আজ বিজয়া দশমী, সন্ধ্যায় চারিদিকে ঢাকের আওয়াজ,শঙ্খধ্বনিতে বিদায় সুর জানান দিচ্ছে মায়ের বিসর্জনের বার্তা। এদিকে 'মা দুর্গার' সঙ্গে বিদায় নিলেন পার্বতীদেবী। আশি বছরের পার্বতীদেবী ইহলোক ত্যাগ করলেন।পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এল।
পার্বতীদেবী আঠারো বছর বয়সে সংসারী হয়েছেন।উনি ছিলেন 'রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী'। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যেই দুই ছেলে মেয়ের মা হ'ন। সন্তানদের মানুষ করার সঙ্গে পরিবারের সকলকে নিয়ে মানিয়ে গুছিয়ে সংসার করেছেন। ছেলে মেয়েকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে সংসারী করেছেন। নিজের স্বার্থত্যাগ স্বীকার করে সুখের সংসার গড়ে তুলেছেন।
মায়ের সব কাজ সম্পন্ন করে মুম্বাই ফিরে যান ছেলে অভিরূপ। যাওয়ার আগে মা বাবার জিনিস গোছাতে গিয়ে নজর পড়ে মায়ের খাটের তলা। মায়ের যত্ন করে রাখা পুরনো টিনের বাক্স। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছেন, তবে কোনদিনই কৌতূহল জাগেনি, তার ভিতর কি আছে জানার জন্য। মা সব সময় বাক্সে তালা লাগিয়ে রাখতেন, আর চাবিটা নিজের মাথার বালিশের তলায় রাখতেন। নিরিবিলিতে মাঝেমধ্যেই খুলে দেখতেন।
আজ সেই বাক্স খুললেন অভিরূপ। অনেক স্মৃতি বিজড়িত জিনিস সযত্নে রাখা, বিয়ের বেনারসী, ধুতি পাঞ্জাবী। শাড়ির তলায় পাওয়া গেল একটা লাল ডাইরি। ডাইরি খুলতেই ওনার চোখদুটো ঝাপসা হয়ে যায় অশ্রুজলে, স্বর্ণাক্ষরে লেখা বিশেষ ঘটনা, তারিখ ও সাল। পাতা উল্টাতেই স্বরচিত কবিতা ও গল্প দেখে অবাক হয়ে যান । অনেক কবিতার মধ্যে ফুটে উঠেছে ওনার মনের অপূর্ণ সাধ বা ইচ্ছা। ডাইরির সঙ্গে পাওয়া গেল একটা প্যাকেট যার মধ্যে রাখা আছে বাবার চিঠি। বাবা ছিলেন জাহাজের নাবিক, জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে জলে, নিয়মিত চিঠি পাঠাতেন পার্বতীদেবীকে। ওনার দেওয়া ছোটছোট বিদেশী উপহার ওনার কাছে ছিল খুব যত্নের।
আজ এই সব পার্থিব মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
No comments:
Post a Comment