কবিতা
--------
কবি পরিচিতিঃ ১৯৯০ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা থানার অন্তর্গত বাঁকা গ্রামে আমার জন্ম৷ আমার পিতা শ্রী তরুন কুমার ঘোষ, পেশায় প্রান্তিক কৃষক৷ তাই দৈনন্দীন জীবনে অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী৷ মা শ্রীমতি পূর্ণিমা দেবী। কাজের ফাঁকে বাবা যেটুকু সময় পেতেন আমাকে পড়াতেন। তবে এ ব্যাপারে মায়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মা পড়াশুনা জানেন না৷ বাবা ও মায়ের তত্ত্বাবধানে ছ'বছর বয়সে বাঁকা সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শেণীতে ভর্তি হই৷ চতুর্থ শ্রেণীর পাঠ শেষে করে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হই ব্রহ্মঝাড়ুল রাখাল চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে৷ ২০০৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ঝাঁকরা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণীতে কলা বিভাগের ছাত্র হিসাবে যোগদান করি। ২০০৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ লাভে বিদ্যালয় জীবনের সমাপ্তী হয়৷ তারপর ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকি মহাবিদ্যালয়ে সংকৃত বিষয়ে অনার্স নিয়ে ভর্তি হই। কিন্তু রণে ভঙ্গ দিয়ে পরের বছর পুনরায় চন্দ্রকোণা বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হই৷ ২০১২ সালে স্নাতক সম্পূর্ণ হয়৷ মেদিনীপুর ইউনিভার্সিটি'র ডিসটেন্স এডুকেশন থেকে এম.এ.৷ তার মাঝে কম্পিউটারে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লামা সম্পূর্ণ হয়৷
বিদ্যালয় জীবন থেকেই অল্প অল্প লেখালেখি করতাম৷ ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ফেসবুকেn পুনরায় লেখালেখি শুরু৷ বর্তমানে ভারত - বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করি৷ বেশ কয়েকটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে।
বর্তমানে চন্দ্রকোণা উচ্চ বিদ্যালয়ে আই.সি.টি দ্বারা নিযুক্ত কম্পিউটার বিভাগে শিক্ষকতা করি৷ কাজের ফাঁকে লেখা-লেখি ও গল্প, কবিতা ইত্যাদি পড়ার নেশা বেঁচে থাকার রসদ জোগায়।
________________________________________
ভোরের সূর্যোদয়
সন্ধ্যা নেমেছে ঘাসে ঘাসে
সন্ধ্যা নেমেছে সবুজ পাতায়৷
আবছায়া আঁধারে বড় অদ্ভূত লাগে চেনা পৃথিবী
সন্ধ্যার বাতাসে ডাব পাতার ক্লান্তিহীন হাতছানি,
পৃথিবীর বুক থেকে একটু একটু করে উবে যাচ্ছে উত্তাপ
আতঙ্কের থার্মোমিটারে বাড়ছে পারদ সূচক৷
বাতাসে তখনও বসন্তের বাসি গন্ধ
দু'একটা চাষী সরু আল ধরে ফিরছে ঘরের দিকে
আমি তখন প্রেম বিনিময়ে ঘাসের বুকে মাথা রাখি৷
শুক্লা তৃতীয়ার একফালি চাঁদটাও একা পশ্চিমাকাশে উঁকি দেয়
দূরে একখানি তারা ডাকে ইশারায়৷
অনেক আগেই থেমে গেছে পাখিদের গান
এখন শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার কাতর আর্তনাদ,
একে একে সব তারাগুলি ফুটে উঠে আকাশে
রাত আরও ঘন হয়, শুনশান প্রকৃতি।
নিস্পলক রাতে স্মৃতিজাল বোনার জীর্ণ বদঅভ্যাস-
সন্ধ্যার আকাশে দেখেছি রাতের গভীরতা
একা চাঁদ ডুবে যাবে প্রখর দিবালোকে
মাঝে শুধু অপেক্ষায় অচল প্রহর ,
শান্ত পৃথিবীর বুকে আগামী দেখবে ভোরের সূর্যোদয়৷
-----------------------------------------------------------------
সাধনার ফল
মাটির গভীরতায় সযত্নে রাখা বীজের মত
"মা" আগলে রাখে তার সন্তানকে, নিজ গর্ভে
বাইরে দূষিত বাতাস যেন না লাগে৷
তারপর অন্ধকার কাটিয়ে অালোর জগতে পদার্পন
তখন "বাবা" এক আকাশ ছাদের মত ছেয়ে রাখে৷
হয়তো বা কঠোর সাধনায় মিলেছে এই ফল
স্ত্রী হয় "মা" আর পুরুষ হয় "বাবা"৷
আমরা মন্দিরে মসজিদে ঈশ্বর খুঁজি,
আমরা ঈশ্বর বলতে পাথরের মূর্তি বুঝি
ভক্তি , শ্রদ্ধা না হলেও অন্তত ভয়ে করি ঈশ্বর আরাধনা৷
কারন তিনি অদৃশ্য, তিনি নিরাকার, তিনি স্রষ্টা
অথচ যারা আমাদের স্রষ্টা, যারা ঈশ্বরকে চিনালো
তারা দৃষ্টিগোচর বলেই কী তাদের অবহেলা?
ঘুমের মেধ্য স্বপ্ন দেখে শিশুটা বিছানায় হাতড়ে বেড়ায়
স্যাঁতস্যাঁতে মায়ের আঁচল,
অন্ধকারে আচমকা ভয়ার্ত কেও মনের
অজান্তেই বলে ওঠে - 'বাবাগো'....
যে ডাক আমাদের অন্তরের, যে টান আমাদের নাড়ীর
তা আমরা জোরপূর্বক ছিন্ন করতে চাইছি৷
তাইতো বউ-বাচ্চা হয় আপন আর
বৌয়ের মা-বাবা হয় নিজের।
সত্যি, কি বিচিত্র এই সংসার, তাই না!
দু'টা পেট সামান্য রোজগারে অনায়াসে চলে যেত,
নিজের উচ্চকাঙ্খা নেইতো,
উচ্চকাঙ্খা জন্ম নিল সন্তানের ভবিষ্যত ভাবনায়৷
দিন-রাত এক করে বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে
মা ঘরের কাজ সেরে ধূপ পাকায়,
শুধু সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করবে
এই একমাত্র পণে হয় দিনপাত।
তাদের স্বপ্ন হয়তো বা সত্যি হয়
সন্তান বড় মানুষ হয় , সসম্মানে চাকরি করে
সন্তানের লক্ষ্মী প্রতিমার মত বউ হয়৷
কিন্তু স্বপ্নে দেখা স্বপ্নের স্বাদ পায় না মা - বাবা!
তারা হয়ে যায় মস্ত এক বোঝা
ঠাঁই হয় অন্যত্র কিম্বা নিঃসঙ্গ নিজের ঘরে৷
ভুল হয় বেদবাক্য, পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম ।
জননী , জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও বড় ৷
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে - হাঃ আমাদের কর্মফল!
এভাবেই অসহায় হয়ে যায় কত মা - বাবা
আশ্রয়দাতারা হয়ে যায় আশ্রয়হীন!
কিন্তু সাধনার ফলে সেই সন্তান যখন "বাবা" হবে
তাকেউতো সাধনার ফল ভোগ করতে হবে!
তার চেয়ে যদি পাল্টে দিই সিস্টেম, পাল্টে যায় আমরা
তখনও কী পাবে না ওরা প্রকৃত সাধনার ফল?
---------------------------------------------------------------
এখনও পলাশ ফুটে বনে
এমন দিনে তুমি সব থেকে যা ভা ভালোবাসতে -
বসন্তের পলাশ আর পর্ণমোচীর কিশলয়,
সেকথা আমার আজও মনে পড়ে৷
বসন্ত বিকালে রাঙা মাটির শালবনে
দু'জনে একসাথে হারিয়ে যাওয়ার নেশা
শালের কচি পাতায় পলাশের হাতছানিতে
তুমি বিভোর হয়ে ছুটে যেতে পলাশ তলে,
তোমার শাড়ির আঁচলে চোরকাঁটার পরকীয়া
আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম আর হারিয়ে যেতাম -
কোথায়, কোন আলোর দেশে তা জানি না৷
আচমকা কোকিলের সুমধুর ডাকে তুমি ফিরে তাকাতে
আর আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যেতে
যেখানে প্রজাপতি বসতো নাম না জানা ফুলের বুকে।
তুমি তোমার কাজলকালো চোখে দিয়ে অনুভব করতে
পলাশরাঙা ঠোট থেকে আগুন ঝরে পড়তো,
আমি তখন লিখতে না পারলেও ছিলাম ক্ষণীকের কবি
আর তুমি ছিলে আমার না লেখা কবিতা।
জানো, আজও বসন্ত আসে রঙিন ডানা মেলে!
ফাগুন হাওয়ায় এখনও শুনি শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনী
এখনও কোকিলের গান ভেসে আসে বহু দূ....র থেকে
তবে তার কন্ঠ যেনো বিষাদ ভরা,
এখনও প্রণয় মেশানো বাতাস আমার রুক্ষ্ম বুকে ঢলে পড়ে
বসন্ত বনে আগুন লাগিয়ে এখনও পলাশ ফুটে৷
এখনও বসন্ত দিনে সবই আছে আগের মতো
সেদিনের স্মৃতি রয়ে গেছে, শুধু তুমি নাই কাছে!
বসন্ত বিকালে আমি এখনও যাই লালমাটির দেশে
পলাশ ফুল কুড়িয়ে নিয়ে সর ঘাস দিয়ে মালা গাঁথি
কি জানি কেনো! বোধহয় ভালো লাগে তাই -
শালবনের কচি পাতায়, আগুন রাঙা পলাশ ফুলে
তোমাকে খুঁজে পাই, শান্তি মেলে দগ্ধ প্রাণে।
জানো, এখনও বিরহী বসন্তে প্রেমের কবিতা লিখি একান্তে!
শূন্য এ বুকে দাবানল জ্বেলে এখনও পলাশ ফুটে বনে।
-----------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment