Wednesday, 29 July 2020

কবিতা : শিখা পাল

কবি পরিচিতি :  শিখা পাল। 
নিবাস --হাওড়া জেলার  রামরাজাতলা । 
পেশা -- অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী।  


সাহিত্য জগতে প্রবেশ -- চাকুরী জীবনের অবসরের পর লেখালেখিটা ই এখন নিত্যসঙ্গী।

--------------------------------------------------------------


অস্ত যাবার বিদাy বেলা

                 
অস্ত যাবার বিদায় বেলায়,     যখন আকাশ টা 
কনে দেখা রঙে মেতে উঠেছে ------
ঠিক তখনই ,   দিগন্তের এক কোনে
পুঞ্জীভূত কালো মেঘ 
            আকাশ টা কে গ্রাস করেছিল! 
আমি তখন  আকাশের জাফরানি রঙে 
             স্মৃতির কোলাজ সাজাতে ব্যস্ত। 
হায়!    নিমেষে দমকা ঝড়ে,   ভেঙে গেলো স্মৃতিগুলো ;
যেভাবে ভেঙে যায় বুকের ভেতর 
                বয়ে যাওয়া সাগরের ঢেউ, 
সবাই তো রাতের রজনীগন্ধা হয়না ---
ঝরে পরা শেফালীও হয় কেউ! 
কত প্রেয়সীর উরুতে আঁকা থাকে ধুসর মরু--
                                   আদ্রতা বিহীন ----
কারো বুকে অভাবি ভালোবাসা --  ভীষণ কঠিন! 
তবু জানি -- রাত্রির শেষে আবার আসবে ভোর 
আঘাতে আঘাতে জ্বলবেই বিক্ষোভ। 
অশ্রু ধারায় নেভাবো বুকের চিতা ---
পাঁজরে জমানো আকণ্ঠ অভিমান 
হৃদয়ের এই ভিক্ষা পাত্রে যত টা করেছো দান। 
ব্যাথার বাঁশিতে বেহাগের সুর বাজে ------
আমি মেঘে ঢাকা রাতে জোছনা ঝরাবো 
                         যতটুকু আলো আছে। 
নীহারিকা পথে বারবার যাই, বারবার ফিরে আসি
তবু আশা নিয়ে বাঁচি ---------
তুমিও কি ভালো আছো! যেমন আমি আছি! 
এই পৃথিবীর একই কক্ষে,  একই রাখি পথচলা 
বারেবারে যদি করো উপহাস, বারেবারে করো অবহেলা। 
যতবারই তুমি সাজাবে মিথ্যে,  তোমার ইচ্ছে মত
ততবারই আমি সঞ্চয়ে রাখি হিসাবের সব ক্ষত ।।

              
-----------------------------------------------------------

যদি হঠাৎ দেখা হয়


যদি হঠাৎ দেখা হয়!     মুখোমুখি আমরা দুজন 
সময় থমকে যাবে,       নীরব কথোপকথন। 
তবে তাই হোক ---------
অস্তগামী সূর্যের ম্লান আলোয়
          হয়তো তুমি ফিরে যাবে ----
আমিও যাবো  সাঁঝেরবাতি হয়ে জ্বলতে! 

প্রত্যাশা বুকে নিয়ে আবার আসে ভোর --
আবার রক্তাক্ত হই,  , আকাঙ্খা বুকে নিয়ে ;
আবার বসত করি বুকের ভেতরের 
                     এক নির্জন মানচিত্রে। 
প্রতিটা মুহুর্তকে করি আলীঙ্গন যুগান্ত পেরিয়ে যাবার, 
লক্ষহীন হাল ভাঙ্গা নাও য়ের মত ভেসে যাবার। 

তবে  তাই  হোক --------
এই অসুখেই বারবার মরতে চাই --
অপেক্ষা বোধহয় এই ছোঁওয়াচে রোগের 
                        মারাত্মক  এন্টিসেপ্টিক ওষুধ! 
প্রতিদিন অসংখ্য বার মৃত্যু হয় -----
আবার প্রাণদায়ী ক্লোরোফিলের মত বাঁচিয়ে তোলে 
                     ---- এই  অপেক্ষা! 

তবে  তাই  হোক --------
তোমার শহরে নামুক সুখের বৃষ্টি
              আর আমার থৈ থৈ জল --
তোমার যখন  রোদেলা আকাশ 
জানবে -- সেই খরতাপে আমি পুড়ে যাই অনর্গল।। 


-------------------------------------------------------------


বিদায়ের ক্ষণ 
                        
                     
ভাগ্যিস ছেড়ে গেছিলে,   না হলে বুঝতাম না
তোমার দাবার আসরের কিস্তিমাত -----
ইচ্ছাকৃত ভুলে আমার ঘোড়াও টপকে যায়নি 
বুকের ভেতর গুছিয়ে রাখা ভুলের হিসাবও করিনি  
                                                       পাঁচ - সাত। 
চেতনার অবচেতন - কখন যে ব্যবধান গড়েছিল
তামসী রাতের নগ্ন প্রেম বিন্যাসে ----
সেদিনই জীবনের বৃত্ত ছিন্নভিন্ন হয়েছিল 
ছন্নছাড়া অস্থির ভবঘুরে বাতাসে। 

বুকের বামদিকে যে মন্দির আছে 
সেখানে পালন করেছি মর্মান্তিক নীরবতা ;
অফুরন্ত ধূলো জমা খাতাটির প্রতিটি ভাঁজে
লুকিয়ে আছে না পেয়েও হারাবার প্রচ্ছন্ন বার্তা।

আমি সেদিনটা আজও খুঁজে ফিরি 
যেদিন আমার ভিজে চুলে ছিল মিষ্টি গন্ধ! 
আজ সাদর সম্ভাষণ জানাই অসীম ধৈর্যকে
নিঃশব্দে বয়ে চলা ধমনী জুড়ে উষ্ণ প্রবাহকে! 

তপ্ত বুকে নেমে এসেছে দুচোখের রংহীন বৃষ্টি,
একঝাঁক ভেজা বাতাস....  আবার জানাই অভিবাদন! 
নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা অস্থির পাদু’টো -----
              -------- আর সেই বিদায়ের ক্ষণ....!! 

-----------------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment