Wednesday, 29 July 2020

কবিতা : মৃত্যুঞ্জয় কর

কবি পরিচিতি : আমি মৃত্যুঞ্জয় কর, কালদিঘী, গঙ্গারামপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর নিবাসী। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পাড়ি, পেপার থেকে লোকের কবিতা টুকে নিয়ে বন্ধুদের কে শুনিয়ে বলতাম এটা আমি লিখেছি। ওরা শুনে খুব বাহবা দিত।আমি আবার ভাবলাম যে ওরা কেউ যদি পেপার পড়ে তাহলে তো আমি ধরা পরে যাব, তাই নিজে লিখতে চেষ্টা করলাম। সেই থেকেই লেখা শুরু। 

যদিও খুব একটা ভালো লিখতে এখন ও পারিনা।এখন আমি বাবার ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত। আমি জুলজি নিয়ে স্নাতক হয়েছি।লেখালেখির পাশাপাশি আমার পড়াতে খুব ভালো লাগে।

----------------------------------------------------------------------

শূন্য জীবন
            

জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে
মুক্ত দুয়ারে বসে,
ঝাপসা হয়ে আসে অশ্রুজলে 
স্মৃতির আনাগোনার ত্রাসে।
শৈশব কালে মায়ের কাছে
বায়না করিতাম কত-
কাগজের নৌকা বানাইয়া দিত,
জলে ভাসাইতাম শত।
পরন্ত বিকেলে মাঠের মাঝে
ঘুরি ওড়াইতাম সকলে, 
দিঘির মাঝে ঝাপিয়ে পড়িয়া 
নাইতাম ভর দুপুরে। 
মা যখনই লাঠি লয়ে
পুকুর পাড়ে আসে, 
দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে
ছুটিতাম বাড়ির দেশে।
এমনি করিয়া কখন জানি 
বড় হয়ে উঠেছি আমি,
শৈশবের দিনে ভাটা পড়েছে 
পোক্ত মানুষ মানি।
মা- বাপের বড় সাঁধের লাগি
বউ আনিআনিলেন ঘরে, 
লক্ষী মন্ত বউ আমারে
ভালবাসিত বিঘোরে।
কথার সাথে হাসি যে তার 
রইত সদা ঠোঁটে, 
মায়ের সাথে তাল মিলায়ে
দ্রুত সংসারী হয়ে ওঠে।
সকালে যখন কাজে যাইতাম 
খাবার দিত বেঁধে, 
বাইরের দোরে দাড়াইয়া থাকিত
আমার পানে চেয়ে। 
সাঁঝ বেলায় যখন ঘরে ঘিরিতাম 
কাঁধে এলিয়ে দিত মাথা,
সারাদিন পরে মুখ খানি দেখে
ক্লান্তি বিদায় গাঁথা। 
প্রকৃতির নিয়মে ভর করিয়া
একদিন প্রাঃত কালে,
পূত্র সন্তান ভূমিষ্ট হইল 
আনন্দিত সকলে।
সেইদিন হতে কালো দিন মোর
শুরু হয়েছিল সবে,
ভাবিনি আমারে ছারিয়া যাইবে
ভালবাসার প্রতিদানে।
সন্তানরে বুকে আগলে ধরে 
নিজ হাতে পরিশেষে, 
দূর দেশে তাকে পাঠাইয়া দিয়েছি
অগ্নি বায়ুতে মিশে।
তারপর কত দিন যে আমি
ঝরিয়েছি অশ্রুধারা, 
মোদের সুখের জীবন দেখে
হিংসায় জ্বলিত ধরা।। 
তাইতো তাকে কেড়ে নিল
একা না রাখার জন্য, 
জীবন দিয়ে সন্তান দিল
ভালবাসারই চিহ্ন।
সন্তান সবে বছর পাঁচেক 
দুরন্ত অতি ভারি,
খেলা ধুলা আর বুদ্ধিমত্তায়
তার কাছে আমি হারি।
ছেলেকে লয়ে দিনক্ষণ মোর
কাটত বেশ সারা,
মুখের পানে চেয়ে থাকিতাম 
আমি যে "সে" হারা।
একদিন দুপুরে রান্না সেরে
সবে ঠেকিয়েছি পিঠ,
খবর আসিল ছুটে চল
পুকুর পাড়ের দিক।
গিয়ে সেথা আমি বাঁক রুদ্ধ 
দম বন্ধ হয়ে আসে,
ছেলে যে আমার কথা কয়না
রয়েছে জলে ভেসে।
হায়রে বিধি নিঠুর তুমি 
কেড়ে নিলে ছোট্ট প্রাণ, 
কি অপরাধ ওর হাসিতে ছিল?
করলে মলিন চিরকাল। 
সন্তান কে বুকে আগলে ধরে 
বেঁচেছিলাম আমি,
বুক খানি খালি করিয়া
কি সুখ পাও তুমি?
তোমার বিধান বড়ই নিঠুর 
আমার,এ ধরাধামে, 
ভাবিলাম এ জীবন রেখে কি লাভ
শুন্য ধরাধামে। 
তারপর যতবার মরিতে গেছি
বিধি বাঁচায়ে দিছে,
কস্টের ভরা পূর্ণ হয়নি
আমার পাপের ত্রাসে।
এমনি করিয়া আশির কোটায়
পা দিয়েছি সবে,
জানিনা আর কতদিন
বাঁচিয়ে রাখবে মোরে।
চলতে ফিরতে ভালো মতো 
আর পারিনা প্রভু,
এবার তুমি নাও আমারে
দয়া কর কভু।
শাখের আওয়াজে ফিরিল জগতে
স্মৃতির অবসানে, 
ঝাপসা চোখে সূর্যাস্ত গেল
আরও একটি দিন শেষে।

----------------------------------------------------------------

ভক্তের পরীক্ষা
                      

শহরতলীর  এক সে মন্দির, 
রোজ পুজো হয় আড়ম্বনায়,
ভক্তবৃন্দের ঢল নামে বেশ
কীর্তন হয় নানা ভঙিমায়।
রোজ সকাল,আর সন্ধ্যাবেলা
বাড়ির সব কাজ সেরে হায়-
ছুটতে ছূটতে আসেন মন্দিরে
ভক্তি কত যে দেখাতে হয়।

কদিন হল পুরুত মশাই 
লক্ষ্য করছেন বাহির আঙিনায়, 
লম্বা দাড়ি, নোংরা মতন -
পাগল মনে ঠায় বসে রয়।
এদিকে সব ভক্তবৃন্দ-
বেজায় ক্ষীপ্ত নোংরা নব্য,
তবুও,তারা জোট বেধে রয়
দেখাতে হবে সব ভক্তিময়।

ভক্তবৃন্দের ভক্তি ভারে
দেবতার কাঁধ নড়ে না যে,
তাই তিনি ধার্য্য করলেন 
পরীক্ষা নেবেন ভক্তগনে।
একদিন ঠিক সন্ধ্যা ক্ষনে
দেবতা এলেন স্বয়ং মাঝে,
কহিলেন সব ভক্তগনে-
কেমন ভক্ত পরীক্ষা দাও মোর সনে।

মোর একখানা চক্ষু লাগিবে
ত্রিনয়ন খানা ঘাটের জলে,
হারিয়ে ফেলেছি স্নানকালে
যে জন পারিবে প্রথমে দিতে-
চক্ষুখানা জোগার করে,
সেই হবে মোর আসল ভক্ত
সন্দেহ নেই স্বর্গে রবে।

ভক্তগন সবাই ছুটিল
নানা গাঁয়ে গিয়ে হেরিল,
কেহনা দিতে রাজি হইল
ক্লান্ত হয়ে সকলে ফিরিল।
খালি হাতে সবাই ফিরে
দেবতারে কইল করুন সুরে-
চক্ষু সে-যে অমূল্য রতন 
কেউ তা নাহি দিতে পারে।

দেবতা স্মিত হাসিয়া কহে
চক্ষু সে তো পেয়ে গিয়েছি,
দিয়েছে দেখ দুরে বসে 
জীর্ন ময়লা নোংরা বেশী। 
তোমরা যখন ছুটিলে খুঁজিতে 
পাগল মতন ভক্তটি এসে,
নিজ চক্ষু হাতে লয়ে
শপিল প্রাণ মোর চরনে।

দেবতা হইয়া চাইলাম যাহা
সে তো তোমারই এক অঙ্গ যথা,
ভক্ত হওয়া কি এতই সোজা?
ত্যাগ আগে করিতে শেখ সখা।

------------------------------------------------------------------

রাজার ভয়
                   

গাঁয়ের পথ  ধরি রাজা চলিছে 
সে এক বিরাট আড়ম্বনায়,
নগর, বাজার, সেজেছে দেখ_
রং বাহারী নানা শোভায়।
রাজা চলিছে স্বর্ন রথে
সাথে,শত শত প্রহরী, 
আগে পিছে তার চলিছে যত
সেনা সেনানী দের সারি।
রাজার এহেন বিলাসিতা
চাক্ষুষ  করিবার তরে,
পথ ধারে ভীড় জমেছে,
গরিব মানুষ দলে দলে। 
ক্ষমতার অশেষ প্রতিপত্তি
লুটিয়া প্রজার সম্পত্তি, 
প্রজার ভালো করিবার জন্য
যায়না শোনা মুখে কোনো উক্তি।
প্রজাদের তবু রাজার প্রতি 
অশেষ  মনে  ভক্তি,
প্রয়োজনেতে, রাজার কাছে
যাইবার নেইকো শক্তি। 
প্রজাদের সব লুটিয়া লয়ে
দূর্বল করেছে মনে, ধনে,
দুবেলা তাদের অন্ন জোটেনা
প্রতিবাদী নয়  মনে।
ঈশ্বরের কাছে মোর প্রার্থনা 
কোনো এক প্রাতঃকালে,
প্রজাদের মনে সাহস আসুক
ফিরুক মনোবলে।
কোনো একজন সাহস করিয়া,
ভীড়ের মাঝে হতে,
চেঁচিয়া বলিবে রাজা তোর
কিসের এত ভয় লাগে?
তুঁইতো চলেছিস নিজ রাজ্যে 
প্রজাদের  ভগবান।
কেন তবে এত নিরাপত্তা লাগে,
ভাবিস তুঁই কত গুনবান।


-----------------------------------------------------------------*-

No comments:

Post a Comment