কবিতা
--------
এছাড়াও তিনি ইতিমধ্যেই স্যোশাল মিডিয়ার অনলাইন সাহিত্যচর্চায় দেশ বিদেশের অজস্র সাহিত্য পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় কয়েকশো অনলাইন পুরস্কার এবং লেখনী সম্মান অর্জন করে ফেলেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ কোলকাতার গড়িয়া নতুন দিয়াড়ার বাসিন্দা এই কবি জীবন থেকে তেমন কিছুই না পাওয়ার ফলে জীবনের কথাগুলোই তার কবিতায় রেখে যেতে চান।
-------------------------------------------------------------------
অপমৃত্যু
মৃত্যু কি কেবল শরীরেরই হয়?
নাকি মনও মরে কখনও কখনও?
আমি বেঁচে আছি
যুগযুগ ধরে, শুধু প্রাণহীন কোন
মৃত শামুকের খোলসের ন্যায়।
বসন্তের শেষ লগ্নেও
লিখে চলেছি তোমার কবিতা,
বিস্ময় জেগেছে বুকে
আমি আজ একাএকা।
কেন অবান্তর এরূপ বেঁচে থাকা?
কেন?
না জানা কারণ
না জানা অকারণ,
আমাকে জালাযন্ত্রনা নিপীড়ন।
প্রেমের প্রত্যাশায়
জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে
আকাঙ্ক্ষিত দাবির বিসর্জন।
তখনও
মৃত্যু আমার হয়নি মনের,
শরীরের আভ্র আনুসাঙ্গিকতা
মনের কাছাকাছি সর্ব সরঞ্জাম জোগাত।
সেই দুটি দশকের
কুড়িটি বসন্ত,
কুড়িটি হেমন্ত,
তুমিহীন মন
তখনও করেনি মৃত্যুকে বরণ।
অগ্নির অভিশাপে
ব্যর্থ প্রেমিকের অনুতাপে
প্রেম যেন মৃত হয় ধাপেধাপে।
আমি আজ
শঙ্খচিলের ডানায় বেধে
শীতল সমীরণের এই শুভক্ষণে
আমি বেপরোয়া হয়ে উন্মাদ হব,
আমি শীর্ষ হতে শীর্ষে উঠে
সূর্যের কক্ষপথে
তোমায় আবার খুঁজে পাব।
যখন আমি আবার
পেলাম তোমায় খুঁজে
না: আমি আর আমিতে নেই,
বুঝেছি,
ব্যথার ক্রন্দনে ভেসেছি
অশ্রু অবিরত ঝরেছে নিজেনিজে।
--------------------------------------------------------------------
আমি সামাজিক নই
আমি সামাজিক নই,
এই সমাজের পারদে পারদে
নির্জনতায়,চঞ্চলতায়,একই সুর শুনতে পাই
আমি সামাজিক নই
সেই শৈশবের সাঁকো পেরিয়ে কৈশোরে পা,
জীবনের প্রথম কোন কিশোরীকে ভালো লেগেছিলো
আজও বলতে পারিনি যা,
দাঁড়িয়ে স্কুলের বারান্দায় আজ দক্ষিণের জানালায় তাকাই
দীর্ঘ তেইশ বছর পরেও উত্তর একটাই
আমি সামাজিক নই।
সামাজিক নই আমি ঘরে,
সামাজিক নই আমি রাস্তার মোড়ে
সামাজিক নই আমি মাঠ;ঘাট;বাস;ট্রামে
সামাজিক নই আমি স্মরণে,মরমে, আমাদের গ্রামে
হাঁটাপথে রাস্তার মোড়ে কিছু ছেলে-ছোকরার দল
সুন্দরী রমনীদের দেখে খুব সিটি মারে
আমি দলভাঙ্গা পথিক হয়ে প্রতিবাদের ভাষা জানাতে যাই
সঙ্গবদ্ধ মহলের বলছে সবাই,
আমি সামাজিক নই।
দাদাদের দাদাগিরি,হাতে নিইনি বিড়ি
নুনভাতেই পাই ন্যায্য সিঁড়ি
তাই সোজা পথেই বাড়ি ফিরি
মদের ফোয়ারায় উল্লাসের সাথে হুল্লোড় সেধে
কালো তরলের পূর্ণ গ্লাসে চূর্ণ হয়ে পারেনি হতে মুখ্য চরিত্র
মুখরিত কোলাহল হয়নি আত্মীয়
এমন একাকীত্ব আমার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব
সামাজিক নই আমি স্ত্রীর বুকের লকেটের কাছে
সামাজিক নই আমি আমার পকেটের কাছে
সামাজিক হই আমি খাসির মাংস কিনতে গিয়ে লজ্জার কাছে।
আমার সামাজিকতা ভেসে বেড়ায়
ছোটবেলায় মাকে হারানো বেদনায়
জীবন এবং সমাজ দেয়নি ভিক্ষা,দিয়ে গেছে শিক্ষা
পাইনি মায়ের দুধ,এতিম জীবনের পরিচয়ে বড় হই
খালি পায়ে মাথায় ধুলো
ছন্নছাড়া সামাজিকতার অযোগ্য স্বপ্নগুলো,
না খেতে পেয়েও এতবড় হয়েছি তা;
বোঝেনি এই কোলকাতা
বাবুদের সামনে এসে হাসিতে মুক্তা ঝরাই
বিবেক তথাপি বারবার বলছে তাই
আমি সামাজিক নই
আমি মানবিক।
তাই,
সামাজিক নই আমি তোমাদের চরিত্রের কাছে
জীবন থেকেই করেছি পর্যবেক্ষণ
মিলেছে স্বাভাবিক ক্ষেত্রফল
যে হয় সামাজিক,সে নয় মানবিক
যে হয় মানবিক,সে নয় সামাজিক
এই সমীক্ষার উল্টোফল হয় যদিও বিরল
সমাজের দিকে আমি আজও এভাবেই তাকাই
সমাজ।জীবন।সংস্কার।বলছে পরিস্কার তাই
আমি সামাজিক নই
আমার জন্ম,আমার ধর্ম,আমার কর্ম,আমার বর্ণ সবেতেই,
সমবেত উত্তর সেই একটাই।
আমি সামাজিক নই।
---------------------------------------
পৃথিবীর নাম হবে জাতিস্মর
ঝাড়বাতিটা গেছে খুলে পৃথিবীর মেরুপ্রান্তে
পাথরের দানা গুলো আলোহীন রোশনাই
পারিনি সেগুলো কুড়িয়ে আনতে
পড়ে থাকা পাতাগুলি কুড়াবে না কোনো মালি
যুদ্ধে না নেমেও হবে সবাই সৈন্য
স্বজনহারা ব্যথাতেও,ছেলে হারা ক্রন্দনেও
আহা-উহু করবেনা কেউ কারোর জন্য
পৃথিবীর বয়স হয়েছে অনেক
করোনার আতঙ্ক দিয়ে গেল কম্প
মিছিলহীন মৃত্যুর যাত্রাপথে দৃশ্য হরেক
অজস্র।অসংখ্য।কালো হাত।সাদা হাত।
হাতে-হাতে অপঘাত ,অপবাধ-হীন জীবনাঘাত
মৃত্যুর শ্লোক লেখার কবিরাও মরে যায়
দৈনন্দিন অহমিকা কাঁদে একা একা
হঠাৎ হাসি থামা পৃথিবীটা যেন আজ বোকা বোকা
কাউকে ডাকার মানুষও নেই যে আজ আর
অশৌচ নাগরিক নিষ্প্রভ, বিফল চূড়ান্ত প্রয়াস
বিজ্ঞান কেঁদে কুল মড়ক লেগেছে হেথা বারোমাস
চোর-ডাকু,সন্ন্যাস কেউ নয় পৃথিবীর বাইরে
সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে মৃত্যুরা জিতে গেলেও
প্রাণ নিয়ে সব জাতি বাঁচার তাগিদে বলি ;হায়রে
প্রহসনের তরী ডোবে অচেতন হ্যাঙলার
বিদ্রূপী পৃথিবীকে মায়াহীন বলে গালি দেয় একলা
অগত্যা প্রচার সব।নাট্যের পৃথিবীতে বহুরূপী ধরণী
ধ্বংস কবজ যারা, ছুটে চলে শতাব্দীর পর শতাব্দী
বেসামাল নগরীতে তাঁদের প্রমাণ কেউ রাখেনি।
অনামিকা কলঙ্ক বসে মৃদু ছায়ে বিশ্ব আজ পরিতৃপ্ত
প্রাণ নিতে নিতে আজ সে প্রান্তিকে এসে
বলেছে শোনো ওগো সভ্যতা,হবে বুঝি এইবার ধ্যানের সমাপ্তি।
পৃথিবী মরে গিয়েও কর্মফল যদি থাকে কিছু আনাচেকানাচে
পৃথিবী হবে জাতিস্মর গড়বে আবার নগর
পরোজনমের পৃথিবীর সাথেই এই পৃথিবী থাকবে বেঁচে।
-----------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment