লেখক পরিচিত্তি : হাওড়া জেলার বাড়কোলিয়া গ্রামে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে জন্ম সাহিত্যিক অশোকবরণ চক্রবর্তীর। বাবা পতিতপাবন চক্রবর্তী, মা অতসী চক্রবর্তী। বাড়কোলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কোলিয়া আমির আলি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন কেটেছে। উলুবেড়িয়া কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক। বাংলাসাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবন শুরু কলকাতার টেলিফোন ভবন-এ। পরে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় যোগ দেন। চাকরিসূত্রে আধিকারিকপদে অনেক দূর-দূর জায়গায় থাকতে হয়েছে শ্রীচক্রবর্তীকে।
সাহিত্যচর্চা শুরু স্কুলজীবনেই। সেইসময় বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর বেশকিছু গল্প-কবিতা প্রকাশ পায় । তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় শুকতারা-য়। ব্যাঙ্ককর্মীর ব্যস্ত কর্মজীবন তাঁকে সাহিত্যচর্চা থেকে খানিকটা দূরে রাখলেও একেবারে থামাতে পারেনি। এখন নানা পত্র-পত্রিকায় গল্প-কবিতা লিখে চলেছেন। কলকাতার 'দক্ষভারতী' থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ভিন্ন-ভাবনার গ্রন্থ 'কাপুরুষনামা', যা সুধীসমাজে প্রশংসা পেয়েছে। শ্রীচক্রবর্তীর লেখায় থাকে একটা সহজ-সরল সাবলীল ভঙ্গি যা পাঠককে সহজেই আকৃষ্ট করে। শব্দচয়নে পরিমিতিবোধ এবং রচনার প্রসাদগুণ লেখককে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য দান করেছে।
স্ত্রী অঞ্জনা । দুই ছেলে -- তিতাস এবং তীর্থ । বর্তমান ঠিকানা -- বাজারপাড়া, উলুবেড়িয়া, হাওড়া। প্রত্যন্ত গ্রামে বড়-হওয়া এই সাহিত্যিক ভুলতে পারেন না গ্রামকে -- তাঁর জন্মভূমিকে; সময় পেলেই ছুটে যান বাড়কোলিয়ায় । বাগান করার ঝোঁক ছোটবেলা থেকেই । তাঁর উলুবেড়িয়ার বাড়ি-সংলগ্ন ছোট্ট বাগানের পরিচর্যা স্বহস্তেই করতে ভালবাসেন তিনি । আর ভালবাসেন এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতে । অজানা জায়গা, অচেনা মানুষ তাঁকে টানে । তাঁর মোবাইলে সবাই স্বাগত -- ৮৬১৭৭৯১৩৩৬।
--------------------------------------------------------
না-বলা কথা
অনসূয়া বলল,''সম্ভবত এটাই আমাদের শেষ দেখা, আকাশ । বিয়ের পর বরের সঙ্গে বিদেশে চলে যাব, আর হয়তো কোনওদিন দেখা হবে না আমাদের ।''
আকাশ চুপ করে থাকে । এত দীর্ঘ দিন প্রেম করার পর প্রেয়সীকে বিদায় জানাতে হয়তো কষ্ট হচ্ছে তার । অনসূয়া বলল,''চুপ করে আছো কেন, কিছু তো বলো ! বলি-বলি করেও যে কথাটা এতদিন বলতে পারোনি, এমন কোনও কথা যদি থাকে তোমার তো সেটা বলার এই শেষ সুযোগ, আকাশ !''
''তোমারও কি সেরকম কোনও কথা বলার ছিল, অনু ?''
''ছিলই তো । কিন্তু এখন আর তা বলার প্রয়োজন নেই বোধ হয়। বরং তোমারটাই শুনি ।''
অনসূয়ার দিকে কিছুক্ষণ মিটিমিটি করে তাকিয়ে রইল আকাশ । তারপর বলল,''এই বিদায়ের লগ্নে কথাটা বলতে ভাল লাগছে না যদিও, তবু সত্যিটা জানাই তোমায় -- বেশ ক'বছর ধরে তোমাকে অসহ্য লাগছিল, বলি-বলি করেও চক্ষুলজ্জার খাতিরে সেটা আর তোমায় বলে উঠতে পারছিলাম না ।''
''ও মা তাই !'' ঝলমল করে উঠল অনসূয়া, ''বাঁচলাম । আমাদের মধ্যে কী দারুণ মিল দ্যাখো, আমিও ঠিক একই কথা এতদিন তোমায় বলি-বলি করেও বলতে পারিনি !''
------------------------------------------------------
বেহায়া
সূর্যটা সবে উঠেছে, একখণ্ড কালো মেঘ হাওয়ায় ভাসতে-ভাসতে ঢেকে দিল তাকে । কুঁড়ি থেকে সদ্য-ফুল-হয়ে-ফোটা জবা তার মাকে বলল,''মা, দ্যাখো দ্যাখো, আমার রঙের কাছে হেরে গিয়ে সুয্যুটা লজ্জায় মুখ ঢেকে নিল !''
মা অবাক হওয়ার ভান করল,''ও মা, তাই তো দেখছি !''
খণ্ড মেঘ । একটু পরেই তা সরে যেতে আবার সূর্যের জবাকুসুমসঙ্কাশং রূপ প্রকাশ পেল । বিরক্ত জবা তার মাকে ডেকে বলল,''মা, দ্যাখো, বেহায়াটার লজ্জা নেই এতটুকু,ও আবার বেরিয়ে পড়েছে ।''
মা হাসল,''বেহায়াদের লজ্জা থাকতে নেই মামণি !''
---------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment