কবিতা
--------
গ্রামঃ জুবুটিয়া(কীর্ণাহারে পাশে)
পোস্টঃ আলিগ্রাম
থানাঃ নানুর
জেলাঃ বীরভূম
আমি চাষ করতে ভালোবাসি,বাবার কাছে শেখা,লাঙল টানা ,বীজ বপন,সবই পারি,এখানো করি।ছোটবেলা থেকেই চাষ করেই মানুষ, জন্ম আমার কুঁড়ে ঘরে।কারাগারে চাকরি করি,আসামীর সাথে গল্প করি,জানি জীবন তাদের মায়া জালে ঢাকা, আজ আমার বাড়িতে গরু, ছাগল, হাঁস আছে,,তাদের কে খুব ভালোবাসি,আর ভালোবাসি গাছ লাগাতে ।।জীবনে অনেক গাছ লাগিয়েছি।।মাঠে ধানের ক্ষেত আর সরষের জমি আমার প্রেম ।।গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না ।।আমার গ্রাম ...আমার প্রত্যেকটি শিরায় অবস্থান করছে বিন্দু বিন্দু প্রেম,চোখে লেগে আছে স্বপ্নিল ভালোবাসা আর সারা মন প্রাণ জুড়ে আছে অতৃপ্ত ভালো লাগার হাতছানি।।
------------------------------------------------------------------
ঝরা কুসুম
উদ্ভ্রান্ত,ক্ষুধার্ত,অর্ধ উলঙ্গ নারী;
নীড় হারা পাখি সে,তির নিশানায় ঈগল শিকারী ।
রাস্তায় পরে থাকা জীবন তার,রক্ত তাজা পাণ্ডুলিপি;
সত্যের উপর ধুলোর প্রলেপ,সমাজে সে নোংরা ছায়াছবি ।
অরণ্য সমাজে বিচ্ছিন্ন ,জীবন তার ঝরা কুসুম ;
মা-হারা সেই জানে,কত দামী কপালে মায়ের চুম;
ছিঁড়ে যাওয়া পাতায় বার বার লাগে ঝাপটা;
সমাজের নাক রুমালে ঢাকা,শূন্য তার জন্মখাতা।
অলিগলিতে মানুষকীট, নোংরা নালিতে আমি আর প্লাস্টিকের স্তূপ;
বিবেক যন্ত্রণায় কাতর, কলি যুগে দুর্ভিক্ষের রূপ।
ধর্ষিতা নারী,সমাজে চর্চা একটু বাড়াবাড়ি;
ভাতের হাড়ি,দাঁড়ি পাল্লা মেপে ভাই ভাইয়ের কাড়াকাড়ি ।
পারে নি তাঁরা নিজের করে নিতে,
পারে নি তাঁরা বোন বলে পরিচয় দিতে;
বলে কি না পাগলী,
তাড়িয়ে দেয়, দেয় গালাগালি;
এ কিসের পূজো?
বুঝে উঠি না আজও,
শুধুই মদের গন্ধ, পূজার নামে ভণ্ড ।
কে বাঁচলো,কে মরল,চোখ তাদের অন্ধ ।
মন্দিরে পাশে ডাস্টবিন, ভিতরে দুর্গা মূর্তি;
আমি খাই নোংরা খাবার, ওরা করে আনন্দ ফুর্তি ।
খিদেয় জ্বালায় ছটফট,
ওরা বলে যা এখান থেকে, ফোটফোট;
এ তো সেই গন্ধওয়ালা মানুষ,
আমার ভালোবাসাটাকে বিষ মাখিয়ে দিয়েছিল,
তারপর...
আমার শরীরটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিল।
সেদিন আকাশে উড়েছিল ফানুস।
ছেঁড়া কাপড় আজও পরি,
পাগলী বলে লোকে, ফিরিনি বাড়ি ।
সমাজে আমি নিন্দিত, বিক্ষিপ্ত ক্ষেপি;
আজও চোখে ভাসে সেই দিনের পৃথিবীর ছবি ।
সেই দিন দশমীর রাত
গন্ধওয়ালা মানুষগুলো তেড়ে এল,
শরীরের চাপলো লাশের পর লাশ,বুকে পড়ল হাতে পর হাত;
কাঁমড়ে,খাঁমচিয়ে, উপড়ালো ছাল;
উলঙ্গ শরীর, গোপনাঙ্গ রক্ত লাল।
শরীর নিংড়ানো রস,খায় শহরের নেশাখোর বস।
থামেনি রক্ত, এগিয়ে আসেনি কোনো মা দুর্গার ভক্ত।
নিঃশ্বাস বন্ধ, অন্ধ গলি,
এদিকে শুরু হলো অঞ্জলি ।
শরতের এক পশলা বৃষ্টি,
জ্ঞান ফিরলো, ফিরলো চোখের দৃষ্টি ।
বেঁচে আছে মরেনি,
পাগলী বলে কেউ তাকায় নি।
এ তো মূর্তি নয় যে,ভাসিয়ে দিলে গলে যাবে;
সে তো দূর্বাঘাস, শতবার মারিয়ে গেলেও জেগে উঠবে।।
-------------------------------------------------------------------
বেশ্যা ভ্রমর
সমাজের আড়ালে বংশধারা বেশ্যা মেয়ে ভ্রমর,
নরপশুর অত্যাচারে মাড়িয়ে যাওয়া সে তৃণ।
ইটের ফাঁকে চরিত্রহীনের বাস,বারবার পিছলে পড়ে শিকড়,
বনস্পতির ঝরা পাতার বিছানার দাম তাঁর শূন্য ।
গাঁয়ের লোকে বিষ বাক্যবাণে ভ্রমর আরও বেশি রক্তাক্ত,
নিলামে বিক্রি শরীরের অন্তরে জমাট তার স্বপ্নগাঁথা,
স্বপ্ন একটাই ..কেউ যদি একটু ভালোবাসতো?ন
হয়তো লাল শাড়ি দিয়ে বাঁধানো থাকতো জীবনের উলঙ্গ খাতা।
আজও ভ্রমর চেয়ে আছে ভালোবাসার অপেক্ষায়,
পরিচিত আঁধারে নেশাখোর ফড়িং আসে বরাবর।
সুখের তরে পাড়ি দেয় অসুস্থ গোপন নৌকায়,
ভালোবাসার কাঙাল শূন্য মনে আজও দাঁড় টানে ভ্রমর।
--------------------------------------------------------------------
শেষ পরিণতি
ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসের ছায়া, আবারও সেই আঁধার,
সূর্যকে আড়াল করে রাখে কয়েক কোটি কাগজ পত্র,
সাপের ছোবল খেয়ে বিবেকের ঘরে জমাট বাঁধে বিষ মন্ত্র
হয়তো জন্ম নিলো কলি যুগের অবতার ।
মানুষ অমানুষের যুদ্ধ, ভারত আজ প্রাণহীন মরুভূমি,
ঋণের দায়ে ঝোলে চাষি, ফসল শূন্য তাঁর ক্ষেতভূমি ।
তিন ভাগ জলে ভাসবে মৃতদেহ, স্থলভাগটাই হবে একদিন কবর,
রক্তাক্ত পৃথিবীতে সেদিন আমিই দেবো মৃতদেহ পাহারা।
হিংসার বালিঝড় উড়াবে যেখানে সেখানে জন্ম নেওয়া সাহারা।
নুড়ি বদলে মাটিতে পড়ে থাকবে ছিন্ন ভিন্ন মানুষের লাশ,
সেইদিনই অমানুষের কাছে রক্তের গন্ধই হবে সুবাস ।
কোনটা হনুমান, কোনটা মুসলমান, আর কোনটা খ্রিস্টান,
বেলাশেষে এই গুলি হবে বাছাই করা খবর।
নদীতে রক্ত, মাটিতে রক্ত মিশে একাকার;
তুমি পুড়িয়ে ক্লান্ত, আমি গর্ত করে ক্লান্ত,
মানুষের ভাইরাসে সুস্থ মানুষ হবে সেদিন বিষাক্ত ।
ঐ বিষাক্ত জনতরঙ্গের ঢেউ ভাঙবে নিরোগ কারাগার ।
আসছে দিন ভয়ঙ্কর ...
নিজেকে কেউ আর মানুষ ভাবে না,ভাবে তারা ..
আমি মুসলমান, তুমি খ্রিস্টান, তুই হিন্দু,
এই নিয়ে চলবে হয়তো একদিন লড়াই,
লুপ্ত হবে মানবতা ,লুপ্ত হচ্ছে চড়াই ।
সেদিন জলের বদলে বইবে রক্তের সিন্ধু ।
হারিয়ে যাবে হয়তো পৃথিবীর সুখ পাখি,
উলঙ্গ বিষবৃক্ষ দেখে শুরু হবে কুকুরের কলরব,
সেইদিন আসার আগে আমি আজই করবো বিপ্লব ।
হয়তো সবুজ ভারত জন্ম দিবে পথের চরিত্রহীনা অভাগী।
-------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment