"অমর একুশ"
---চন্দন মহন্ত
সময়টা ছিল ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী, পুলিশের গুলি বুকে এসে লাগল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত একদল ছাত্র ও ক্ষিপ্ত জনতার মাঝে। দাবি ছিল শুধু উর্দু নয় বাংলা ভাষা কে জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার কর্নপাত করেননি এই দাবি। পাকিস্তান সরকারের দাবি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ভাষায় হবে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) সহ সমগ্র পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা। বাঙালি মনে প্রানে রয়েছে বাংলা ভাষা, সে তো আত্মমর্যাদার লড়াই , টিকিয়ে থাকার লডাই।পিছু সরে আসেননি তঁারা , জীবন দিয়ে প্রমান করেছেন শহীদেরা, তারা পিছু হটতে শেখেননি।লুটিয়ে পড়ল মাটিতে রক্তাক্ত দেহ, যেন কোলাহল ঢেকে গেছে চারিদিকে, যেন গুলি বর্ষিত হচ্ছে পৃথিবীর বুকে।পুলিশের গুলি থামল না,মেতে উঠল নির্মম হত্যা লীলায়, নিশপাপ দেহগুলি মাটিতে পড়ে রইল।
স্বাক্ষী থাকল শুধু পৃথিবী। রক্তে রাঙিয়ে শহীদ হলেন বাংলা মায়ের বীর সন্তান সালাম,রফিক,জব্বর, শহিফুলের মতো অনেকে। অহত হলেন শতাধিক, তবুও দমন করতে পারেনি,জেগে উঠেছিল মাতৃভাষা মুক্তির আন্দোলন। পরাজয় স্বীকার করেনি বল পূর্বক চাপানো উর্দু ভাষায় কাছে,জয়ী হয়েছে বাংলা ভাষা।
বহু বছর পরে ১৯৯৯ খী. UNESCO, ভাষার জন্য আত্মত্যাগী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারীকে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস রূপে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কিন্তু বর্তমানে বাংলা ভাষা গড্ডালিকা প্রবাহে হারিয়ে যেতে বসেছে।পাশ্চাত্য শিক্ষার অনুসরণ করে বিদেশি ভাষাকে আপন করে নিয়ে বাংলা কে ছোট করে দেখে।তাদের বাংলা ভাষায় বড়ো অরুচি। একাধিক ভাষা শেখাটা কোনো অন্যায়ের না বরং আত্ম প্রতিভার বহিঃপ্রকাশের দৃষ্টান্ত, যা মহত্ত্বতাকে প্রকাশ করে।কিন্তু যখন কেউ ইংরেজি ভাষা শিখে নিজের মাতৃদুগ্ধ বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করে তখন সেটা অন্যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন -
"বাঙালি ছেলেরা ইংরেজি শিক্ষায় যতই পাকাই হোক,তবু্ও পুরো করবার জন্যে তাকে বাংলা শিখতেই হবে।"
যখন মনে অহংকার স্থান করে নেই,তখন সময় গোনে প্রহলিকার।
বিশ্বের একাধিক দেশের কলেজ /বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো হয়,এছাড়াও ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া মত দেশে বাংলা ভাষা কে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালি হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই, সেই বীরদের যঁারা জীবন দিয়ে মাতৃভাষাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বিশ্বের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া একটি বিরল ঘটনা,
ভাষার জন্য জীবন উৎস্বর্গ !!! কখনো কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। প্রতিষ্ঠার জন্য কত বড় তাদের আত্মত্যাগ। কুর্নিশ সেই বীরদের।
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি"
"রক্তে রাঙা আমার ভাষা
অন্তরেতে আছে মোর গঁাথা,
জাগিবে বিশ্বে মোদের ভাষা,
হৃদয়ে মোর এমনই আশা
আমি গর্বিত, বাংলা মোর মাতৃভাষা।
রক্তে রাঙা আমার ভাষা। "
copyrights@ Chandan Mahanta
--------------------------------------------------------
Voice Literary Blog
Editor - Bijoy Sarkar
-------------Voice Literary-Cultural Team----------