গল্প
-----
শেষ প্রণয়
সোমলতা একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে । আর পাঁচজনের মতো মেয়েটির জীবন গোছানো বা সুন্দর না, হঠাৎ করেই অযাচিত অথিতির মতো তার জীবনে দুঃখ এসে পড়ে । তবুও সোমলতা হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করত । সোমলতার নদী , সমুদ্র ও পশুপাখি এসব খুব পছন্দের ছিল । তার বাড়িতে তিনখানা বিড়াল ও দুটি কুকুর ছিল । সোমলতার মন খারাপ হলে সে নদীর ধারে গিয়ে বসত। ওই নদীর ধার ছিল তার কাছে আনন্দের ও সুখের ঠিকানা । সোমলতার জীবন অনেকটা বেরঙিন এখন বেনারসের এক স্কুলে সোম হিন্দি বিষয়ের শিক্ষিকা । এই স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সোমের এখন ভালো দিন কেটে যায় । সোমলতা তার মাইনের সমস্ত টাকা সেখানকার গরিব ও দুস্থ বাচ্চাদের দান করে এবং তাদের সাধ্যমত সহায়তা করার চেষ্টা করে । স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে তার স্নেহের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে । সোমলতা সেই প্রধান শিক্ষিকার বাড়িতে থাকে । তিনিও ছিলেন একা বিধবা মহিলা তিনিও ধীরে ধীরে সোমলতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । একদিন সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষিকা ও সোমলতা গল্প করছিল , গল্প করতে করতে হঠাৎ সোমলতার মুখ থেকে নীলের নাম বেরিয়ে আসে তখন শিক্ষিকা অবাক হয়ে যায় এবং জানতে চান নীল কে ? আগে তো কোনদিন সোমের মুখে নীলের কথা শোনে নি । সোমলতা কে তার মা ভালোবেসে সোম বলে ডাকে প্রধান শিক্ষিকা মহাশয়া ও সোমলতাকে সোম বলে ডাকে । সোমের চোখ থেকে বারিধারা ঝরতে থাকে এবং নীলের কথা সে বলতে শুরু করে । সোমের খুব পছন্দের জায়গা ছিল নদীর ধার একদিন বিকেলে সোম নদীর ধারে বসে ছিল , সেখানেই প্রথম দেখা হয় তার নীলের সাথে । নীল নদীর ধারে বাচ্চাদের চকলেট ও বেলুন দিচ্ছিল এবং তাদের নানারকম মজাদার গল্প শোনাচ্ছিল । সোমলতা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সমস্তটা পর্যবেক্ষণ করছিল । এভাবে সে রোজ বিকেলে দূর থেকে নীলকে দেখে এবং চলে যায় । একদিন নীলের দৃষ্টি পড়ে সোমের দিকে আর নীল সোমের দিকে এগিয়ে আসে । তারপর তাদের আলাপ হয় এভাবে পরদিন থেকে সোম ও নীল দুজনেই বাচ্চাদের জন্য চকলেট নিয়ে আসে , আর রোজ নিয়ম করে তারা নদীর ধারে দেখা করে । এভাবে তাদের মধ্যে প্রণয়ের তৈরি হয় অজান্তেই । নীল একদিন আচমকা সোমলতাকে প্রেম নিবেদন করে সোমলতা খুশিতে তার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল । এইভাবে তাদের দিনগুলো খুব আনন্দেই কাটছিল । তাদের প্রণয়ের সম্পর্কে এই প্রথম ভ্যালেনটাইন ডে পড়েছিল সেদিনটি তারা অনেক আনন্দে কাটাতে চেয়েছিল এবং অনেক প্ল্যানিং ছিল দিনটাকে নিয়ে । নীল সোমলতার জন্য অনেক উপহার কিনেছিল এবং সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য নীল তাদের বাড়ির ছাদটাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছিল । সোমলতা এসে এসব দেখে হতবাক । তারা প্রথমে কেক কাটে এবং নীল সোমকে উপহার দেয় । তারপর অনেক স্মরণীয় এক মুহূর্ত কাটায় । তারপর সোমকে ধরার জন্য নীল ছোটাছুটি শুরু করে এবং হঠাৎ নীল পা স্লিপ করে ছাদ থেকে নীচে পড়ে যায় । আর সোম তা চোখের সামনে দেখে নির্বাক হয়ে যায় । তার জীবন থেকে ভালোবাসা দিবসে তার সাথী হারিয়ে যায় । তারপর এসব কথা শিক্ষিকাকে বলার পর কান্নায় ফেটে পড়ে । এভাবে দুটি নিষ্পাপ মানুষের ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় । সারাজীবন সোমকে একাকী কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।
Copyrights@ A Mandal
---------------------------------------------------------------
অনন্যা মন্ডল
লেখিকা
পতিরাম, দক্ষিন দিনাজপুর, পশ্চিমব, ভারতবর্ষ
---------------------------------------------------------------
Voice Literary Blog
Editor - Bijoy Sarkar
Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice---------------
No comments:
Post a Comment