Wednesday, 29 July 2020

দীপঙ্কর নস্কর

কবিতা
--------

কবি পরিচিতি : আমি শ্রী দীপঙ্কর নস্কর। সুন্দরবন অধ্যূষিত দক্ষিণ ২৪ পরগণার অন্তর্গত ষষ্ঠীতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করি 1975 সালের 18 ই জুন ।গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে 1999 সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ পাশ করি। পরে স্কুল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে 2004 সালে উত্তর ২৪ পরগণার সীমান্তবর্তী শহর বসিরহাট হাই স্কুলে বঙ্গ ভাষা সাহিত্য বিভাগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি।

আমি বিবাহিত, আমার স্ত্রী ও এক পুত্র সন্তান আছে।বর্তমানে আমি মধ্যমগ্রাম ও বসিরহাট দুই এ থাকি। 


-------------------------------------------------------------

উত্তর আকাঙ্ক্ষা 


অন্ধকারের কাছে চেয়েছ নিজস্ব আলো----
একটা ছায়ার বৃত্ত ঘোরে জীবনের আচ্ছাদনে দিকচক্রবাল। 
অহংকারের প্রদর্শনী --ভেজা সলতের মতো চুপসে গেছে।
আপাতত কয়েক দিন বন্ধ থাক রাজনীতির সিংহ গর্জন।
এই সকালে মনের ছায়াঘন পথে পৃথিবীর অসহায় আর্তনাদ। 
আজ যে,লাসের ট্রেনটা এসে দাঁড়াল সিফন অন্ধকারে --
কী জান্তব উল্লাস তার শরীরে,বুক ফুলিয়ে চলে সে নগরের পথে পথে।
কোন প্ল্যাটফর্ম নেই তার। শুধু লাস পড়ে থরথরে।
কটা লাস হিন্দুর,কটা লাস মুসলিম কে তার হিসাব রাখে?
কে হিসাব রাখে হত্যা নির্মম না হত্যা জীবিকার?
লোল জিহবা প্রকান্ড ইস্পাত ঝলসে ওঠে দিগ্বলয়ে।

শুধু একটা লাস বেঁচে ছিল কিটের গহ্বরে--ঝকঝকে রক্ত গায়ে মেখে,লক্ষ্য ভেদের ঋজুতা ভরে।
নতুন সমাজ গড়ার বিশ্বকর্মা সে।
সব মৃতদের পারলৌকিক করবে একা প্রমিথিউস। 
হয়তো প্রতিশোধ নেবে লোল হিংসার,
হয়তো হিসাব নেবে প্রত্যেক প্রিয় জনের চোখের জলের,
হয়তো বা মাপ করে দেবে সকল জিঘাংসার।
হয়তো তোলপাড় চরাচরকে আনবিক সংঘাতে ভগ্নাংশ করবে,
ছেঁড়া ছেঁড়া পাতার নকশিকাঁথা আঁকবে সব মরণের।
হয়তো পৃষ্ঠা সংযোজন করবে নতুন জীবনের। 
হয়তো বা বুকের দুই অলিন্দের মাঝখানে বিছিয়ে রাখবে এক আমির সকাল।।


------------------------------------------------------------

স্নেহময়ীর মাতৃত্ব 

  

 স্বামী শ্বশুরের বাসভূমি স্নেহময়ীর ------
ধানের গোলা,তুলসীর মোচ্ছব, রান্নাঘর থেকে মুখ  বাড়ানো পুকুর তার। 
কলমির গন্ধ, পানকৌড়ির ডুব,স্বামীর ডাক শুনতে পায় অনুভবী মন।
শান বাঁধানো পুকুরতলায় বসে কত পূর্ণিমার রাত কেটেছে তাদের। 
স্বামী চলে গেছে বন্ধ্যাত্বের পূর্ণচ্ছেদ টেনে---
আগের দিন রাতে পুঁই ডাটা খেয়েছিল দোহে।
শুকনো শুষ্ক পাঁজরে দুঃখ চেপে থাকে মাজা পড়া শরীরে।
টাটকা সে স্মৃতি হৃদয়ে ফোঁপানি দিয়ে ওঠে আজো।

আজ তাকিয়ায় বসে খোলা খাতায় জীবনের ডিসপ্লে দেখতে দেখতে অকস্মাৎ শুনতে পায় মা ডাক।
শুকিয়ে দড়া ওঠা ফ্যাংগাস বুক দুটো টনটন করে ওঠে---দুধের ভারে।
নিঃসম্বল বুকে জাপটে ধরে পরম মমতায়, 
নাতৃহারা সাহিনুল ইসলাম সাহিন কে।
কাম গন্ধহীন জল হাত বুলিয়ে দেয় নিজের বিছানায় --নিঝুম নিশুতি রাতে।
তৃষ্ণার্ত চোখ দুটি ফসফরাসের মতো জ্বলে চলে অনিমিখ।
একথালা চাঁদ বাতায়নে এসে আলতো করে ঘুম পাড়িয়ে দেয় তাদের। 
সকালে এক বান্ডিল গোপনাভিসারের কালশিটে ছোপ এঁকে দেয় নপুংসক শরীরে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কবর দেয় অপত্য স্নেহের। 
গ্রাম্য গন্ধ মুছে দিয়ে মিশে যায় শহুরে অস্তরাগে।
ওঠোনে পড়ে খাকে বাসি ভাতের থালা---
দুটি প্রত্যাশী চোখ নিয়ে।


---------------------------------------------------------------

একাকিত্বের প্রস্থান 


একক প্রস্থান আমার লিচ্ছবি পক্ষপুট হয়ে,
কুঞ্চিত ভ্রুরেখা অকম্পিত দূরপথ চিত্তাকাশে।

অনুভূমিক পথ চলি রপাসক্ত হাস্যে-লাস্যে,
জ্যোস্নারাতের আহ্বানে আসি তপ্ত বালুচরে।

ধৈর্যে ক্লান্তি বাঁসা বাঁধে শত জনমের পাপে,
নিষ্ঠুর অগ্নিশিখা তুলে ধর অবগুণ্ঠন ফাঁকে।

ঝড়ের পর বাতাসের স্বচ্ছতা দৃষ্টিজালের কুহকে,
বৃষ্টির ধারাক্রম পুরুষাঙ্গ আঁকে ধূমায়িত ভোরে।

অবশিষ্ট পথ আছে বাকি প্রতিহিংসা শেষে,
পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব মায়াচিত্র ফেলে।

যতই ডাকো যতই কাঁদো হ্রস্ব -দীর্ঘ স্বরে,
লোকাল ট্রেন ছেড়ে দেবে মৃত কক্ষ ধরে।

যতই থাকুক রূপ যতই ছুরমা লেপো চোখে,
মৃত কাফন ঢেকে দেবে সব অভিশাপ বর্ধিত করে।

নির্জন তীরে এসো প্রদীপ হাতে করে,
প্রেতাত্মার সাথে কথা হবে রাত গভীর হলে।।

------------------------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment