়ে?
দেখেছ কি প্রতিকার বিহীন মৃত্যু ছায়ে ধরেছে ঘিরে
তোমারে আমারে সকলেরে?
অন্তর থেকে বিদ্বেষ নাশো বলে দিলেই
হয় কি বিদ্বেষ নাশ?
দেখছোকি কি যন্ত্রণায় মরছে একের পর এক?
যারা দিল বিষায়ে তোমার আমার
শান্তির নিশ্বাসের মুক্ত বায়ু
যাদের জন্য নিভতে বসেছে তোমার জীবন আয়ু
দুঃস্বপ্নের অনন্ত গহবরে নিমজ্জিত হচ্ছে
তোমার আমার স্বপ্নের ভুবন
কি বলে তোমার অন্তর?
ক্ষমা করে দিয়ে যাবে তাদের?
সেএক মহৎ গুণ বটে নয়তো সহজ,
দেখো আর অসাবধানতা নয়
জেগে থাকো জাগিয়ে রাখো অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায়।
----------------------------------------------------

        Voice Literary Blog 

Editor : Bristi Kangsabanik 

Sub-Editor : Priyatama Ghosh 

Affiliated by : Voice Literary Cultural Organization

Wednesday, 19 May 2021

অনুভবে - বর্ণালী রায়



        সকল পৃথিবী তোমারি তো হয়
 সর্বস্থানে তোমার অধিষ্ঠান,
 তুমি বিনা শূন্য এ ধরণী
 আজ তোমার করি জয় গান।
 কখনো রেগে তুমি চন্ডালিনী
  ধূ-লুণ্ঠিত করো ধরাতল,
 কখনো স্নেহের আবেগ মাখা
 ভরিয়ে দাও সকলের মন ।
 কখনো তুমি প্রেমিক মনে
 শীতল পরশ লাগাও,
 কখনো তুমি শান্ত হয়ে
 অগোচরে রয়ে যাও।
 সকলের স্পর্শে রয়েছো তুমি
 তোমার অন্ত যেন নাই,
 তোমার কোন রং না থাকিলেও
 নানা নামের বাহার।।

----------------------------------------------------

        Voice Literary Blog 

Editor : Bristi Kangsabanik 

Sub-Editor : Priyatama Ghosh 

Affiliated by : Voice Literary Cultural Organization

Tuesday, 18 May 2021

বিনোদিনী - শতদ্রু চক্রবর্তী


বিনোদ ফুলের বিনোদ মালা 
বিনোদ  গলে  দোলে ।
কোন বিনোদিনী  গাঁথিলে  মালা  
 বিনোদ বিনোদ  ফুলে 
বিনোদ কেশ বিনোদ বেশ 
বিনোদ  বরণ - খানি ।
বিনোদ মালা  গলায়  আলা  
বিনোদ বিনোদ  দোলনি 
বিনোদ  বন্ধন  বিনোদ  চিকুর 
বিনোদ  মালা  বেড়া ।
বিনোদ নয়ানে, বিনোদ  চাহনি 
বিনোদ  আঁখির তারা । 
বিনোদ মুখ , বিনোদ  বুক
বিনোদ শোভা  করে ।
বিনোদ নগরে  বিনোদ নাগর 
বিনোদ বিনোদ  বিহরে  । 
বিনোদ  চলনব, বিনোদ বলন 
বিনোদ  সঙ্গীয়া সঙ্গে  । 
লোচন  বলে  বিনোদিনীর 
বিনোদ  গৌরাঙগে ।

----------------------------------------------------

        Voice Literary Blog 

Editor : Bristi Kangsabanik 

Sub-Editor : Priyatama Ghosh 

Affiliated by : Voice Literary Cultural Organization

Sunday, 16 May 2021

দর্শকের ভূমিকায় - শিপ্রা দেবনাথ (টুলটুল)


 সেই গোলাপ আর সুরভিত নেই এখন
  সেখান থেকে  নষ্টামির দুর্গন্ধ
  নাকে ভেসে আসে।
  ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মনেও এখন মারাত্মক বিষ
  যার যত গায়ে মাখার ইচ্ছে মেখে নাও
  নোংরা গন্ধ  গা ঘিন ঘিন করা।
  ভরসা বিশ্বাস শব্দ দুটো ভীষণ সজাগ
  যদিও ভালোবাসা অন্ধ এরা তো ভালোবাসারই অঙ্গ
  ওরা সায় না দিলে ভালোবাসার মৃত্যু  ঘটে।
  আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেবার একটি নয় দুটি নয়
  অনেক উদাহরণ আছে
  বারবার সয়েছি তবু দূরে ঠেলে দেই নি। 
  পুরনো  আঘাতের রক্তাক্ত ঘা 
  শুকোবার আগেই সে ব্যথা মেটার আগেই
  পরপর আরেক আঘাত আসে।
  তুমি খেলো যেমন ইচ্ছে যত ইচ্ছে
  আমি এবার দর্শকের ভূমিকায় থাকি।
  ভালোবাসা কোন দূর্বলতা নয়
  একজন সবল হৃদয়ের অধিকারীই
  ভালবাসতে জানে কেবল
  বাকিরা সবাই অভিনয়ের জগতে
  দিব্যি অভিনয় করছে আর নিজেকে 
  তামাশা করে তুলছে।