Wednesday, 29 July 2020

কবিতা : যতীষগোবিন্দন জানা

কবি পরিচিতি : জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগনার বাবপুর গ্রামে মামাবাড়িতে ১৯৫৫ সালে। পৈত্রিক নিবাস নীলগঞ্জ এর কাছে নাভরন্ত গ্রাম। নৌবিদ্রোহে যোগ দেওয়ার ফলে বাবার চাকরি চলে যায়। ফলে শৈশবে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়াশোনা। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরপ্রাপ্ত। 


লেখালেখির শুরু আট বছর বয়স থেকে। আবৃত্তি ও অভিনয় নেশা। প্রকাশিত গ্রন্থ :- 
কলকাতার কড়চা
যদি বৃষ্টি নামে
শুধু তোর জন্যে
পার্থিব পোশাক
কালের ছড়া
ডাকাতিয়া বাঁশি
পার্থেনিয়ামের বীজ 

-----------------------------------------------------------

আকাশ

কে তোমাকে বলে নারী
তুমি নাকি অর্ধেক আকাশ!
আকাশ দেখার তুমি
কখনো কি পাও অবকাশ?

নানান আচার বিধি--
নিষেধের বেড়াজাল ভেঙে
এখন তোমার তাই যেটুকু প্রকাশ,
সেখানে মেঘের আনাগোনা।

তোমারো তো ছিল জানাশোনা
গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধি,
সৌর চান্দ্র বৎসরের খেলা,
বিন্দু-ব্যাস-ব্যাসার্ধ-পরিধি।

এসবের ঊর্ধ্বে কেউ
             তোমাকে কি চেনে!
কুচিনা শোভিত এই
              মডেল কিচেন এ।

হাঁড়ি ও হেশেলে বদ্ধ
                     বুকে দীর্ঘশ্বাস,
গোপনে ধ্বনিত হয়
                "আকাশ আকাশ"।


-----------------------------------------------------------

শব্দ ব্রহ্ম


জয় শ্রীরাম, বন্দেমাতরম,সতশ্রী আকাল,
নারায়েত তদবির, ইনকিলাব জিন্দাবাদ
আমি মুখ দিয়ে যাই উচ্চারণ
করিনা কেন,
আমি একজন বুভুক্ষু শ্রমজীবী মানুষ।
আর এটাই আমার একমাত্র পরিচয়।
খিদে পেলে কাঁদি, আনন্দে উচ্ছ্বসিত হ ই
আমার নিজস্ব ভাষায়।
তোমরা কে হে জগতের জিম্মাদার
আমার মুখের ভাষা কেড়ে নেবে?
এই ভাষার জন‍্যেই আমার পূর্বপুরুষেরা
বুকের রক্ত ঢেলেছে
ঢাকায় শিলচরে জোহানেসবার্গে।
মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধে
তোমরা যে বার বার বিধ্বস্ত হয়েছো
এ ইতিহাস কি করে ভুলে যাও?
আসলে তোমাদের বাড়া ভাতে
ছাই পড়তে দেখে,
লুটে পুটে খাওয়ার রাস্তা
বন্ধ হতে দেখে,
তোমরা মরিয়া হয়ে উঠেছো।
জেনো প্রাচীন শাস্ত্রে
শব্দ কে ব্রহ্ম বলা হয়েছে।
অমোঘ শব্দের মতো
আমার ও বিনাশ নেই কোনো।

-------------------------------------------------------------

জন্ম শাঁখ

সাত আর তিন।
কেন রে বাবা!
পৃথিবীতে সব জন্মই তো আনন্দময়,
তবে ছেলেদের বেলায় সাত
আর মেয়ের বেলায় তিনবার
শাঁখ বাজে কেন?

হয়তো বা বলবে--
ছেলে কি মেয়ে জন্মালো
তার বোঝানোর জন্যেই।

তবে সাত আর ছয়
কিম্বা পাঁচ আর চার বার
হলেই বা ক্ষতি কী?

আর মেয়েদের বেলায়
যদি বেশিবার শাঁখ বাজে
তবে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হবে!

পৃথিবীতে নারী জন্মই তো আনন্দময়।
সর্বংসহা নারী
জননী জায়া ও কণ্যকারূপে
স্নেহ প্রেম ও মমতা দেয়।
জন্মবীজ ধারণ করে বলেই
প্রাচীন শাস্ত্রে নারীকে
প্রকৃতি নামে আখ্যা দিয়েছে।

হয় সমান সংখ্যক বাজুক,
নয়তো কোন জন্মশাঁখ
বাজানোর প্রয়োজন নেই।

------------------------------------------------------------/-


----------

No comments:

Post a Comment