Wednesday, 29 July 2020

গল্প : অনিতা রায় মুখার্জী

লেখিকা পরিচিতি : অনিতা রায় মুখার্জী  একজন গৃহবধূ। তার ছেলে দীপ্তাংশু রায় মুখার্জী একজন প্রতিভাবান তরুন কবি, সেই সুবাদে তিনি সাহিত্য জগতে পদার্পণ করেন এবং লেখালিখিতে মনোনিবেশ করেন। সেই থেকেই সাহিত্য জগতের সাথে তিনি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। 

বর্তমানে তিনি প্রাঙ্গণ সাহিত্য পত্রিকার প্রচার বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তাছাড়া আরও কটি পত্রিকার সাথে তিনি যুক্ত রয়েছেন। 

------------------------------------------------------

 সিঁদুরে মেঘ


         শাড়ির আঁচলটা দিয়ে কপালের ঘামটা মুছে সুতপা অন্য মনস্ক হয়ে ছেলেকে খেতে দিতে দিতে কি যেন ভাবছিল। দূর থেকে একটা কথা কানে ভেসে এল " বলি কত বেলা হয়ে গেল আজ কি আর খাবার জুটবে নাকি নিজেকেই বেড়ে খেতে হবে!"কথাটা শোনামাত্রই সুতপা তড়িঘড়ি করে উঠে গিয়ে ছেলেকে বলল "তুই খেয়েনে বাবা আমি একটু তোর ঠাম্মিকে খেতে দিয়ে আসছি।"সারাদিন ছেলের ও সংসারের পেছনে হাড়ভাঙা খাটুনির পর সুতপার শরীরটা যেন আর চলে না। এমনিতেই গরমের জন্য কদিন তার ভালো করে ঘুম হয়নি তারপর আজ একটু অবসন্ন ও ক্লান্ত লাগছিল।সকাল থেকে আকাশটা মেঘলা থাকায় গরমের আঁচটাও একটু কম লাগছিল তাই সব কাজ শেষ করে বিছানায় গড়িয়ে পড়তেই কখন চোখ লেগে যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছিল তা সে টের পায়নি। স্বপ্নে দেখলো - লাল বেনারসী শাড়ি, লাল টিপ, ইষৎ কালো এক মেয়ে দু'হাতে একটা উপকরণের থালা ও তাতে ভর্তি সিঁদুর নিয়ে বসে আছে পাশের কোন এক মন্দিরের সিঁড়িতে। আর কে যেন কোথা থেকে কলসিভর্তি  জল এনে তার গায়ে ঢেলে দিচ্ছে । উত্তেজিত হয়ে মেয়েটি কিছু করতে যাবে তখনই হঠাৎ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল খাটিয়ায়। পাশে বাবু ঘুমোচ্ছে। মনে পড়ে গেলো ওঁর কথা। সেই কবে না বেরিয়েছে এতো দেরি হয়ে গেল,খুব বেশি দেরি, এখনো ফেরেনি। বাইরে ঝড় উঠেছে কাপড়গুলো এবার তুলতে হবে। উঠে, গভীর কালো দুটো চোখ তুলে বাইরের দিকে তাকাতেই সে দেখতে পেল কালবৈশাখীর সেই ভয়ঙ্কররূপ।ঝড় উঠলেই তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন অস্থির হয়ে হঠে। কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে।কোথাও আলোর লেশমাত্র নেই। পড়ন্ত বিকেলের আলোটাকেও যেন অন্ধকার গিলে খেয়েছে। মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুতসহ তীব্র আলোর ঝলকানিতে ঘরটা যেন কেঁপে উঠছে। সুতপা ছেলেকে আঁকড়ে ধরে বসে আছে।ঝড়ের সোঁ সোঁ আওয়াজে তার বুকের ভেতরটা উথালপাথাল করতে লাগলো।গাছপালাগুলি এমনভাবে দুলছে।  

--------------------------------------------------------+--+

No comments:

Post a Comment