পৃথিবী ছুটছিল .. দিন থেকে সন্ধ্যা ..
সন্ধ্যা থেকে রাত ..রাত পেরিয়ে আবার সকাল | পৃথিবীর ঘূর্ণনের মাত্রা অনুসরণ করে মানুষও ছুটছিল কারন তারা এতদিনে জেনে গেছে নিজেদের অস্তিত্বের লড়ায়ে এগিয়ে থাকতে হলে ছুটতেই হবে | এই ছোটার নেশা ক্রমে এতটাই প্রবল হয়ে পড়লো যে ক্রমশঃ তারা ভুলতে বসলো তাদের সীমা | সামনে যত বাধা নিমেষে বিলুপ্ত করতেও তাদের দ্বিধা বোধ হলোনা | ফলে প্রকৃতির নিয়মের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ালো তাদের আকাঙ্ক্ষা | একাংশ মানুষ যখন উদগ্রীব হয়ে প্রায় ছুঁয়ে ফেলছে আকাশটাকে ..আর একদল মানুষ তখন পিছিয়ে পড়তে লাগলো | এই রেষারেষীর নাম দিল 'ইঁদুর দৌড়' | কিন্তু ইঁদুরেরা কখনো নিজেরা নিজেদের প্রজাতিকে বিনষ্ট করতে একে ওপরের সাথে বিরোধিতা করেনা | তবু, বদনামটা তাদের নামেই ব্যবহার হলো | আবার মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচারের নামে ব্যবহৃত বিশেষণ 'পাশবিকতা' | পশু কিংবা পাখি তারা কি নিজেদের মধ্যে খাদ্য বা অধিকার নিয়ে কাড়াকাড়ি করে ? একটি কাক কোথাও খাবারের সন্ধান পেলে কা কা রবে অন্য কাকেদের জানান দিয়ে তারপর খাবারে মুখ দেয় | কুকুরের দল একসাথে খাবার ভাগ করে খায় | বাঘ সিংহের মতো হিংস্র প্রাণীও একটি শিকার নিজের পেট ভরার পর অন্যদের জন্য ছেড়ে দেয় | ক্ষুদ্র জীব পিপীলিকা বা মৌমাছি কিংবা পঙ্গপাল .. এরা কি কখনো দলছাড়া থাকতে পারে ? মানুষও সমাজবদ্ধ জীব। একে অপরের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা সত্বেও নিজেদের অধিকার ও আর্থিক স্বচ্ছলতার কারনে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি | নিজেদের প্রতিপত্তি বা প্রাধান্য বিস্তারের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করতেও দ্বিধাবোধ করে না তারা |
তা সত্বেও তাদের নামের বিশেষণে 'মানবিক' শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে | মানবিক বললেই সুস্থ সুন্দর সচেতন অনুভূতি চোখের সামনে ফুটে ওঠে .. আবার পাশবিক বললে একটা হিংস্র দুরাচার অত্যাচার .. এগুলোই বোঝানো হয় | কিন্তু পশুরা কী সবসময় হিংস্র ? তারা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে কখনো কখনো হিংস্র হয়ে ওঠে | কিন্তু মানুষ তার লোভের বশে হিংস্র হয়ে ওঠে ..পরিচয় দেয় অমানবিকতার | মানবিকতার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন হয় না .. প্রয়োজন অনুভূতির , ভালোবাসার |
মানুষ দিন দিন ভুলতে বসেছে তাদের স্বকীয়তা | প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে মানবতার অবক্ষয়। আবার রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা মানুষে মানুষে নতুনভাবে বিভেদ সৃষ্টি করছে। 'মনুষত্ব' শব্দের অর্থ আজ বিলীন। ধর্মের অর্থও আজ বদলে গেছে। ধর্ম শব্দের অর্থ ন্যায় , আর অধর্ম শব্দের অর্থ অন্যায়। আধুনিকযুগে এসে অনেকগুলো ধর্মগুরু সৃষ্টি হওয়ার ফলে প্রত্যেকে নিজ নিজ তৈরী নিয়মকে ন্যায়ধর্ম ও অন্যান্যদের নিয়মকে অন্যায়ধর্ম মনে করতে লাগলো আর তখনি 'ধর্ম' শব্দটা বিভেদ সৃষ্টি করলো মানুষে মানুষে। কিন্তু এ ধারণা ভুল। মানুষের ধর্ম 'মনুষ্যত্ব'। মানবিক ধর্ম অবলম্বনই একমাত্র উপায় সুস্থ ও স্বাভাবিক পৃথিবী গড়ে তোলার। আর এভাবেই মানবতার অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
------===-------===-------===-----
No comments:
Post a Comment