Friday, 7 August 2020

যাদব চৌধুরী

প্রবন্ধ 

লেখক পরিচিতিঃ যাদব কুমার চৌধুরীর জন্ম ১৯৬০ সালে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার চৌকী গ্রামে l প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামে l কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ১৯৭৬ সালে রায়গঞ্জ করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে l ১৯৮০ সালে রায়গঞ্জ কলেজ থেকে স্নাতক হন l ১৯৮৩ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজীতে এম. এ. পাশ করেন l হাই স্কুলে শিক্ষক পদে যোগ দেন ১৯৮৩ সালে l মিল্কী হাই স্কুল, আড়াইডাঙ্গা ডি. বি. এম. একাডেমী হয়ে ইটাহার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন l 


সাহিত্যচর্চা কলেজজীবন থেকে l "অঙ্গন" ও "অগ্রণী" নামে দুটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন l "উত্তরবঙ্গ সংবাদ" দৈনিকে মালদা জেলার প্রতিনিধি হয়ে সাংবাদিকতা করেছেন l সাহিত্য আলোচনায় বিশেষ রুচি আছে l বহু পত্র-পত্রিকায় কবিতা গল্প প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে l "গল্পকথার গল্পগুচ্ছ" ও "গল্পের জাদুঘর" নামে দুটি গল্প সংকলনে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ সালে  "কল্পপথে কাব্যরথে" নামে একটি একক কাব্যগ্রন্থ এবং ২০১৯ সালে "কল্পপথে গল্পরথে" নামে একক গল্পসংকলন প্রকাশিত হয়েছে l ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে "প্রাসঙ্গিকতায় ভাষা ও সাহিত্য" নামে একটি প্রবন্ধগ্রন্থ l


---------------------------------------------------------------------

সত্তরোর্ধ বাংলা উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণ

   


সাহিত্য জীবনের দর্পন, সমাজের দর্পন l জীবন ও সমাজের মনুষ্যকৃত শিল্পিত রূপ সাহিত্য বা যে কোনো শিল্পকর্ম l মানুষের জীবনের যতো কিছু সাহিত্যকে অনুপ্রাণিত করে তার মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ একটি অন্যতম বিষয় l যুদ্ধ একটি ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ জিনিস l দীর্ঘদিনের সাধনায়, পরিশ্রমে মানবজাতি যে সৃষ্টি গড়ে তোলে যুদ্ধে তার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় l যুদ্ধ এমন একটি বিষয় যা উভয়পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে l যারা জেতে এবং যারা হারে - উভয়েই কমবেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় l এবং এই ক্ষতি হয় বহুমুখী l সম্পত্তির হানি হয়, জীবনহানি হয়, জীবনের যে স্বাভাবিক ছন্দ তা বাধাপ্রাপ্ত হয় l মানুষের জীবনযাপনের মৌলিক চাহিদার যে জিনিসগুলি তার জোগানে বাধা পড়ে l উন্নত জীবনযাপনের যে অনুসঙ্গগুলো সেগুলোও বাধাপ্রাপ্ত হয় l শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাজারব্যবস্থা সবক্ষেত্রে ছন্দ পতন হয় l সর্বোপরি মানবাধিকার হরণ হয় l শোষণ, নিপীড়ন, লুটপাট চলে l নারী নিপীড়ন হয় l বিশেষ করে পরাজিত পক্ষের নারীদের সম্মান সম্ভ্রম লুট করা হয় l এতদসত্ত্বেও যুদ্ধবিগ্রহ হলো সাহিত্যের আঁতুরঘর l পৃথিবীর সকল ভাষাতেই বহু বহু কাব্য মহাকাব্য উপন্যাস যুদ্ধ বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে l শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যগুলি ইলিয়াড, ওডিসি, রামায়ণ, মহাভারত সব যুদ্ধের পটভূমিতেই রচিত l ইংরাজি সাহিত্যের প্রথম মহাকাব্য 'বেউলফ' যুদ্ধের পটভূমিতে রচিত l বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক আধুনিক মহাকাব্য 'মেঘনাদ বধ' কাব্য যুদ্ধের কাব্য l বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য বলতে তলস্তয়ের 'ওয়ার এন্ড পিস', আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘আ ফেয়ারঅয়েল টু দি আর্মস’, ট্রোজানদের যুদ্ধ, আমেরিকার গৃহযুদ্ধ, স্পেনের গৃহযুদ্ধ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে নাৎসিবিরোধী সংগ্রাম, ফ্রান্স বা রুশবিপ্লব, ভূ-ভারতে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন ও বিপ্লব নিয়েও একাধিক বড় মাপের সাহিত্য রচিত হয়েছে l শিল্পী ও সাহিত্যিকরা বরাবরই স্বাধীনতা পছন্দ করেন, মুক্ত কণ্ঠ পছন্দ করেন, তাই তাঁদের কলম ও তুলি থেকে রচিত হয় সেরা শিল্পকর্ম। একথা সত্য যে যুদ্ধের ভয়াবহতা অনেক, কিন্তু এটাও সত্য যে  যুদ্ধের কারণেই আমরা বিশ্ব সাহিত্যের সেরা কিছু উপন্যাস পেয়েছি। এই উপন্যাসগুলোতে মানুষের মুক্তি চেতনা, তাঁর আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

যুদ্ধের প্রভাব যতোই ভয়ংকর ও ক্ষতিকর হোক, তবু মানুষ নিরন্তর যুদ্ধ করে l যুদ্ধ করে মুক্তির জন্য, এমনকি শান্তির জন্য l

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো মুক্তির জন্য লড়াই l 

কাদের মুক্তি?  পূর্ববঙ্গের মানুষদের মুক্তি l  মুক্তিকামী ও স্বাধীনচেতা বাঙালির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের এই যুদ্ধে আমরা প্রিয়জন হারিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি অর্থনৈতিকভাবে, বেছে বেছে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছে, নারীর অবমাননা হয়েছে, এসব কিছুই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে ফুটে উঠেছে। বাঙালি জাতির সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেশের প্রধান সব লেখকের হাতেই পেয়েছে নতুন মাত্রা।


বিশ্ব সাহিত্যের দিকে নজর দিলে আর একটি বিষয় স্পষ্ট হয় l তা হলো সাহিত্য সর্বদা এক খাতে চলে না l কালের বাঁকে বাঁকে সাহিত্যের নতুন নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে। ইংরেজী সাহিত্যে রোমান আক্রমণের ফলে, জার্মান উপজাতিদের আক্রমণের কারণে, তারপরে নর্মান বিজয়, চতুর্দশ শতকে চসারের হাত ধরে ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্যের পুনর্জন্ম, তারপরেও শেক্সপিয়ার, ক্লাসিকাল ধারা, রোমান্টিক ধারা, ভিক্টোরিয়ান যুগ এবং আধুনিক যুগ এ সবই এক একটি বাঁক। বাংলা সাহিত্যেও এমন বিভিন্ন ধারা বর্তমান। মুক্তিযুদ্ধ এমনই একটি বাঁক l 

মুক্তিযুদ্ধ কি ?  এক কথায় বলতে পারি একাত্তর সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামীদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে নয়মাস ব্যাপী অসাধারণ লড়াই, সেটাই মুক্তিযুদ্ধ l এই মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য, বর্তমানের গৌরব এবং ভবিষ্যতের প্রেরণা l 

এই যুদ্ধের পরিণতিতে একাত্তর সালের ষোলোই ডিসেম্বর পাক বাহিনীর পরাজয় স্বীকার ও আত্মসমর্পনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয় l নয়মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের নানা অভিমুখ ধরে কবি সাহিত্যিকেরা কালজয়ী সব সাহিত্য রচনা করে গেছেন l রচিত হয়েছে শতাধিক উপন্যাস l সবগুলোই শিল্পের মানে হয়তো উত্তীর্ন হয় নি, কিন্তু যেগুলি হয়েছে সেগুলির সংখ্যাও নেহাত কম নয় l দেশের প্রায় সকল বড়ো লেখক  এই কাজে হাত দিয়েছেন l মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে অমর সাহিত্য রচিত হয়েছে l 

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কি দিয়েছে ?  

প্রথমত, বাঙালিকে বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মানের মুকুট পরিয়েছে, স্বাধীনতা উপহার দিয়েছে l মুক্তিযুদ্ধ শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, চলচ্চিত্রে বারবার অনুষঙ্গ হয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণ ও বৈপ্লবিক চেতনা সাহিত্যকে আলোকিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র ধারার সাহিত্য - মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে লেখকেরা মুক্তিযুদ্ধকে তাঁদের সৃষ্টিকর্মে তুলে এনেছেন।


মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে পাঁচটি উপন্যাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো l উপন্যাসগুলি নির্বাচন করেছি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র কথাটি মনে রেখে l কোনো উপন্যাসে হয়তো পাক হানাদারদের নৃশংসতার দিক তুলে ধরা হয়েছে, কোনো উপন্যাসে এই নৃশংসতার অন্য একটি রূপ, কোনোটিতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে এই আভাস পাই এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়ে উপন্যাসটি শেষ হচ্ছে, কোনো উপন্যাসে পাচ্ছি নয় মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত ধারাবিবরণী l 


যে পাঁচটি উপন্যাস নিয়ে বলবো সেগুলি হলো -

১) রাইফেল রোটি আওরাত’ : শহীদ আনোয়ার পাশা

২) 'নেকড়ে অরণ্য’ : শওকত ওসমান

৩) হাঙর নদী গ্রেনেড’ : সেলিনা হোসেন

৪) 'সাড়ে তিন হাত ভূমি'’: ইমদাদুল হক মিলন

৫) ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ : হুমায়ূন আহমেদ


এই উপন্যাসগুলি সম্বন্ধে বলবার আগে একটু ইতিহাসের দিকে ফিরে চাই l মুক্তিযুদ্ধ কেন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের কাছে অনিবার্য হয়ে উঠলো সেই সম্বন্ধে কিছু কথা l মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক প্রায় সকল উপন্যাসেই কথাগুলি ঘুরেফিরে এসেছে l সেই কথাগুলি একটু ঝালিয়ে নেয়া l ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলো l একহাজার মাইলের ব্যবধানে একই দেশ দুটো ভিন্ন ভূখণ্ডে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে পরিচিত হলো l কিন্তু ১৪ই আগস্ট স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রথম দিন থেকে যে বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিলো, ধারাবাহিকভাবে, তা হলো পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের দাদাগিরি l রাজনীতি, অর্থনীতি উন্নয়নের প্রতিটি প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করা হলো l পূর্বপাকিস্তানের অপরাধ ছিলো তাঁদের বাংলাভাষার প্রতি প্রীতি l পশ্চিম পাকিস্তানের পাক শাসকদের চোখে বাংলাভাষা ছিলো হিন্দুদের ভাষা l পূর্ববাংলার বাঙালি মুসলমান যারা মাতৃভাষা বাংলার অনুগামী ছিলেন, তাঁরা পাক শাসকদের চোখে সাচ্চা মুসলমান বলে বিবেচিত হতেন না l তাই তাঁদের সাচ্চা মুসলমান করার লক্ষ্যে বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষা প্রচলনের প্রয়াস হলো l পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা, হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে প্রতিবাদ আন্দোলন করলেন l বাহান্নর আন্দোলন সঙ্ঘটিত হলো l ভাষার জন্য আন্দোলনে রক্ত ঝরলো l ভাষার প্রশ্নে পাক শাসকেরা সাময়িকভাবে পিছিয়ে গেলেন l কিন্তু নানাভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে অসুবিধায় রাখা, সমস্যায় রাখা এই অপপ্রয়াস চলতে থাকলো l 

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তখনও অনিবার্য হয়ে ওঠে নি l পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তি তখনও প্রধান দাবি ছিলো না l এর মধ্যে শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সর্বজনসম্মত বলিষ্ঠ নেতা হিসাবে  উঠে এসেছেন l আওয়ামীলীগ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে l নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সারা দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলো l কিন্তু তাকে সরকার গড়তে দেয়া হলো না l এটা ৭০-৭১ সালের গল্প l কিন্তু তখনও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি ভাবনায় ছিলো না l আলোচনা চলছে l সমাধান কিছু একটা হবে দেশবাসী আশায় বুক বেঁধে আছেন l 

মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠলো একাত্তরের পঁচিশে মার্চের রাতে যে রাতে আলোচনার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়ে পাক হানাদার সেনা ঢাকা শহরের ওপর আছড়ে পড়লো, মানবিকতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে পাক হানাদারেরা নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো l রাতের অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি ঢুকে পুরুষদের হত্যা করলো, শিশু বৃদ্ধেরাও বাদ গেলো না, টাকা পয়সা, অলঙ্কার, খাদ্যসামগ্রী লুঠ করলো আর মহিলাদের ধরে নিয়ে গেলো ভোগের জন্য l এই নৃশংসতা চললো পরপর তিনদিন l পঁচিশ থেকে সাতাশে মার্চ l বাজার লুঠ করা হলো এবং শেষে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হলো l রাস্তায়, মাঠে, শিক্ষায়তনে, শয়ে শয়ে লাশ পড়ে আছে, সাংবাদিকদের তাড়িয়ে দেয়া হলো, প্রমাণ লোপাটের জন্য গণকবর হতে লাগলো, সঙ্গে চললো প্রোপাগান্ডা, অপপ্রচার l পাক সেনার নেতৃত্বে বাজার লুঠ হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি ঢুকে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, মহিলাদের তুলে নেয়া হচ্ছে, আগুন লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে, আর পাক শাসকেরা প্রচার করছে এসবই করছে বাঙালিরা, করছে আওয়ামীলীগ - আওয়ামীলীগ দেশকে টুকরো করতে চাইছে, বিশ্ববাসীর কাছে পাক সরকার প্রচার করছে সম্পত্তি রক্ষার জন্য, দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে এবং ফলত কিছুসংখ্যক বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসী মারা গেছে l এই নৃশংসতা ও অপপ্রচারের কারণে একটা বিষয় স্পষ্ট হলো এখন আর আলোচনার কোনো জায়গা নেই l সংগ্রামের পথই একমাত্র পথ l মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠলো l প্রশিক্ষণ শুরু হলো l পাক হানাদারদের ওপর গেরিলা আক্রমণ চলতে লাগলো l ক্রমে সংগ্রাম জোরদার হলো l ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে এগিয়ে এলো l নয়মাসের সংগ্রাম শেষে এলো বিজয় l 


প্রথম যে উপন্যাসটি নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ l লেখক শহীদ আনোয়ার পাশা l শহীদ বলা হচ্ছে কারণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিজয়ের মাত্র দু দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর হানাদারেরা বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হত্যা করে l 

সম্ভবত এটি বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস হিসেবে প্রথম l উপন্যাসটি লেখা হয়েছে একাত্তর সালে এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস অবধি l অর্থাৎ সেই ভয়ঙ্কর পঁচিশ থেকে সাতাশে মার্চের পরপরই l উপন্যাসটি আত্মজীবনীমূলক l উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীন যেন লেখক আনোয়ার পাশারই প্রতিচিত্র। আনোয়ার পাশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছিলেন এ উপন্যাস। উপন্যাসজুড়ে যে অনিশ্চয়তা আর মৃত্যু বিভীষিকা খেলা করে তা সত্যি হয়ে উঠেছিল লেখকের জীবনে। উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীন ২৫ মার্চের পর তিন দিন অবরুদ্ধ থাকে। পাক বাহিনীর ঘেরাটোপে বন্দী সুদীপ্ত এই অস্থির সময় পার করে অপরিসীম বেদনা, শঙ্কা ও অনিশ্চয়তায়। কিন্তু এর মধ্যেও সে অনুভব করে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির বার্তা,  স্বাধীনতার আগমন ধ্বনি, "নতুন মানুষ, নতুন পরিচয়, এবং নতুন একটি প্রভা l সে আর কতো দূরে l বেশি দূরে হতে পারে না l মাত্র এই রাতটুকু তো l মা ভৈঃ l কেটে যাবে l" ১৯৭৩ সালের মে মাসে প্রকাশ পায় উপন্যাসটি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত এই প্রথম উপন্যাসটির জন্য লেখক অমর হয়ে থাকবেন বাংলার মানুষের মাঝে। 


এই উপন্যাসের যে শিরোনাম, 'রোটি, রাইফেল, আওরাত' - তার থেকে মুক্তিযুদ্ধের কোন বিষয়টিকে এই উপন্যাসে মূলত তুলে ধরা হয়েছে সেটা বোঝা যায় l মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ নয়, পাক সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বর্ননা আছে এই উপন্যাসে l আছে সেই তিনদিনের বীভৎসতার বর্ণনা l লেখক বলছেন পাক বাহিনী আক্রমণ করে প্রথমে বাঙালিদের রোটি অর্থাৎ খাবার রসদ কেড়ে নিচ্ছে, নিজেরা তা খেয়ে বলবান হচ্ছে, রাইফেল দিয়ে বাঙালি পুরুষদের নিধন করছে এবং আওরাতদের তুলে নিয়ে গিয়ে ফুর্তি করছে l সারা উপন্যাস জুড়ে এই নৃশংসতার চিত্র পাই l আর পাই বাঙালি বীরের প্রতিশোধের শপথ l হালিম শেখ বলছেন, "আমাদের ভাইবন্ধুদের ওরা মেরেছে, মা বোনের ইজ্জত নিয়েছে, আমরা তার শোধ নেব l.......   খোদার কসম, মায়ের কসম, রক্তের কসম, এর প্রতিশোধ নিব l"


দ্বিতীয় উপন্যাস ‘নেকড়ে অরণ্য’ l লেখক শওকত ওসমান l ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্ঠার ছোট্ট উপন্যাস l উপন্যাসে লেখক একটি গুদামঘরের বর্ণনা দিয়েছেন। টিনে ছাওয়া, সমতল মেঝের বিশাল এক গুদামঘর। এই ঘরটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন রেজা খান, আলী খানদের নারী ধর্ষণের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সে আস্তানায় তানিমা, জায়েদা, রশিদারা ধর্ষিত হয় l  কখনো পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের দ্বারা, কখনো বা  সাধারণ সৈনিকের দ্বারা। তাদের চিৎকার, আর্তনাদ, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, বিপর্যস্ততার রূপটি লেখক তুলে এনেছেন এ উপন্যাসে। অর্থাৎ এখানেও ফুটে উঠেছে পাক বাহিনীর নৃশংসতার রূপ যা নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিলো l  উপন্যাসের শিরোনামে একটি চিত্রকল্পকে তুলে ধরা হয়েছে l নেকড়ে অর্থাৎ পাক সেনাবাহিনী, অরণ্য অর্থাৎ অরণ্যের নিরীহ প্রাণী, এক্ষেত্রে বাঙালি মহিলারা l নেকড়ের মতোই হিংস্র এই হানাদারবাহিনী l তার চেয়েও বেশি l 


বনের ভেতর নেকড়ের নৃশংসতাও হার মানে যেন ছোট্ট একটুকরো গুদামঘরে। কিন্তু তার পরও থেমে থাকে না প্রতিবাদ। তানিমা প্রতিবাদ করে 

ক্যাপ্টেনের গুলি বুক পেতে নেয় l আত্মহত্যার মাধ্যমে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় বীরাঙ্গানারা।


‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ : 

মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন সেলিনা হোসেন। তার মধ্যে ভীষণ আলোচিত উপন্যাস হলো 'হাঙর নদী গ্রেনেড'। মুক্তিযুদ্ধের এক আবেগী ও প্রতিবাদী উপন্যাস এটি। হলদী গ্রামের এক বয়স্ক নারীর জীবন এই উপন্যাসে মূর্ত হয়ে ওঠে। এই নারী তাঁর নিজের ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যেমন উদ্বুদ্ধ করেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিজের মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে তুলে দেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। উপন্যাসে এই মায়ের আত্মসংগ্রাম, দেশের জন্য ত্যাগের অপার মহিমা ভাস্বর হয়ে ওঠে। 


চতুর্থ উপন্যাস 'সাড়ে তিন হাত ভূমি'’ l লেখক  ইমদাদুল হক মিলন l লিও তলস্তয়ের অনুরূপ একটি গল্প আছে l একটি কবরের আয়তন কত? এই প্রশ্নের উত্তর, 'সাড়ে তিন হাত ভূমি'। 

উপন্যাসে পাই মুক্তিযোদ্ধা রবি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গ্রামে আসেন পরিবারের খোঁজ নিতে। এসে দেখেন উঠানে পড়ে আছে বাবার মৃতদেহ, ঘরে মা ও বোনের লাশ। আর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে আছে বাড়ির পেছনে। হতবিহ্বল, অসাড়, অনুভূতিহীন রবি উঠানে নিজ হাতেই খুঁড়ে চলেন প্রিয় স্বজনদের কবর। এবং তার সঙ্গে যেন খুঁড়ে চলেন স্মৃতির গহিন পরিখা। মা-বাবা, বোন, স্ত্রী; এমনকি অনাগত সন্তানের সঙ্গেও তার মিলন হয়, সংলাপ চলে। আর তা দৃশ্যমান হতে থাকে পাঠকের চোখের সামনে। একেবারে অন্য ধরণের উপস্থাপন l প্রতিটি শব্দ পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায় l  


শেষ উপন্যাস 'জোছনা ও জননীর গল্প’ l লেখক কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ l 

হুমায়ূন আহমেদ সম্বন্ধে একটু বলি l তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আটটি উপন্যাস রচনা করেন। এগুলো হলো- শ্যামল ছায়া (১৯৭৩), নির্বাসন (১৯৮৩), সৌরভ (১৯৮৪), ১৯৭১ (১৯৮৬), আগুনের পরশমণি (১৯৮৮), সূর্য্যের দিন (১৯৮৬), অনিল বাগচীর একদিন (১৯৯২) এবং জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প (২০০৬)। 

এই আটটি উপন্যাসে ঔপন্যাসিক বিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে ধরার চেষ্টা করেছেন। শেষের দিকে লেখা 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল। এখানে পাই নয় মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য, বিবরণ, ঐতিহাসিক চরিত্র ও তার ভূমিকা ইত্যাদি l নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণকে উপজীব্য করে লেখক  এই দীর্ঘ উপন্যাসটি লিখেছেন । একাত্তরের পুরো ৯ মাসের গল্প পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসে। লেখকের চিরায়ত গল্প বলার সৌন্দর্য এ উপন্যাসেও যে পাঠক উপভোগ করেন, তা বলা বাহুল্য।


'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসটি প্রসঙ্গে বলার এই উপন্যাসে একটি বিষয় আছে যা অন্য মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসগুলিতে নেই, এবং একটি বিষয় নেই যা অধিকাংশ উপন্যাসে আছে l যেটি আছে সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান ও আত্মবলিদানের স্বীকৃতি, যা অন্য বহু ঔপন্যাসিক এড়িয়ে গেছেন l কেন এড়িয়ে গেছেন ?  হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাসের পূর্বকথা অংশে নিজেই উত্তর দিয়েছেন, "ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছোট করে দেখানোর একটি প্রবণতাও আমাদের আছে l আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে কেউ যদি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ও ছোটগল্প পড়ে যুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা করতে চায় তাহলে তারা ভারতীয় সেনাবাহিনী বিষয়ে কিছুই জানবে না l আমাদের গল্প উপন্যাসে বিদেশী সৈন্যবাহিনীর বিষয় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত l লেখকরা হয়তো ভেবেছেন এতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের  গৌরবের হানি হবে l

 ঋণ স্বীকারে অগৌরবের কিছু নাই l মহান জাতি এবং মহান মানুষরাই ঋণ স্বীকার করেন l"


হুমায়ুন আহমেদ লেখক হিসাবে, মানুষ হিসাবে মহান বলেই তাঁর উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান ও তাঁদের আত্মবলিদানের বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপিত করেছেন l তিনি তো ভারতীয় সেনাবাহিনীর যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তার একটি তালিকাও জুড়তে চেয়েছিলেন l তার জন্য সাড়ে পাঁচশত পৃষ্ঠার বইটি আরো একশো পাতার মতো বড়ো হতো l কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নামও থাকতো l কিন্তু পারেন নি কারণ সমস্ত শহীদের নাম তিনি পান নি l যুদ্ধ শেষ হবার তেত্রিশ বছর পরেও সরকার, প্রশাসন সেই তালিকা শেষ করতে পারে নি l এখনও তালিকা তৈরি চলছে l 


আর যে বিষয়টি এই উপন্যাসে নেই অথচ অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে আছে তা হলো পাক সেনাবাহিনী কর্তৃক নারী নির্যাতনের বিবরণী l লেখক তার কারণ হিসাবে নিজে বলছেন, "আমার এই বইটির অসম্পূর্ণতার মধ্যে একটি হলো আমি পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত নারীদের বিষয়টি আনতে পারি নি l বিষয়টি এতই স্পর্শকাতর এবং এতই কষ্টকর যে কিছুতেই লিখতে পারলাম না l আশা করছি অন্যরা লিখবেন l তাদের কলমে এইসব হতভাগ্য তরুণীর অশ্রুজল উঠে আসবে l"


হুমায়ুন আহমেদ এই উপন্যাস প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি ইতিহাস লেখেন নি, উপন্যাস লিখেছেন l তবে তিনি চেষ্টা করেছেন ইতিহাসের কাছাকাছি থাকতে, ইতিহাসের প্রতি সত্যনিষ্ঠ থাকতে l বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের দলিলের প্রথম সাতটি খন্ড তিনি পড়েছেন l নিজের বিচার বিবেচনা সাপেক্ষে সেই তথ্য লেখায় এনেছেন l পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে প্রকাশিত অন্য উপন্যাসগুলি l রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর লেখা 'একাত্তরের দশমাস' গ্রন্থটি থেকেও তিনি তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন l সেই সময়ের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলি তাঁর উপন্যাসে এসেছে l সেই চরিত্রগুলির সৃষ্টিতে প্রয়োজনে তিনি লেখকের স্বাধীনতাও ব্যবহার করেছেন রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে, 

"সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যা তা সব সত্য নহে 

কবি, তব মনোভূমি রামের জনম স্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো l"


'সাড়ে তিন হাত ভূমি'’ উপন্যাসের লেখক ‘ইমদাদুল হক মিলনের সঙ্গে হুমায়ুন আহমেদ এর একটি কথোপকথনে হুমায়ুন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা তাঁর উপন্যাসগুলির মধ্যে মূল সুরটা কী তার উল্লেখ করেছেন l হুমায়ূন আহমেদ বলছেন একদল মুক্তিযোদ্ধা, যারা যুদ্ধ করছে, তাদের প্রচণ্ড ভালোবাসা দেশের জন্য এবং দেশের জন্য যে কোনো সময় তারা তাদের জীবন বিসর্জন দিতে তৈরি- তাদের সেই ডেডিকেশন, সেটাই মূল সুর।


আবার একদল মানুষের কথা তিনি লিখেছেন, যারা যুদ্ধে যেতে পারেনি। একজন খোঁড়া লোক, সে কিন্তু ঘরে বসা, যুদ্ধে যেতে পারছে না। তারপরও তার সমস্ত মন, সমস্ত ইন্দ্রিয়, সমস্ত শরীর কিন্তু পড়ে আছে যুদ্ধের ময়দানে। সে মানসিকভাবে একজন যোদ্ধা। একদল যারা সরাসরি যোদ্ধা, আরেক দল যোদ্ধা, যারা মানসিকভাবে যুদ্ধ করছে। এটাও একটা মূল সুর l 


কিশোর উপন্যাস :

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে কিছু কিশোর উপন্যাসও রচিত হয়েছে l মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে এই  উপন্যাসগুলিরও ভূমিকা আছে। রাবেয়া খাতুনের ‘একাত্তরের নিশান’,  পান্না কায়সারের ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’, শওকত ওসমানের ‘পঞ্চসঙ্গী’,

শাহরিয়ার কবিরের ‘ভয়ঙ্করের মুখোমুখি’, মঞ্জু সরকারের ‘যুদ্ধে যাবার সময়’, ফরিদুর রহমানের ‘দিন বদলের ডাক’, মমতাজউদ্দিন আহমদের ‘সজল তোমার ঠিকানা’ এমন কিছু উপন্যাস l এসব উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা পায় । খুঁজে পায় স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কিশোর উপযোগী উপন্যাসগুলি বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন।


গবেষণাপত্র : ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উপন্যাস’ : ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উপন্যাস’ শীর্ষক গবেষণা করেছেন l  তিনি দেখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহিত্যের এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধের উপাদানকে ব্যবহার করে কথাসাহিত্যের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরিতে সমর্থ হয়েছেন।’ 

১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৯ এই যে সময়কাল, এই পর্বে রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে থেকে চব্বিশজন ঔপন্যাসিকের সাতান্নটি উপন্যাসকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন।

সেখানে আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’,  সেলিনা হোসেনের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’, শওকত ওসমানের ‘‘নেকড়ে অরণ্য’ প্রভৃতি  উপন্যাসগুলি আছে l 


এই গবেষণাপত্রে তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কথাচিত্রের বিবর্তন, বিকাশ, গতিমুখ ও প্রবণতাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসগুলোকে তিনি সত্তর, আশি ও নব্বই দশক শীর্ষক তিনিটি অধ্যায়ে ভাগ করে বিশ্লেষণ করেছেন। উপসংহারে উল্লেখ করেছেন দশকভিত্তিক উপন্যাসের প্রবণতা। তাঁর কথায়, 


‘সত্তর দশকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকালীন রক্তাক্ত সময় ও সমাজবাস্তবতা, যুদ্ধের বিভীষিকা, ব্যক্তিমানসের নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং প্রত্যক্ষ বাস্তব অবলোকনই ঔপন্যাসিকদের মানসচিন্তায় ক্রিয়াশীল ছিল।’


‘আশি দশকের মূল প্রবণতায় মুক্তিযুদ্ধোত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার রূপায়ন এবং লেখকদের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধকে নানামুখী দৃষ্টিকোণ থেকে অবলোকনের প্রয়াস লক্ষ্যণীয়।’


‘নব্বই দশকের উপন্যাস রচয়িতারা মুক্তিযুদ্ধের বস্তুগত সত্য উদঘাটনের চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের সমাজ ও জীবনের মর্মসত্য উদঘাটনেই অধিক তৎপর ছিলেন। সেজন্যই মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনাই হয়ে উঠে এই দশকের উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’


সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে অতীতে আরও অনেক গবেষণা হয়েছে। যেমন, আমিনুর রহমান সুলতানের ‘বাংলাদেশের কবিতা ও উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, শহীদ ইকবালের ‘রাজনৈতিক চেতনা: বাংলাদেশের উপন্যাস’, সাহিদা বেগমের ‘কথাসাহিত্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’, নূরুউল করিম খসরুর ‘উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ’ ইত্যাদি অন্যতম।


মুক্তিযুদ্ধ ও পশ্চিমবঙ্গ : 

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আলোড়িত করেছে পশ্চিম বাংলার লেখকদেরও। তার মধ্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘১৯৭১’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

১৯৭১ সালে কলকাতার মিত্র এন্ড ঘোষ থেকে প্রকাশিত হয় তারাশঙ্করের এই উপন্যাস।

 এখানে উঠে এসেছে পূর্ববাংলায় বাংলাভাষার দাবি, মুজিব প্রসঙ্গ, পুরোনো পল্টনে শ্রমিক ফেডারেশনের মিটিং, ভুট্টোর ঘাড় হেঁট করে ফিরে যাওয়া, জামাতে উলেমার দালালি, আছে দেশে মার্শাল ল জারি, টিক্কা খাঁর কথা, মুজিব নগরে বাংলাদেশ সরকার তৈরির কথা। মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতার অবস্থান, শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত বাঙালিদের জীবনযাত্রাও উঠে এসেছে।


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "পূর্ব পশ্চিম" উপন্যাসও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ ছুঁয়ে গেছে l 


উপসংহার :

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের প্রেরণা। দমিত, দলিত জনগোষ্ঠীর আত্ম-আবিষ্কারের নাম মুক্তিযুদ্ধ। এই ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নির্মম ও নৃশংস অত্যাচারের কাহিনী। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসনবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে এবং আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক জীবনের মতো শিল্পসাহিত্যের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের সৃজনশীল সাহিত্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। 


তথ্যসূত্র : 

১) দৈনিক সংগ্রাম : "বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ : আহমদ মনসুর : শুক্রবার ১৬ আগস্ট ২০১৩,  প্রিন্ট সংস্করণ

২) কালের কণ্ঠ ২০ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০

মুক্তিযুদ্ধের ১০ উপন্যাস : মাহমুদ শাওন

৩) বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ : চৌধুরী শাহজাহান শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ : 

৪) প্রবন্ধ : বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ : ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর. কম 

৫) গবেষণাপত্র : "মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উপন্যাস" - চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ 

৬) মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে লিখিত প্রবন্ধে আলোচিত উপন্যাসসমূহ

৭) মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ও হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’ প্রকাশ: ২০১৭-১২-১৫ ৮:৩৩:৫৮ এএম, মুম রহমান | রাইজিংবিডি.কম



---------------------------------------------------------------------

কবি লেখকদের দায়বদ্ধতা
          

কবি লেখক লেখেন তাঁর ভেতর থেকে উঠে আসা তাগিদে l সকলে লেখেন না l যারা লেখেন তারাও সবাই একরকম তাগিদ অনুভব করেন না l লেখা একটি সাধনা এবং লেখকভেদে এই সাধনার রকমফের আছে l প্রাথমিকতা একেকজনের কাছে ভিন্ন ভিন্ন l প্রতিভার চরিত্রও বিভিন্ন রকমের l সবাই একরকম হতে পারেন না l দায়বদ্ধ সবাই l কিন্তু একেকজন লেখক একেক রকম দায় অনুভব করেন l বা হয়ত সচেতনভাবে কোনো দায় অনুভব করেন না l এমনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেখেন l লেখার নানা উদ্দেশ্য থাকে l বিনোদনের জন্য, নির্মল সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য, আবার সচেতনভাবে সমাজ সংশোধনের মানসিকতা নিয়ে l 


'ঐকতান' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ একইসঙ্গে দুটো কথা বলছেন l প্রথমে বলছেন


"আমি পৃথিবীর কবি, যেথা তার যত উঠে ধ্বনি

আমার বাঁশির সুরে সাড়া তার জাগিবে তখনি," 


পরের পংক্তিগুলিতেই বলছেন, 


"এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক-

রয়ে গেছে ফাঁক।" 


ঠিক এই সুরেই কবিগুরু তাঁর ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার কথা নানা কবিতায় নানা কথায় তুলে ধরেছেন 


'এবার ফিরাও মোরে' কবিতার শুরুতে বলছেন, 


"সংসারে সবাই যবে সারাক্ষণ শত কর্মে রত,

তুই শুধু ছিন্নবাধা পলাতক বালকের মতো

মধ্যাহ্নে মাঠের মাঝে একাকী বিষণ্ন তরুচ্ছায়ে

দূরবনগন্ধবহ মন্দগতি ক্লান্ত তপ্তবায়ে

সারাদিন বাজাইলি বাঁশি।" 


একটু পরেই বলছেন, 


"এবার ফিরাও মোরে, লয়ে যাও সংসারের তীরে

হে কল্পনে, রঙ্গময়ী! দুলায়ো না সমীরে সমীরে

তরঙ্গে তরঙ্গে আর, ভুলায়ো না মোহিনী মায়ায়।

বিজন বিষাদঘন অন্তরের নিকুঞ্জচ্ছায়ায়

রেখো না বসায়ে আর।"


দায়বদ্ধতার প্রশ্নে এই দ্বিধা, সংশয় বরাবর রবীন্দ্রনাথকে ভাবিত করেছে l তুলনায় নজরুল ছিলেন সংশয়হীন l নিজেকে তিনি প্রকাশ করেছিলেন এইভাবে, "আমি যুগের কবি নই, আমি হুজুগের কবি"। নজরুল বলতে চেয়েছিলেন, যে দক্ষতার গুণে একজন কবি যুগ যুগ ধরে টিকে থাকেন, সেই গুন তাঁর নেই। তাঁর যেটা আছে সেটা হলো বর্তমান সময়কে ধরে তীব্র ঝাঁকুনি দেয়ার ক্ষমতা l সেটাই তিনি করে গেছেন। 


'আমার কৈফিয়ত' কবিতার অন্তিম অংশে কবি বলছেন,

"বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে,

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে,

রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা,

তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,

বড় কথা বড় ভাব আসেনাক' মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে !

অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে !

পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,

মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে ।

প্রার্থনা ক'রো-যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটী মুখের গ্রাস,

যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ ।"


তারপরেও কবি নজরুল টিকে আছেন যুগ যুগ ধরে। প্রশ্ন হলো, যদি তাঁর রচনা হুজুগে সৃষ্টি হয়ে থাকে, তবে তা কেন আজও বেঁচে আছে ? কেন মরে যায়নি ? আর এই হুজুগটাই বা কি ছিলো ?


কবি নজরুলের সাহিত্যচর্চার স্থায়িত্ব ছিল খুব কম,  মাত্র চব্বিশ বছর। ১৮৯৯ সালে জন্ম, ১৯৭৬ সালে মৃত্যু, ৭৭ বছরের তাঁর আয়ুষ্কালের শেষ ৩৬ বছর ছিল সৃষ্টিহীন l ১৯৪২ সালে এক ভয়াবহ দুরারোগ্য অসুস্থতার (পিক্‌স ডিজিজ) মধ্যে দিয়ে নতুন করে কিছু ভাবা বা সৃজন করার ক্ষমতা হারান তিনি l তখন থেকে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি l


তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটা সত্য যে তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। কিন্তু এর বাইরেও তাঁর অনেক ধ্রুপদী রচনা রয়েছে l রয়েছে তিন হাজারের মতো গান l


সময়টা ছিল পরাধীনতার, নিপীড়ন, নির্যাতন ও দাসত্বের। ঐ সময়টার দাবী ছিল এইসব অন্যায়-দুঃশাসনের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া। তাই তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, গল্প সকল সৃষ্টির মধ্যে এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এই সমসাময়িকতার দাবীকেই তিনি হুজুগ বলে অভিহিত করেছেন এবং এই হুজুগের লেখনী দিয়েই তিনি তাঁর সময়কে তীব্র ঝাঁকুনি দেয়ার চেষ্টা করে গেছেন। তাই নিজেকে হুজুগের কবি বলে অভিহিত করতে তিনি দ্বিধা করেননি। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল l ইংরেজ বিদেয় হলো। দাসত্ব গেল ঘুচে। হুজুগ তো আর থাকলো না l নজরুল কি তাহলে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলেন ? কিন্তু বাস্তবে তা ঘটলো না। যত দিন যেতে লাগলো নজরুল ততো বেশী প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে লাগলেন বাঙালীর কাছে। 

১৯৭১ সালে নজরুলের চাহিদা অনুভূত হলো প্রবলভাবে। যে নজরুলকে দরকার হয়েছিল ১৯৪৭ সালের আগে, ১৯৭১ সালে সেই নজরুলের জনপ্রিয়তা আকাশ স্পর্শ করলো ওপার বাংলায়। নজরুল স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধলেন নির্যাতিত মানুষের মুক্তিতে উদ্দীপনা যোগাতে l নজরুল অত্যাচারী, শোষক রাজা-হটানো বিপ্লবের আর এক নাম । সেই সূত্রে ওপার বাংলায় আরেক প্রস্থ রাজা বদল হলো l স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলো l


১৯৭১ এর প্রয়োজনও মিটেছে l প্রশ্ন, তাহলে কি নজরুল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছেন ? এর উত্তর হলো, প্রথমত, সমাজ থেকে শোষণ অত্যাচার এখনও পুরোপুরি মুছে যায় নি l যতদিন তা মুছে যাচ্ছে না, ততদিন নজরুল প্রাসঙ্গিক থাকবেন l 

দ্বিতীয়ত,  হুজুগের লেখা ছাড়াও নজরুলের প্রচুর ভাল ধ্রুপদী রচনা আছে l তার জন্যই তিনি চিরকাল প্রাসঙ্গিক থাকবেন l এছাড়াও যেগুলোকে হুজুগের লেখা বলা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যেও প্রচুর কালজয়ী লেখা রয়েছে l 

আলোচনার মূল বিষয় ছিলো লেখক কবিদের দায়বদ্ধতা l কবি লেখক যে সমাজে বাস করেন, যে সময়ে বাস করেন, সেই সমাজ, সেই সময় কখনো কখনো অস্থির হয়ে ওঠে l বলা যেতে পারে সকল সময়ই কিছু না কিছু কারণে অস্থির l মানুষ যে পেশায় নিযুক্ত থাকেন, মানুষ যে সমাজে বাস করেন সেখানে নিয়ত একটা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তাকে চলতে হয় l এই সংগ্রাম আসে পরস্পরবিরোধী স্বার্থ থেকে l যখন পরস্পরের স্বার্থ মেলে না, কোনো এক পক্ষ তার স্বার্থ আদায় করে নেবার জন্য বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে, তার মধ্যে দুর্নীতির পথ, হিংসার পথ থাকে l দুর্নীতি ও হিংসার পথ অবলম্বন করলে যেটা হয় যে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত, সে ক্ষেত্রে তৃতীয় কোন পক্ষের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে l বলা যায় পুরো সমাজেরই স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে l

আমাদের বহুত্ববাদী এই যে সমাজব্যবস্থা, সেখানে একটি পক্ষের সঙ্গে অপর একটি পক্ষের সংঘাত লাগলে অন্য বহু পক্ষের আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে l এবং সামগ্রিকভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রভাব পড়ে l যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হয়, অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয় l এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও আছে l কারণ রাষ্ট্রও একটি পক্ষ l

এমন সংকট যখন দেখা দেয় সেই সময়ে যারা লেখক কবি থাকেন তাদের কলম থেকে বেরিয়ে আসে, প্রথমত সেই সময়ের একটি বস্তুনিষ্ঠ চিত্র এবং দ্বিতীয়ত, তার থেকে মুক্তির পথ l এক্ষেত্রে লেখক, কবিকে সততার সঙ্গে সময়কে পর্যবেক্ষণ করতে হয় এবং সাহসের সঙ্গে এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে সমাজকে তার সঠিক পথ চিনিয়ে দেবার জন্য লেখনীর কাজ পরিচালনা করতে হয় l 

কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি ? আমরা যে সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি বা বিভিন্ন সময়ে চলে থাকি, সেই সময়ে স্বাধীন চিন্তা, স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যা দেখা যাচ্ছে l নির্ভয়ে লেখার পরিবেশ নেই l একটা আতঙ্কের পরিবেশ রচনা করা হয়েছে l পত্রপত্রিকা, সংবাদপত্রগুলি যে সঠিকভাবে ও নিরপেক্ষভাবে বিষয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন সেই পরিবেশ যেন দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে l সংবাদপত্রগুলি একটি গোষ্ঠীর দখলে চলে যাচ্ছেন l একটা বিশেষ দল ও মতের পক্ষে সমস্ত খবরা-খবর লেখালেখি প্রকাশিত হচ্ছে l প্রথম শ্রেণীর পত্রিকাগুলিকে দেখা যাচ্ছে তারা যেন এই বিষয়গুলোতে একটি পক্ষ অবলম্বন করছেন l এমন অবস্থায় সত্তিকারের একটা নিরপেক্ষ অবস্থান কবি লেখকদের কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে l

এটা কিন্তু একটা বড় সংকট l চারিদিকে অন্যায় অত্যাচার শোষণ নিপীড়ন পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে সেটা একটা সমস্যা l কিন্তু তার থেকেও বেশি সংকট হচ্ছে সেই সংকটকে যথাযথভাবে অন্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারার অক্ষমতা এবং যথার্থ পথনির্দেশ দেবার মত সাহসের অভাব l

এক্ষেত্রে লেখক-কবিদের একটা বিরাট সামাজিক দায়িত্ব আছে এবং এটা চিরকালই দেখা গেছে যে গণ আন্দোলনের পরিণতিতে অত্যাচার শোষণের এক একটি পর্ব যখন সমাজ থেকে মুছে গেছে সেক্ষেত্রে লেখক-কবিদের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল l যে সমস্ত কবি লেখক নিজের সময়ের দ্বারা আতঙ্কিত না হয়ে দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়েছেন এবং যথার্থ পথে লেখনী পরিচালনা করেছেন তারাই কালজয়ী লেখক হয়েছেন এবং তাদের লেখাগুলোই সময় ধরে রেখেছে l সময়ের প্রাচীর ডিঙিয়ে আমাদের মহাসময়ের জন্য লিখে যেতে হবে এবং বর্তমান সময়ের প্রকৃত অবস্থার সঠিক চিত্রন করতে হবে এবং সেই অস্থিরতা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বার করতে হবে l সমাজ সংস্কারের জন্য মানুষের মন সংস্কারের প্রয়োজন l তার জন্য কবি-লেখকদের নির্ভয়ে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে l

 

যখন লেখক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণি নিরবচ্ছিন্ন সংস্কারচিন্তা ও কর্ম থেকে সরে আসেন, তখন সেটা সমাজের পক্ষে খুব বড় দুর্দিন। তখন মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার দুঃশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। মানুষের সামাজিক চরিত্রে সংস্কারপ্রক্রিয়া চালু রাখার কাজটা লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের। এই কাজ রাজা হটানো বিপ্লবের চেয়েও জরুরী ও উন্নত। একটা সর্ববঞ্চিত জাতি তার বঞ্চনা থেকে উঠে আসার জন্যে যে জিনিসটা লেখক কবিদের কাছে দাবী করতে পারে সেটা আর কিছু না, সেটা তার আবহমান কালের সামাজিক চরিত্রের সংস্কার। সেই সংস্কারপ্রক্রিয়া নিরবিচ্ছিন্নভাবে লেখক কবিদের দ্বারা চালিত হয় l   

-----------------------------------------------------------------

Book Advertisements

আত্ম অন্বেষণ 
 সম্পাদনা : বিজয় সরকার 

Atma Anweshan 
Edited by : Bijoy Sarkar 
( A Collection of Bengali Poems)  
Publisher : Voice Literary Cultural Organization)  


আত্ম অন্বেষণ  কাব্যগ্রন্থে পিডিএফ সংগ্রহ করতে চাইলে ভয়েসের সাথে যোগাযোগ করুন। 
WhatsApp : 8918172319

কবি বিজয় সরকার সম্পাদিত বাংলার ৮৪ জন নবীন-প্রবীন কবির সৃষ্টিশীল কবিতা সংকলিত কাব্যগ্রন্থ "আত্ম অন্বেষণ "।

কাব্যগ্রন্থের প্রত্যেক কবি তাদের আত্ম অন্বেষণের তথা নিজেকে আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন তাদের স্ব স্ব ভাবনা, চিন্তন-চেতনা, দর্শন ও আত্মবোধের মধ্যে। গ্রন্থটিতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকা থেকে শহুরে অঞ্চলের নবীন-প্রবীণ কবিদের স্ব স্ব লেখনীতে মানুষের জীবন, প্রেম-প্রকৃতি ও বাস্তব সমাজের নানা চিত্র প্রভৃতি ফুটে উঠেছে, যা লাঠকদের নিরাশ করবে না।

------------------------------------------------------------------------

জাগরণ
         --বিজয় সরকার 

           "JAGORAN"
 (A Collection of Bengali Poems)
             Written by 
            Bijoy Sarkar 
Publisher - Corporate Publicity 




বিজয় সরকার এর লেখা প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ "জাগরণ" 

(বিদ্রঃ বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে bijoynet1995@gmail.com  এই ইমেলে যোগাযোগ করুন। 

------------------------------------------------------------------------

"তবুও স্বপ্ন দেখি" 
    -- চন্দন মহন্ত 

   "Tobuo Swapna Dekhi" 
 (A Collection of Bengali Poems)
             Written by 
      Chandan Mahanta 
Publisher - Corporate Publicity 



কবি চন্দন মহন্ত এর লেখা প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ "তঅবুও স্বপ্ন দেখি" 

(বিদ্রঃ বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে mahantachandan9@gmail.com  এই ইমেলে যোগাযোগ করুন। 
------------------------------------------------------------------------

🌼বই সম্পর্কে কবির ব্যক্তিগত ভাবনা🌼

💢 স্বপ্ন ও শূন্যতা 💢

                       আমার প্রথম কবিতা সংকলন। আমার প্রথম অভিজ্ঞতা।  

বিষয়বস্তু - আমার কবিতা সংকলনে আমার নিজের কিছু ভাবনা ও সমাজের কিছু বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা কোন পথে এগিয়ে চলেছি জানিনা। মানুষের মন থেকে শুরু করে  সমস্ত পৃথিবীর বুকটা যেন শূন্য হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এই শূন্যতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্বপ্ন, প্রেম সবকিছুকেই যেন সেই শূন্যতা গ্রাস করে চলেছে। আবার কখনো কানে আসে বাঁচার আর্তনাদ। ধেয়ে আসে স্বার্থের গন্ধ। 
তবুও পথ চলা, থেমে থাকবে না কোনোকিছুই। আসবে স্বপ্ন, জাগবে প্রেম। আমি আমার মতো করে চেষ্টা করেছি লেখার। আপনারা ও পড়ুন। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন । তাহলে আমি আমার লেখার ভালোমন্দ বুঝতে পারবো এবং আপনাদের মূল্যবান মতামতে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবো। 
নাম - ধীমান দাস 
ফোন নম্বর - 8617681811 / 9614125170(হোয়াটস আপ)
★★বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ করুন সরাসরি  কবির সাথে। ধন্যবাদ🙏

---------------------------------------------------------


  🌼বই সম্পর্কে কবির ব্যক্তিগত ভাবনা🌼

💢বোধোদয়💢
                  আমার প্রথম কাব্য গ্রন্থের মূল উদ্দেশ্য বর্তমান সমাজে মানুষের মানবিক চেতনা ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। এই অকাল নিদ্রার কারণে পরিবার সমাজ তথা রাষ্ট্রকে অমঙ্গলের কালো ছায়া ঢেকে রেখেছে। এই অবস্থায় একজন রাষ্ট্রহিতকারী সমাজসেবী অথবা একজন কবি-সাহিত্যিকই পারে সমাজের অবচেতন মনে চেতনা জাগাতে। মানুষ সমাজের সবচাইতে উন্নত জীব কিন্তু দেখা যাচ্ছে মানসিক সংকীর্ণতার কারণে আমাদের পরিবার সমাজ এবং দেশ অনেক পিছিয়ে পড়ছে। তাতে করে ব্যক্তিগত বা সামুহিক কল্যাণ সাধিত হচ্ছে না। এই কাজ একক প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাই সমাজের শুভানুধ্যায়ীদের প্রত্যেককেই এগিয়ে আসতে হবে পরহিতের কথা মাথায় রেখে। মানুষের মানসিকতাকে পাল্টাতে হবে উর্ধ্ব দৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে। মানুষের অকল্যাণ হয় এমন প্রত্যেকটা কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে সমাজ কল্যাণ কারী মানবিক বার্তার মাধ্যমে। মানুষের মনের কালিমা দূর করতে হবে সংকীর্ণ ধারণা পাল্টাতে হবে। তবেই সমাজ তথা দেশ মঙ্গলের পথে এগিয়ে যেতে পারবে এবং আমাদের আগামী প্রজন্ম স্বচ্ছ ধ্যান ধারণা নিয়ে পৃথিবীতে আসবে এবং ব্যক্তি সমাজ তথা দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পারবে। আমার এই গ্রন্থের মূল উদ্দেশ্য সমাজে বার্তা পৌঁছে দেওয়া। আমার কলমের মাধ্যমে যদি একটা মানুষও সঠিক পথে আসে সেটাই হবে একজন লেখক হিসেবে আমার বড় পাওয়া।

  
                       ধন্যবাদান্তে: শিপ্রা দেবনাথ
                       রায়গঞ্জ, উদয়পুর
                       ৭৩৩১৩০
                       Mob:৭৬৭৯৮৩৬১১৯
                     Email: sipradebnath93.rnj@gmail.com

★★বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ করুন সরাসরি  কবির সাথে। 

-----------------------------------------------------

গ্রন্থ বিজ্ঞাপন 
---------------

আপনাদের স্বরচিত গ্রন্থ আমাদের প্লাটফর্ম এ বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।  

Email : voiceculturalteam@gmail.com
Mobile No : 6295392549 

----------------------------------------------------




Wednesday, 5 August 2020

সাহানা আফরোজ


গদ্য সংকলন
--------------

লেখিকা পরিচিতিঃ সাাাাাা আফরোজ বর্তমানে একজন গৃহবধূ। 
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা,অনলাইন ফেসবুকে 'সাহিত্য দর্শন' ---এর মাধ্যমে প্রথম লেখা 'অচ্ছুৎ' বিশ্ব সাহিত্য ও কবিতা সম্ভার বইটিতে প্রকাশিত হয়,
দুই বাংলার মেল বন্ধন অটুট রাখতে কলকাতার প্রেসক্লাবে, CTVN PLUS channel-এ ও তারা বাংলার লাইভে কবিতা বিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগদান.
দ্বিতীয় শারদ সংকলন 'বর্ধমান জাগরনী' ------ ও আন্তঃরাজ‍্য কবিতা সংকলনের 'হৃদ-সাগরে ঢেউ তোলা' বইটিতে প্রকাশিত হয়। 


তৃতীয় সংকলন 'নতুন কবিতার মেসবাড়ি' বার্তা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়, ২০১৯ - ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ আমার স্বরচিত কাব‍্যগ্রন্হ - 'প্রেমকে আমি পুড়তে দেখেছি' বইটি বার্তা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়..
এছাড়াও অসংখ্য পত্রিকায় লেখালেখি তো আছেই.
বর্তমানে জুয়েলারি ব‍্যবসায় বিজ্ঞাপন --এর জন্য টি.ভি তে লাইভ প্রোগ্রাম করা হয়..!

------------------------------------------------------------------

★এস ফিরে হে দৃপ্ত বৈশাখ★


আরও একবার তোমার পথ চেয়ে অপেক্ষায়,
তুমি আসবে------
আমি জানি তুমি আসবে হৃদয়ে জমে থাকা সকল আঁধার কাটিয়ে,
পুরানো সব কিছু দূরে ঠেলে নতুন জীবনের নতুন আলো নিয়ে তুমি আসবে,
এসো বৈশাখ এসো,
অতীতের ভুলক্রুটি, বছরের যত সব আবর্জনা দূর করে দাও,
বাতাসে মিশে থাকা যত বিষ, মহামারী ছোবলের বিষাক্ততায় মৃত্যু মিছিলের এই রেষ,
এই দুঃসময়কে সামাল দিয়ে যাও,
তোমার অপেক্ষায় আজও দাঁড়িয়ে!
ছুঁয়ে দিয়ে যাও মনে প্রাণে আনন্দের পরশ,
দূর করো যতো গ্লানি,যত বিভেদ,যত সংশয়,ভয়,
বিদায় দাও দুঃখ দুর্দশা যতো,
এসো হে বৈশাখ আমার ঘরে.
এসো তুমি এসো, সার্থক করো মোদের এ জীবন,
সব কিছু উজ্জ্বল হোক, হোক যতো বাঁধা নিপাত,
নতুন সূর্য উঠুক, আসুক এক নতুন ভোর,
বৈশাখের এই পুর্ণ লগ্নে সব ঝড় থেমে যাক.
কাটুক আঁধার আলোর টানে, মেতে উঠুক মন-প্রান পাখিদের আনন্দ আর কলতানে,
শুভ হোক সবকিছু, মেতে উঠুক মন নতুন বর্ষে নতুনের আগমনে,
চলো শপথ করি,
পৃথিবী সেজে উঠুক আবারও নতুন করে,
এসো হে বৈশাখ তুমি আমার ঘরে.!। 


----------------------------------------------------------------

একান্ত অনুভূতি


যদিও আমি লিখতে ভালোবাসি, পড়তে কিন্তু আমার মন একেবারেই নাছোড়বান্দা, না তো না,
কি আশ্চর্য ব‍্যাপার ! তাই যদি হয় তাহলে এতো লেখা আসে কোথা থেকে.?
সেই ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মতো....
পড়াতে নেই মন আমার, আর লেখা'কে করি আহ্বান..
আসলে ব‍্যাপারটা হলো, পড়ার মাঝপথেই আমি একটু বেশিই হাঁপিয়ে উঠি, সব যে পছন্দসই হবে তাও নয়....
তবুও লিখতে তো আমাকে হবেই, খাতা খুলে বসলেই কাঁচা কলম যে আবার আমার থেমে থাকতে চাই না, 'আহা কি মুশকিল !
খাতার পাতার মধ্যে ভেসে ওঠে সেই সব জ্বলজ্বলে অক্ষর, যারা নিজেদের মধ্যে সাজিয়ে নেয় এক একটা শব্দমালা, মাঝে মাঝেই খুব অবাক করা উপহার দেয় আমাকে, 
পাতায় পাতায় হাত বোলাই আর স্পর্শ পাই সেই সব চরিত্রের সুখ দুঃখের,
লুকানো নেশার মতো খুব পরিচিত এক গন্ধ..

আমি আনমনা, খামখেয়ালী কাজের ফাঁকে রান্না করতে করতে হলুদ মাখা হাতে খাতার পাতায় কলম ধরি...
বিশ্বাস করুন, কোনও কিছু লেখার তাগিদে নয়, শুধুমাত্র ইকির-বিকির কাটি তাদের সাথে প্রেমালাপের জন্য, তারা আমাকে বর্ণমালা উপহার দেয়,...
খুব ভালো লাগে তখন, যখন তারা বলে লিখতে থাকো কবি লিখতে থাকো, আমরা তো আছি তোমার এই ডায়েরীর পাতায়, তুমি যতদিন থাকবে, আমরাও জীবিত থাকবো,..
খুশিতে মন উড়ে যায় ঐ তেপান্তরের মাঠে,
শব্দরা এসে খেলা করে আঙ্গুলের নিপুণ ডগায়-ডগায়,
ছন্দগুলো ডানায় ভর করে উড়ে যায়,
তখনই,লেখার ভূত চেপে বসে সুরে, ছন্দে, কবিতায়.

হ‍্যাঁ, এ এক গল্প কথা আমার কাল্পনিক চরিত্রের,
বাস্তবে কিছু টা গা ঘেঁষা হলেও, এই কবিতার মধ্য দিয়েই কিন্তু আমি সব কিছু অর্জন করেছি এককালীন...
ছোটবেলার সেই লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লেখার প্রবল ইচ্ছা থেকেই হয়তো কবি হওয়ার শিরোনামে আজ,...
সে যাই হোক, কবিতা, গদ‍্য - পদ‍্য যাই লিখি না কেনও, হতে হবে কিন্তু খাঁসা, না হলেই সম্পাদকমন্ডলীর ঐ খুঁতখুঁতে মন আর ডাগর -ডাগর চোখের চাউনি তে 'না' বলাটা, ওটা ঠিক পোশায় না আমার আবার, তাই ঐ যতটা পারি কুড়িয়ে নিতে শিখেছি আর কি, সস্তা হলেও বেশ খাঁটি কিন্তু..
করতালি পড়ুক আর না পড়ুক স‍্যালুট পাওয়ার যোগ্য রাখি,..
আসলে কোনো উদ্দেশ্য বা কবি হওয়ার জন্য তো লেখা শুরু করিনি—লেখার মাধ্যমে প্রথমত নিজের খুশি, আর ভালো থাকতে চাওয়াটাই প্রকাশ করতে চেয়েছি,..
লিখতে এসেছি, তাই লিখে যায় মন-প্রান উজাড় করে, কবি নামের আখ‍্যাটা তো আপনাদের মতো স্বনামধন্য ব‍্যাক্তিদের, তাই না.?
অবশ্য এটাই তো স্বাভাবিক,
আমার মতে,কবিতা লিখলেই কিন্তু কবি হওয়া যায় না, আমার মতো কিছু অ'কবি'দেরও জায়গা করে দিতে হয় এক অন্যরকম মধুময় শান্তির পরশ পেতে,.....
এবার আসি------,
ঝোপ বুঝে কোপ মারার স্বভাব অবশ্য আমার নয়, ভালো লাগলে আবার আসবো ফিরে, তবে বিখ্যাত হতে নয়, ভালোবাসা কুড়াতে 
ইতি
কবিতার সাথে,কবিতার স্বার্থে


--------------------------------------------------------------------

"গদ‍্য সংকলন" ('ভালোবাসা' ..সে এক মজার কাহিনী)

ভালোবেসে, ভালোবাসিলাম যারে,
সে আজ পাড়ি দিয়েছে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ে.
হায়রে আমার ভালোবাসা........
যদিও শব্দ'টাতে বিশ্বাস নেই, তবুও পরখ করে দেখবার স্বাদ মনে জন্মালেও, সেই ভাবে কোনও দিনও পরম তৃপ্ত লাভ হয়নি আর করিওনি...

আজ এটা তো, কাল সেটা---------
আজ নয়তো কাল, কোনও টাতেই কোনরকম স্বাদ পাওয়া যায় নি,
তার উপর দিনকাল যা পরেছে, কোনও কিছুতেই যেনও আজকাল মানা মানি নেই, সেই একঘেয়েমি বন-বাঁদারে, মাঠে ঘাটে, পার্কে -হোটেলে প্রেমালাপের আসর, মাতামাতি....
তারপরেই যে যার মতো-----
সময় হলে পাখি নিজেই ফুড়ুৎ..…

আবার কি ? হয়ে গেলো ভালোবাসার গুষ্টি পিন্ডি চটকানো, সে আর নিত‍্য নতুন রইলো কোথায়, সেই তো এক যুগ থেকে চলে আসছে প‍্যান‍প‍্যানানি গানের সুর--" আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমায় ছাড়া বাঁচবো না "----- বাঁচা মরা তো দূরের কথা, রক্ষা করার নামেও সব এক একটা কুলাঙ্গার..

মৌমাছির মতো একটা ফুলের মধু খেতে নাকি কখনোই পছন্দ করেনা এই যুগের বাচাল প্রেমিক-প্রেমিকারা, নতুন নতুন স্বাদে তাঁরা নাকি উড়ে বেড়াতে, ঘুরে বেড়াতেই বেশি সৌখিনতা অবলম্বন করতেই বেশ পটু.. সব-ই নাকি এই লেটেস্ট যুগের ফ‍্যাশান, . 

অবশ্য ধরে রেখে লাভ টাই বা কি.? কি আছে একটা ভালোবাসায়, সেই তো সব শেষে চোখের জলে ,নাকের জলে নাকানি চুবানি খেতে হয়,
কি দরকার এই ধরনের প্রেম ভালোবাসা কে নিজের হৃদয়ান্তরে জায়গা করে দেওয়ার.?

গভীর প্রেম ভালোবাসার মধ্যে একরকম দূর্বলতা আছে, যদি একবার ভালো লাগা শুরু হয়ে যায় মনের মধ্যে, তাহলে তো আর কোনও কথাই নেই, সব কিছুই যেনও আপনা আপনিই ভালো লাগতে থাকে,...
ভালোবাসার মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে ভালোবাসায় বেঁধে রাখতে পারে যে, সেই হলো গিয়ে কি আসল প্রেমিক-প্রেমিকা, 
অবশ্য ভালোবাসা যে শুধু প্রেমিক -প্রেমিকার মধ্যেই যে সীমাবদ্ধ থাকবে তাও নয়, 
ভালোবেসে ভালোবাসা যাই শুধুই তাকে, ভালোবেসে ভালোবাসাকে বেঁধে যে রাখে..
তবে ভালোবাসা কখনও বলে - কয়ে আসে না, 
নিজের অজান্তেই ভালোবাসা কখন যে হয়ে যায় কেউ জানে না, ভাল লাগা এমন-ই এক জিনিস যা একবার শুরু হলে সব কিছুই ভালো লাগতে থাকে,
তাই জীবনকে ঘৃণা কোরোনা, আগে নিজেকে ভালোবাসতে শেখো, তারপর অপরকে ভালোবাসার চিন্তা...
দায়িত্বগুলো যদি ঠিক ঠাক পালন করতে পারা হয়, তবেই কিন্তু ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখা যায়...

ইতি 
হৃদয়ের ক্যানভাস থেকে 
সাহানা আফরোজ 

---------------------------------------------------------------

কবিতা :সত্যজিৎ রায়

কবি পরিচিতিঃ সত্যজিৎ রায় , কবির পিতা স্বর্গীয় মহেন্দ্র নাথ রায়। আদি নিবাস : দেশ ভাগের আগে পূর্ব বঙ্গের , বরিশাল জেলার,
পিরোজ পুর মহাকুমার ,
নাজিরপুর থানার , সাচিয়া গ্রাম। 
দেশ ভাগের পড় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাঁটিয়ে , ঘাত প্রতিঘাত সহে জীবনের উত্রাই চড়াই ফেলে এসে এখনও জীবন সংগ্রাম সমানে সমানে চলছে। কবির বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা : হুগলী জেলার অন্তর্গত , গ্রাম : বাঁশাই ,ধর্মতলা ,পোস্ট; কানাই পুর, থানা; উত্তর পাড়া ।জেলা: হুগলী। কবির  শিক্ষাগত যোগ্যতা : স্নাতক বাংলা ও
কমার্শিয়াল আর্ট । লেখালেখির হাতেখড়ি ছোট বেলাথেকেই। কবিকে অভাবের তাড়নায় বার বার দিশেহারা হতে হয়েছে। নাটক , যাত্রা , কলকাতার যাত্রা পাড়ায় ছোট  ছোট রোলে কবি অভিনয় করেছেন। তিনি অনেক গুণী মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন । যেমন নাট্য ব্যাক্তিত্ব : নীলকন্ঠ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী , মেঘনাদ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। কবি বর্তমানে বিজ্ঞাপন সংস্থায় কর্মরত হয়েছেন।

-------------------------------------------------------------


আশিষ মেটে

কবিতা
--------

কবি পরিচিতিঃ
 আশিষ মেটে। 
গ্রামঃ জুবুটিয়া(কীর্ণাহারে পাশে)
 পোস্টঃ আলিগ্রাম
থানাঃ নানুর 
জেলাঃ বীরভূম 


আমি চাষ করতে ভালোবাসি,বাবার কাছে শেখা,লাঙল টানা ,বীজ বপন,সবই পারি,এখানো করি।ছোটবেলা থেকেই চাষ করেই মানুষ, জন্ম আমার কুঁড়ে ঘরে।কারাগারে চাকরি করি,আসামীর সাথে গল্প করি,জানি জীবন তাদের মায়া জালে ঢাকা, আজ আমার বাড়িতে গরু, ছাগল, হাঁস আছে,,তাদের কে খুব ভালোবাসি,আর ভালোবাসি  গাছ লাগাতে ।।জীবনে অনেক গাছ লাগিয়েছি।।মাঠে ধানের ক্ষেত আর সরষের জমি আমার প্রেম ।।গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না ।।আমার গ্রাম ...আমার প্রত্যেকটি শিরায় অবস্থান করছে বিন্দু বিন্দু প্রেম,চোখে লেগে আছে স্বপ্নিল ভালোবাসা আর সারা মন প্রাণ জুড়ে আছে অতৃপ্ত  ভালো লাগার হাতছানি।।

------------------------------------------------------------------


ঝরা কুসুম 
       

উদ্ভ্রান্ত,ক্ষুধার্ত,অর্ধ উলঙ্গ নারী;
নীড় হারা পাখি সে,তির নিশানায় ঈগল শিকারী ।
রাস্তায় পরে থাকা জীবন তার,রক্ত তাজা পাণ্ডুলিপি;
সত্যের উপর ধুলোর প্রলেপ,সমাজে সে নোংরা ছায়াছবি ।
অরণ্য সমাজে বিচ্ছিন্ন ,জীবন তার ঝরা কুসুম ;
মা-হারা সেই জানে,কত দামী কপালে মায়ের চুম;
ছিঁড়ে যাওয়া পাতায় বার বার লাগে ঝাপটা;
সমাজের নাক রুমালে ঢাকা,শূন্য তার জন্মখাতা।

অলিগলিতে মানুষকীট, নোংরা নালিতে আমি আর প্লাস্টিকের স্তূপ;
বিবেক যন্ত্রণায় কাতর, কলি যুগে দুর্ভিক্ষের রূপ। 
ধর্ষিতা নারী,সমাজে চর্চা একটু বাড়াবাড়ি;
ভাতের হাড়ি,দাঁড়ি পাল্লা মেপে ভাই ভাইয়ের কাড়াকাড়ি ।
পারে নি তাঁরা নিজের করে নিতে, 
পারে নি তাঁরা বোন বলে পরিচয় দিতে;
                বলে কি না পাগলী,
তাড়িয়ে দেয়, দেয় গালাগালি;
            এ কিসের পূজো?
                             বুঝে উঠি না আজও, 
শুধুই মদের গন্ধ, পূজার নামে ভণ্ড ।
কে বাঁচলো,কে মরল,চোখ তাদের অন্ধ ।
মন্দিরে পাশে ডাস্টবিন, ভিতরে দুর্গা মূর্তি;
আমি খাই নোংরা খাবার, ওরা করে আনন্দ ফুর্তি ।
খিদেয় জ্বালায় ছটফট, 
ওরা বলে যা এখান থেকে, ফোটফোট;
এ তো সেই গন্ধওয়ালা মানুষ,
আমার ভালোবাসাটাকে বিষ মাখিয়ে দিয়েছিল, 
          তারপর...
আমার শরীরটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিল।
সেদিন আকাশে উড়েছিল ফানুস।

ছেঁড়া কাপড় আজও পরি,
পাগলী বলে লোকে, ফিরিনি বাড়ি ।
সমাজে আমি নিন্দিত, বিক্ষিপ্ত ক্ষেপি;
আজও চোখে ভাসে সেই দিনের পৃথিবীর ছবি ।
         সেই দিন দশমীর রাত
গন্ধওয়ালা মানুষগুলো তেড়ে এল,
           শরীরের চাপলো লাশের পর লাশ,বুকে পড়ল হাতে পর হাত;
কাঁমড়ে,খাঁমচিয়ে, উপড়ালো ছাল;
উলঙ্গ শরীর, গোপনাঙ্গ রক্ত লাল।
শরীর নিংড়ানো রস,খায় শহরের নেশাখোর বস।
থামেনি রক্ত, এগিয়ে আসেনি কোনো মা দুর্গার ভক্ত।
নিঃশ্বাস বন্ধ, অন্ধ গলি,
এদিকে শুরু হলো অঞ্জলি ।
শরতের এক পশলা বৃষ্টি, 
জ্ঞান ফিরলো, ফিরলো চোখের দৃষ্টি ।
বেঁচে আছে মরেনি, 
পাগলী বলে কেউ তাকায় নি।
এ তো মূর্তি নয় যে,ভাসিয়ে দিলে গলে যাবে;
সে তো দূর্বাঘাস, শতবার মারিয়ে গেলেও জেগে উঠবে।।
    


-------------------------------------------------------------------

বেশ্যা ভ্রমর 
         

সমাজের আড়ালে বংশধারা বেশ্যা মেয়ে ভ্রমর, 
নরপশুর অত্যাচারে মাড়িয়ে যাওয়া সে তৃণ।
ইটের ফাঁকে চরিত্রহীনের বাস,বারবার পিছলে পড়ে শিকড়,
বনস্পতির ঝরা পাতার বিছানার দাম তাঁর শূন্য ।

গাঁয়ের লোকে বিষ বাক্যবাণে ভ্রমর আরও বেশি রক্তাক্ত, 
নিলামে বিক্রি শরীরের অন্তরে জমাট তার স্বপ্নগাঁথা,
স্বপ্ন একটাই ..কেউ যদি একটু  ভালোবাসতো?ন
হয়তো লাল শাড়ি দিয়ে বাঁধানো থাকতো জীবনের উলঙ্গ খাতা।

আজও ভ্রমর চেয়ে আছে ভালোবাসার অপেক্ষায়, 
পরিচিত আঁধারে নেশাখোর ফড়িং আসে বরাবর।
সুখের তরে পাড়ি দেয় অসুস্থ গোপন নৌকায়,
ভালোবাসার কাঙাল শূন্য মনে আজও দাঁড় টানে ভ্রমর।



--------------------------------------------------------------------

শেষ পরিণতি 
    

ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসের ছায়া, আবারও সেই আঁধার, 
সূর্যকে আড়াল করে রাখে কয়েক কোটি কাগজ পত্র, 
সাপের ছোবল খেয়ে বিবেকের ঘরে জমাট বাঁধে বিষ মন্ত্র 
হয়তো জন্ম নিলো কলি যুগের অবতার ।
মানুষ অমানুষের যুদ্ধ, ভারত আজ প্রাণহীন মরুভূমি,
ঋণের দায়ে ঝোলে চাষি, ফসল শূন্য তাঁর ক্ষেতভূমি ।

তিন ভাগ জলে ভাসবে মৃতদেহ, স্থলভাগটাই হবে একদিন কবর,
রক্তাক্ত পৃথিবীতে সেদিন আমিই দেবো মৃতদেহ পাহারা।
হিংসার বালিঝড় উড়াবে যেখানে সেখানে জন্ম নেওয়া সাহারা।
নুড়ি বদলে মাটিতে পড়ে থাকবে ছিন্ন ভিন্ন মানুষের লাশ,
সেইদিনই অমানুষের কাছে রক্তের গন্ধই হবে সুবাস ।
কোনটা হনুমান, কোনটা মুসলমান, আর কোনটা খ্রিস্টান, 
বেলাশেষে এই গুলি হবে বাছাই করা খবর।
নদীতে রক্ত, মাটিতে রক্ত মিশে একাকার;
তুমি পুড়িয়ে ক্লান্ত, আমি গর্ত করে ক্লান্ত, 
মানুষের ভাইরাসে সুস্থ মানুষ হবে সেদিন বিষাক্ত ।
ঐ বিষাক্ত জনতরঙ্গের ঢেউ ভাঙবে নিরোগ কারাগার ।
আসছে দিন ভয়ঙ্কর ...

নিজেকে কেউ আর মানুষ ভাবে না,ভাবে তারা ..
আমি মুসলমান, তুমি খ্রিস্টান, তুই হিন্দু, 
এই নিয়ে চলবে হয়তো একদিন লড়াই, 
লুপ্ত হবে মানবতা ,লুপ্ত হচ্ছে চড়াই ।
সেদিন জলের বদলে বইবে রক্তের সিন্ধু ।

হারিয়ে যাবে হয়তো পৃথিবীর সুখ পাখি, 
উলঙ্গ বিষবৃক্ষ দেখে শুরু হবে কুকুরের কলরব, 
সেইদিন আসার আগে আমি আজই করবো বিপ্লব ।
হয়তো সবুজ ভারত জন্ম দিবে পথের চরিত্রহীনা অভাগী।

-------------------------------------------------------------

সপ্তশ্রী কর্মকার


গল্প
----

লেখিকা পরিচিতি :  সপ্তশ্রী কর্মকারের জন্ম ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিরবাজার দক্ষিন ত্রিপুরায়। তার পিতা শঙ্কর কর্মকার ও
মাতা ছন্দা কর্মকার 
শারীরবিদ্যা( বিজ্ঞান) বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। 


এখন শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। 
অবসর সময়ে সাহিত্য তার সঙ্গী আর রান্না করা, ভাষ্যপাঠ করা। ভবিষ্যতে সাহিত্য চর্চা ও আরও উচ্চত্র পড়াশোনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান জীবিনে।

---------------------------------------------------------------------


প্রতারিত যখন অর্ধাঙ্গী



প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে একটা আদর্শ বৌ-এর সন্মান পেতে। সারাদিন ব্যস্ততায় ঘিরে হাজারো চিন্তার অবসান হয় একটা মেয়ের যখন তার স্বামীর কাছে কম-বেশী সব কিছু পিছু ফেলে লক্ষ্য জেতা কথা শেয়ার করে। 

#সমাজের ওইসব মানুষগুলি যারা ভালো মুখোশের বেশে বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় হায়না যাদের বোঝা বড়ো দায়! যারা ভালো চাকুরীজীবি বা উচ্চ শিক্ষার ট্যাগধারী, বাবা-মা এসব দেখে নিজের রাজকন্যার দায়িত্বটা ঐসব পিশাচদের হাতে তুলে দেন। কারন তারা বুঝতে পারে না, মুখোশের বেশে বেঁচে থাকা হায়নাগুলোকে। 

বলা বাহুল্য এরা হলো অন্ধকারের কুয়ো ভেঙে প্রবেশ করা সময় নির্ঘণ্ট  না দেখা কিছু রুগ্ন রুচির গগনচুম্বী শরীর ছোঁয়ার বিদ্যাধারী.... কামুক পুরুষ। 

যেখানে ধূলো পড়া জানালার কাঁচ জানে পর্দার আড়ালে চলা কিছু বিভৎস গল্প, 
বেসামাল কামড়ানোর দাগ ধুয়ে মুছে যায় না কোন ঔষধের প্রলেপে। 

মাঝরাতে নেশার ঘোরে আসক্ত #সতনু বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে আর আকণ্ঠ অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিচ্ছে দেরী কেন হচ্ছে দরজা খুলতে দেখে। 

বিকেলে উদাসী হওয়ার পালে চড়ে, 
রাতে ঘনিয়ে আসা তীব্র ব্যাথার ঘনিষ্ঠতার ক্ষন, 
যেখানে খাটের রেলিংটাও জানে
কত কথা মুখে না বলে মনের আড়ালে জমতে থাকা স্বামীর প্রতি ক্ষোভ। 
আর জন্ম নিরোধক ঔষধ খাওয়ার পর তীব্র শারীরিক অবনতির প্রতিবন্ধকতা। 

ইতিমধ্যে সতনুর বৌ কষ্টে কাতরাতে কোন রকমে দরজা খুলে দিতে গেল, আর দরজা খুলতে না খুলতেই সতনু তার স্ত্রী কে বিছানায় ফেলে যৌনতার শান্তিতে মেতে উঠেছে। এদিকে #সুহানার
দু-চোখ বেয়ে পড়ছে অশ্রুধারা আর বোবা বালিশ হচ্ছে তার সেই মুহূর্তের সাক্ষী। 

এদিকে সতনু তার দৈহিক শান্তি মিটিয়ে যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন সুহানা তার সাদা বেডসিটের রক্তমাখা ছবি দেখে কষ্ট কাতরায় ভেঙে পড়া মনে প্রশ্ন করছে আজ তার স্বামী কি জানত না যে আজ সে #মাসিকের যন্ত্রণায় ছটফট করছে? সারাদিন তলপেটে যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছে? 

হারামি সতনু ৩০-এর জীর্ণ মেরুদন্ডহীন দৈহিক জ্বালার লাল চোখের আফিমে ঘেরা স্বপ্ন বিলাসী পুরুষ যে তীব্র স্ত্রীকামী। যে নিজের স্বার্থে নিজের স্ত্রীকে তার যৌন রসের লেলিহান বিশ্বাসহীনতার বাজারে তীব্র চিৎকারের সুরে বিলিয়ে দেয়। 

মাসের সেই বিভীষিকাসম লাল চটচটে প্যাডের গন্ধ যা বাতাসে সন্মাহোনী হয়ে পড়ে বছর ২৬ এর #সোহানার। কে জানে বা জানতো ঐ দিনগুলিতেও চাঁদপানা মুখের গা বেয়ে ভালোবাসার আদর নয় অ্যালকোহল ঠিকরে পড়ে দু-চার ফোঁটা। 

হ্যাঁ স্বামীরূপী জ্যান্ত শৃগাল বিষ দাঁত ঝেড়ে দিয়েছে আর থাবা বসিয়েছে তার কোমল হরিণের দেহে। অনেকে হয়তো বা পরের দিন কোনো দাগ দেখলেও জিজ্ঞেস করে না বা বুঝে যায় আগের রাতের জোছনার আবছা আলোয় অন্দরমহলে নরম মখমলে বিছানায় কি হয়েছিল সুহানার শরীরের নরম মাংসে। 

জানোয়ারদের মস্তিষ্কে তো *crus cerebri* থাকার কারণে অন্য জন্তুকে হত্যা করে, কিন্তু তুই তো আর জানোয়ার না, তো কি করে যৌন ক্ষুধার জ্বালার সাথে নর খাদকের রূপ নিস? 

মন্তব্য :-- আজও নীরবে নিভৃতে হাজারো স্ত্রী ঘরে ধর্ষিত হয়। যেটা কোন আইনের কাঠগড়ায় দাড় করানো হয় না। নিশ্চুপ হয়ে সব কিছু সয়ে যায়, আর পরদিন সেই হায়নারূপী স্বামী-র সেবা করে যায়। 
#ছোট্ট একটি শব্দ স্বপ্নের "তুমি "
তুমিময় রক্তক্ষরণ, তুমিময় জীবন।

" হে নারী তোমার দেহ এত সস্তা 
বিয়ের আগে নাকি সব করা শেষ 
তাহলে বিয়ে করে লাভ কি ?
এইকথাও শুনতে হয়। 
নারিরা আজ এইভাবে ধর্ষণ হচ্ছে"। 

তবে নারীরা আজ যেমন ঘরে ধর্ষণের শিকার, তেমনি বাইরের পশু খাদকদের কাছেও। ঘরে ধর্ষিতা হলে তো উচ্চ আদালতেও বিচারের সম্ভাবনা কম। কারন গৃহহিংসার সব প্রমান তো থাকে না। যেচে কাউকে বললে  বলবে ওটা স্বামীর সোহাগ বলে উড়িয়ে দেবে, নয়তো adjust করে নে কথাটা আসবে। আবার কেউ বলবে তোর বর wild sex পছন্দ করে খুব। 

আরে ঘরে বাইরে থাকা কিছু মস্তিষ্ক বিকৃত পুরুষদের বলছি, যে তোরা শুধরে যা, নয়তো দেখবি কোনো নারীর গর্ভে তোদের আর জন্ম হবে না। 
"নারী মানেই সহন শক্তির অধিক" ও একটা মহাপুরুষ জন্ম দেওয়ারও ক্ষমতা ওরা রাখে। শোনো হে পুরুষ - নারীরা কখনো পুরুষদের স্পর্শ ছাড়া নষ্ট হয় না। 

যে নারীর কারণে "মহাভারত" ও "লঙ্কা দহন" সেই নারী আজ ধর্ষিতা হলেই কি মৌন মিছিলে মোমবাতির যাত্রা বহন? 

এখন তো মনে হয় পুরুষ - নারীর যুগল বন্দি বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে "সমকামী" জুটির প্রবণতা হওয়া অনেক ভালো। "ধর্ষক" থেকে সমকামীদের মানসিকতা ভালো। 

ঔষধের দোকানে সব রোগের ট্যাবলেট আছে জানি, যদি ঐসব ধর্ষকরূপী স্বামীদের একটা করে খাইয়ে দিলে ভালো হতো, তাহলে হায়না গুলো রোজ রাতে যে নরম নারীর দেহের মাংস ঝলসে খেতো অপার্থিব শতবর্ষের ক্ষুধা নিয়ে তা সেই ট্যাবলেট দিয়ে মেটানো যেতো। 


(সব  চরিত্র কাল্পনিক)


------------------- ------------------------ ----------------------

অর্ণব কর্মকার

কবিতা
--------

কবি পরিচিতিঃ অর্ণব কর্মকার।  পিতা - শ্রী অজিত কর্মকার, পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মাতা- প্রয়াত বেলারাণী কর্মকার, পেশায় ছিলেন ইঁচলকোন্দা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান সহায়িকা।

    জন্ম- পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত গড়বেতা-১ নং ব্লকের ছোট্ট একটি গ্রাম কাশীডাঙায় ১৯৯৩ সালের ৬ ই নভেম্বর অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
      বিদ্যার্জন - গণিতে স্নাতকোত্তর, বি.এড.। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি আগ্রহ ছিলো কবিতা লেখা, ছবি আঁকা ইত্যাদিতে। স্কুল জীবনেই প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতা 'সুখের বৃষ্টি, দুঃখের বৃষ্টি', পরবর্তীকালে গড়বেতার 'আলোর জোয়ার' পত্রিকার মাধ্যমে কবিতা লেখা চলতে থাকে। বর্তমানে উক্ত পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে পেয়েছেন 'আলোর জোয়ার পুরস্কার -২০১৯'।

-------------------------------------------------------------------

একটিবার 


একটুখানি ভাষা চাই

সংস্কৃতি, তোমার...


যেন মৃত্যুর ত্রিতাল শুনি...


ভাষা পেলে আমারাও 

আগুন জ্বলিয়ে দিতে পারি

হাজার মশালে, প্রদীপে;

শব্দছকে এনে দিতে পারি

দাবার আড়াই চাল,

যেন তালের যুগলবন্দি। 


তাই, একটিবার সংস্কৃতি 

হাতে তুলে নাও চিৎকার, পতাকা

আরও একটিবার... 


---------------- ----------------------- ------------------------

উঠে দাঁড়াও 


তোমাকে যে অ্যাঙ্গেল থেকেই দেখিনা কেন

বড়ো বিষণ্ণ মনে হচ্ছে,

সারা শরীর জুড়ে কেবল

মৌমাছি ছাপ।

তোমার বিবর্ণ খাতাতে যারা 

টেনেছিল অজস্র নর্দমা-দাগ

তারা আজ অনেকটা দূরে

তাই তো আমি পেয়েছি খুঁজে

লাল গোলাপের গন্ধ।


এখন বৈশাখ মাস

শাল পাতার সবুজ ছবিতে ভেসে উঠছে

মাটি না ছোঁয়া শাড়ির পাড়ের

ঘামমাখা গোধুলির গন্ধ,

নীরবতা খুঁজে বেড়াচ্ছে

পাতার ভাঁজে ভাঁজে পিঁপড়ের ঘর।


তবুও তুমি সরিয়ে নিচ্ছো হাত

অতর্কিতে বেছে নিচ্ছ 

দেওয়ালের নির্জনতার ভাঁজ,

কাউকে যেন দূর থেকে মনে হচ্ছে

ওটায় তোমার ইতিহাস। 


ভুল করছো।

এ'সময় কোনো ছায়াছবির 

গল্প পাঠের ইন্টারভ্যাল নয়,

এক্ষুনি তোমায় খুঁজে পেতে হবে 

কয়েকটি শক্তপোক্ত ঘাস, ছোট্ট ডালের টুকরো।

পাখির মতো বুনতে হবে 

বেঁচে থাকার অপরিহার্য কারুকার্য, 

শিখতে তোমাকে হবেই -

পাখিরা কীভাবে বাঁচে।


তাই, উঠে দাঁড়াও।


------------------- ----------------------- ------------------------

জাতের পাতে 


জাতের পাতে ক্ষোত্রিয়ের হাত

ব্রাহ্মণের মাথা, বৈশের উদর 

আর শূদ্রের পা।

কড়মড়-কিড়মিড় শব্দে জাত

চিবিয়ে খাচ্ছে সমস্ত অস্তিমজ্জা,

রক্ত-মাংসের শিকড়-বাকড়।

জাতের পাতে ভাত নেই

বর্ণগুলোর ঘাম...নেই 

আছে শুধু নাগরদোলার ছন্দে

থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড়।


হু-হু করে বাতাস বইছে

আরও শীতল হচ্ছে 

পোষাকি আসন, বোঝাই করা পদবী

আর দাঁড়িয়ে থাকা তর্জনী। 


জাতের পাতে আজও তবু নুন নেই

শাক নেই আর জল নেই

আজও শুধু কাগজজুড়ে

মানুষ পোড়ার গন্ধ পাই।


---------------------------------------------------------------------

সুব্রত মিত্র

কবিতা
--------

কবি পরিচিতিঃ
সুব্রত মিত্র পূর্ববঙ্গের বরিশাল জেলার পিরোজপুর উপজেলার স্বরূপকাঠী থানার মাদ্রা-ঝালকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।পিতা শ্রী সুকুমার মিত্র।মাতা স্বর্গিয়া কাজল মিত্র।কবি ছোটবেলা হতেই বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করতে করতে নিজেকে এতদূর বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।কবির জন্মের একবছর পরেই কোলকাতায় আগমন,এবং মাত্র দুবছর বয়সেই কবির মা মারা যান।কবি সুব্রত মিত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্য সমস্ত ব্যক্তিদের মতন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডির মধ্য থেকে বিচার করার মতন নয়।কবি সুব্রত মিত্র শিশুকালে মাতৃহারা হওয়ায় ওনার জীবন এতটাই ছন্নবিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে এই কবির নিজের প্রমাণস্বরূপ কোন জন্ম তারিখ পর্যন্ত নেই।জন্ম তারিখ হিসেবে ১৯৮৩সালের ১৫ই   অক্টোবর এটি কবিরই দেওয়া একটি কাল্পনিক জন্মতারিখ।কবি বাস্তব জীবনের প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে তার স্কুলজীবনকে মাধ্যমিক স্তরের উর্ধে নিয়ে যেতে অক্ষম হয়েছেন।কবি সুব্রত মিত্র ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী এবং কবিতা আবৃত্তি, একক অভিনয়,উপস্থিত বক্তৃতা,যুক্তিতর্ক প্রতিযোগিতায় পারদর্শী ছিলেন।তিনি মূলতঃ কবি হলেও সাহিত্যের অন্যান্য বিষয়গুলোতেও তার অবাধ বিচরণ রয়েছে।যেমন-নানান ধরণের ছড়া,ছোট গল্প,প্রবন্ধ,নিবন্ধ রচনায় তার অসামান্য দক্ষতার পরিচয়।তার লেখা বিশেষ উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি হলো-কাব্যের বিস্তার যেথায়,পৃথিবীর নাম হবে জাতিস্মর,বিশ্রাম দেয়নি কেউ আমারে,প্রতিষেধক হতে হবে,চোখে দেখা নগরী,হুঁশ মরে বেহুঁশে,অসহযোগ,নির্বাসন, দুঃসময়,নিস্পৃহা প্রভৃতি।বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমে কোলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা সহ আরও অন্যান্য অগণিত সাহিত্য পত্রিকায় এই কবির লেখা প্রকাশিত হয়েছে।এযাবৎ তিনি যেসমস্ত সন্মান ও পুরস্কারগুলি পেয়েছেন তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো - মুক্তি সূর্য সাহিত্য পত্রিকার অভিজ্ঞান পত্র, ২০১৭সালে -সারা ভারত সমর সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিজয়া সম্মেলনের বিশেষ শংসাপত্র, ২০১৮সালে নীল কাগজের নৌকো লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্য পত্রিকার শংসাপত্র, কবিতা উৎসব ২০১৯ ও কাব্যতরি ভাষা সাহিত্য সংহতি সন্মাননা প্রদান,সাহিত্যের সৌজন্যের পক্ষ থেকে গুণীজন সন্মাননা পত্র।

এছাড়াও তিনি ইতিমধ্যেই স্যোশাল মিডিয়ার অনলাইন সাহিত্যচর্চায় দেশ বিদেশের অজস্র সাহিত্য পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় কয়েকশো অনলাইন পুরস্কার এবং লেখনী সম্মান অর্জন করে ফেলেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ কোলকাতার গড়িয়া নতুন দিয়াড়ার বাসিন্দা এই কবি জীবন থেকে তেমন কিছুই না পাওয়ার ফলে জীবনের কথাগুলোই তার কবিতায় রেখে যেতে চান।
-------------------------------------------------------------------

অপমৃত্যু 
   
      
           মৃত্যু কি কেবল শরীরেরই হয়?

           নাকি মনও মরে কখনও কখনও?


                       আমি বেঁচে আছি 

             যুগযুগ ধরে, শুধু প্রাণহীন কোন

             মৃত শামুকের খোলসের ন্যায়।


                     বসন্তের শেষ লগ্নেও

               লিখে চলেছি তোমার কবিতা,

                     বিস্ময় জেগেছে বুকে

                     আমি আজ একাএকা।


              কেন অবান্তর এরূপ বেঁচে থাকা?


                                 কেন?

                           না জানা কারণ

                          না জানা অকারণ,

                 আমাকে জালাযন্ত্রনা নিপীড়ন।

                            প্রেমের প্রত্যাশায় 

                       জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে

                   আকাঙ্ক্ষিত দাবির বিসর্জন।


                                তখনও

              মৃত্যু আমার হয়নি মনের,

         শরীরের আভ্র আনুসাঙ্গিকতা 

   মনের কাছাকাছি সর্ব সরঞ্জাম জোগাত।


                       সেই দুটি দশকের

                         কুড়িটি বসন্ত,

                         কুড়িটি হেমন্ত,

                          তুমিহীন মন

               তখনও করেনি মৃত্যুকে বরণ।


                     অগ্নির অভিশাপে

                ব্যর্থ প্রেমিকের অনুতাপে

             প্রেম যেন মৃত হয় ধাপেধাপে।


                         আমি আজ

                শঙ্খচিলের ডানায় বেধে

          শীতল সমীরণের এই শুভক্ষণে

          আমি বেপরোয়া হয়ে উন্মাদ হব,

             আমি শীর্ষ হতে শীর্ষে উঠে

                      সূর্যের কক্ষপথে

               তোমায় আবার খুঁজে পাব।


                যখন আমি আবার

               পেলাম তোমায় খুঁজে

        না: আমি আর আমিতে নেই,

                          বুঝেছি,


              ব্যথার ক্রন্দনে ভেসেছি  

       অশ্রু অবিরত ঝরেছে নিজেনিজে।



--------------------------------------------------------------------

আমি সামাজিক নই
            


আমি সামাজিক নই,

এই সমাজের পারদে পারদে

নির্জনতায়,চঞ্চলতায়,একই সুর শুনতে পাই

আমি সামাজিক নই


সেই শৈশবের সাঁকো পেরিয়ে কৈশোরে পা,

জীবনের প্রথম কোন কিশোরীকে ভালো লেগেছিলো

আজও বলতে পারিনি যা,

দাঁড়িয়ে স্কুলের বারান্দায় আজ দক্ষিণের জানালায় তাকাই

দীর্ঘ তেইশ বছর পরেও উত্তর একটাই

আমি সামাজিক নই।


সামাজিক নই আমি ঘরে,

সামাজিক নই আমি রাস্তার মোড়ে

সামাজিক নই আমি মাঠ;ঘাট;বাস;ট্রামে

সামাজিক নই আমি স্মরণে,মরমে, আমাদের গ্রামে


হাঁটাপথে রাস্তার মোড়ে কিছু ছেলে-ছোকরার দল

সুন্দরী রমনীদের দেখে খুব সিটি মারে

আমি দলভাঙ্গা পথিক হয়ে প্রতিবাদের ভাষা জানাতে যাই

সঙ্গবদ্ধ মহলের বলছে সবাই,

আমি সামাজিক নই।


দাদাদের দাদাগিরি,হাতে নিইনি বিড়ি

নুনভাতেই পাই ন্যায্য সিঁড়ি

তাই সোজা পথেই বাড়ি ফিরি

মদের ফোয়ারায় উল্লাসের সাথে হুল্লোড় সেধে

কালো তরলের পূর্ণ গ্লাসে চূর্ণ হয়ে পারেনি হতে মুখ্য চরিত্র

মুখরিত কোলাহল হয়নি আত্মীয়

এমন একাকীত্ব আমার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব


সামাজিক নই আমি স্ত্রীর বুকের লকেটের কাছে

সামাজিক নই আমি আমার পকেটের কাছে

সামাজিক হই আমি খাসির মাংস কিনতে গিয়ে লজ্জার কাছে।

আমার সামাজিকতা ভেসে বেড়ায় 

ছোটবেলায় মাকে হারানো বেদনায়


জীবন এবং সমাজ দেয়নি ভিক্ষা,দিয়ে গেছে শিক্ষা

পাইনি মায়ের দুধ,এতিম জীবনের পরিচয়ে বড় হই

খালি পায়ে মাথায় ধুলো

ছন্নছাড়া সামাজিকতার অযোগ্য স্বপ্নগুলো,

না খেতে পেয়েও এতবড় হয়েছি তা;

বোঝেনি এই কোলকাতা

বাবুদের সামনে এসে হাসিতে মুক্তা ঝরাই

বিবেক তথাপি বারবার বলছে তাই

আমি সামাজিক নই


আমি মানবিক।

তাই,

সামাজিক নই আমি তোমাদের চরিত্রের কাছে

জীবন থেকেই করেছি পর্যবেক্ষণ

মিলেছে স্বাভাবিক ক্ষেত্রফল

যে হয় সামাজিক,সে নয় মানবিক

যে হয় মানবিক,সে নয় সামাজিক

এই সমীক্ষার উল্টোফল হয় যদিও বিরল

সমাজের দিকে আমি আজও এভাবেই তাকাই


সমাজ।জীবন।সংস্কার।বলছে পরিস্কার তাই

আমি সামাজিক নই

আমার জন্ম,আমার ধর্ম,আমার  কর্ম,আমার বর্ণ সবেতেই,

সমবেত উত্তর সেই একটাই।

আমি সামাজিক নই।



---------------------------------------

পৃথিবীর নাম হবে জাতিস্মর

            

ঝাড়বাতিটা গেছে খুলে পৃথিবীর মেরুপ্রান্তে

পাথরের দানা গুলো আলোহীন রোশনাই

পারিনি সেগুলো কুড়িয়ে আনতে


পড়ে থাকা পাতাগুলি কুড়াবে না কোনো মালি

যুদ্ধে না নেমেও হবে সবাই সৈন্য

স্বজনহারা ব্যথাতেও,ছেলে হারা ক্রন্দনেও

আহা-উহু করবেনা কেউ কারোর জন্য


পৃথিবীর বয়স হয়েছে অনেক

করোনার আতঙ্ক দিয়ে গেল কম্প

মিছিলহীন মৃত্যুর যাত্রাপথে দৃশ্য হরেক


অজস্র।অসংখ্য।কালো হাত।সাদা হাত।

হাতে-হাতে অপঘাত ,অপবাধ-হীন জীবনাঘাত


মৃত্যুর শ্লোক লেখার কবিরাও মরে যায়

দৈনন্দিন অহমিকা কাঁদে একা একা

হঠাৎ হাসি থামা পৃথিবীটা যেন আজ বোকা বোকা


কাউকে ডাকার মানুষও নেই যে আজ আর

 অশৌচ নাগরিক নিষ্প্রভ, বিফল চূড়ান্ত প্রয়াস

বিজ্ঞান কেঁদে কুল মড়ক লেগেছে হেথা বারোমাস


চোর-ডাকু,সন্ন্যাস কেউ নয় পৃথিবীর বাইরে

সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে মৃত্যুরা জিতে গেলেও

প্রাণ নিয়ে সব জাতি বাঁচার তাগিদে বলি ;হায়রে


প্রহসনের তরী ডোবে অচেতন হ্যাঙলার

বিদ্রূপী পৃথিবীকে মায়াহীন বলে গালি দেয় একলা

অগত্যা প্রচার সব।নাট্যের পৃথিবীতে বহুরূপী ধরণী

ধ্বংস কবজ যারা, ছুটে চলে শতাব্দীর পর শতাব্দী

বেসামাল নগরীতে তাঁদের প্রমাণ কেউ রাখেনি।


অনামিকা কলঙ্ক বসে মৃদু ছায়ে বিশ্ব আজ পরিতৃপ্ত

প্রাণ নিতে নিতে আজ সে প্রান্তিকে এসে

বলেছে শোনো ওগো সভ্যতা,হবে বুঝি এইবার ধ্যানের সমাপ্তি।


পৃথিবী মরে গিয়েও কর্মফল যদি থাকে কিছু আনাচেকানাচে

পৃথিবী হবে জাতিস্মর গড়বে আবার নগর

পরোজনমের পৃথিবীর সাথেই এই পৃথিবী থাকবে বেঁচে।

-----------------------------------------------------------------

শতাব্দী কুন্ডু

প্রবন্ধ
------

লেখিকা পরিচিতিঃ জন্ম-১৯৯৪ সালে ৪ ঠা বৈশাখ ( 18 এপ্রিল ) নদীয়া জেলার মদনপুরের একটি অখ্যাত গ্রামে জন্মগ্রহণ। পিতা দিনেশ কুন্ডু ও মাতা দীপিকা কুন্ডু। মদনপুর গার্লস স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি শহর শ্যামনগরে স্থায়ী ভাবে বাসস্থান। বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলী  কলেজ থেকে স্নাতক এবং কল্যাণী ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর পাশ।ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে রাস্ট্রবিঙ্গান বিষয়ের ওপর স্বর্নপদক প্রাপ্ত। 

বর্তমানে  একটি  কলেজের সহ অধ্যাপিকা হিসাবে কর্মরতা। ছোট থেকেই লেখার অভ্যেস ছিল বিভিন্ন সময়ে স্কুলে কলেজে ম্যাগাজিন আকারে লেখা প্রকাশিত হয়েছে।তবে এখন প্রতিলিপি পরিসংখ্যান এর পেজে দৈনিক লেখিকা রুপেই আত্মপ্রকাশ। কিন্তু এখানেই আমার লেখার প্রথম প্রকাশনা। সমাজের পিছিয়ে পরা নারী ও পুরুষতান্ত্রিক প্রভুত্বকে কিছুটা কোনঠাসা করতেই এই লেখার সুত্রপাত। যাতে সমাজব্যবস্থার ক্ষুদ্রতম ত্রুটিবিচ্যুতি গুলো কে মানুষ বুঝতে পারে।_____________________________________________



꧁উপহার না যৌতুক꧂     



    "স্ত্রীর কাছ থেকে যে যৌতুক নেয়        
সে স্ত্রীর কাছে বিক্রি হয়ে যায়।"     


  ওইযে সেফিন খবরের কাগজে হইচই হল শিক্ষিকা গায়ে আগুন দিয়েছে। আচ্ছা,কি মনে হয় একজন শিক্ষিকার এহেন কাজ শোভা পায়। না কখন ই নয়। কিন্তু নেপথ্যে যদি অন্য কাহিনি থাকে যদি প্ররোচিত খুন হয় তাহলে? তাহলে কি শিক্ষিকা বলে সর্বস্ব স্বত্বা ত‍্যাগ করতে হবে?   


   যৌতুক প্রথা বর্তমান যুগের অতি পরিচিতি কুপ্রথা। যা ছোঁয়াচে রোগের মত শিক্ষিত শ্রেণকেই গ্রাস করছে বেশি। তবে শিক্ষিত সমাজ কিন্তু তা মানতে নারাজ। তারা অন্যের বেলায় বেশ জোর গলাতেই পনপ্রথার বিরোধীতা করেন। সত্যি বলতে কি আজও পন দেওয়া নেওয়া বন্ধ হয়নি।   


  তবে এই প্রথা নিজের রুপ বদলায়নি বদলেছে নিজের নাম। সমাজ ই তার নাম বদলেছে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে।নামটি কিন্তু বেশ পরিচিত। শিক্ষিত সমাজের অতিব প্রয়োজনীয় কার্যকলাপের মধ্যে যৌতুক এখন উপহার নাম নিয়ে ছাদনাতলা আলো করে বসে নতুন বউএর মতই। আবার কোনো স্বহৃদয় ব‍্যক্তি এর বিরোধীতা করেও তবে মা জ‍্যেঠিমা দের কলরব ওঠে"ওমা একি এ যে মেয়েকে কিছুই দেয়নি।   

  তবে যৌতুকের কিছু ভিন্নতাও রয়েছে। যে বরের যত বেশি যোগ‍্যতা তার জন্য তত বেশি উপহার। তাহলে প্রশ্ন একটাই সে বর যদি এতোটাই যোগ‍্য হয় তাহলে তার স্ত্রীর ভার বহন করতে যৌতুকের কি প্রয়োজন? এরও কিন্তু একটা গোছানো উত্তর আছে বর পক্ষের কাছে। "আরে আপনারা কি আমাদের ছেলে কে দিচ্ছেন নাকি যা দেবেন সব ই ত আপনার মেয়ের ই"। যৌতুক সমর্থকরা কিন্তু বলবেন ই যে জীবন সুন্দর ও সহজতর করতে যৌতুকের প্রয়োজন।এই যে সম্পত্তি বিক্রি বা বন্ধক অথবা ঋন গ্রহনের মত কার্যকলাপ গুলো ঘটে তারপরও কি এই উপহার গ্রহণযোগ্য ?      আর এই তথাকথিত উপহারের জন্যই কিন্তু লাঞ্ছিত হচ্ছে নারী। শিক্ষার আড়ালে অশিক্ষা আর সমাজ চর্চার কারনেই আজও রয়ে গেছে পনপ্রথা তার নাম বদল করে।তবে অশিক্ষিত আদিবাসীদের মধ্যে এই প্রথা নেই।ইদানিং পাঁচ শতাংশ শিক্ষিত আদিবাসী নিজেদের দাম বাড়াতে উপহার দাবি করেন।      চিরকাল ই অবিবাহিত সরকারি চাকুরের কদর কন্যার পরিবারের কাছে বেশি।প্রচুর পরিমান পন দিয়ে হলেও সরকারি চাকুরের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হয়ে যান।আজকাল শুধু আর্থিক লেনদেন কেই পন বলে মানা হয়।কিন্তু তার পরিবর্তে প্রচুর টাকার উপঢৌকন সগর্ভে ঘরে তুলে নেয়।যেন এগুলো তাদেরই প্রাপ্য।শুধু মাত্র পন নেওয়ার ধরনটা বদলে গেছে।        অনেকক্ষেত্রে বিত্তশালীরা সামাজিক মর্যাদার সূচক হিসাবে দেখেছেন। যেমন ধরুন কন্যাপক্ষ স্বেচ্ছায় আসবাব দিচ্ছেন এখন পাত্রপক্ষ দাবি করেন সেগুলো যেন সেগুন কাঠের হয়। সোনার গহনার ক্ষেত্রেও তাই যদি দিতেই হয় ভালো দেবেন। তবে প্রগতিশীল পাত্রপক্ষপন গ্রহণে অরাজী হলেও পাত্রের সমাজ ও কন্যার পিতা দুজনেই পন প্রথাকে প্রশয় দেয়।     সব থেকে উল্লেখযোগ্য ও বিস্ফোরক হল যৌতুকের আধুনিকতম সংস্করণে পড়ে চাকুরিরতা মহিলারা।কারন চাকুরিরতা মহিলারা নিজেরাই এটিএম কার্ড। যার টাকা শুধু তার নিজের কাজেই কম লাগে আর পরিবারের অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহারযোগ‍্য সে টাকা যৌতুকের নামান্তর।তাই বিয়ের বাজারে তাদের দাম সব থেকে বেশি।    ফিরিঙ্গি সাহেবদের প্রতি ঘৃনা থাকলেও এদেশে বিয়ের পাত্রী হিসাবে গুন থাক আর না থাক ফর্সা মেয়েদের জয়জয়কার।প্রতি নিয়ত স্বামীর আবদার মেটাতে সেই মেয়েটিও তার বাবাকে নিঃস্ব করে।     
গাছের গুড়ির পেছনে লুকিয়ে আছে দুস্টু প্রথা।আসবাব পত্রও এখন যৌতুক প্রথার প্রথম রসদ। ছেলেপক্ষ তো আজীবন নিজের ঘর কে খালিই রাখে বিয়েতে ঘর সাজিয়ে জিনিস পাওয়ার লোভে।    সমাজে বিয়েটা,যোগ‍্যতাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হল পন টা। সে মেয়ে অজ্ঞাত হলে "এবাবা এমন মেয়ে আর কিছু দেয়নি বাপ মা। আর যোগ্য হলে মেয়ে উপার্জন করে তাও কিছু দিলনা। আর এই টানা পোড়েনে একটা মেয়ে বিয়ের পিড়িতে বসে। যাতে সমাজ বলতে না পারে কিরে বিয়ে হয়নি কেন? ধিক্কার সেই নির্মম সমাজকে যার প্ররোচনায় একটি পিতা কন্যা সমর্পনে নিঃস্ব হয়।         


    ---------------------- ⫷⫸ --------+------------------      


   সতী নারী 


 দুই পায়ের মাঝখানের অঙ্গ দ্বারা কোনো মেয়ের সেক্সুয়াল স্টোরি জানা কোনোদিন ই সম্ভব নয়। এবার সময় এসেছে হাইমেনের অন্ধকারকে দুর করার। আর এবার নাহয় একটু খোলাখুলি আলোচনা হোক আপ কামিং হাজব্যান্ডের সাথে। যাতে ফুলশয্যার রাতে কোনো মেয়ে সাদা চাদরের সঙ্গী না হয়।


   "HYMEN CAN'T BE A SYMBOL OF VIRGINITY."     


তবে সত্যিই যদি আপকামিং হাজব্যান্ড জানতে চায় তাহলে সততার সাথেই উত্তর দিন। সম্পর্ক সুস্থ হবে।     


 এবার আসি আসল কথায়, সতী নারী এই সমাজের একটি মুল্যবান জিনিস। সব পুরুষ ই সতী নারীকে কাম্য করে। আর তার চেয়েও বেশি এই সমাজের নারীরা সতী হতে চায়। আসলে পুরুষ বা নারী কেউই সতী হতে চায়না,চায় সতীর ইমেজ টা। সতীত্ব এবং চরিত্র দুটিই আলকিত হাস্যস্পদ শব্দ আর সমাজের মুর্খতার দলিল। সীতার আমল থেকেই চলছে সতীত্ব রক্ষার পরীক্ষা। এযুগেও হয়,ফুলশয্যার রাতে। তাই মেয়েদের একটা বিশাল অংশ সতীত্ব জাহির করতে ব্যস্ত থাকে। এক্ষেত্রে পোশাক ও একটা বড় সতীত্বের ঝান্ডা। কিন্তু সেই পোশাকের তলে কত পুরুষ গমন করল তা কেউ খতিয়ে দেখেনা।     রাম সীতার সতীত্ব পরীক্ষা করেছিল আর সীতা পাশ ও করেছিল। অথচ রাবন সীতাকে স্পর্শ ও করেনি। কিন্তু রামের বউ হওয়ার কারনে সীতার ভার্জিনিটি নষ্ট হওয়ার কথা। তাহলে কেন সীতার সতীত্ব পরীক্ষা হল? আর যদি সীতা পাশ না করত তাহলে কি হত তাছাড়া সব থেকে বড় প্রশ্ন সীতা পরীক্ষায় পাশ করল কিভাবে?   

 নারীর জীবন যৌনতা একটি সিদ্ধান্ত। আর নিজের সঙ্গীর সাথে প্রতারণা করা অপরাধ। আর তাই সতীত্বকেই বর্বর অসভ্য সমাজ নারী পুরুষের সামনে মুলোর মত ঝুলিয়ে রেখেছে।সতীত্ব ভীষন স্পর্শকাতর বিষয়। তাই ছেলে হোক বা মেয়ে সতীত্ব নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকে বিবাহের পুর্বে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময়। অনেকে আবার মনে করেন যে ভার্জিনিটি তাদের মনবল বৃদ্ধি করে। খানিকটা মানষিক প্রশান্তির কারনে যদি ভাবা হয় তাহলে ঠিকি আছে। তবে ভার্জিনিটির কুসংস্কার ঘোচানো যথেষ্ট কস্টসাধ্য বিষয়। তারমধ্যে সবচেয়ে পুরোনো নোংরা কুসংস্কার হল বিয়ের প্রথম রাতে বিছানার চাদরে রক্তের দাগ না থাকলে তাকে ভার্জিন মেয়ে হিসাবে গন্য করা হয়না। তাহলে ছেলেটা যে ভার্জিন তার কি প্রমান আছে?    প্রশ্ন হল কেন এই ব্যস্ততম যুগেও মেয়েদের শরীরের ছোট্ট একটা অংশ নিয়ে মানুষ এত মাথা ঘামায়? নিছক ই না জানার কারনে। কিন্তু সত্যি টা হল হাইমেন নিয়ে ভুল ধারনা তৈরি করা হয়েছে নারীকে শারীরিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। প্রথম রাতে তাই একটা পুরুষ সমস্ত জোর প্রয়োগ করে রক্তপাত করতে। মানষিক প্রশান্তির থেকেও তার কাছে তখন বেশি প্রয়োজন হয়ে পরে কিভাবে রক্তপাত হবে সেই বিষয়টা যাতে সকালে বন্ধুমহলে নিজেকে সগর্বে প্রকাশ কর‍তে পারে।  

  ভার্জিনিটি নষ্ট মানে হাইমেন ছিড়ে যাওয়া নয়। ইলাস্টিক রাবার ব্যান্ডের মতই হাইমেনের চরিত্র। তাই হাইমেন কখন ই যোনি থেকে উধাও হয়ে যায়না। অর্থাৎ এইরুপ হাইমেন থাকার জন্যই কোনো মেয়ের রক্তপাত হয়না। সুতারাং মেয়ে ভার্জিন মানে রক্তপাত ঘটবেই এটা সম্পুর্ন ভুল তথ্য।    

এবার আসি সেই মুল কৌতুহলী প্রসঙ্গে যা শুনলে তথাকথিত সমাজের ভুল কিছুটা হলেও ভাঙ্গবে। প্রসঙ্গটি হল কেন কোনো নারীর প্রথম রাতে রক্তপাত হয় আবার কেন হয়না?    হাইমেন বা সতীচ্ছেদ এক ধরনের পর্দা।কিন্তু এটা যোনিমুখ কে ঢেকে রাখেনা। হাইমেনের আকার গঠন বিভিন্ন নারীর ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়।কখনও পুরু কখনও পাতলা আবার কখনও প্রাকৃতির ভাবে থাকেই না। ব্যস্ততম যুগে যে ধারায় জীবন পরিচালিত হয় তাতে আঠারো উর্ধ্ব কোনো মেয়ের ই হাইমেন থাকেনা। তা অপসারিত হয়। তাই প্রথম মিলনে কখন ই রক্তপাত হবেনা। তাহলে এবার প্রশ্ন হল তাহলে আঠারো উর্ধ্ব মেয়েদের প্রথম রাতে রক্তপাত হয় কেন? সে ক্ষেত্রে যা ঘটে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। বিবাহনামক যাতাকলে পিষে যায় একটি মেয়ে সেই রাতেই। পুরুষ সঙ্গী তার সাথে জোরপূর্বক সহবাস ঘটায়।আর সেই নারীর শরীরের অভ্যন্তরে ক্ষতের সৃষ্টি করে যা থেকে রক্তপাত হয়। পুরুষটি নেয় সতীত্বের পরিক্ষা।আর যদি রক্তপাত নাহয় তাহলে মুখ ভার হয় পুরুষের।কিন্তু এটা বোঝেনা যে ভালবাসার মানুষের কাছে কতটা ঘৃন‍্য হয়ে যায় সে জোরপূর্বক যৌনমিলনিকৃত আঘাতের ফলে। সেটা প্রথম মিলনপুর্বক হাইমেন ছিড়ে যাওয়ার কারন আদৌ নয়। বরং সেই নারীটির শারীরিক শিথিলতা ছিলনা ফলত পুরুষ অঙ্গের দ্বারা তার অভ্যন্তরে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল।  

 বেশিরভাগ মানুষ মনে করে সতীচ্ছেদ একটা পর্দা যা যৌনাঙ্গের প্রবেশদ্বার কে বন্ধ করে রাখে। প্রথম যৌনমিলনে তা ছিড়ে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়। এক বার ভাবুন তো তবে মহিলাদের ঋতুস্রাব কোথা দিয়ে হয়?আসলে নারীর জটিল যৌনাঙ্গ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনার অভাবেই এসব ধারণার উৎপত্তি। এবার হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে আগের দিনে কেন রক্তেপাত হত তার ও কারন ছিল অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারনে নারী ভীত থাকত ফলে সঠিক ভাবে উত্তেজিত হতে পারত না।তবে এটি নির্ভর করে যোনিপথের পিচ্ছিলতা মিলনের তিব্রতা ও রুক্ষতার ওপর। বর্তমানে নারীরা যৌনক্রীয়ায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে বলেই প্রথম মিলনে রক্তপাত ঘটেনা।   

অনেক সময় কোনো নারী কুমারী না হলেও তার রক্তপাত ঘটে যায়। তাহলে সেই পুরুষ টি কি ভাববে মেয়েটি সতী?ভয়ানক তথ্য এই যে ইনফেকশনের কারনেও প্রথম মিলনে রক্তপাত হয় আর তা হয় নারীর যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতার অভাবে, যৌন মিলনে সেই নারীর যোনিপথ যৌনরস দ্বারা সম্পৃক্ত না থাকে। অথবা পুরুষ যদি রুক্ষ ভাবে যৌনমিলনে অভ্যস্ত হয় তবে যোনির ট্যিসু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই মুলত রক্তপাত হয়।যথেস্ট পরিমানে ফোরপ্লে না হলে মানষিক প্রস্ততি না থাকলে হাইমেন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরুষ সেই রক্তপাতকে সুখের চাবিকাঠি ভাবে। আর যদি কোনো নারীর রক্তপাত নাহয় তবে হিনমন‍্যতায় ভোগে।    যুগ যুগ ধরে এই অন্ধবিশ্বাসের উপ্র ভিত্তি করেই নারী কে অবিশ্বাস করা হয় কিন্তু পুরুষের সতীত্ব কি দিয়ে প্রমান হবে?   

 তাই জীবনে প্রথম বার সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স এ রক্তপাত হবেই এমন ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তী হবেন না। একটা পুরুষাঙ্গের জন‍্য হাইমেন যথেস্ট প্রসারিত হয়।সুতারাং প্রথম মিলনে তা কখন ই ছিড়ে যায়না। যদি কোনো পুরুষ প্রথম রাতের পর সগর্বে তার স্ত্রীর রক্ত পাতের কথা জানাতে আসে তাকে ধিক্কার জানান তার পশুর ন্যায় আচরনের জন্য। আর নুন্যতম সুশিক্ষা টাকে খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করুন প্রতি টা নিচ মানষিকতার পশুর সাথে যাতে আপনার হাত ধরে কিছু নারীর জীবন রক্ষা পায়


।---------------------------------------------------------------


 অত্যাচারিত নারী 



  বিগত কয়েকশ সহস্রাব্দে ভারতীয় নারীর অবস্থার বহু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আধুনিক ভারতের কিছু নারী রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী,বিরধী দলনেতা,মুখ‍্যমন্ত্রীর পদ দখল করলেও সমাজের একাংশ নিমজ্জিত রয়েছে আন্ধকারে।      

    201 5সালের লিঙ্গ বৈষম্য সুচক অনুযায়ী ভারতে নারীদের সংসদে স্থান হয়েছে মাত্র 12%। শিক্ষায় 35% ও শ্রম ক্ষেত্রে 28 %। তাই আজও তারা লিঙ্গ বৈষম্য ও অপরাধের স্বীকার।       


    বৈদিক যুগের নারীরা জীবনের সকলস্তরে পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করত।ঋগবেদের শ্লোক থেকে জানা যায় নারীরা নিজ পছন্দ মত উপযুক্ত বয়সে বিবাহ করতে পারত। আনুমানিক 500 শতকে নারীর অবস্থার অবনতি শুরু হয়। ভারতের অধিকাংশ নারী বিধি নিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়।বাল্য বিবাহ,সতীদাহ,পর্দাপ্রথা,দেবদাসী প্রথা তাদের জীবনের কলঙ্ক রুপে বর্নিত হতে থাকে।         


 তবে আধুনিক ভারত কিছুটা অন্য মাত্রায় বর্নিত।ভারতের নারীরা অসহয়তার শিকার। ভারতে ধর্ষন,অ‍্যাসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের দাবিতে হত্যাকাণ্ড, যুবতী নারী কে জোরপুর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ‍্য করা হয়।      

  জাতীয় অপরাধ নিবন্ধীকরন বিভাগ 1998 সালে জানায় যে 2010 সালের মধ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাপিয়ে যাবে।          THOMAS WRITERS FOUNDATION এর একটি সমিক্ষা অনুযায়ী ভারতবর্ষ নারীদের বসবাসের জন্য চতুর্থতম বিপজ্জনক স্থান। ভারতে যেসব মহিলারা কোনো পুরুষের দেওয়া বিবাহ প্রস্তাব কে প্রত্যাখ্যান করেছে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের দাবী জানিয়েছে তারাই সব থেকে বেশি অ‍্যাসিড আক্রান্তের শিকার হয়েছে। ভারতীয় আধুনিক পুরুষরা প্রতিশোধ গ্রহণের উপায় হিসাবে এই পথকেই সবথেকে বেশি অবলম্বন করছে,কারন অ‍্যাসিডের স্পর্শে শরীরের স্থায়ী অংশের দ্রুততম চরম বিকৃতি ঘটে। এটি একজন মহিলার জীবন যন্ত্রণাদায়ক করার কৌতুক পূর্ণ উপায়।       

  STATE OF THE WORLD'S CHILDREN 2009 অনুসারে 47% ভারতীয় নারী 20 থেকে24 বছর বয়সের নীচে বিয়ে করে। গ্রামাঞ্চলে তার হার 56%। লজ্জাজনক হল পৃথিবীর 40% বাল‍্যবিবাহই ঘটে ভারতে।     

   NATIONAL CRIME RECORD BUREAU অনুযায়ী প্রতি তিন মিনিটে মহিলাদের বিরুদ্ধে একটি অপরাধের ঘটনা সংঘটিত হয়।প্রতি 29 মিনিটে একজন মহিলা ধর্ষিত হয়। প্রতি 77মিনটে একজন মহিলা পন প্রথার শিকার হয়ে মৃত্যু হয়।সবথেকে ভয়ংকর তথ্য এটাই যে প্রতি 9 মিনিটে একজন মহিলা তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে যদি সেটা ভালোবাসার সম্পর্ক হয় তাহলেও।        

 তবে ভারতে পুরুষ ও নারী লিঙ্গ অনুপাতে পুরুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য কম।তার পরোক্ষ কারন হিসাবে চিহ্নিত করা হয় পরিনত বয়সে পৌছানোর আগেই নারী মৃত্যুর মতো ঘটনা। তবে আধুনিকতার চেয়ে আদিবাসী সম্প্রদায় খানিকটা শেষ্ট্রতর।তাদের মধ্যে শিক্ষা দারিদ্র্যতার হার কম থাকলেও লিঙ্গ অনুপাতের তেমন কোনো তারতম্য লক্ষ্য করা যায় না। অতিমাত্রায় শিক্ষিত শ্রেণির কন্যাভ্রুন হত্যার সাথে যুক্ত থাকার কারনে নারীর সংখ্যা অপর্যাপ্ত। এক্ষেত্রে জম্মু কাশ্মীরের লিঙ্গ অনুপাত আশঙ্কাজনক।       

  ভারতীয় সংবিধানের আইন ধারায় কিছু ফাঁক রেখে সমাজকাঠামোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।2013 এর সংশোধনী আইন অনুযায়ী 375 এর অধিনে ব‍্যাতিক্রমী যে ধারা লিখিত হয় সেখানে বলা হয় যে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সংসর্গ বা যৌন ক্রিয়া কখনই ধর্ষন নয়, যেখানে স্ত্রীর বয়স পনেরো বছরের নিচে নয়। কিন্তু তবুও মানষিক অত‍্যাচারের কারনে বৈধ ধর্ষন গুলিকে যদি মান্যতা দেওয়া যায় তবে তার হিসাব নিরিক্ষন করলে দেখা যাবে হতাশাজনক ভাবে প্রতি 20 মিনিটে একটি বৈধ ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়।

---------------------------------------------------------------