কবি পরিচিতি : আমি নীতা কবি--একজন কবি এবং আবৃত্তিকার। পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের অন্তর্ভুক্ত জামুড়িয়া নামক স্থানের স্থায়ী বাসিন্দা।
আমার একক কাব্যগ্ৰন্থের নাম--বাগদেবীর আরাধনায়।কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে আবৃত্তির অনুষ্ঠান করি। দূরদর্শনেও অনুষ্ঠান করেছি। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলার পত্র পত্রিকায় আমার লেখা কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।আমি প্রাক্তন শিক্ষিকা।
--------------------------------------------------------------
জীবন মানেই রৌদ্রছায়া
জীবন মানেই রৌদ্রছায়া, জীবন মানেই যুদ্ধ জয়
জীবন মানেই কান্নাহাসি, লড়াই করেই বাঁচতে হয়
সুখের ভাগটি নেবো শুধু,দুঃখ কি তা জানবো না
কাঁটার আঁচড় না সইলে কমল তোলাও হবে না।।
মেঘ দেখে ভয় করবো কেন? মেঘ সরলেই সূর্য হাসে
দুঃখ দেখে কাতর কেন?দুখের পরেই সুখও আসে
বিধির বিধানে দিনরাত্রি, অন্ধকারও চায় যে ভাই
রাত্রি এসে ক্লান্তি জুড়ায়, রাত্রি-মাতার কোলটি চায়।
অন্ধকারটা আছে বলেই আলো এতো কদর পায়
প্রখর রোদে জ্বলে-পুড়ে ছায়ার খোঁজে মরি তাই
কালবোশেখীর ঘন ছায়ায় চাঙ্গা হয়ে মনটা সাজে
কাল-ভৈরবী ঝড়ের তোড়ে আসবে কিছু পৃথ্বী মাঝে।
মন্দ আছে বলেই আমরা ভালো কি তা জানতে পারি
ভালোকে তাই মাথায় নিয়ে মন্দটাকে পরিহরি
সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না, ভালো মন্দের বেড়াজালে
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা আমরা ,রেহাই যে নেই কোনোকালে।
অমাবস্যা আছে বলেই পূর্ণিমা-চাঁদ সবাই চাই
অপূর্ব সেই চাঁদের মুখেও কলঙ্কটা দেখতে পাই
রৌদ্রছায়া, সুখদুঃখ যা আসবে তাই গ্ৰহণ করো
চক্রাকারে ঘুরছে সবই জীবনটাকে খুশীতে ভরো।
-------------------------------------------------------------
খেটে খাওয়া মানুষ
রক্তাঙ্গনে পড়ে আছে ,দেখো, কত শ্রমিকের লাশ
বাঁচার তাগিদে খেটে খায় ওরা, কাড়ে নাকো কারো গ্ৰাস
দুনিয়ার যত মেহনতি আর মজুর মুটে ও কুলি
তোমরা গড়েছো সুখের সৌধ, নিজের স্বার্থ ভুলি।
শোষক করেছে শোষন, তোমার ছিন্ন ভবিষ্যৎ
শত নিপীড়ন সহ্য করেও তোমরা থেকেছো সৎ
আট ঘন্টার লড়াইয়ে যখন চলেছে শব-মিছিল
বাবুদের যত লোভের পাহাড় কিছুটা হয়েছে শিথিল।
অবশেষে জয় হয়েছে যখন গর্জেছে ভুখা মজুর
মজুরের সাথে আমরাও আছি, বেজেছে জয়ের সুর।
অবহেলা আর অসাম্যে ভরা আমাদের এ সমাজ
শিশুরা তোমার পায় না শিক্ষা, আঁধারে ভরেছে আজ
সবার জন্য চায় যে শিক্ষা, চাই যে জ্ঞানের আলো
ভালো থাকবার অধিকার নিয়ে তুমিও থাকবে ভালো।
এই দুনিয়ার মেহনতি যত নিপীড়িত মজদূর
নত করি মাথা,
সেলাম তোমায়, সেলাম তোমাকে বীর।
-----------------------------------------------------------------
মুক্ত বিহঙ্গ
খাঁচায় বন্দী পাখিরে তুমি বল, "গান গাও ওগো পাখি
নীল-নীলিমায় উড়ে যাও তুমি ,আমি চোখ ভরে দেখি"
পাখি বলে, "ওগো খাঁচা খুলে দাও, তবে তো গাইবো গান
আমার কণ্ঠে সুন্দর তান সে তো বিধাতারই দান।
তাঁহার উপরে চালাবে কলম? এতো দুরন্ত আশা
তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে ভুলে যাই সব ভাষা
পাখি বলে আমি সুন্দর শুধু নীল আকাশের কোলে
তোমরা মানুষ শোভা দেখ আর ধরে রাখ ছলে বলে।
বন্যেরা যেমন বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃকোলে
তেমনি আমরা উড়ে খুশী হই, দোল খাই ডালে ডালে
বিহগ-বিহগী নিজ নীড়ে বসে কথা কই, ভালোবাসি
ওড়ায় মোদের জীবনের ব্রত, গান গাই আর হাসি।
খাঁচায় বন্দী করে রাখ আর নিজেদের ক্ষতি ডাকো
বিধাতার গড়া পৃথিবীটাকে কলুষিত করে রাখো
তাই তো বলি ছেড়ে দাও মোরে, উড়বো বিশ্বজুড়ে
সুন্দর গানে ভরাবো ভুবন, আমরা যে ভবঘুরে।
ভোরের পাখি তোমাদের বলি, উঠে পড়ো, বেলা হোলো
ঘুমিয়ে থাকলে পিছিয়ে পড়বে, এইবার আঁখি খোলো
ফুল আর পাখি বিধাতারই দান, কোরো না খাঁচায় বন্দী
ধরো না আমায়, আমার বিহনে এ পৃথিবী প্রতিবন্ধী।
---------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment