নাজিরপুর থানার , সাচিয়া গ্রাম।
দেশ ভাগের পড় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাঁটিয়ে , ঘাত প্রতিঘাত সহে জীবনের উত্রাই চড়াই ফেলে এসে এখনও জীবন সংগ্রাম সমানে সমানে চলছে। কবির বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা : হুগলী জেলার অন্তর্গত , গ্রাম : বাঁশাই ,ধর্মতলা ,পোস্ট; কানাই পুর, থানা; উত্তর পাড়া ।জেলা: হুগলী।
কবির শিক্ষাগত যোগ্যতা : স্নাতক বাংলা ও কমার্শিয়াল আর্ট। লেখালেখির হাতেখড়ি ছোট বেলাথেকেই। কবিকে অভাবের তাড়নায় বার বার দিশেহারা হতে হয়েছে। নাটক , যাত্রা , কলকাতার যাত্রা পাড়ায় ছোট ছোট রোলে কবি অভিনয় করেছেন। তিনি অনেক গুণী মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন । যেমন নাট্য ব্যাক্তিত্ব : নীলকন্ঠ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী , মেঘনাদ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। কবি বর্তমানে বিজ্ঞাপন সংস্থায় কর্মরত হয়েছেন।
------------------------------------------------------------------
আম্ফান্
আজ আবার বাবার কথা বারে বারে মনে পড়ছে । সেই ছোট্ট হাত দুটি বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাবার প্রতীক্ষায় । সকাল থেকে শুরু হলো টিপ টিপ করে বৃষ্টি সঙ্গে ভেসে আসছে হাওয়া । আমি চেয়ারে হেলান দিয়ে প্রকৃতির এই খেলা দেখছি । এটা প্রথম ঝড় নয় , এর আগেও বহু বার এই ঝড় দেখেছি , বাবার পাশে বসে । সেই বোধি বৃক্ষ ভরসা বাবা , নিজের ডাল ভাঙলেও মূল উপড়া বেনা ।বাবার কথা ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে জল গড়িয়ে পরলো । জীবনের ঝড় টা আরো বড়ো । প্রতি নিয়ত যুদ্ধ করে চলেছি । কখন আমার ছেলের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে বললো
বাবা ? এর আগে এর থেকেও বড়ো ঝড় হয়েছে? আমি হচ্কচিয়ে উঠলাম । একটু ধাতস্থ হয়ে বললাম , হ্যাঁ হয়েছে ।
আমার ছেলের বয়ষ্ এখন কুড়ি অথচ এর আগে যে ঝরগুলো হয়েছে তার একটাও অনুভব করে নি আয়লা , বুলবুল, হুদ হুদ, তিতলি , ফনী , এগুলো কেউই আমাদের এলাকা দিয়ে যায় নি তাই এত ভাবনা ও হয়নি। কিন্তু এবারের আম্ফান্ ব্যতিক্রমী । সকাল থেকেই শুরু হলো । ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি আর বিস্মিত হয়ে যাই । যেনো আমার সেই ছোট্ট বেলা বাবার পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে কথা বলতাম ও ঠিক আমার মতই সেই ভাবেই কথা বলে ।
ঝড়ের তান্ডব শুরু হলো ঠিক পাঁচটার সময় ।
আমাদের বারান্দায় বসে জানালা খুলে দেখছি প্রলয় ঝঞ্ঝা ঘূর্ণি বাতাস। ঘরের মাঝে চারিদিক থেকে জল ভেসে আসছে ঝড়ের তান্ডবে।
বাক রুদ্ধ , শান্তনার ভাষা কোথায় পাই। আজ আমি বাবার ভূমিকায় অবতীর্ণ । ওর ভরসা আমি , চারিদিকে অন্ধকার ময় । বিজলী বাতির আলো বন্ধ লম্ফ জ্বালিয়ে বসে আছি আমরা তিনজন। এর মধ্যেই হটাৎ করে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো। বাড়ির পাশের মন্ডল দের আম গাছ, বিজলী বাতির তারের উপড়। পুল ভেঙে পড়লো না কারণ মনোরঞ্জন দের বাড়িটা ছিলো তাই আটকে গেলো। আমাদের বাড়িতে একটা আম গাছ আর একটা পেয়াড়া গাছ ছিলো । দুটোই উল্টে পরলো উঠানের পড়ে। আমি মাঝে মাঝে অন্ধকারে ঠাকুর ঘরের ভিতর দিয়ে জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখছি। এই মহা প্রলয়ের নৃত্য লীলা । কখন চোখবুজে গেলো জানিনা, আমি সমানে ইষ্ট নাম জপ করে যাচ্ছি । গায়ত্রী মন্ত্র জপ করে যাচ্ছি। ফোনের আলো জ্বেলে মাঝে মধ্যে বাইরের দৃশ্য দেখছি। এখন ভাবতে গেলে গায়ে কাঁটা দিয়ে যায় অথচ তখন কোন খেয়ালে এই প্রলয় নিত্য দেখেছিলাম জানিনা।
চললো প্রকৃতির খেলা ,কে কাকে বাঁচায় , কে কাকে করে বারণ । তুমি আর এমন নিষ্ঠুর হয়োনা।
চারিদিকে অন্ধকার আজ যেনো পৃথিবী ধ্বংসের দিকে। দেখতে দেখতে উঠোনের চারদিক জলে জলাকার। জানিনা কতক্ষন চলবে এই দুনিয়ার কোনায় কোনায় এই নির্মম পরিহাস।।
রাত যতই বাড়ছে ততই উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে এই আম্ফান্ । মানুষ বেছেথাকার লড়াই করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়ল।।
সকালের ঘুম ভাঙ্গলো দুঃখের
সকাল হয়ে , বেদনার সকাল হয়ে।
গ্রামের পর গ্রাম বাংলার রূপ কেবলি কান্নার আওয়াজ।
কোথাও কারোর ঘর , বারান্দা , গাছ । খড়ের গাদা, আম , জাম, কাঁঠাল , বট , নারিকেল সুপারি ,একোন মহামারী । করনার চেয়েও ভয়ংকর এই আমফান্।
যেখানে জগৎ জুড়ে চলছে মরন কামড়ের দাগ । বিযষাক্ত ভাইরাস করোনা । মানুষের সৎ কার করার মানুষ পাওয়া দায় এর মাঝেই এই মহা প্রলয় । মহা মাড়ির প্রদাহ জগতে ভালোবাসা সবাই গেছে ভুলে। প্রতি একশো বছর পর পর এই মহামারী আকারে ধারণ করে এই ধরণীর বুকে। সেই সনাতন বাণী আবার নতুন করে বলতে হয়। যখনই ধর্ম কমে যায় আর অধর্ম বেরে যায় তখনই আমি অবতীর্ণ হৈ । ( যদা যদা হি ধর্মস্বহ ,,,,,,,শ্রীকৃষ্ণের অমোঘ বাণী।। সকল ধর্মেই একই কথা বলা হয়েছে । সৎ কর্ম, সৎ সঙ্গ, সৎ বাক্য সদা সত্য। মানুষ ভোগে নিজেদের কর্ম ফলে । তাই কর্ম ও প্রকৃতির এই খেলার পুতুল আমরা। কর্ম যেন সঠিক হয়।।
----------------------------------------------------------------
শ্রীজাত তোমার প্রেম
শ্রীজাত ?- তোমার কামনার ডিগ্রী গুলো আমায় কেবলি ভাবায় -
কেনো?
কবর কিংবা শশ্মানের চিতায় সুয়েও -- এখানেও তোমার অযেও প্রেম বাসনায় লিপ্ত ,
কেবল মরন করে আলিঙ্গন ।।
শ্রীজাত ? তোমার কামনার ডিগ্রী গুলো দাঁড়িয়ে আছে আমার চারি পাশে। বাঁধতে চায় নাগপাশে আর একবার।
অবাক পৃথিবী তবুও শ্রীজাত শান্ত।
অবগুণ্ঠন তখনও সরেনি ,
আমার সাজানো বাগানে - শুয়ো পোকার গুটি গুলো কিলবিল করছে । আমায় পরশ করবে বলে ।
শ্রীজাত নিরব ,মুখের ভাষা বিবর্ণ । ক্রন্দন হীন , বেদনা হীন , কেবলি তার চোখ দুটি খুঁজছে যাকে সে নেই । এইতো একটু আগেই খুনসুটি করলো , আবার কোথায় হারিয়ে গেল?? শ্রীজাত এই দেখো আমি এখানে । দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিতে নিতে চোখের কোনো গড়িয়ে বিন্দু বিন্দু অশ্রুধারা। ভালোবাসা বিষন্ন , তার চেয়েও বেঁচে থাকা ।।
হায় শ্রীজাত --
দেখো -
শ্রীজাত ঘার ঘুরিয়ে তাকায় কেউ কোথাও নেই ।
কে যেন কানে কানে বলে --
এই দেখো -- তোমার দেওয়া আতর , গোলাপ জল, চন্দন ও আগর বাত্তি আমায় আদর করছে। নেই মঙ্গল ঘট , প্রদীপ
লেলিহান শিখায় আমায় করবে সম্ভোগ ।।
শ্রীজাত -- শেষ বিদায়ের যাত্রায় সাজায় আমায় ।
লাল বসনা বেনারসি , লাল গোলাপের টিপ , কুম , কুম অস্তরাগ । দু বাহু প্রসার করে
করে আলিঙ্গন , ললাটে শেষ চুম্বন কেবলি ভাবায় ।
এই শ্রীজাত রা -- কবরের শেষ যাত্রায় কফিনের বাক্সে পেরেক ঠুকতে , ঠুকতে শশ্মানের শেষ যাত্রায় ও ।।
দূর থেকেই বহু বদ্ধ করে আকাশের পানে তাকায় ।
কামনার ডিগ্রী গুলো অধরা ,ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । ধন্য তোমার প্রেম শ্রীজাত ,,,,,,,,
------------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment