Friday, 31 July 2020

দীপ্তাংশ রায় মুখার্জী

কবিতা 
--------

কবি পরিচিতিঃ দীপ্তাংশ রায় মুখার্জী''র জন্ম ২৪শে জুলাই ২০০৩ সালে  কলকাতায়। বাবা দেবব্রত আর মা অনিতার উৎসাহে কবিতা লেখায় হাতেখড়ি। স্কুলের দেওয়াল পত্রিকার জন্য কবিতা লেখা শুরু মাত্র ১৩ বছর বয়সে। আস্তে আস্তে কবিতা ও পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। বর্তমানে বয়স ১৬ বছর এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত।

 "বৃষ্টি আসুক অন্য দিন " বলে একটি কাব্যগ্রন্থ সপ্তর্ষি প্রকাশনী থেকে ২০২০ বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাঙ্গণ সাহিত্য পত্রিকা, অনির্বাণ, ছায়ামান, নবসাহিত্য কমল, স্বপ্নের কনভয় , সোনারতরী , বঙ্গীয় সাহিত্য দর্পণ প্রমুখ পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা ছাড়া সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগ। প্রিয় উপহার বই ও কলম।

----------------------------------------------------------------

ক্যালেন্ডার


সকালে উঠে গেলাম দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারের কাছে ;
কান পাতলাম এপ্রিলের তারিখগুলোর দিকে। 

কানে কাদের যেন কান্না ছুটে আসে ;
কানে ছিটকে ছিটকে আসছে কাদের যেন রক্ত। 

ওপরে বড়ো হাতে লেখা ২০২০ চেঁচিয়ে শুধু বলে --- 
" এপ্রিল এখনো নৃশংস। এপ্রিল এখনো মানুষ মারতে ভোলেনি... "

তোমারা তাই ক্যালেন্ডারের গা'য়ে কেউ কান পেতোনা। 
প্রতিটা মৃত্যু রয়েছে তার গ্রথিত। প্রতিটা মৃত্যু তার তারিখ দিয়ে বোনা....


----------------------------------------------------------------------

চিরসখা হে !!! 


মাগো! তোমার কঙ্কালমাখা গা'য় ;
রেললাইন দিয়ে শ্রমিকেরা হেঁটে যায়। 

তাদের; পায়ের নীচে আগুন জ্বলে, পায়ের নীচে রুটি, 
ভিক্ষার হাতে রক্ত, তবু আলগা হচ্ছে মুঠি 
পায়ের নীচে আগুন জ্বলে, পায়ের নীচে রুটি। 
হাজার মাইল হেঁটে আজও রেললাইনের ধারে 
ভারতবর্ষ!! ভারতবর্ষ!! মানুষ মারতে পারে। 
অশোক চাকা, ফাঁকা পেটের নীলচে রক্ত খায় ---

রাস্তায় যতো মৃত্যুর ব্যারিকেড ; 
আর রেললাইন দিয়ে শ্রমিকেরা হেঁটে যায়। 

এখন আসে দূরের চিঠি। এখন বাড়ি ফেরা 
তাদের দেহ মায়ের আঁচল ঘেরা 
তাদের রক্ত সিমেন্ট বানায়, তাদের রক্ত বাড়ি, 
তাদের চাপা দিয়েছে আজ তাদেরই রেলগাড়ি 
তাদের রক্ত আমায় বানায়, বানায় আমার বাড়ি। 

মহামারী বা অনাহার সবই মরে ;
মৃত্যুর পর ওরা তবু কাজ করে, তোমার-আমার ঘরে। 

মাগো! ওরা দিনের শেষে খাবার খেতে চায়... 

আমার বুকের রেললাইনে শ্রমিকেরা হেঁটে যায়। --- 

--------------------------------------------------------------------

পোড়া পাউরুটি


এতদিন পর পেয়েছো একটা পাউরুটি, 
তাও আবার পোড়া। 
কপালে হাত দিয়ে দেখলে বোঝা যায় অনেকটা তার মতো, 
কিংবা যেমন তোমাদের ডোমঘর। 

তবে শুধু পাঁউরুটিটা পোড়া ছিল না, 
তার থেকে দু'পা এগোলেই গড়ে উঠেছিল 
যে পাঁচ তারার নীল রক্তের কোলাহলে ভরা কাঁচের রেস্তোরাঁ 
সেখানেও পোড়ানো হচ্ছিল বাদশাহী চিকেন তন্দুর। 

একটা লোহার রডে লেগে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী মাংস ;
যা কয়েকদিন আগে মালিকের পারদর্শীতায় 
রক্তরঞ্জিত হয়েছিল তার পিঠে, 
আজ সেই লোহার নীচেই তপ্ত আগুন। তুমি দেখতে পাওনা?? 
পাওনা শুনতে হাতুড়ির চিৎকার?? 

এভাবেই চলে যায় দিন, বসন্ত চলে যায় ক্ষতচিহ্নের উপর দিয়ে, 
ধীরে ধীরে জমাট বাঁধে রক্ত। 
এখন তাই দিন বদলেছে। সময়ের কপালে লাল স্বপ্নের টিপ। 
এখন তাই চল্লিসটা ফুটপাথ বদল হওয়ার পর 
একশোচল্লিসটা রেস্তোরাঁয় ঘাম ঝরানোর পর 
হাজার চল্লিসটা লোহার রডে কাটা মাংস ঝোলানোর পর 
চল্লিস লক্ষ ব্যারেল রক্ত ঝরিয়ে ---

একটা পোড়া পাঁউরুটি হয়ে যায় ঘিঞ্জি বস্তির আধ-খাওয়া মানচিত্র। 
পাউরুটিতে জন্ম নেয় চল্লিস কোটি বিপ্লব... 

[শ্রেণিহীন সমাজের চিরবাসনায় ]


--------------------------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment