প্রাবন্ধিক পরিচিতি: কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক গুরুদাস বিশ্বাসের জন্ম ১৯৮২ সালে। উত্তরবঙ্গ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডবল এম.এ ২০০৬, ২০১৭। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ এ বি.এড করেছেন। বি.লিস ২০১১ নেতাজী ওপেন। ২০১৩ সাল থেকে নিরঞ্জন ঘোষ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে সহকারী শিক্ষকরূপে কর্মরত আছেন। বর্তমানে মহাশ্বেতা দেবীর ছোটো গল্প নিয়ে গবেষণায় রত।
অবাণিজ্যিক পত্রিকা 'ভয়েস',' পয়ার',' সাহিত্য দিশারী, 'কুসুম',' অঙ্কুর',' প্রাঙ্গন',' মুক্তি',' কবিতা কুঠির','' প্রভাতী',' পারিজাত', আল্পনা'র কবিতা,'বিশ্ববঙ্গ',' সৃষ্টি সুধা',' সত্যম শিবম সুন্দরম',' দুই কবি',' কবিতা বাসর' এবং বাণিজ্যিক পত্রিকা 'উত্তরবঙ্গ সংবাদ' প্রভৃতিতে লিখেছেন । বর্তমানে 'ভয়েস' সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন" এর উপদেষ্টা পদের দায়িত্বে রয়েছেন। সৃষ্টি এবং গবেষণার জগৎ কবির প্রাণ প্রিয়।-----------------------------
----------------------------
🏵🏵 আমার প্রিয় মহাশ্বেতা 🏵🏵🏵
বাংলা সাহিত্য জগতের ইতিহাস ভূমিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই আমরা দেখি গতানুগতিক ধারার সাহিত্য রচনায় পরিপূর্ণ লেখনী জগৎ। সেই গতানুগতিক ধারাকে অতিক্রম করে সত্তর, আশির দশকে মহাশ্বেতা দেবী গড়ে তুলেছেন সমাজের ব্রাত্য,পরিত্যক্ত ,পতিত,নিম্ন বর্গীয় জন জীবনের পৃথিবী। ছোট গল্প তটে লেখিকার এই সৃষ্টি যেন এক নতুন দিগন্তের জন্ম দিয়েছে। কল্লোল যুগে শৈলজা নন্দ, প্রেমেন্দ্র মিত্র যখন সবে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণীকে সাহিত্যে রূপ দানের চেষ্টা করছেন,স্মরণ করিয়েদেয় সেই চেষ্টার পরিপূর্ণতা পায় মহাশ্বেতা দেবীর হাত ধরে। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ লোধা,শবর সমিতির সদস্যা। তাঁর রচনায় সম্যক রূপে ফুটে ওঠে কোল, ভিল, মুন্ডা, ওঁরাও, আদিবাসী জীবন চিত্র। নিম্নবর্গ সবসময় উপেক্ষিত। সরস্বতীর পাদ প্রদীপের তলায় যে,নিম্নবর্গীয় সম্প্রদায়ের মানুষ আসতে পারে একথা আমরা কল্পনাই করতে পারতাম না। সব সময় আমরা দেখি কোন গল্পের নায়ক হবে গ্রিক ট্র্যাজেডির মতো, শেক্সপিয়রের গল্পের নায়কের মতো সুমহান চরিত্র, বীরত্ব ব্যঞ্জক। তার একটা বংশ মর্যাদা থাকবে,বিশাল জ্ঞান থাকবে।কিন্তু একজন মাঝি, একজন বেদেনী, একজন সাঁওতালও যে হতে পারে সেটা তারাশঙ্কর এবং কল্লোল যুগ থেকে দেখতে পাচ্ছি। সেই ধারাকে বর্তমান সময়ে পাঠকের কাছে অতি সহজ সরল সাবলীল ভাষায় ঘটনার মধ্যে দিয়ে মহাশ্বেতা দেবী ছোটো গল্পের আকারে প্রেরণ করেছেন। তাঁর গল্পে আমরা 'নিম্নবর্গ' বা 'Subaltern' এর যে বাস্তব চিত্র পাই তা বর্তমান পৃথিবীতে বিদ্যমান।
আদিম মানুষ থেকে সামাজিক মানুষ হওয়ার সাথে সাথে;সমাজের কোলে জন্ম নিয়েছিল উচ্চবর্গ ও নিম্ন বর্গ। সৃষ্টি হয়েছিল সহজ ভাবেই দুই শ্রেণীর মধ্যে বিরোধ। একদিকে উচ্চবর্গের উচ্চাকাঙ্খা প্রতিষ্ঠার লড়াই, অন্যদিকে নিম্নবর্গের তা না মেনে নিয়ে বাঁচার লড়াই। যে বিরোধ সারাজীবনেও মেটার নয়।এ ভাবেই ব্রাত্য,শোষিত,পীড়িত মানুষের দলে নিম্নবর্গের স্থান লাভ। সমাজ গঠনে যে সকল মানুষ গুলো মূল কারিগর তাদের ইতিহাস আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। এই ইতিহাসকে বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই যেন সন্তান স্নেহে অবতীর্ণ হয়েছেন এদের পাশে কখনো ভগিনী কখনো অভিভাবক রূপে।তাদের অধিকার, প্রতিরোধ,প্রতিবাদ,প্রতিকার প্রভৃতি নিজের সমস্যা মনে করে কলম ধরেছেন আজীবন। তার গল্পে সেই চিত্র বার বার পরীক্ষিত হয়। সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক প্রতি ক্ষেত্রেই যে নিম্নবর্গ শোষিত হয়,সে বিষয় জানতে মহাশ্বেতা দেবীর কয়েকটি গল্পে আমরা প্রবেশ করি। গ্রামের কৃষিজীবী এবং শহরের বস্তিবাসী আর্থিক দিক থেকে নিম্নবর্গের অন্তর্ভুক্ত। সেই সঙ্গে প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকায় তাদেরকে যে চরম উপেক্ষার শিকার হতে হয় তার প্রমান মেলে'এইচ,এফ,৩৭:রিপোর্টাজ' গল্পে। গ্রামের পদ্মমনি শহরের বস্তিবাসী দিদি তারামনির বাড়িতে এসে মারা যায় ডাক্তার পুলিশ পদ্মমনির লাশ ময়না তদন্ত না করে ছাড়বে না বলে জানান। কিন্তু সে কাজে উদ্যোগী হওয়ার চেয়ে তারা (ডাক্তার, থানাবাবুপ্রভৃতি) তারামনির ছেলে বৈরাগীকে অহেতুক হয়রান করেন। থানাবাবু জেনে শুনে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাকে ঘোরান, বলে বিকেলের মধ্যে লাশ ময়না হয়ে পেয়ে যাবে বৈরাগী।অথচ থানাবাবু জানেন আজ আর ময়না তদন্ত হবে না এবং তিনি কোনো চেষ্টাও করেননি যাতে ময়না তদন্ত আজ হওয়া সম্ভব হয়। তাহলে এই ছেলেটিকে থানাবাবু এরকম প্রতারণা করতে পারেন কেন? কারণ-আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দিকথেকে বৈরাগী চরণ নাইয়া যে নিম্নবর্গের এবং সেই কারণেই তার উপর অন্যায় করা যাচ্ছে দ্বিধাহীন ভাবে তা লিখিকা এখানে স্পষ্ট করে দিলেন। এছাড়াও মহাশ্বেতা দেবীর অন্যান্য নিম্ন বর্গীয় মানুষের করুণ জীবন চিত্র লক্ষিত হয় যেমন 'হারুন সালেমের মাসি','দ্রৌপদী','বিছন','বাঁয়েন','পিণ্ডদান','বান','স্তন্যদায়িনী','সংরক্ষণ','নুন','রুদালী',সাঁঝ সকালের মা','নেশা','শনিচরী' প্রভৃতি গল্পে। তাই সম্যক রূপে নিম্ন বর্গের কথা জানতে আমাদের মহাশ্বেতা দেবীকে অধ্যায়ন প্রয়োজন। -------------------------🏵🏵------------------
No comments:
Post a Comment