Wednesday, 29 July 2020

চন্দনা দে সিনহা

গল্প
-----

লেখিকা পরিচিতি : বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী এবং কবি , লেখিকা চন্দনা দে সিনহা। প্রাক্তন বেতার শিল্পী (কলকাতাযুববানী), কথিকাকার,ভারতনাট্যম এবং কথক নৃত্যে সিনিয়র ডিপ্লোমা (সুন্দরম থেকে)। কলকাতা তে জন্ম,খড়দহে রহড়া ভবনাথ থেকে মাধ্যমিক করার পর কলকাতা কলেজেপড়াশোনা এবং লেখা লেখি শুরু। দর্শনে এম্এ , কলকাতা হেস্টিংস  এ বিএড । এম এ পড়াকালীন দিশারী মাসিক পত্রিকা‌ সম্পাদনা করেন।বিবাহসূত্রে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সেখানে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ও ন্যাসানাল বালভবনের সঙ্গে যুক্ত। 

১৯৯২সালে কলকাতা আর্ট চারুকলা  থেকে 'চিত্রকলা পারদর্শী ' খেতাব হাসিল। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় কবিতা , অণুগল্প, সাহিত্য চর্চা শুরু। পশ্চিমবঙ্গের বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য । বাংলা রাইটার্স ফোরাম , মহা বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ  , ছায়া প্রকাশনী  একই বৃন্তে দুটি কুসুম,পত্রিকায় এবং কবি সম্মেলনে কবিরত্ন ও শারদসন্মান, নানাবিধ সন্মানে ভূষিতা।

-------------------------------------------------------

      
প্রকৃতির অট্টহাসিতে ধরা উঠল কেঁপে,এক লহমায় সব তোলপাড় ,সবভাসিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে , ঠিক সেই সময় ডানা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে ঢুকে পড়ল ছোট্ট একটা বাদুর।বাপরে,!!যেমন করেই হোক ওকে তো ঘর থেকে বের করতেই হবে ---সে যেমন করেই হোক।রুনঝুনের নরম কাদার মতন মনটা সায় দিচ্ছিল না,ও বলে , 'থাকনা মা ও কত্ত টুকু 
এই ঝড়ে ও বাঁচবে না গো'
তাই বলে ওকে ঘরে থাকতে দেওয়া যায়?? আমাদের প্রানপন চেষ্টা তে বাইরে বের করতেই ঝড়ের দাপটে একবার বারান্দায় মুখ থুবড়ে পড়ল , তার পর আবার বাঁধা কাটিয়ে ঝাপটাতে থাকল । রুনঝুন আর একবার আবদার করে ''ঝড়ের পড়ে ই না হয় মা"
'কি যে বলিস না তুই - ছাড়ত।' দড়জা দিয়ে আমরা ঘরে।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি রুনঝুনবাইরে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমিও প্রকৃতির ধ্বংস দেখি । মনটা একটু খচখচ করে গতকাল রাতে কি ঠিক করলাম  ছোট্ট প্রাণীটাকে একটু সময় একটু জায়গা না দিয়ে। তারপর নানা কাজের পর সুখঘুমের জন্য নরম বিছানায়। চোখে রাজ্যের ক্লান্তির ঘুম। চোখে র পাতা ভারী হয়ে আসছে------
হঠাৎ দেখি  ঘন কালো মেঘ ঈশান কোণে আর আমি সেই মেঘের কোণে  আমার বড় বড় দুটো ডানা ঝাপটাচ্ছি, ঝাপটাতে ঝাপটাতে আমি মুখ থুবরে পড়ছি, আমি আবার নামতে চেষ্টা করছি, আমার ডানা দুটো ভারী হয়ে আসছে, উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম, উপর নীচ কোথাও কোন কুল কিনারা নেই, আমার চোখের সামনে সমস্ত দিক যেন অসীম অন্ধকার।দম বন্ধ হয়ে আসছে, আস্তে আস্তে আমার পৃথিবীটা যেন ছোট হয়ে আসছে গোল গোল   হয়ে একটা ছোট্ট বিন্দুতে পরিণত হচ্ছে, কেউ কোথাও নেই চারিদিক শূন্য , আমি চিৎকার করে উঠি কোথায় আছো আমার গলা শুকিয়ে আসছে একটু জল, একটু জল --বাঁচাও বাঁচাও----
"কি হল মা কি হয়েছে তোমার? ",----ঘুম ভাঙলো মেয়ের ডাকে, আস্তে আস্তে উঠে বসলাম পা দুটো যেন আমার খুব ভারী হয়ে এসেছে, হাত দুটো বেশ ব্যথা, গতকাল বেশি কাজ করে ফেলেছি। কিন্তু ওই দুঃস্বপ্ন-----ওটা কি শুধুই স্বপ্ন ছিল, কাউকে কিছু বললাম না, বলতে পারলাম না , শুধু নিজেকে ধিক্কার দিলাম, নিজের স্বার্থপরতাকে।

--------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment