Wednesday, 27 October 2021

চিন্ময়ী মা - প্রদীপ বাগ



সারাদিন ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে,একঘেয়ে ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না,বন্ধু নীলেশের মুখেই শোনা গল্প আজ আপনাদের শোনাবো- বর্ষাস্নাত এই রকমই দুর্গাপুজোর সময় একটা ঘটনা যা আজও নীলেশের কাছে কোনো  ব্যাখ্যা নেই।নদীয়ার বিখ্যাত মৃৎশিল্পী জীবন কৃষ্ণ পালের নাম শোনেননি এমন লোক খুব কমই আছে।নীলেশের পাশের গ্রামে কুড়ি-পঁচিশ ঘর বসতি নিয়ে কুমোড়পাড়া,সেখানকার মানুষেরা চাষাবাদ ছাড়াও বাড়তি রোজগারের জন্য অনেকেই বিভিন্ন মূর্তি,খেলনা ইত্যাদী তৈরী করতো।যাদের মধ্যে অন্যতম জীবন কৃষ্ণ পাল তার হাতে গড়া দুর্গা ঠাকুর সূদূর অস্ট্রেলিয়া, কানাডা বিভিন্ন দেশে সমাদৃত হয়েছে। সরকার থেকে বিশেষ পুরস্কৃতও হয়েছেন।অথচ মানুষটি কে দেখলে বোঝার উপায় নেই, কালো মোটা ফ্রেমের চশমা,হাঁটুর উপর ধূতি একটা ফতুয়া,কখনো বা খালি গায়ে কাঁধে গামছা।বেশিরভাগ সময় খালি পায়ে হেঁটে চলে বেড়াতে ভালোবাসে।
জীবন বাবু মূর্তি গড়াই বেশি পছন্দ করে,এক একটা মূর্তি তৈরী করতে কয়েক মাস লেগে যেত, এই সময় নাওয়া খাওয়া ভুলে বিভোর হয়ে কাদামাটি দিয়ে আঙুলের টানে মূর্তি গুলো সব জীবন্ত হয়ে উঠতো.........

একমাত্র মা মরা মেয়ে দুর্গা ছাড়া তার ত্রিভূবনে কেউ নেই, দুর্গার জন্মের সময়ই তার স্ত্রী কমলবালা ইহলোক ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকেই জীবন বাবুই দুর্গার মা আবার বাবা।পরম স্নেহ যত্নে মেয়েকে লালন পালন করছেন এমনকি শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দ্বিতীয় বার বিয়ে পর্যন্ত করেনি পাছে মেয়ের অযত্ন হয়।আড়ালে আবডালে লোকেরা কানাঘুষো করে,এই মেয়েটা অলক্ষী জন্মাবার সাথে সাথেই মা টাকে খেয়েছে। জীবন বাবু এসব শুনেও চুপচাপ থাকতো কারণ চলা পথ,বলা মুখ কখনো আটকানো যায় না।ক্রমশঃ দুর্গা বিবাহযোগ্যা হয়ে ওঠে সমত্থ মেয়েকে বেশি দিন তো নিজের কাছে রাখা যায় না তাছাড়া চোখ বুজলে মেয়েটার ভবিষ্যত কি হবে।সম্বল বলতে কাঠা চারেক জমি, কয়েকটা মেডেল আর শংসাপত্র।সাতপাঁচ ভেবে শান্তিপুরে একটি সম্বন্ধ ঠিক হলো।অগাধ জায়গা জমি,ব্যবসা বর্ধিষ্ণু বনেদী পরিবার। শান্তিপুরের বিখ্যাত রাশ মেলায় সুভাষ ঘোষের রাশের ডালা নামকরা,তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র অমর ঘোষের সাথে বিয়ে স্থির হয়েছে। 
দুর্গা নামেও যেমন রূপে গুণেও তেমন সাক্ষাৎ মা দুর্গা- টানাটানা চোখ টিকালো নাক মাথা ভর্তি চুল লেখাপড়াও মোটামুটি জানে।নম্র ধীর স্থির এবং খুব সহজেই সকলকে আপন করে নিতে পারে এটাই হলো ওর মহৎ গুন।এসব দেখেই ছেলের বাড়ির লোক এককথায় বিয়ের দিন পাকা করে গেছে।তারা নিজেরাই মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

দুর্গা কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি নয়,কান্নাকাটি করতে লাগলো।বাবা এই বয়সে তোমাকে কে দেখবে?আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
-- দুর পাগলি তুই তো আমার মা।তোর শক্তি,প্রেরণায় আমি ঠিক থাকবো,তুই চিন্তা করিসনা।বেশিরভাগ সময় জীবন বাবু দুর্গার কাছাকাছি থাকে,ছলছল চোখে দূর থেকে মেয়েকে সর্বদা নিরীক্ষণ করে।ছোট থেকে মানুষ করার সব ছবি মানসপটে ভেসে উঠে আসে।

যথারীতি ২রা আশ্বিন গোধূলি লগ্নে চারহাত এককরে কন্যা সম্প্রদানে শুভ বিবাহ প্রতিপন্ন হলো।পরের দিন মেয়ে জামাই কে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখের জলে বিদায় দিলেন। সমস্ত অনুষ্ঠান পর্ব জীবন বাবু দক্ষতার সাথে নিখুঁত ভাবে শেষ করলো।

এবারে পাঁচটা দুর্গা ঠাকুরের বায়না নিয়েছে।মোটামুটি সব শেষ হয়ে এসেছে শুধু একটা ঠাকুরের চোখ মুখ আঁকা বাকি।হাতে বেশি সময় নেই,মেয়ের শোক কে বুকে চেপে রেখে টিনের দরজা সরিয়ে ঠাকুরগুলো ফিনিশ করতে লাগলো,চোখ মুখ আঁকা প্রায় শেষ হঠাৎ বলকে বলকে নাক মুখ দিয়ে কাঁচা রক্ত উঠতে লাগলো,আপন মনেই বলে মা রে আর একটু সময় দে তোর মুখটা একটু পালিশ বাকি আছে।দ্রুত হাত চালাতে থাকে, বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারে না হাত থেকে তুলি ক্যানভাস পড়ে যায়........

বৌভাতের অনুষ্ঠান-মাথায় মুকুট,টানা নথ চন্দনের কল্কায় একেবারে প্রতিমার সাজে সিংহাসনে দুর্গা বসে আছে।অভ্যাগতদের সাথে আলাপচারিতার মাঝে মাঝে আকুল হয়ে চোখ দিয়ে কাউকে খুঁজছে।জামাই কে সাথে নিয়ে বাবা কাছে আসতেই দুর্গা বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। জীবন বাবু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে দিতে বল্লো-কাঁদিস না মা কাঁদিস না, দেখবি এবারে আমি তোর ছেলে হয়ে তোর কাছেই থাকবো। এমন সময় দমকা হাওয়ায় লাইট নিভে গেল বাইরে বজ্র বিদ্যুৎ সহ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে।পরের দিন সকালে খবর এলো জীবন বাবু মারা গেছে।

শোকে মূহ্যমান দুর্গাকে নিয়ে জামাই নদীয়ায় এসে পৌঁছালো। টিনের দরজা সরিয়ে সবাই দেখে মেঝেতে চাপ চাপ রক্তের মাঝে জীবন বাবুর নিথর দেহ পড়ে আছে তার ঠিক সামনের মূর্তি টা হুবহু মেয়ে দুর্গার মতো দাঁড়িয়ে মেঝের দিকে বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে। পাড়ার লোকেরা বলে তুই যাবার পর এই ঘর থেকে আর জীবন বাবু বের হয়নি........??
            

Tuesday, 26 October 2021

মেস বাড়ির রকমারি রঙ্গ - শক্তি পদ সেন


  ভদ্রলোকের নাম বিপুল দাম। না, তিনি কোন নামী ব্যক্তিত্ব নন। মানে তিনি কোন কিছুর উদ্বোধন করেননি বা কোন গদ্য বা পদ্য লেখেননি। তা যা হোক, ওই ভদ্রলোকের সাথে আমার একবার আলাপ হয়। ওটাকে খেজুরে আলাপ ই ধরে নিতে পারেন। আচ্ছা দেখুন, আজকালকার দিনে শাক - সবজি, জামাকাপড়, খাদ্য - দ্রব্য, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিকস সব কিছুরই দাম বাড়ছে আর একদিকে মানুষের দাম কমছে। তো দেখুন,নামটাই হলো তাঁর বিপুল দাম। সত্যিই তাঁর দাম কিন্তু বিপুল ই, অন্ততঃ তাঁর বন্ধু - বান্ধব,শুভানুধ্যায়ী, অনুসারী সকলের কাছেই। ভদ্রলোকের কথায় এমন যাদু যে কথায় কথায় আপনাকে কিছুক্ষনের মধ্যে বিমোহিত করে ছাড়বেন। তিনি আমার কাছে একদিন গল্প করেছিলেন।তিনি নাকি বরাবরই হোস্টেলে বা মেসে থাকতেন। সত্যি, এমন জমাটিয়া মানুষ দুনিয়াতে খুব কমই দেখা যায়।তিনি বেশ রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন সাথে কিছুটা রস ঢেলে। সেদিন সকলেই আমরা তক্ত পোশের উপর বসে আছি। হঠাৎ ই তাঁর বিপুল - বিশাল শরীরটা দেখিয়ে তিনি গলা ছেড়ে গান ধরলেন ---" আমার এই বিপুল বিশাল দেহখানি তুলে ধরো,,,,,। আর মেসের সকলে তাঁর গানের সাথে সাথে তাল ধরে নাচতে শুরু করল। দু - চার জন তো থালা বাজাতে শুরু করল। ওই গানের পর ই আরেকজন আরেকটা গানের তালে তালে নাচতে শুরু করল ---- " জানা, ও মেরি জানা,,, অ্যয় ম্যায় তেরে রাজা,,,লায়লা,, ও মেরি লায়লা,,,। আ। - যা,,মেরে বাহু মে আ,, যা,,,,।সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল সকলের উদোম নাচ। মেস বাড়ির আশেপাশের উঠতি বয়সের ছেলে - মেয়েরা জানলা থেকে উঁকি মেরে দেখে আনন্দ উপভোগ করতে লাগল।
  পরে অবশ্য শুনেছি -- কেউ কেউ নাকি এতে বিরক্ত হয়ে মেস বাড়ির কাজকর্মের ব্যাপারে তিরস্কার ও করেছে। তবে কে কার কথা শুনে ? দিনের পর দিন মেসের এই হযবরল দিনের পর দিন চলতেই থাকত।
  কি অদ্ভুত জমিয়ে রাখার ক্ষমতা! দেখুন ,আমি বলেছি কিন্তু খেজুরে আলাপ। তার মানে এই নয় যে তিনি খাজুরা হের সব জিনিস পছন্দ করেন বা তার সাথে তাল মিলান। আসলে তাঁর রসের নৌকার খেয়া দিনে অন্ততঃ বিশ - পঁচিশ বার খেপ মারে।
   আর একবার তিনি শোনালেন --- মেসে দিন দুয়েক ঠাকুর নেই।আবার কাজের মাসিও বেপাত্তা। তো তখন সেই কাহিনী তিনি যা বললেন -- বেশ মজার ব্যাপার। তখনকার দিনে কয়লার উনুনে রান্না হত।সেই কয়লার ছাই পাশেই পড়ে থাকত।সকালে উঠে সবাই কার ডিউটি হল কয়লার ছাই দিয়ে থালা মাজা। তো তিনি নিজেকে এ ব্যাপারে অনভিজ্ঞ বলেই বর্ণনা করলেন। পাশাপাশি বসে লাইন দিয়ে সবাই থালা মাঁজছে।লাইন দিয়ে বলতে তখনকার দিনে মেয়ে বউরা যেমন লাইন দিয়ে পাথরের যাতায় মাসকলাই ভাঙত -- অনেকটা সেইরকম। তো বসে থালা মাজতে মাজতে অনেকের গুন গুন করে গান ও চলছে। কয়েকজন আবার উত্তেজনা চাপতে না পেরে উঠে দাঁড়িয়ে কয়লার ছাই সহ থালা হাতে নাচতে শুরু করে দিল ---
"জানা, ও মেরি জানা,,,
এয়, ,, ম্যায় তেরে রাজা,,,
লায়লা, ও মেরি লায়লা,
আ,,,যা,,মেরে বাহু মে আ,,,যা,,,
  তো সময়টা গ্রীষ্ম কাল। কুয়োতেও বেশ একটা জল নেই। কোন রকমে বালতি নামিয়ে কুড়িয়ে বাড়িয়ে আধ বালতি করে জল বার কয়েক উঠল।নাচা গানার পালা শেষ হলে কোন রকমে সবাই থালাগুলো তখন পরিস্কার করে নিজের নিজের জায়গায় রাখল।
  তারপর আরেক জনের গান সমেত নাচ শুরু হল। মেস বাড়িতে শুরু হল --" জিলে লে,,, জিলে লে,,,আও ,,, আও আও জিলে লে,,,,। মানে ওই আলুভাতে গিলে লে,,,,গিলে লে,,,,। সত্যিই সেদিন আলুভাতেই হল। ঠাকুর তো নেই। কারুর রান্নার অভিজ্ঞতা নেই। কোন রকমে মশাই সেই বড়ো হাঁড়িতে কয়লার উনুনে বানানো আলু ভাতই খাওয়া হল। তার অধিক আর কিছুই জুটল না। এদিকে অনেক দেরি করে চান টান করে খাওয়া হল।ঘন্টা তিনেক বিশ্রাম। তারপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল।
  এবার এল চায়ের পালা।একজন গিয়ে ততোধিক উৎসাহী হয়ে চা বানাল।এখন বলে উঠল  -- শালা, চা করতে জানিস ? যা চা হয়েছে দেখছি, মনে হচ্ছে তাতে দিতে আর কোন কিছুই বাকি নেই। শালা, চায়ের এমন স্বাদ যেন পাঁচ ফোড়ন ,জিরে, ধনে সব দিয়ে দিয়েছে --- এক বিতিকিচ্ছিরি যাচ্ছেতাই স্বাদ ! তাহলে এত কষ্ট করে চা করার কি দরকার ছিল ? যা হোক,তখন চায়ের সাথে বিস্কুট কি জুটল জানেন ? এখনকার মতো সহজপ্রাপ্য নামী ব্রিটানিয়া বিস্কুট নয়,তৎকালীন বিখ্যাত ' ভগবতী ' বিস্কুট। সত্যিই ,মেসের এই ভগবতী দের জন্য ওই ভগবতী বিস্কুট ই সেরা।একজন ত বলেই উঠল --" আজকে আমরা সবাই ভগবতী। কার্তিক মাস। নেহাত পাশের গাঁয়ের লোকেরা খোঁজ রাখে না। না হলে আমাদের সকলের শিংয়ে ( থুড়ি মাথায়) ধান শিসের টোপর আর কপালে সিঁদুর লেপে দিয়ে দেখাত যে ভগবতী দিগকে দুনিয়ার মানুষ বেশ সুখেই রেখেছে।
  সত্যিই ,ওই জমাটিয়া ভদ্রলোককে আর যাই বলেন, তাতে তাকে অন্ততঃ খেজুরে আলাপের মানুষ কোনো ভাবেই বলা যায় না।

Sunday, 24 October 2021

কোথায় চেতন - মঞ্জুলা বর

 



সুন্দর  পৃথিবীতে মানুষ কবে আর 
মানুষ হবে ? এতো শিক্ষা ব‍্যবস্থা  
এতো আইন  কানুন তবুও  শত সহস্র
 নারীর গণধর্ষণ গর্ভকালীন !

 কেমন শিক্ষা?---ভাবতে অবাক লাগে
 এতো পুলিশের সমারোহ পথে পথে--
 হাজার হাজার  জন মানব তবে কী
 করে মোড়ে মোড়ে নারীর  কেন 
 এত ধর্ষণ  ও মৃত্যু  !

আসলে সব থেকে ও কিছু নেই অভাগা 
দেশে! জ্ঞানের আলোকে  মানুষ কবে  
আর মানুষ হবে?সবাই আমরা মুখে 
কত জ্ঞানের বাণী শোনাই কিন্তু সত‍্যি কী 
কেউ  সঠিক  পথে চলি! সবটা যেন  
অজানা! ------

বিবেক চেতন যদি জাগতো তবে দিনের 
পর এতো অন‍্যায় অরাজকতা হতো না!
মিথ‍্যার কবলে সত‍্য হতো না জর্জরিত ।

লোভের মোহে দিকে দিকে ধান্দা 
আর মারামারি  । স্বার্থের তরে হিংসা,ঈর্ষা ,
ক্ষুণ,খারাপি  চলছে অহরহ।  

 কোথায়   মনুষ্যত্ব ?কোথায় চেতন?
কোথায়  বা  মানবিকতা? নীরবে আজও 
কাঁদে  অসহায়  ধরণী ।।

এসো - গাই জীবনের গান - নূপুর আঢ‍্য


 
লুন্ঠিত,রক্তাক্ত আজ মানবিকতা হচ্ছে অবক্ষয়,
পৈশাচিক উল্লাসে ধর্মান্ধরা করছে নৃত্য।
দেশের দশের ওরা বিভীষিকা,নরকের কীট,
ধর্মের আড়ালে আপন ধর্ম করছে কালিমালিপ্ত।

সকল ধর্মের মন্ত্র -- প্রেম ভালোবাসা,
মানুষের কাছে আসা,পাশে থাকা,
বন্ধুত্ব,সহমর্মিতা,মানবিকতা,শুদ্ধতা,
ন‍্যায়ের সাথে অপর ধর্মকে সম্মান জানানো।

এসো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি মানুষ,
কতিপয় পামরদের করে প্রতিহত,
ওদের ঘৃন্য আচরণ করে নির্মূল,
সত‍্য শিব সুন্দরের হই পূজারী।

মানুষের জন্য ধর্ম,মানুষের হিতার্থে 
মানুষ হয়েছে ধর্মের অনুশাসনে আবদ্ধ।
এসো হিন্দু,এসো মুসলমান,এসো শিখ খৃস্টান,
সৌহার্দে হই মিলিত,গাই জীবনের জয়গান।

মুসলমান - দিগন্ত কুমার দাস।


  

মুসলমানের সজ্ঞা জানো-
 কাকে বলে মুসলমান?
মুসলমান তাদেরই বলে- 
বিশ্বে যারা শান্তি চান।
নয় সে মুসলিম, নয় সে হিন্দু,
 নয় সে বৌদ্ধ বা খ্রস্টান,
সকল ধর্মের, সকল জাতির
প্রতি যাদের টান সমান।
তবে কেন মাটির দেহের
প্রাণকে নিয়ে এতো রাগ!
মাটির দেহ খুন করলে কি,
লাগেনা কলংকের দাগ?
যে মাটি- মা শেষ ঠিকানা,
তাকেই যদি ভেঙ্গে দাও,
কেমন করে মানতে পারি,
তোমরা কারো শান্তি চাও?
তোমরা যাদের করছ আঘাত,
তারা কি সব মানুষ নয়?
মানুষ মেরে হয় কখনো, 
ধর্ম কিম্বা জাতির জয়?
মানুষ হয়ে মানুষ মারো,
ভাবোনা কে আপনজন,
সব মানুষ আজ মরে গেলে,
কাকে নিয়ে কাটবে ক্ষণ?
        

শিরোনাম : রক্ত দিয়ে হয় লেখা - আরতি সেন




মানবতার অবক্ষয় আদিম  যুগ থেকেই
মানুষের  মধ‍্যে এক প্রগাঢ় অবস্থানে বিদ‍্যমান।
স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলেই মানুষের  আদিম হিংস্র রূপ হয় প্রতীয়মান।
রক্ত লোলুপ হিংস্র জানোয়ারের থেকে হয়ে উঠে হিংস্র ও ভয়ংকর 
দাঙ্গা খুন রাহাজানি সব কিছুই  যেন মানবের জন্মগত অলংকার 
"মানুষ  মানুষের জন‍্যে" এই কথাটা বর্তমান যুগে সম্পূর্ণ ভাবে নয় প্রজোয‍্য
কারো প্রতি কেউ করে না সমব‍্যবহার ন‍্যায‍্য।
আর্য অনার্য মুঘল পাঠান  সকলেই মানব সভ‍্যত‍া বিকৃতিকরণ।
মানব ইতিহাস  রচিত হয় অঝোর ধারায় হয়  মানবের রক্তক্ষরণ
সকলের অন্তরে যেন প্রজ্জ্বলিত এক লেলিহান শিখা
যার পরিসমাপ্তির ইতিহাস  রক্ত দিয়ে হয় লেখা।।

মনুষ্যত্ব জ্ঞানে নিবৃত্ত হয় - দিলীপ কংস বণিক।



অবক্ষয় তখনই হয়, যখন কোন মানুষ বা কোন জাতি হয় আত্মকেন্দ্রিক।
একা আমি ভালো থাকবো, একা ই সব ভোগ করবো সকল সমষ্টিক।।
অবক্ষয় নিবারণ হবে, সামগ্রিক চিন্তন যবে মানব মনে বোধোদয়।
মানবতার উন্নতি, সুখি মানব জাতি সামগ্রিক ভাবনায় উদয়।।
লেখাপড়া শিখলে ই মানুষ হ‌ওয়া যায় না, মানুষ হতে চাই মনুষ্যত্ব জ্ঞান।
মানবতার উন্নতি, বিশ্বের সমগ্র জাতি' সুখ বিকাশে থাকে যার ধ্যান।।
মনুষ্যত্ব জ্ঞানে সেই হয়েছে মানুষ, পর দুঃখে কাঁদে যাহার প্রাণ।
পর সুখানন্দে আন্দোলিত  হৃদয় সুখানুভূত সেই তো মহীয়ান।।
আত্মকেন্দ্রিক মানুষেরা হয় শোষক, লুটেরা বাজ নৃশংস।
তারা দিয়েছে মনুষ্যত্ব বলি, করে মানব কল্যাণের সকল ধ্বংস।।
মন্দির ভাঙ্গেনি নিছক, ভেঙ্গেছে মানুষের হৃদয়, ভেঙ্গেছে মানবসভ্যতা।
ভাঙ্গিলো এ সব যে জাতি প্রমত্ততায় মাতি, প্রকাশিলে তার ধর্মের নগ্নতা।।
সাজিয়াছেন যারা ধর্মগুরু, এখনো তারা করেন নি শুরু ঢাকিতে আপন লজ্জা।
সকল ধর্ম ই শান্ত হয়, হানা-হানি কোন ধর্ম নয় উড়ায়নি শান্তি' ধজ্জা।। 
মনুষ্যত্ব জ্ঞান   হয় ধর্ম পরায়ন  পালন করে ধর্মের শিষ্টাচার।
"সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই" কন্ঠে ধ্বনিত বারংবার।।
নম্র  বিনয়ী  সহিষ্ণুতা  সাম্য  সত্যবাদীতা আনে মানবতার উন্নতি। 
মানবতার অবক্ষয় মনুষ্যত্ব জ্ঞানে ই ধ্বংস হয়, জাগ্রত বিবেক সভ্যতার প্রগতি।।
কলুষ, হিংসা-বিদ্বেষ করে সকল নিঃশেষ,  হয় মানবতার অবক্ষয়।
 হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার, গ্রহি সভ্য শিষ্টাচার শিরে লভি স্রষ্টার বরাভয়।।
হে জ্ঞান দিবাকর,  তুমি চির ভাস্বর, দিনমনি জ্যোতির্ময়।
তব জ্ঞানালোক করে হৃদয় পুলক মুছে দিক মানবতার অবক্ষয়।
        

ধিক্কার - প্রদীপ


 

ভয়ঙ্কর সর্বনাশগুলো দূর থেকেই দেখছি
অন্তর্জাল ও ফেসবুকের আশীর্বাদে।
ধ্বংসস্তুপ দেখছি আর অন্তর্দাহে দগ্ধ হচ্ছি
ধর্মোন্মাদদের তান্ডবলীলার বিভীষিকা দেখে।

নিপীড়িত -নির্যাতিত-নিষ্পেষিত সংখালঘুদের  উপরে 
ধর্মোন্মাদ জিহাদিদের নির্যাতন -হত্যা-ধর্ষন 
মন্দিরে- গৃহে লেলিহান অগ্নি সংযোজনে সমাহিত চিরকালের স্বপ্ন। 
ধর্মের ষাঁড়ের জনস্রোতে ও প্রবল আক্রমণে অস্তিত্ব টেকাই দায়
সংখ্যালঘুদের আপন জন্মভূমির ভিটে মাটিতে। 
মাথা তুলে দাঁড়ানো তো দূরের কথা 
চলছে জীবন বাঁচানোর এক মরিয়া প্রয়াস প্রতিনিয়ত। 
যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতা আবার 
সবুজ-শ্যামল-নরম -নির্মল বাংলার বুকে।
জিহাদিদের পৈশাচিক আক্রোশ -আক্রমন 
মহামান্য সরকারের মৌনতা ধারণ 
এক অভিশাপ, গণতান্ত্রিক নামধারী দেশের কাছে।
এক সোনালি -সুবর্ণযুগ আততায়িদের কাছে
পাগলা হাতির মতোই দাপিয়ে চলছে বাংলার বুকে।
অবাক লাগছে ভণ্ড সরকারের ভণ্ডামিতে,
নীরব বুদ্ধিজীবী -নীরব সুধীগণ এ বর্বরতার কাছে।
কে তবে এ নির্যাতিতদের পাশে?
কিসের দেশ-কিসের জন্মভূমি 
কিসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম 
সবই প্রহসন
এই ধর্মোন্মাদ মানসিক বিকলাঙ্গ জিহাদিদের কাছে।
রবীন্দ্রনাথ -নজরুল-জীবনানন্দ- সত্যেন্দ্রনাথদের সোনার শ্যামল বাংলা 

এখন জিহাদিদের পীঠস্থান -মুক্তাঙ্গন।
লজ্জা হচ্ছে -লজ্জা হচ্ছে
সোনার বাংলার এ ঝলসানো রূপ দেখে।
ধিক্কার জানাই তীব্র ধিক্কার জানাই
ধর্মোন্মাদ লুটেরা জিহাদিদের, 
ধিক্কার জানাই তীব্র ধিক্কার জানাই 
মহামান্য গণতন্ত্রের রক্ষক-ভক্ষক প্রহসনের প্রশাসককে।।

নেপোটিজম - ঋজু






এই যে ছেলে ! তুই বেশতো আছিস ওনার নেপো হয়ে
ভিড়ের মধ্যে নিজের তরে সুখটা খুঁজে নিয়ে,

ও দাদা --- আরে ও দাদা শুনুন শুনুন 
ভালোই চলছে অতীত নিয়ে !!নেই কোন দুরাবস্থা!!!
পদলেহনে মত্ত আমি- না হয় হলাম খানেক সস্তা ??

এদিক-ওদিক কান দেই না- শুধু কাজটা আমি করি
বুঝলেন,আমি এদিক-ওদিক কান দেই না, শুধু কাজটা  নিজের করি--
দিনের শেষে আহ্লাদে আমি গুরুর চরণ ও ধরি!

পরের দিনে আবার মাখি- কালি  আমার মুখে
দাদা!!পরের দিনে আবার মাখি- কালি  আমার মুখে
আমার জীবন চলছে ভালোই আছি আমি খুব সুখে ।

তাই ,কাঙ্ক্ষিত ভাষা নগ্ন শরীরে করে গেছে শুধু নৃত্য
দিনের শেষে পরিচয় মোর পা চাটা এক ভৃত্য ।

কি বলেন ? ভৃত্য?? পরিচয়টা বড্ড ভালো শুনে হলাম আপ্লুত!
দেখছি ,তোমার ন্যায় নীতিবোধ একেবারে যে হয়েছে গত।

দাদা!!! আমি দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা এক টুকরো খানি মাংস
বারবার সেথা খেয়েছি খোঁচা তবুও -ছাড়িনি আমার অংশ..
বুঝলেন, তবু ছাড়বোনা আমার অংশ।

তাই ,ওই খানেতে হারিয়ে ফেলেছি আমার লেখার ছন্দ
কলম ভেঙেছি বারবার আমি ভুলে গেছি ভালো-মন্দ,

আমার চিন্তা লোভের বশে- চুপিসারে রাখি বন্ধক
তাই আধার আমার বড্ড প্রিয় -ভয় করি দিবালোক!

হৃদয় আমার স্বপ্নে ঠাসা -আসলে কর্মবিমুখ
তবু স্বল্প সময়ে সুখের পরশ -পেতে আমি  উৎসুক,

গুরুর দেওয়া তিরস্কারও সিক্ত করেনি স্বার্থ
বুঝলেন,গুরুর দেওয়া তিরস্কারও সিক্ত করেনি স্বার্থ
ক্ষতি কি আছে? সত্তা বিলিয়ে -না হয় পেলাম কিছুটা অর্থ!!!

তাই ,দিনের শেষে সবাই নেপো এই জীবন যুদ্ধ টাতে
তাই দিনের শেষে ! সবাই নেপো এই জীবন যুদ্ধ টাতে
আমার গুরু সেও নেপো -অন্য কোন পাতে।।

                              

মানবতার অবক্ষয় - ডাঃ অসিত কুমার সরকার




সমাজে মানবতা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, 
রাস্তায় শুয়ে থাকা অনাথ শিশুর গায়ে মানবতার স্পর্শ লাগেনি, 
মানবতা আদি যুগ থেকে ধুলো মাটি মেখে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে পড়ে আছে, 
সভ্যতার পদদলিতে মানবতা পিষ্ট হচ্ছে, 
মানবতা রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে, 
সমাজে এখনো মানবতার দৃষ্টি  পড়েনি ।। 
দুমুঠো ভাতের সন্ধানে পাগলী মেয়েটি আজ গর্ভধারিনী 
ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! এতো অচল অবস্থা সমাজের!! 
তবে কি সুশীল সমাজে মানবতা আজও আসেনি??? 
সভ্যতার হাত ধরে কলিযুগে এসেছে তোলাবাজি, 
ব্যাভিচার লম্পট ছলনার কারবারি, 
তাই আধুনিক সভ্যতায় মানবতা আসেনি।।। 
ওই দেখ মানবতা আসছে খুড়িয়ে, 
মানবতার হাত ভাঙা!! পা ভাঙা!! 
রক্ত মাখা সারা অঙ্গ জুড়ে, 
ওই দেখ মানবতা আসছে চারিদিকে মস্তক ঘুরিয়ে।।। 
একি হাল মানবতার??? 
আজ মানবতা অসুস্থ, 
নিভু নিভু প্রায়!!! 
এই সুশীল সভ্যতায়, 
এই আধুনিকতায়, 
সবকিছু যাচ্ছে এগিয়ে, 
শুধু মানবতার হচ্ছে অবক্ষয়।

রহস্য - পরেশ চন্দ্র দাস


মাকড়সার জালে আবদ্ধ হৃদয়—
ততক্ষন বেঁচে আছি ! যতক্ষন মাকড়সা আসেনি তার বাসায় ।
ঘড়ির পেন্ডুলামটার মতো জীবন,
যতক্ষন চলে ততক্ষন ঠিক ।
মরু বালির বাঁধ শিখিয়ে দেয় অধিকার, তবুও সচল থাকবার-
বালী'র মতো অভিপ্রায় মাত্র।
মরীচিকার জলে স্নান করবার উদ্দীপনা, কূর্মের ডিম পাড়ার সামিল ।
মগজ ধোলাই চলছে অহরহ বিপদকে
সরবত করে গেলাচ্ছে এক শ্রেণীর গোখুরো ।তার মস্তক হেলমেটে মোড়া।
এক বিষাক্ত ধোঁয়াশার পরিমন্ডলে
পেন্টু্লামের ফিতে ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
              

মানবিকতা - রিয়া মিত্র

 


চাঁদিফাটা গরমে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধূপকাঠি বিক্রি করছে পরিমল। এত রোদে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পা যেন আর চলছে না।
সামনেই একটি বড় তিনতলা ফুলের বাগান দিয়ে সাজানো সুন্দর বাড়ি দেখে কিছু বিক্রির আশায় সে ভিতরে ঢুকল। বেল বাজাতেই বাড়ির কর্ত্রী দরজা খুলে জিজ্ঞাসা করলেন, কী চাই?
-- আজ্ঞে, ধূপকাঠি কিনবেন? খুব ভালো গন্ধ....
তাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই কর্ত্রী বললেন, না, না, নেব না। দুপুরবেলা কেন বিরক্ত করেন, বলুন তো?
পরিমল শুকনো মুখে বলল, ঠিক আছে, দিদিভাই। একটু জল হবে?
কর্ত্রী চেঁচিয়ে বললেন, দুপুরবেলা এসে মানুষের বাড়িতে চুরি করার ধান্দা?
মুখের ওপর দরজাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরিমল মনে মনে ভাবে, পৃথিবীতে মানবিকতা শেষ হয়ে গেছে। ক্লান্ত-মুখে গেট খুলে বেরোতে যাবে, এমন সময় গেটের পাশের ছোট টালির ঘর থেকে একটি ছোট বাচ্চা মেয়ের গলার আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ায় সে, কাকু, এই নিন একটু জল-বাতাসা।
পরিমল অবাক হয়ে তাকাতেই মেয়েটি হেসে বলল, আমি এই বাড়ির মালীর মেয়ে। আমি শুনছিলাম, আপনি বলছিলেন যে, আপনার খুব জল পিপাসা পেয়েছে। এ'টা খেয়ে নিন। শরীর ঠাণ্ডা থাকবে।
পরম তৃপ্তিতে জল-বাতাসা খেতে খেতে পরিমল ভাবলো, এখনো মানবিকতা মরে যায় নি.....



সময়ের দৌড়ে মানবতার অবক্ষয় - রীতা রায়


পৃথিবী ছুটছিল  .. দিন থেকে সন্ধ্যা ..
সন্ধ্যা থেকে রাত ..রাত পেরিয়ে আবার সকাল | পৃথিবীর ঘূর্ণনের মাত্রা অনুসরণ করে মানুষও ছুটছিল কারন তারা এতদিনে জেনে গেছে নিজেদের অস্তিত্বের লড়ায়ে এগিয়ে থাকতে হলে ছুটতেই হবে | এই ছোটার নেশা ক্রমে এতটাই প্রবল হয়ে পড়লো যে ক্রমশঃ তারা ভুলতে বসলো তাদের সীমা | সামনে যত বাধা নিমেষে বিলুপ্ত করতেও তাদের দ্বিধা বোধ হলোনা | ফলে প্রকৃতির নিয়মের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ালো তাদের আকাঙ্ক্ষা | একাংশ  মানুষ যখন উদগ্রীব হয়ে প্রায় ছুঁয়ে ফেলছে আকাশটাকে  ..আর একদল মানুষ তখন পিছিয়ে পড়তে লাগলো | এই রেষারেষীর নাম দিল 'ইঁদুর দৌড়' | কিন্তু ইঁদুরেরা কখনো নিজেরা নিজেদের প্রজাতিকে বিনষ্ট করতে একে ওপরের সাথে বিরোধিতা করেনা | তবু, বদনামটা  তাদের নামেই ব্যবহার হলো | আবার মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচারের নামে ব্যবহৃত বিশেষণ 'পাশবিকতা' | পশু কিংবা পাখি তারা কি নিজেদের মধ্যে খাদ্য বা অধিকার নিয়ে কাড়াকাড়ি করে ? একটি কাক কোথাও খাবারের সন্ধান পেলে কা কা রবে অন্য কাকেদের জানান দিয়ে তারপর খাবারে মুখ দেয় | কুকুরের দল একসাথে খাবার ভাগ করে খায় | বাঘ সিংহের মতো হিংস্র প্রাণীও একটি শিকার নিজের পেট ভরার পর অন্যদের জন্য ছেড়ে দেয় | ক্ষুদ্র জীব পিপীলিকা বা মৌমাছি কিংবা পঙ্গপাল .. এরা কি কখনো দলছাড়া থাকতে পারে ? মানুষও সমাজবদ্ধ জীব। একে অপরের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা সত্বেও নিজেদের অধিকার ও আর্থিক স্বচ্ছলতার কারনে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি | নিজেদের প্রতিপত্তি বা প্রাধান্য বিস্তারের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করতেও দ্বিধাবোধ করে না তারা |
তা সত্বেও তাদের নামের বিশেষণে 'মানবিক' শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে | মানবিক বললেই সুস্থ সুন্দর সচেতন অনুভূতি চোখের সামনে ফুটে ওঠে .. আবার পাশবিক বললে একটা হিংস্র দুরাচার অত্যাচার .. এগুলোই বোঝানো হয় | কিন্তু পশুরা কী সবসময় হিংস্র ? তারা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে কখনো কখনো হিংস্র হয়ে ওঠে | কিন্তু মানুষ তার লোভের বশে হিংস্র হয়ে ওঠে ..পরিচয় দেয় অমানবিকতার | মানবিকতার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন হয় না .. প্রয়োজন অনুভূতির , ভালোবাসার |
মানুষ দিন দিন ভুলতে বসেছে তাদের স্বকীয়তা | প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে মানবতার অবক্ষয়। আবার রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে নতুনভাবে বিভেদ সৃষ্টি করছে। 'মনুষত্ব' শব্দের অর্থ আজ বিলীন। ধর্মের অর্থও আজ বদলে গেছে। ধর্ম শব্দের অর্থ ন্যায় , আর অধর্ম শব্দের অর্থ অন্যায়। আধুনিকযুগে এসে অনেকগুলো ধর্মগুরু সৃষ্টি হওয়ার ফলে প্রত্যেকে নিজ নিজ তৈরী নিয়মকে ন্যায়ধর্ম ও অন্যান্যদের নিয়মকে অন্যায়ধর্ম মনে করতে লাগলো আর তখনি 'ধর্ম' শব্দটা বিভেদ সৃষ্টি করলো মানুষে মানুষে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। মানুষের ধর্ম 'মনুষ্যত্ব'। মানবিক ধর্ম অবলম্বনই একমাত্র উপায় সুস্থ ও স্বাভাবিক পৃথিবী গড়ে তোলার। আর এভাবেই মানবতার অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
------===-------===-------===-----

মানবতাই সুখে থাকার মূল কারণ - রতন বসাক



বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে এই পৃথিবীতেই একমাত্র জীবের বাস। অন্যান্য পশু পাখিদের মতোই মানুষ একসময় জীবনযাপন করতো। তবে মানুষ হলো জ্ঞানে, গুণে, বুদ্ধিতে সমস্ত জীবের থেকে সেরা। কর্মগুণ ও ইচ্ছাশক্তির বলে মানুষ তাঁর জীবন সবার থেকে সুখের করে নিয়েছে। আর জীবন পথে আরও এগিয়ে যাবার জন্য, একের পর এক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই পৃথিবীতে কারো পক্ষেই একা বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাই মানুষ প্রথমে সমাজ তারপর দেশ, গড়ে নিয়ে সবাই মিলেমিশে বসবাস করে চলেছে। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। সবাই সব কাজ সমান ভাবে করতে পারে না। তাই আমাকে অন্যের ও অন্যকে আমার প্রয়োজন আছে, বেঁচে থাকতে গেলে। মানবতা, প্রেম, প্রীতি ও ভালোবাসাই হলো সহাবস্থানের মূল ধন।

তবে কিছু কাল হলো দেখা যাচ্ছে যে, অল্প কিছু মানুষ নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। দুষ্কৃতীমূলক আচরণ করে চলেছে। বিশেষত রাজনৈতিক ও ধার্মিক কারণেই মানুষ তার নিজের মানবতা ভুলছে। ভালোবাসা ভুলে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। পুরোটা না জেনে বুঝেই অন্যের ক্ষতি করতে একবারও ভেবে দেখছে না। অন্যের প্ররোচনায় নিজের মনুষ্যত্বকে ভুলে গিয়ে তারা অন্যায় কাজ করতে যাচ্ছে।  

সামান্য কিছু কারণেই উত্তপ্ত হয়ে অন্যের ধন সম্পদ ধ্বংস করছে; এমনকি জীবন হানিও করছে এইসব কিছু ক্ষুদ্রমনা মানুষ। যদিও আমি এদের মানুষের পর্যায়ে মনে করি না । কেননা এরা মান ও হুঁশ ভুলে বসে আছে। কোন কাজটা করা ন্যায় আর কোন কাজটা করা অন্যায়, এরা একবারও ভেবে দেখে না। অন্যের প্ররোচনায় কিংবা সামান্য কিছু লাভের আশায় এরা এইসব অপকর্ম করে থাকে।

পৃথিবী কিংবা একটা দেশের প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে মানবতা নেই, এটা আমি মানতে পারি না। সবাই যেমন খারাপ হতে পারে না, আবার সবাই ভালোও হতে পারে না। ভালো আর খারাপ মানুষ নিয়েই আমাদের সমাজে বাস করতে হয়। প্রত্যেকটি ভালো মানুষের কর্তব্য হলো, খারাপ মানুষকে ভালো করে বুঝিয়ে তাঁদের ভালো করে তোলা। কেউ জন্ম থেকেই খারাপ হয় না। বিভিন্ন কারণে ও পরিস্থিতিতে পড়ে সে খারাপ হতে বাধ্য হয়।

একজন ভালো মানুষ ও অমানবতার পরিচয় দিলে কেমন করে চলবে এই সমাজে? কাউকেই নিজের হাতে শাসনভার তুলে নিয়ে শাস্তি দেওয়াটা উচিত নয়। এর জন্য প্রত্যেকটি দেশেই প্রশাসন বিভাগ আছে। কোনো অন্যায় হলে তার অভিযোগ করে বিচার পাওয়ার আশা রাখতেই পারে। এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি জীবের প্রতি আমাদের মানবতা দেখাতে হবে। আর তা না হলে অমানবিকতায় আগামীতে জীবের ধ্বংসের সম্মুখীন হতেই হবে।

এই বঙ্গ দ্বেষ - সুব্রত মিত্র


এই বঙ্গে অনেক বুদ্ধিজীবীদের দেখতে পাই।
এই বঙ্গে অনেক মহাকবিদের দেখতে পাই।
এই বঙ্গে অনেক সম্প্রীতির বার্তা বাহককে দেখতে পাই।
এই বঙ্গে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কথা বলার মত-- অনেক মুখরোচক নেতাদের দেখতে পাই।
যা দেখেছি সব ভুয়ো বাতাস, সব নিঃস্বতায় পোড়া এক রত্তি ছাই।

এই বঙ্গে অন্যায়ের প্রাতিবাদ না করে শুধু সম্মান হারানোর ভয়ে-----
লেজ গুঁটিয়ে পালানোর মত অনেক মহাপুরুষদের দেখতে পাই।
আমি খুব ছোটখাটো মানুষ অথচ আমি মস্ত বড় ছোটলোক হয়েও------
উনাদের দেখে বড় কষ্ট পাই ,ওনাদের দেখে বড় লজ্জা পাই।

এই বঙ্গে ঝুলিয়ে সম্প্রীতির মালা
শালারা মা-বোনের ইজ্জত বেচে দেয়---
তারাই আবার দেশপ্রেমের উন্মুক্ত চেতনার ভাষণে মঞ্চ আওড়ায়।
এই বঙ্গে ঐ কান্ডারীর দল কেড়ে নেয় ইমোশন; ফাঁটকাবাজের শক্তিমান হয়ে পকেটে ভরে প্রমোশন,
সম্প্রীতির নামে নিজের স্বার্থে এখানে-----
ভেসে যায় আমার মা-বোনের সম্ভ্রম।

এই বঙ্গে ভাইয়ে-ভাইয়ে, বাবা-কাকায় হয়ে যায় কত হানাহানি
এই বঙ্গেই আমি দেখি; সব জেনেশুনেও জনস্বার্থে নেতারা করেনা কানাকানি,
শুধু বলে; "সম্প্রীতি, সম্প্রীতি, সম্প্রীতি"।
আমি যদি বলি ওহে নেতা, কেন হচ্ছে তবে সমাজের এত অবনতি?

স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই বঙ্গের হয়েছে কি সংস্কার?
চারিদিকে হিংসার দুর্বার, এই বঙ্গ ঐ বঙ্গ ভেঙে হচ্ছে ছারখার
কি প্রয়োজন হয়েছিল ওদের আজ হিন্দুদের ঘরবাড়ি; মন্দির পোড়াবার?

তোমরা নাকি মুসলমান;
তোমাদেরওতো ধর্মের আছে অনেক মান সম্মান
তবে কেন অন্য ধর্মের ক্ষতি করে নিজের ধর্মকে করো অপমান?
আমি বিগ্রহ চিত্তে মালা ছিড়ে ফেলি সব নেতাদের সব রাজনৈতিক দলের------------------
সব হিংস্রতার; সব নোংরা মানসিকতার।

আর যে সকল কবি সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা------
বুদ্ধির ঢেঁকি মাথায় নিয়ে চুপটি করে তামাশা দেখে--
তোমাদের আক্কেল হওয়া চাই, 
তোমাদেরও আছে মা বোন, আছে ভাই।

তবে আজ তোমাদের কলম কোথায়?

হে কবি, হে বুদ্ধির ঢেঁকিওয়ালা বুদ্ধিজীবী .. ....  ...  ..
তোমাদের মানবিকতাও বিক্রি হয়েছে নাকি ঐ নেতাদের গোপন পকেটে?
নাকি তোমার ধর্মটাও বিক্রি হয়ে গেছে স্বার্থের হাটে?
তুমি জানো কি ?আমাদের জাতিটাও আজ ভেসে যেতে বসেছে সস্তার ঘাটে।

শুনে রাখ, শুনে রাখ, শুনে রাখ সকল বুদ্ধিজীবীগণ.......
সকল জাতির জাতীয়তাবাদ, সকল ধর্মের ধর্ম প্রবাদ
সকল দেশের দেশাত্বতা, সকল মনের মহানুভবতা
সকল মনের কামনা-বাসনায়; স্পর্শতা থাকুক স্বাধীনতায়।

আমাদের দুই বঙ্গের আপন সিন্ধু সেই তো মোদের বঙ্গবন্ধু
তারেই বলি মোরা জাতির জনক,
সেতো আজ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মোদের অহংকারের মাইলফলক।
সে যে শিখিয়ে গেছেন একই ভাষায় দুই বঙ্গের আলিঙ্গন
শিখিয়েছেন ভালবাসতে; শিখিয়েছেন কাছে আসা আসি
সেই তো মোদের রবীন্দ্রনাথের কন্ঠকে জাতীয় সংগীতে স্থাপন করেছেন--
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি"।

জাগো; জাগো; জাগো;.. ..    ... জাগো মহাবীর
এই বঙ্গমাতার নিঃস্ব খাতায়-------
রাখিবো আবার অটুট ছবি আমার বঙ্গের সংস্কৃতির।

লজ্জা - গৌতম নায়েক

  


বাহ রে ধর্ম! বকধার্মিকদের কি দারুন দেয় শিক্ষা
অসহায়ের প্রতি নৃশংস হয়, দেয় না সমব্যথা ভিক্ষা।

অসহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয় কেবলই যে ধর্ম
হানাহানি ছাড়া গুরুর যে ধর্মে নেই কর্ম
জালিয়াতি হয় যে ধর্মে ধর্মগুরুর মূলধন
হিংসাকে যে ধর্ম করতে পারে না বর্জন
গুরুর ফাঁদে পা দিয়ে যে ধর্ম ছড়ায় সন্ত্রাস
সে ধর্মে কি আছে বাঁচার মুক্ত বাতাস?

যে ধর্ম করতে শেখায় মানবতার ধ্বংস
সে ধর্ম আদৌ কি উপর ওয়ালার অংশ?
হত্যালীলা চালাতে যেথা চলে ঘুঁটির সজ্জা
তেমন ধর্ম মানবতার চরমতম লজ্জা।
উস্কানিতে যে ধর্ম গড়ে সিঁড়ি স্বর্গে যাবার
মানুষকে যে সম্মান দেয় না, তাকে জানাই ধিক্কার!
                   ----------------

নিহত বিবেক - অভিজিৎ ব্যানার্জী



এই বেশ আছি,
বলতে পারি না, ডুঁকরে কাঁদে মন,
আশার ছলনায়, ছুটে যাই দ্বারে
দেখি দাঁড়ায়ে শমন!

যাহা কিছু চাই, ভুল করে চাই,
যেটা হাতে পাই, পরে দেখি ছাই,
অন্তর জ্বালা ,মেটায় কোথায়?
খুঁজে চলে ক্ষ্যাপা মন।

সুখের আশায় বানিয়েছি বাড়ি,
স্বার্থ জানালা খোলা,
দুঃখের সাথে দিতে চাই আড়ি
দৃষ্টিশক্তি হয়ে আসে ঘোলা!

তবু হেঁটে চলি, অভিসার পথে
সৌভাগ্যের ,কোন আশার রথে
যদি হয় কভু ঠাঁই,
দেখি পথে পড়ে, বিবেকের মৃত লাশ
প্রেম ভালোবাসা করে হা-হুতাশ
আশা আকাঙ্ক্ষা পুড়ে হলো ছাই!

মানবতার মাথা হেঁট লজ্জায় - প্রদীপ বাগ



মাঝে মধ্যেই কঠিন ভাষা প্রতিবাদের রূপ নেয়,
আমরা যারা অনুর্বর পতিত জমিতে অখ্যাত চাষি,
অলঙ্কার বিহীন কমদামী কলমে শব্দ চাষ করি,
জানিনা জনসমক্ষে স্বীকৃতি স্বরূপ কতটুকু প্রাধান্য পায়!
তবু একটা শব্দ খরচ করতেও রাজি নয়??
যারা ধর্মের নামে ভাঙচুর লুন্ঠন বলাৎকার করে,
তারা কোনো ধর্মাবলম্বী হতে পারেনা,নরকের কীট।
স্বার্থের সুযোগ সন্ধানী সমাজের পাঁজরে লুকিয়ে থাকে,
ধর্মের দোহাই আখেরে বাসনার চরিতার্থ দেয় ইন্ধন,
বিভিন্ন জায়গায় চলে অগ্নিসংযোগ ধ্বংসের যজ্ঞলীলা,
প্রচ্ছন্ন প্রশাসনের মদতে একই হুঁকোয় তামাক সেবন।
সমস্যা জিইয়ে সহানুভূতি আদায় শাসকের এক কৌশল,
বিপদে কুলুপ এঁটে দেখ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দল।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐক্যে বিনষ্ট করে বীরত্ব দেখায়,
কলঙ্কিত দেশাত্মবোধ বিশ্বে মানবতার মাথাহেঁট লজ্জায়।
জাতিগত দাঙ্গা খুন জখম ধর্ষণের ইতিহাস পড়েছি,
বহু মিছিল কবিতার বহর তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা দেখেছি।
পানা পুকুরে ঢিল আবার সহবস্থান মশাদের চাষ,
ধর্মের ধ্বজাধারী মুখোশ এঁটে বিভেদের সম্প্রীতিতে বিশ্বাস।