Wednesday, 5 August 2020

সুব্রত মিত্র

কবিতা
--------

কবি পরিচিতিঃ
সুব্রত মিত্র পূর্ববঙ্গের বরিশাল জেলার পিরোজপুর উপজেলার স্বরূপকাঠী থানার মাদ্রা-ঝালকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।পিতা শ্রী সুকুমার মিত্র।মাতা স্বর্গিয়া কাজল মিত্র।কবি ছোটবেলা হতেই বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করতে করতে নিজেকে এতদূর বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।কবির জন্মের একবছর পরেই কোলকাতায় আগমন,এবং মাত্র দুবছর বয়সেই কবির মা মারা যান।কবি সুব্রত মিত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্য সমস্ত ব্যক্তিদের মতন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডির মধ্য থেকে বিচার করার মতন নয়।কবি সুব্রত মিত্র শিশুকালে মাতৃহারা হওয়ায় ওনার জীবন এতটাই ছন্নবিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে এই কবির নিজের প্রমাণস্বরূপ কোন জন্ম তারিখ পর্যন্ত নেই।জন্ম তারিখ হিসেবে ১৯৮৩সালের ১৫ই   অক্টোবর এটি কবিরই দেওয়া একটি কাল্পনিক জন্মতারিখ।কবি বাস্তব জীবনের প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে তার স্কুলজীবনকে মাধ্যমিক স্তরের উর্ধে নিয়ে যেতে অক্ষম হয়েছেন।কবি সুব্রত মিত্র ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী এবং কবিতা আবৃত্তি, একক অভিনয়,উপস্থিত বক্তৃতা,যুক্তিতর্ক প্রতিযোগিতায় পারদর্শী ছিলেন।তিনি মূলতঃ কবি হলেও সাহিত্যের অন্যান্য বিষয়গুলোতেও তার অবাধ বিচরণ রয়েছে।যেমন-নানান ধরণের ছড়া,ছোট গল্প,প্রবন্ধ,নিবন্ধ রচনায় তার অসামান্য দক্ষতার পরিচয়।তার লেখা বিশেষ উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি হলো-কাব্যের বিস্তার যেথায়,পৃথিবীর নাম হবে জাতিস্মর,বিশ্রাম দেয়নি কেউ আমারে,প্রতিষেধক হতে হবে,চোখে দেখা নগরী,হুঁশ মরে বেহুঁশে,অসহযোগ,নির্বাসন, দুঃসময়,নিস্পৃহা প্রভৃতি।বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমে কোলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা সহ আরও অন্যান্য অগণিত সাহিত্য পত্রিকায় এই কবির লেখা প্রকাশিত হয়েছে।এযাবৎ তিনি যেসমস্ত সন্মান ও পুরস্কারগুলি পেয়েছেন তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো - মুক্তি সূর্য সাহিত্য পত্রিকার অভিজ্ঞান পত্র, ২০১৭সালে -সারা ভারত সমর সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিজয়া সম্মেলনের বিশেষ শংসাপত্র, ২০১৮সালে নীল কাগজের নৌকো লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্য পত্রিকার শংসাপত্র, কবিতা উৎসব ২০১৯ ও কাব্যতরি ভাষা সাহিত্য সংহতি সন্মাননা প্রদান,সাহিত্যের সৌজন্যের পক্ষ থেকে গুণীজন সন্মাননা পত্র।

এছাড়াও তিনি ইতিমধ্যেই স্যোশাল মিডিয়ার অনলাইন সাহিত্যচর্চায় দেশ বিদেশের অজস্র সাহিত্য পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় কয়েকশো অনলাইন পুরস্কার এবং লেখনী সম্মান অর্জন করে ফেলেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ কোলকাতার গড়িয়া নতুন দিয়াড়ার বাসিন্দা এই কবি জীবন থেকে তেমন কিছুই না পাওয়ার ফলে জীবনের কথাগুলোই তার কবিতায় রেখে যেতে চান।
-------------------------------------------------------------------

অপমৃত্যু 
   
      
           মৃত্যু কি কেবল শরীরেরই হয়?

           নাকি মনও মরে কখনও কখনও?


                       আমি বেঁচে আছি 

             যুগযুগ ধরে, শুধু প্রাণহীন কোন

             মৃত শামুকের খোলসের ন্যায়।


                     বসন্তের শেষ লগ্নেও

               লিখে চলেছি তোমার কবিতা,

                     বিস্ময় জেগেছে বুকে

                     আমি আজ একাএকা।


              কেন অবান্তর এরূপ বেঁচে থাকা?


                                 কেন?

                           না জানা কারণ

                          না জানা অকারণ,

                 আমাকে জালাযন্ত্রনা নিপীড়ন।

                            প্রেমের প্রত্যাশায় 

                       জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে

                   আকাঙ্ক্ষিত দাবির বিসর্জন।


                                তখনও

              মৃত্যু আমার হয়নি মনের,

         শরীরের আভ্র আনুসাঙ্গিকতা 

   মনের কাছাকাছি সর্ব সরঞ্জাম জোগাত।


                       সেই দুটি দশকের

                         কুড়িটি বসন্ত,

                         কুড়িটি হেমন্ত,

                          তুমিহীন মন

               তখনও করেনি মৃত্যুকে বরণ।


                     অগ্নির অভিশাপে

                ব্যর্থ প্রেমিকের অনুতাপে

             প্রেম যেন মৃত হয় ধাপেধাপে।


                         আমি আজ

                শঙ্খচিলের ডানায় বেধে

          শীতল সমীরণের এই শুভক্ষণে

          আমি বেপরোয়া হয়ে উন্মাদ হব,

             আমি শীর্ষ হতে শীর্ষে উঠে

                      সূর্যের কক্ষপথে

               তোমায় আবার খুঁজে পাব।


                যখন আমি আবার

               পেলাম তোমায় খুঁজে

        না: আমি আর আমিতে নেই,

                          বুঝেছি,


              ব্যথার ক্রন্দনে ভেসেছি  

       অশ্রু অবিরত ঝরেছে নিজেনিজে।



--------------------------------------------------------------------

আমি সামাজিক নই
            


আমি সামাজিক নই,

এই সমাজের পারদে পারদে

নির্জনতায়,চঞ্চলতায়,একই সুর শুনতে পাই

আমি সামাজিক নই


সেই শৈশবের সাঁকো পেরিয়ে কৈশোরে পা,

জীবনের প্রথম কোন কিশোরীকে ভালো লেগেছিলো

আজও বলতে পারিনি যা,

দাঁড়িয়ে স্কুলের বারান্দায় আজ দক্ষিণের জানালায় তাকাই

দীর্ঘ তেইশ বছর পরেও উত্তর একটাই

আমি সামাজিক নই।


সামাজিক নই আমি ঘরে,

সামাজিক নই আমি রাস্তার মোড়ে

সামাজিক নই আমি মাঠ;ঘাট;বাস;ট্রামে

সামাজিক নই আমি স্মরণে,মরমে, আমাদের গ্রামে


হাঁটাপথে রাস্তার মোড়ে কিছু ছেলে-ছোকরার দল

সুন্দরী রমনীদের দেখে খুব সিটি মারে

আমি দলভাঙ্গা পথিক হয়ে প্রতিবাদের ভাষা জানাতে যাই

সঙ্গবদ্ধ মহলের বলছে সবাই,

আমি সামাজিক নই।


দাদাদের দাদাগিরি,হাতে নিইনি বিড়ি

নুনভাতেই পাই ন্যায্য সিঁড়ি

তাই সোজা পথেই বাড়ি ফিরি

মদের ফোয়ারায় উল্লাসের সাথে হুল্লোড় সেধে

কালো তরলের পূর্ণ গ্লাসে চূর্ণ হয়ে পারেনি হতে মুখ্য চরিত্র

মুখরিত কোলাহল হয়নি আত্মীয়

এমন একাকীত্ব আমার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব


সামাজিক নই আমি স্ত্রীর বুকের লকেটের কাছে

সামাজিক নই আমি আমার পকেটের কাছে

সামাজিক হই আমি খাসির মাংস কিনতে গিয়ে লজ্জার কাছে।

আমার সামাজিকতা ভেসে বেড়ায় 

ছোটবেলায় মাকে হারানো বেদনায়


জীবন এবং সমাজ দেয়নি ভিক্ষা,দিয়ে গেছে শিক্ষা

পাইনি মায়ের দুধ,এতিম জীবনের পরিচয়ে বড় হই

খালি পায়ে মাথায় ধুলো

ছন্নছাড়া সামাজিকতার অযোগ্য স্বপ্নগুলো,

না খেতে পেয়েও এতবড় হয়েছি তা;

বোঝেনি এই কোলকাতা

বাবুদের সামনে এসে হাসিতে মুক্তা ঝরাই

বিবেক তথাপি বারবার বলছে তাই

আমি সামাজিক নই


আমি মানবিক।

তাই,

সামাজিক নই আমি তোমাদের চরিত্রের কাছে

জীবন থেকেই করেছি পর্যবেক্ষণ

মিলেছে স্বাভাবিক ক্ষেত্রফল

যে হয় সামাজিক,সে নয় মানবিক

যে হয় মানবিক,সে নয় সামাজিক

এই সমীক্ষার উল্টোফল হয় যদিও বিরল

সমাজের দিকে আমি আজও এভাবেই তাকাই


সমাজ।জীবন।সংস্কার।বলছে পরিস্কার তাই

আমি সামাজিক নই

আমার জন্ম,আমার ধর্ম,আমার  কর্ম,আমার বর্ণ সবেতেই,

সমবেত উত্তর সেই একটাই।

আমি সামাজিক নই।



---------------------------------------

পৃথিবীর নাম হবে জাতিস্মর

            

ঝাড়বাতিটা গেছে খুলে পৃথিবীর মেরুপ্রান্তে

পাথরের দানা গুলো আলোহীন রোশনাই

পারিনি সেগুলো কুড়িয়ে আনতে


পড়ে থাকা পাতাগুলি কুড়াবে না কোনো মালি

যুদ্ধে না নেমেও হবে সবাই সৈন্য

স্বজনহারা ব্যথাতেও,ছেলে হারা ক্রন্দনেও

আহা-উহু করবেনা কেউ কারোর জন্য


পৃথিবীর বয়স হয়েছে অনেক

করোনার আতঙ্ক দিয়ে গেল কম্প

মিছিলহীন মৃত্যুর যাত্রাপথে দৃশ্য হরেক


অজস্র।অসংখ্য।কালো হাত।সাদা হাত।

হাতে-হাতে অপঘাত ,অপবাধ-হীন জীবনাঘাত


মৃত্যুর শ্লোক লেখার কবিরাও মরে যায়

দৈনন্দিন অহমিকা কাঁদে একা একা

হঠাৎ হাসি থামা পৃথিবীটা যেন আজ বোকা বোকা


কাউকে ডাকার মানুষও নেই যে আজ আর

 অশৌচ নাগরিক নিষ্প্রভ, বিফল চূড়ান্ত প্রয়াস

বিজ্ঞান কেঁদে কুল মড়ক লেগেছে হেথা বারোমাস


চোর-ডাকু,সন্ন্যাস কেউ নয় পৃথিবীর বাইরে

সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে মৃত্যুরা জিতে গেলেও

প্রাণ নিয়ে সব জাতি বাঁচার তাগিদে বলি ;হায়রে


প্রহসনের তরী ডোবে অচেতন হ্যাঙলার

বিদ্রূপী পৃথিবীকে মায়াহীন বলে গালি দেয় একলা

অগত্যা প্রচার সব।নাট্যের পৃথিবীতে বহুরূপী ধরণী

ধ্বংস কবজ যারা, ছুটে চলে শতাব্দীর পর শতাব্দী

বেসামাল নগরীতে তাঁদের প্রমাণ কেউ রাখেনি।


অনামিকা কলঙ্ক বসে মৃদু ছায়ে বিশ্ব আজ পরিতৃপ্ত

প্রাণ নিতে নিতে আজ সে প্রান্তিকে এসে

বলেছে শোনো ওগো সভ্যতা,হবে বুঝি এইবার ধ্যানের সমাপ্তি।


পৃথিবী মরে গিয়েও কর্মফল যদি থাকে কিছু আনাচেকানাচে

পৃথিবী হবে জাতিস্মর গড়বে আবার নগর

পরোজনমের পৃথিবীর সাথেই এই পৃথিবী থাকবে বেঁচে।

-----------------------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment