Friday, 31 July 2020

দেবযানী রায়


গল্প
-----

লেখিকা পরিচিতিঃ দেবযানী রায়। জন্ম বর্ধমানের পানাগর মিলিটারি হসপিটাল। স্কুল জীবন খড়গপুর। ছোটবেলা থেকে গান, নাচ, কবিতা, সাহিত্যে আগ্রহ। বিবাহের পর কলেজ জীবন। (বিরাটি)।


             কবিতা কুটির, প্রাঙ্গণ সাহিত্য পত্রিকা, সুজন সখির সাহিত্য পরিষদ, মহা বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ ট্রাস্ট আরও অনেক গুলো কবিতার পরিবারের আমাকে পুরস্কৃত করেছে এবং আমার কবিতা ছাপানো হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক কবিতার পরিবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
----------------------------------------------------------------

ভয় 
   

বয়স কম হয়নি, তবুও ভয়টা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। একা থাকলেই ভয়। ছোট বড় কাউকে পাশে চাই। পেলাম একটা খুব সুন্দর সুযোগ। ফেসবুকে একটি পরিবারের সাথে লাইভে আসার। কিন্তু ওই যে ভয়। আজও সেই পরিবারে আমার লাইভে আসা হলো না। শুধু ভয় বললে ভুল হবে। জ্ঞানের অভাব মানুষকে ভীত করে তোলে। আজকাল ছোট ছোট বাচ্চারাও স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে জানে। তবে ভাঙলো আমার ভয়। কিছু নারী শক্তি আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করল। কিছু বন্ধুরা ছিলেন সাথে। হ্যাঁ আজ নারীরা একহাতে রান্নাঘর সামলাচ্ছে, আর একহাতে কলমকে বন্দুকের মত ব্যবহার করছে। সেই নারীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। অবশেষে একদিন বসে গেলাম মোবাইল ফোনের সামনে। অনেক কবিতা, অনেক গান, অনেক মনের কথা আদান-প্রদান। ভীষন তৃপ্তি পেলাম সেদিন। আমি পেরেছি লাইভে এসে নিজের ভাবনাকে প্রকাশ করতে। অনেকের ভালোবাসা পেয়েছিলাম সেদিন ‌ কিন্তু মনের কোণে কোথায় যেন একটা কষ্ট বেঁধেছিলো। যারা আমাকে প্রথমে বারবার লাইভে আসবার জন্য অনুরোধ করেছিল , আমি তাদের সঙ্গে সুবিচার করিনি। কারণটা ছিল আমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভয়। কিন্তু তারা আমাকে আজও তাদের পরিবারের সদস্য হিসাবে খুবই ভালোবাসেন। আজ আমি কলমের কালিতে তাদের আন্তরিক ভালোবাসা জানাচ্ছি।।


----------------------------------------------------------------

**সত্যি, আমার সত্যি।**


মনসামঙ্গল কাব্যের কথা আমরা অনেকেই জানি। চাঁদ সওদাগর , বেহুলা, লক্ষিন্দর। এদের গল্প অনেক শুনেছি। ঠাকুমার মুখে। বাংলাদেশের বরিশাল জেলা সব ঘরে মোটামুটি মনসামঙ্গল পাঠ করা হতো। এবং নাগপঞ্চমী দিনে বাড়ি বাড়ি মা মনসা পুজো করা হতো।
                এবার আসি আমার কথায়। দক্ষিণ শিয়ালদা ট্রেন ধরে বারুইপুরের স্টেশনে নেমে একটি অটো ধরে চলে গেলাম। একটি ছোট্ট স্কুল এবং তার পিছনেই একটি শ্মশান। কোনরকম বৈদ্যুতিক উনুনে মৃতদেহ দাহনে সুবিধে সেখানে ছিল না। কাঠের আগুন ই শবদাহ হচ্ছে।
মায়ের পুজো সেখানে হচ্ছিল। আমি কিছুক্ষণ পুজো দেখেই চলে গেলাম চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখতে। সেখানেই পেলাম একটি পুকুরের ঘাট। যারা শব দাহ করছিল, তাদের প্রশ্ন করাতে তারা বলল, এই পুকুর আগে গঙ্গার সাথে মিলিত ছিল। এখানেই বেহুলা শিখেছিল কি করে মৃত স্বামীকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। কিছুটা অবাক হলাম। কিছুটা কৌতুহলী। থেকে গেলাম সেইদিনটা সেখানেই। শবদাহ শেষ করার পর, ওই ছেলেগুলো আমাকে ওখানে দুপুরে খেয়ে যেতে নিমন্ত্রণ জানালো। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। পুকুর পাড় থেকে তোলা মান কচু, কিছু আলু, কিছু ফুলকপি, সব মিশিয়ে একটি তরকারি ওরা রান্না করলো। সঙ্গে ডাল এবং ভাত।
         ‌‌ ‌ আমার পরিবার ভীষন (orthodox) জাতপাতের বিচার করেন। এমনকি বাইরে কারোর বাড়িতে বা নিমন্ত্রণ বাড়িতেও খাওয়া-দাওয়া করেন না।
        সেদিন দুপুরে আমি কিন্তু খুব আনন্দের সাথে মধ্যাহ্নভোজন সম্পন্ন করেছিলাম।
             জানি আমাদের সমাজ যারা নাকি মৃতের দাহন করে তাদের স্পর্শ করাটাও ঘৃণার মনে করে। আমি সেদিন ওদের ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে ওদের সাথেই পাশাপাশি বসে অন্ন গ্রহণ করেছিলাম।
       ‌‌        জানিনা স্বর্গের দ্বার বা নরকের দ্বার আমার জন্য কোনটা খোলা থাকবে?। আমার জীবনের এক অতি সত্যকে আজ ধরে তুললাম।

-----------------------------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment