কবি পরিচিতি : আমি জয় চক্রবর্তী। ডায়মন্ড হারবার। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। পশ্চিমবঙ্গ। আমি প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট এ কাজ করি।
কবিতা লিখি এবং আবৃত্তি করি। ভয়েসের ব্লগে আগে লেখা দিয়েছি। এবং বিভিন্ন পত্রিকাতেও লেখা বেরিয়েছে।
-------------------------------------------------------------
মানুষ খুঁজেছিলো সত্যিকারের মানুষ
জ্বলন্ত হ্যারিকেন হাতে,
পাগলের মত খুঁজে চলেছে
সেই সকাল থেকে....
লোকটা পাগল কি না জানিনা।
ছুটছে, হাসছে, আবার ছুটছে....
পাগলরা যেমন হয়, অনেকটা সেইরকম |
একবার,
আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো...
কিছু বলবে বলে, নাকি খাবার পাবার আশায়?
ওর চোখটা দেখে ভাবলাম
আমার ধারণাটা কি ভূল?
কিছু বলতে যাবো, সেইসময়....
এক গ্লাস জল ছুঁড়ে দিলো তার গায়ে
আমি যে দোকানে বসেছিলাম,
তার মালিক |
নিজের মনে বকবক করতে করতে
উধাও হয়ে গেল |
পাগল আর দোকানের মালিকের মাঝখানে
আমি দুজনকেই দেখলাম |
সন্ধ্যেবেলা....
সুজিত আর আমি চা খাচ্ছি ।
একটা বিকট আওয়াজ......
সবাই ছুটে যাচ্ছে আওয়াজটাকে লক্ষ করে..
আমরাও দুজন গেলাম ।
অনেক লোক...
ভিড় ঠেলে দেখলাম,
সেই পাগলটা রাস্তায় পড়ে আছে
রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর।
সকালে ওর হাতে
যে জ্বলন্ত হারিকেনটা ছিলো
সেটা, তার পাশেই দাউদাউ করে জ্বলছে।
নিজেই বলে উঠলাম "ইস"...
সুজিত বললো...
জানো হীরক,
সকালে এই লোকটা আমার কাছে এসেছিল। হাতের জ্বলন্ত হ্যারিকেনটা,
আমার মুখের সামনে ধরে কি যেন খুঁজছিলো।
কিছুটা ভয় নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম...
কিছু চাই তোমার... কিছু খুঁজছো?
ভাঙ্গাভাঙ্গা শব্দে বলেছিলো
মানুষ খুঁজছি, মানুষ...
একজন সত্যিকারের মানুষ ।
নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম...
জানো সুজিত ,
সবাই খাবার চায়না...।।
-------------------------------------------------------------
আত্মহত্যা
কতবার যে আমি আত্মহত্যা করেছি
তা যদি একটু লিখে রাখা যেতো,
আমার স্বাভাবিক মৃত্যুও ভয় পেতো।
মৃত্যু,
সে তো একবারই। যার প্রাণ নেই,
শুধু ঘুমিয়ে যাওয়া ফুল,চন্দন, আর
ধূপের ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে।
আমরা যে বলি,রোজ মরছি...
তা কিন্তু নয়। রোজ আমরা হত্যা করছি নিজেকে।
নিজেকে হত্যা করার পিছনে,
একটা স্বাভাবিক জীবনের ব্যর্থতা।
এই যে ধরোনা...
মাসের নির্দিষ্ট পাঁচটি দিন
তোমার ঠাকুর ঘরে যাওয়া বারণ ।
শশুর বাড়ির সব কথা শুনতে গিয়ে,
তোমার গানের ক্লাস বন্ধ রাখা। এভাবেই,
হত্যা করছি আমি, তুমি, আমরা সবাই।
হ্যাঁ আত্মহত্যা...
যে মেয়ে কম বয়সে সাদা থান..
সত্যি কি তার মাছ, মাংস খেতে ইচ্ছে করেনা?
আসলে নিজেকে হত্যা করছে সেও...
আমরা যে বলি,রোজ মরছি...
তা কিন্তু নয়। রোজ আমরা হত্যা করছি নিজেকে।
যদি লিখে রাখা যেতো,
কতবার যে আমি আত্মহত্যা করেছি.…
স্বাভাবিক মৃত্যুও ভয় পেতো ।।
-----------------------------------------------------------
কেউ কথা রাখতে পারলো না
ওরা কথা দিয়েছিলো, কিন্তু
কেউ কথা রাখতে পারলো না।
#শান্তনু বলেছিলো...
তুমি ভালো করে পড়াশুনা করো। আর হ্যাঁ,
তুমি যদি আমার সোনা ছেলে হয়ে
মার কথা শুনে চলো, তাহলে
পুজোয় বাড়ি এসে
তোমায় লাল টুকটুকে সাইকেল কিনে দেবো।
#আশরাফ সকালেই ফোন করে বলেছিলো,
আম্মি...
আমার ছুটি মঞ্জুর হয়েছে,
এবারে একুশ দিনের জন্য।
তোমার চোখের অপারেশন এবার হবে।
#রঞ্জন রোজকার মত আজও
সুমনার সাথে নিয়ম করে কথা বলেছিলো।
একটা লম্বা ছুটি নিয়ে,
সেরেই ফেলবে বিয়েটা।
ঊনপঞ্চাস জন কথা দিয়েছিলো...
কিন্তু,
কেউ কথা রাখতে পারলো না।
একটা বিকট আওয়াজ, ধোঁয়া, বারুদের গন্ধ
প্রতিশ্রুতি স্তব্ধ করে দিলো।
আজ থেকে কয়েক বছর পর...
শান্তনু, আশরাফ, রঞ্জনের মত
ঊনপঞ্চাস জনের পরিবার,
একদিন নিশ্চই বলে উঠবে...
ওরা এসেছিলো নির্দিষ্ট সময়ের আগে।
কিন্তু,
ওরা কেউ কথা রাখতে পারেনি।।
--------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment