Thursday, 17 December 2020

ওরাই অন্নদাতা --নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত


শাসক, জানো কি ফসল কীভাবে ফলে
চাষিদের কাছে ঋণ তার কতখানি 
শ্রমের ঘামে কতটা রক্ত থাকে?
তুমি কেন তাতে জোঁক করো আমদানি? 

আজ যারা হাঁটে দিল্লির রাজপথে 
ধ্বনি তোলে : রদ করো কৃষি আইন
লাঠিতে বুলেটে তাদের ঘায়েল করে
ভাবছো কী হে,জীবন কাটাবে ফাইন?

তুমি তো জানো না ধানের গানের সুরে
কাস্তে কোদালের কী উল্লাস থাকে
লাঙলের ফলা যে মহাকাব্য লেখে
বুলেট কামান মুছে দিতে চায় তাকে! 

প্রচণ্ড শীতে দিল্লির পথে পথে 
দাঁড়িয়ে রয়েছে তোমার অন্নদাতা 
ফুলকিও শেষে দাবানল হতে পারে
দাম্ভিক শাসক, তুমি কি জানো না তা?


© রচয়িতা কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। 
হেমতাবাদ, মহেন্দ্রকুঞ্জ, উত্তর দিনাজপু, পশ্চিমব, ভারতবর্ষ  

---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 
Sub Editor - Monowar Hossain 
Chief Organizer : Chandan Mahanta  

----------------------------Voice-------------------------------







Saturday, 12 December 2020

সাধ --সঞ্জয় কুমার শীল।



সাধ ছিল মনে বড় হয়ে মস্তবড় নামিদামি কবি, লেখক কিংবা সাংবাদিক হব।
তোমার- আমার সমাজের, সকলের সুখ-দুঃখ, হাঁসি-কান্না, আনন্দ আমার ছোট্ট বেলার মাসির দেওয়া সেই কালিকলম দিয়ে শক্তহাতে দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরব।
কিন্তু আজ তা আর হলোনা,যত বয়স বাড়তে শুরু করল সংসারের পাওয়া-না পাওয়া, দৈনন্দিন অভাব অনটনের মাঝে ধীরে ধীরে আমি হারিয়ে গেলাম।
তুমি বলেছিলে আমি যেদিন মস্তবড় কবি, লেখক কিংবা সাংবাদিক হব,যেদিন সমাজে আমার অনেক নাম হবে সেদিন তুমি আমাকে তোমার ঐ সুন্দর নরম মনিকোঠায় জায়গা দেবে।
কিন্তু,আজ তা আর হলোনা, কথা-কথা হয়েই থেকে গেল।
আচ্ছা তোমরা বলতে পার গরীব হওয়া কি খুবই অপরাধের?
আমিতো তার কথা অনুযায়ী চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখিনি; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাধ আর সাধ্যের লড়াই-এ আমি পেরে উঠিনি, হেরে গেছি; তাতে আমার দোষ কোথায়?
আসলে আমার দোষ আমি গরীব, আমার মতো গরীব ছেলের সমাজে আজ কোথাও স্থান নেই,তা খবরের কাগজে হোক ,সাহিত্যে হোক কাব্যে হোক কিংবা কারো সুন্দর নরম মনিকোঠায় হোক।
টাকা বুঝলে টাকা,টাকা ছাড়া এই তৈলাক্ত সমাজে তুমি বড় কিংবা নামিদামি মানুষ হতে পারবেনা।
তুমি ঞ্জানী না হও, মেধাবী না হও অথবা লাস্ট বেঞ্চে বসা ছাএ-ই হও না কেন,টাকা থাকলে এই সমাজে তুমি পেছন থেকে সবার আগে অর্থাৎ সামনে স্থান পাবে।
আর যদি টাকা না থাকে তাহলে আর একটা দিক আছে এই সমাজে বড় হওয়ার;তবে ঐ বিষয়ে তোমাকে পি এইচ বি করতে হবে।
ভাবছো বিষয়টা কি,হ্যা ঠিক ধরেছো ঐ কথাটাই, তেল দিতে শিখতে হবে;
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দাদা-দাদা, দিদি-দিদি, কাকু-কাকু কিংবা জ্যেঠু-জ্যেঠু করতে হবে,আর তাদের সামনে- পিছনে ঘুরঘুর-ঘুরঘুর করতে হবে আর ওনাদের জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ করতে হবে।
লজ্জা-ঘৃনা অথবা প্রেস্টিজ যদি দেখিয়েছোতো তুমি কারও সুন্দর নরম মনিকোঠায় স্থান পাওয়াতো দূরের কথা,তোমায় তোমার মা,বাবা, ভাই-বোন পড়িবার-পরিজনদের নিয়ে দু-বেলা উপোস করে থাকতে হবে।
শেষ পর্যন্ত পড়িবার চালাতে স্কুল জীবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ঐ কয়েকটি ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হওয়া কাগজের টুকরোগুলো আজীবন বাড়ির মানদাওা আমলের ছোট্ট ট্রাঙ্কটিতে স্বযত্নে গচ্ছিত রেখে গলির মোড়ে কাপড়ের কিংবা লোহার দোকানে অথবা রাজমিস্ত্রির লেবার গিরি করতে হবে।
তোমার শখ, তোমার সাধ-আহ্লাদ, তোমার স্বপ্ন সমাজের দাদাদের দামি সিগারেটের ধোঁয়া হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যাবে।
যদি তুমি নিজেকে সামলে নিতে পারলে তো সেই যাএায় বেঁচে গেলে,আর যদি নিজেকে সামলাতে না পার তাহলে সমাজের গলা-পচা সেন্টিমেন্ট নিয়ে একটা ছোট্ট দড়ি গলায় ঝুলিয়ে কিংবা অন্য কোন আধুনিক পদ্ধতিতে চিড়তরে ভবের খেলা সাঙ্গ করে অনেক ব্যথা-বেদনা, পাওয়া-নাপাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের লাশকাটা ঘরটাতে তোমার জ্বালাধরা দেহটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে তোমার ঠুনকো পাপী সেন্টিমেন্টকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঘুনধরা সমাজটাকে যেভাবে সেলাই করে টিকিয়ে রাখা হয়েছে,ঠিক তেমনি তোমার দেহটাকেও কোনরকমে সেলাই করে আটকে দিয়ে পাড়ার দাদা,ভাই-বন্ধুদের কাঁধে দুলতে দুলতে রাম নাম সত্য হ্যায়, কিংবা বলোহরি হরিবোল হরি নামের সাথে শ্বশ্মানে চিতার আগুনে তোমার সমস্ত স্বপ্ন তোমার সস্তা সেন্টিমেন্ট দাউ দাউ করে জ্বলে-পুরে ছাড়খাড় হয়ে চিরতরে ছাই হয়ে মাটিতে মিশে নি:শ্চিহ্ন হয়ে যাবে। 


 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 
Chief Organizer : Chandan Mahanta  
Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------


Sunday, 15 November 2020

Voice Presents : National Dance Competition 2020

🌹নিয়মাবলি পড়ে নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করুন🌹


🌹নৃত্য প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডে নৃত্যের ভিডিও ১৬ ই নভেম্বর তারিখ থেকে নেওয়া শুরু হয়েছে এবং ভিডিও জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৫ই ডিসেম্বর।  প্রথম রাউন্ডের ফলাফল আগামী ৮ ই ডিসেম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রথম রাউন্ডে প্রতিযোগী এবং প্রতিযোগিনীরা যে কোন বিষয়ের উপর নৃত্য জমা দিতে পারবে। প্রথম রাউন্ডের ফলাফলের পর পরবর্তী রাউন্ডের ব্যাপারে ভয়েস পেজে জানিয়ে দেওয়া হবে। 

🌹নৃত্য প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগ রয়েছে--- 
Category wise : 
(A : 5yr - 8yr)  
(A+ : 8+yr  - 12yr) 
 (B : 12+yr - 18yr)  
(C : 18+ Above) 

🌹নৃত্যের ভিডিওটি অবশ্যই ৩ মিনিট থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে হতে হবে। অন্যথায় ভিডিওটি গ্রাহ্য হবে না।

🌹ভিডিওটি পাঠানোর সময় অবশ্যই সাথে প্রতিযোগী/ প্রতিযোগিনীর নাম, বয়স, বিভাগ, ঠিকানা এবং যোগাযোগ নম্বর পাঠাতে হবে।

🌹ভিডিও নিম্নলিখিত নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করে পাঠাতে হবে--

 (A : 8017966835
A+ :  8017966835)
(B :  8777210629
(C -- 8972604159) 

🌹নৃত্যের ভিডিও সকাল ১০ টা থেকে রাত্রি ১০ টার মধ্যে পাঠাতে হবে। 

🌹শুধুমাত্র আপনার অপ্রকাশিত নৃত্য ভিডিও পাঠাবেন।। 

🌹ভিডিও এর ছবি ও সাউন্ড পরিস্কার রাখার চেষ্টা করবেন। 

🌹নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিভাগভিত্তিক বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের মেমেন্টো/ ট্রফি ও সরকারী রেজিস্ট্রিকৃত ভয়েস সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন এর পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। 

🌹তিনটি বিভাগের মধ্যে থেকে যে নৃত্যশিল্পীর ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার হবে তাকে বিশেষ নৃত্যশিল্পীর সন্মান জানিয়ে মেমেন্টো বা ট্রফি  প্রদান করা হবে। 
,   
🌹প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিচারকদের হাতে থাকছে ১০০% নম্বর। তাদের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে গন্য হবে। 

🌹প্রতিযোগিতার  ফাইনাল রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে ৩০ শে ডিসেম্বর বুধবার রাত্রি ৮ টায়।

🌹সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করুন।

🌹যারা ইতিমধ্যে পুরোনো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত নিয়মাবলি দেখে ভিডিও পাঠিয়েছেন, তাদের সবার ক্ষেত্রে এই নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে। 

🌹প্রতিযোগিতার ব্যাপারে কোন কিছু জানার থাকলে নীচে দেওয়া দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারের যে কোনো একটিতে যোগাযোগ করতে পারেন--- 

+৯১৭০০১৮০৭৩৩১
+৯১৬২৯৫৩৯২৫৪৯ 

🌹সমগ্র নৃত্য প্রতিযোগিতাটি আমাদের Voice পেজ থেকে পরিচালিত হবে। সকলে পেজটি লাইক করে রাখবেন  পরবর্তী নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য। 

🌹Voice page link : https://www.facebook.com/voiceliterarypage/
 
🌹Voice Writers Group : https://www.facebook.com/groups/509230129852741/?ref=share

🌹Voice Youtube Channel Link : https://www.youtube.com/channel/UCyVKQg2BeBIoiLnQP5imn6g

🌹Voice Blog Website : https://voiceliterarypage.blogspot.com/

শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদন্তে, 
" ভয়েস সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন"

Friday, 6 November 2020

"ঘুমপরানি" --শাবাব আহসান


প্রেমকুঞ্জে নিবাস তোমার 
তবু ভয়! বলতে ভালোবাসি ,,

ঘুম'কে দিলাম ঘুমের দিব্যি 

স্বপ্নে মেলে জেনে নিও .....
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
--------------------------------------
কবি : শাবাব আহসান
ঢাকা, বাংলাদেশ 
---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 
Sub Editor - Monowar Hossain 
Chief Organizer : Chandan Mahanta  

----------------------------Voice-------------------------------





Monday, 2 November 2020

"প্রজাপতি মন" --রাকিব খান হৃদয়



মায়াবী প্রজাপতি ছুটে আসো হৃদয় গভীরে,
ভালোবাসার পরশ ছুঁয়ে দিবো আলতো করে।
তোমার পিছু পিছু ছুটতে চাই যেতে চাই বহুদূরে,
যাবো পৃথিবীর বাগানে রূপসী বাংলার প্রান্তরে।

রূপনগরে কৃষ্ণচূড়া গাছে চলো ঘুরে আসি দুজনে,
ফুটেছে শত ফুল দেখবো মোরা অবাক স্বপ্ন নিয়ে।
নীলাচল বাগিচায় ফুলের রাণী চুপিসারে ডাকছে,
রাতভর নিঃসঙ্গতায় রজনীগন্ধা কেন কাঁদছে?

মুছে দিয়ো না ফুলের দেহখানি প্রিয়বন্ধু কৃষ্ণকলি,
পাপড়িগুলো ঝরে যাবে আসো অন্য কোথাও চলি।
পৃথিবীতে কি জেগে উঠেছে সোনালী রূপের মায়া,
ঘুম ভেঙে দেখি প্রজাপতির ডানায় রহস্যময় ছায়া।

-------------------------
রাকিব খান হৃদয়
কবি-লেখক 
গাজিপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ 
---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

----------------------------Voice-------------------------------


Friday, 30 October 2020

Love is crazy --Delo Isufi

Snow covers the ground here,
To you the wind rain pours,
With the sun you send the kiss,
Eight hours after arriving at me.

Wait a voice comes from afar,
Wait to come where you live,
Love is crazy, love is mad,
Warming in snow and dry in rain.

Love is crazy, love is mad,
Knows no home, knows no border,
In an instant, at two places,
It is here and it is there.

-----------------------------------------------------------

Delo Isufi 
Book of poetry, “When washing Moon”, 2006,  
Tirana, Albania

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  
        

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------

And it is raining --Mirela Necula

And it is raining, in a dizzying roar,
With untold events, with tears of longing, 
And it rains, it rains infernally in the spell of the night, 
How much it can rain, as much as the hell of life wants.

And it rains, it rains with a deep right of life, 
Unknown drop, as a tenderness on the face, 
And it rains with a reserved smile in the warm head of the horizon, 
Only the moon cries, cries like crazy in the lapel of hatred.

Love has made its way on the heavenly and gentle face, 
In the dark night sitting ignored, 
The mouthy thought has forms, it has voice, but also an reverse, 
He sings "humanity with its brass hands" in reverse

The air got drunk with roses, love with a thousand whispers, 
Of me and the "wind of the kissed evening", 
He often calls you among the beautiful angels, 
You are thirsty for love ... I hear slowly, you have become too thirsty!

And it is raining, and the valleys of love rose up, 
To heaven on the most well done ladder, 
And sings, sings the love on round bellies, 
The whole convoy of thrills, "parade and honor" hides.

Leaving aside the pretext of overflowing hatred, 
Love even includes acclaimed pleasures and pleasures, 
When her daring faith cries out in anger, 
Let's love each other ,through all this angry rain!

---------------------------------------------------------------

Mirela Necula
Poet 
Romania 
 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------

Wednesday, 28 October 2020

ভয়েস সাহিত্য পত্রিকার প্রথম শারদীয়া সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন



মহাষষ্ঠীর পূন্যলগ্নে শ্রী বিজয় সরকার ও শ্রী মনোয়ার হুসেন মহাশয়ের সম্পাদনায়  ভয়েস সাহিত্য পত্রিকার প্রথম ডিজিটাল শারদীয়া সংখ্যা ১৪২৭ এর মোড়ক উন্মোচিত হল অনলাইন ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।  এপার বাংলা ও ওপার বাংলার  প্রায় এক শতাধিক কবি, লেখক, লেখিকা,  চিত্র-ভাস্কর্যশিল্পীদের সৃষ্টিশীল লেখমালা, চিত্রকলা ও ভাস্কর্যশিল্পে নব কলেবরে সুসজ্জিত হয়ে উঠেছে ভয়েস সাহিত্য পত্রিকা। পত্রিকাটি রায়গঞ্জ থেকে প্রকাশিত।  

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী পরিষদের সভাপতি শ্রদ্ধেয় মোঃ রফিকুল আনোয়ার মহাশয় এবং আমাদের এপার বাংলার বিশিষ্ট কবি ও সমাজসেবী বঙ্গরত্ন মাননীয় শ্রী সুকুমার সরকার মহাশয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী পরিষদের সাধারন সম্পাদক মাননীয় ডঃ মহীতোষ গায়েন মহাশয় এবং বিশিষ্ট কবি ও সমাজসেবী মাননীয় শ্রী সূরজ দাশ মহাশয় এবং সর্বোপরি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ঠ কবি ও সমাজসেবী বঙ্গরত্ন মাননীয় শ্রী বিশ্বনাথ লাহা মহাশয়। 
      (বঙ্গরত্ন শ্রী বিশ্বনাথ লাহা মহাশয়) 

    (মোঃ রফিকুল আনোয়ার মহাশয়)

     (বঙ্গরত্ন শ্রী সুকুমার সরকার মহাশয়)

   (ডঃ মহীতোষ গায়েন মহাশয়)  

     সূরজ দাশ মহাশয়) 

      শ্রী গুরুদাস বিশ্বাস মহাশয়ের কণ্ঠে উদ্বোধনী সঙ্গীত,  বিশিষ্ট অতিথিগনের বক্তব্য, আবৃত্তিতে আল্পনা কুন্ডু, যাদব চৌধুরী , আভা সরকার মন্ডল, বৃষ্টি কংসবনিক, রিয়া রায়ের নৃত্য এবং পরিশেষে সভাপতি মহাশয়ের বক্তব্য ও অনুষ্ঠান আয়োজকের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি পরিসমাপ্ত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন শ্রী বিজয় সরকার ও  শ্রীমতি অহনা রায় চৌধুরী। 

কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী পরিষদের সভাপতি শ্রদ্ধেয় মোঃ রফিকুল আনোয়ার মহাশয় জানান " দুই বাংলা মধ্যে সাহিত্য-সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ভয়েস সাহিত্য পত্রিকা তথা ভয়েস সংগঠন সুদূরপ্রসারী ভুমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদী। পত্রিকার সম্পাদক দ্বয় বলেন " করোনা আবহে মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহ দিতে এবং সাহিত্য-সাংস্কৃতিকে সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াটা আমাদের মানবিক কর্তব্য। অনুষ্ঠানের শ্রদ্ধেয়  সভাপতি বঙ্গরত্ন শ্রী বিশ্বনাথ লাহা মহাশয় বলেন " তারুণ্যে ভরপুর "ভয়েস সংগঠন" যেভাবে নিরলস ও নিষ্ঠার সাথে মানুষের স্বার্থে কাজ করে চলেছে তা ভবিষ্যৎ নব প্রজন্মের কাছে পাথেয় হবে। 

   "ভয়েস সাহিত্য পত্রিকা তথা ভয়েস সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনে যারা নিঃস্বার্থভাবে নিরলস কাজ করে চলেছেন তারা হলেন ভয়েস সংগঠনের সভাপতি শ্রী বিজয় সরকার, সম্পাদক শ্রী চন্দন মহন্ত, সহ-সম্পাদক শ্রী মনোয়ার হুসেন,  উপদেষ্টামন্ডলী  শিপ্রা দেবনাথ, গুরুদাস বিশ্বাস, গোলাপ সিংহ, ধীমান দাস এবং পরিচালক সদস্য   উৎপল সরকার, বৃষ্টি কংসবনিক, প্রিয়তমা ঘোষ, মৃত্যুঞ্জয় কর, অহনা রায় চৌধুরী, সত্যব্রত ধর, বিশ্বপ্রিয়া সাহা, জীবন বর্মন ও পলাশ সরকার প্রমুখ। ভয়েস সংগঠনের মুখ্য পরিচালক চন্দন মহন্ত মহাশয় বলেন " মানুষের মধ্যেকার সুপ্ত প্রতিভাকে জনসমক্ষে তুলে ধরা ও সকলের মধ্যে জনসচেতনতা গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

Tuesday, 27 October 2020

অদ্ভুত সময়" --জাবেদ আলি



আজ আমরা এক অদ্ভুত এক চরম মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আছি,
শিক্ষা দীক্ষা যাক চুলোয়,অবাক হয়ে শুধু দেখছি।
চারিদিকে শুধু অন্যায়, অত্যাচার আর ব্যাভিচার,
লুটিয়ে পড়েছে মনুষ্যত্ব,চারিদিকে শুধু হাহাকার।
মানুষ আজ বড়ো অসহায়,বিবেক টা হয়েছে কালো,
জানিনা ফিরবে কবে,এক সুন্দর সুখ শান্তির আলো।
যেদিকে তাকায় লোভ,লালসা,
হিংসা,আর প্রতারণা,
অন্ধকারে ছেয়ে গেছে,চলছে শুধু নির্লজ্জের আনাগোনা।
দেশের সাথে,দশের সার্থে,কত যে শহীদ ঘরের ছেলে,
ফিরলো না আর শান্তি,কতো মা আজও কাঁদে,নীরবে নিভৃতে।
আমরা লড়াই করছি,হিংসা করছি শুধু মাত্র ধর্ম কে নিয়ে,
ভাবিনি কখনো আমরা,নিশ্চুপ থাকা মানুষ গুলোকে নিয়ে।
মুখোশধারী শয়তান, মহানন্দে আজও বিরাজমান,
অসহায় মানুষ আজ একটু সুখের আশায় ভ্রাম্যমাণ।
রাজনীতির হিংসায় সমাজ আজ প্রবল ভাবে কলুষিত,
মানুষে মানুষে বিভেদ,সমস্ত মানবজাতি আজ জর্জরিত।
লুটতরাজ,দাঙ্গা,ধর্ষণ,খুনোখুনি,
মারপিট আরও কত কি,
এই সব নিয়েই তো চলছে আজও এই সভ্য মানবজাতি।

Copyrights@ J Ali  
---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------


Friday, 23 October 2020

ভগৎ সিং --রাজীব কুমার দাস (ভয়েস সাহিত্য পত্রিকা : শারদীয়া সংখ্যা ১৪২৭)



বিপ্লবী বীর ভারত মায়ের
ঘুচে দিতে অপমান,
ভগৎ ছুটল আগুনের দলা 
বুঝে নিতে সম্মান৷
অল্প সময় অল্প বয়স
অনেক অনেক কাজ
করে গেছে ওরা সংগ্রামী
বুঝেছিল ইংরেজ
ভারতীয় ভীরু কাপুরুষ নয়
দিতে জানে অমূল্য প্রাণ
ওরা ভয় ডর সব করে জয়
কান পেতে শুনো ঐ
শেষ নিশ্বাসের স্বদেশের জয়গান
অমর ভগৎ সাহসেরই এক নাম৷

শ্রী রাজীব কুমার দাস 
কবি-লেখক 
বাউল, কালুরঘাট, দক্ষিন দিনাজপুর,  পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ  
---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------



Thursday, 22 October 2020

অক্ষর সাজাতে গিয়ে --জন্মেঞ্জয় ঘোড়াই



 শূন্যতার সাথে___
 পরিচিত সহবাসের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে ভুলে গেছি
   মজার পোতাশ্রয় থেকে অন্তরের কালিমা
 ভুলে গেছি , ত্রি-বর্ণে বর্ণিত বর্ণময় পাড় গুলো ।

 অনুকূল আর প্রতিকূলে কলুর বলদের মত
    খুঁজেছি ঊষার শান্ত মুহূর্ত ,
 কলকলে রব ধরে পবনের পিছু পিছু দেখেছি
   শুধু কাষ্ঠ শয্যায় চিতার আগুনের কান্নার স্বরলিপি
 এক একটা অক্ষর স্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে বারেবার স্বার্থের খেলাঘরে
 কে জ্ঞানী কে মূর্খ কে ধনী কেবা ক্ষুধার্ত ,
 শিক্ষা বিহীন অক্ষর গুলো জলছবির তুলিতে কে যেন এঁকে দেয় ।

 পাখি ঘরে ফেরার আগে খোঁচা মারে অনুভূতির মর্মে মর্মে
 মিথ্যেবাদীর কৃত্রিম কান্নায় ,
 অক্ষর গুলো দীর্ঘ পথ হেঁটে হেঁটে বড়ই ক্লান্ত
 আমি অসহায় , যন্ত্রণা গুলোকে অশ্রু দিয়ে ঢেকে
 অক্ষর গুলোকে সাজাই লাশের বর্ণমালায় হায় !

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------

মানুষ -সত্য --রামকৃষ্ণ মিশ্র


বন্ধ মুঠোয় সত্য ঢেকে ,আল্গা মুঠোয় যুদ্ধ চায়।
অত্যাচারের ভীষণ জ্বালায় , প্রান বাঁচানো এখন দায়।।
আমরা-ওরা এই বিভেদের, কথায় দেখছি ভীষণ জোর।
এই কথাতেই যোগ দিয়েছে, বুদ্ধিজীবী স্বার্থখোর।।
আল্লা বলো রাম-ই বলো ,কিসের জাহির করছে সবে।
সবার উপরে মানুষ-সত্য ,এই কথাটাই অমর রবে।।
হিংসা বিবাদ করে দেখছি ,ভাই ভাইকে মারছে ছুরি।
বিপদে পড়লে ধর্ম নয়-গো, মানুষের হয় সঙ্গভারী।।
মনের মধ্যে ঘুন লেগেছে , বাঁচার আয়ু ছটাক তাই।
সবকিছু তো ধ্বংস হচ্ছে,তবুও কেন হিংসা চাই।।
যারা শুধু মারছে দেখ, ওরাই নাকি বাঁচতে চায়।
প্রান হারানো নিথর দেহ, সমাধানেই শান্তি পায়।।
এই পৃথিবীর সব-ই ভালো ,বুঝছি না তা ক্ষণকাল।
বোকা মানুষ ভেবে দেখ,দল বেঁধেছে কিসের নেশায় ,বাঁচতে চায়-ও পঙ্গপাল।।
 
-----------------------------------------------
শ্রী রামকৃষ্ণ মিশ্র  
কবি-লেখক 
চাকনান, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ 

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------

Thursday, 15 October 2020

সূচিপত্র - "ভয়েস শারদীয়া সংখ্যা ১৪২৭ "

#ভয়েস_সাহিত্য_পত্রিকা  #শারদীয়া_সংখ্যা_১৪২৭ 
           #সূচিপত্র 

#পত্রিকা_প্রকাশিত_হবে_ষষ্ঠী_তে

Sunday, 27 September 2020

*কৃষি-পরিবেশ ভিত্তিক লোকায়তিক পর্যটন গড়ে উঠুক*

_* ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে দু'চার কথা*_

 *কৃষি-পরিবেশ ভিত্তিক লোকায়তিক পর্যটন গড়ে উঠুক* 
            -- ড. কল্যাণ চক্রবর্তী

কর্মসংস্থানের নতুন ভাবনা হতে পারে Agro-eco tourism, যাকে ডাকতে পারি - "শিশির বিন্দু পর্যটন' নামে, এটাই কৃষি-পরিবেশ-পর্যটন। বাংলা সাহিত্যে এর উদাহরণ আছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় পাই, "বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে/বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে।/দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,/দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।/দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,/ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/ একটি ধানের শীষের উপর/একটি শিশির বিন্দু।" 

পশ্চিমবঙ্গে শিশির বিন্দুর সৌন্দর্য দেখবার বহু মডেল কেন্দ্র হোক। সমস্ত কৃষি জলবায়ু অঞ্চলেই এটা হতে পারে অসংখ্য। এখানে এত ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্র্য, পাহাড়, টিলা, নদী, জলা, জঙ্গল -- তা ব্যবহৃত হোক। নতুন শিক্ষানীতিতে Summer Trip, Summer Camp এর কথা বলা হয়েছে। আগামী দিনে বহু ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হবে। তার পরিকাঠামো এখনই করা হোক, এইভাবে বেসরকারি সরকারি আধা সরকারিভাবে তৈরি হোক নানান জায়গায়। কৃষিভূমি, সবুজ অঞ্চল, জলাভূমির পাখি, অসংখ্য প্রজাপতি, সবুজ প্রান্তর, চারণ ভূমি, লেপাপোঁছা সাঁওতাল কুটির, ভেতরে পর্যটকদের আধুনিক ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে Herbal Garden, Butterfly Garden, Boating facilities, শালুক পদ্মে ভরা পুকুর, পাখিরালয় Bird Watch Centre. প্রয়োজন Folk Tourism -এর বন্দোবস্ত, বনবাসী, গিরিবাসী সংস্কৃতির বাণিজ্যায়ন, নাচগান, স্থানীয় খাবার, বনবাসী শিল্প সামগ্রীর কেনাবেচা। পটচিত্র, বাঁশ বেতের কাজ, ডোকরা, মাটির পুতুল, মুখোস শিল্প। 

'সকল দেশের রানী, সে যে আমার জন্মভূমি' -- এই গানের ভূমি দেখতে, জলা-জঙ্গল দেখতে, সাজানো গোছানো পর্যটন গড়লে প্রকৃতিবিলাসী মানুষ আসবেই। তাকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এলাকায় লোকশিল্প, গ্রামীণ শিল্প বিকাশ লাভ করবে। পশ্চিমবঙ্গ মডেল হোক এই ব্যাপারে। কারণ পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র আসমুদ্র-হিমাচল-রাজ্য, ভারতবর্ষের মিনি ভৌগোলিক-সংস্করণ। সমুদ্র ধুইয়ে দিচ্ছে তার পা, আর মাথায় হিমেল চূড়ার মুকুট।

Copyright @ Kalyan Chakraborty
   

প্রাবন্ধিক: ড. কল্যাণ চক্রবর্তী
অধ্যাপক, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ

--------------------------------------------------------------------

      Voice Literary Blog  
      Editor : Bijoy Sarkar 

--------------------------------------------------------------------

Saturday, 26 September 2020

বিদ্যাসাগর স্মরণে --গোলাপ সিংহ





পরাধীনতায় জর্জরিত যখন ভারতীয় নারী, 
ছড়িয়েছেন তিনি নারী স্বাধীনতার বানী। 
সমাজ যখন কুসংস্কারের আছন্ন , 
সমাজ সংস্কারের পথ তিনি করেছেন প্রসন্ন।
বাল্যবিবাহের প্রতিবাদী যে মহান মানব, 
বিধবা বিবাহের তিনি প্রবর্তক।
নারী কল্যাণ ও সমাজ সংস্কার যার ব্রত,
তিনি সবার দয়ার সাগর, করুণার সাগর।
লিখে বর্ণ পরিচয় যিনি দিয়েছেন অদ্ভুত দান,
তিনি বাঙালির ঈশ্বর মহান।। 
রেখে গেছেন যিনি অসামান্য লেখনি, 
রয়েছে লিখা বিশ্ব মানবতার বানী।। 
মহান পান্ডিত্যের অধিকারী যিনি, 
বিন্দু মাত্র নেই অহংকারী, 
সত্যের পূজারী তিনি, আধুনিক সমাজ রূপকার। 
মহান মানব, নারী ও সমাজ সংস্কারক, 
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে শতকোটি প্রণাম।।

Copyright @ Golap Singha  
-----------------------------------------------------------------

Sunday, 20 September 2020

রাজীব লোচন বালা

"ঘোষণা এক- 'অভিসর্ন্দভ" 
       --রাজীব লোচন বালা 

পথ চলতে চলতে নিজের আঠালো যৌবনে , 
'মানুষ' ভূতুড়ে ভূতুম থেকে আবার ভূতের দিকে 
সব জ্বালাতনের জ্বলন্ত তুষে  ভেজার লিপ্সা 
সে এক ঘোষণার অভিসর্ন্দভ!

পরিযায়ী সে তো  সুজন , তারা বুনে বর্ষের ভাগ্য 
পথে- ঘাটে চোখ রাখলেই ঊষর জমিতে হৃদয় গাঁথে ,
তাদের চাওয়া বলতে সেই একটু খাবার- জল- কাপড়
সে এক ঘোষণার অভিসর্ন্দভ । 

ড্রাগ- মাফিয়া আষ্টে অষ্টম গন্ধ ধোঁয় দেখছি তিলোত্তমা
যে ছিল সেও কালোবাজারে শরীর বেঁচা- কেনা করে ,
ভদ্র সেজে, পাগল করছে পৃথিবী যে সে এক কামী ছিল; 
উৎসাহে লিখা চলছে ঘোষণা, সেও এক অভিসর্ন্দভ । 

সরস্বতীর ঘরে আজ বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাইয়ের অনটন নাই 
পথে- ঘাটে লক্ষ্মীর ছড়াছড়ি, বুদ্ধির টানে গাঁজা জ্বলে ওঠে।
ভিক্ষুক আজ জেলের রুটিতে জীবন মাপে , সরকারীনামা 
আজও পেয়েছি সেই ঘোষণাই; 
যা কাল হবে কতগুলো রঙ্গীন ডিগ্রীর অভিসর্ন্দভ ।

Copyright @ Rajib Lochan Bala  
------------------------------------------------------

শ্রী রাজীব লোচন বালা  
কবি-লেখক 
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ  

 -------------------------------------------------------------
     Voice Literary Blog 
     Editor - Bijoy Sarkar 

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------------Voice----------------------------

Friday, 4 September 2020

শিক্ষক -----গোলাপ সিংহ



শিক্ষক, জাতি গড়ার কারিগর, জাতির মেরুদণ্ড। 
শিক্ষা যার মূল চাবিকাঠি, উদারতা মানব ধর্ম। 
ছাত্র যার মূল অস্ত্র, আচরণে তার তারই মাতৃত্ব।
চোখে যার সমতা, তিনিই তো মহান,
সমাজে রাখেন তিনি অনন্য অবদান। 
তিনি শিক্ষক, সমাজের রূপকার। 
স্নেহ ভালবাসা নিয়ে যার হৃদয় ভরাট , 
সুষ্ঠ সমাজ কল্পনা করেন যিনি সদা
তিনিই গুরুদেব, শিক্ষক আমার। 
যার ছায়াতলে মায়ের আদর, বাবার স্নেহ,
শিক্ষক কূল কে আমার কোটি কোটি প্রনাম। 
পিতা মাতার পর জগতে যার স্থান , 
তিনিই আমার গুরু, শিক্ষক মহান।
সারা বিশ্বে বরেণ্য যিনি, শিক্ষা দিয়ে মানবতার।
কলমে যার অগাধ কালি, লেখেন বিশ্ব কল্যানের বানী,
উচ্চতা যার আকাশ বড়, সূর্যের অপেক্ষা তেজদীপ্ত। 
বাতাসসম স্নিগ্ধ  যিনি, জলের ন্যায় অমূল্য,
প্রকৃতিময় মানুষ তিনি, যাদের পেয়ে জীবন ধন্য।,
 তাদের চরণে প্রণাম জানিয়ে আর্শীবাদ নিই মস্তকে  তুলে।।

Saturday, 22 August 2020

☘️শারদীয়া সংখ্যায় লেখা আহ্বান☘️

Voice Blog App এ শারদীয়া সংখ্যায় লেখা ও চিত্রাঙ্কন আহ্বান

🌹নিয়মাবলি পড়ে লেখা পাঠান🌹

🌼আনন্দ সংবাদ!🌼   🌼 আনন্দ সংবাদ! 🌼


আমরা অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের সাথে জানাচ্ছি যে, "voice Literary Cultural Organisation"  তার প্রথম শারদীয়া সংখ্যা প্রকাশ করতে চলছে।  পত্রিকাটিতে একদিকে যেমন থাকছে এপার ও ওপার বাংলার  কবি,  সাহিত্যিকদের কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ,  ভ্রমণ কাহিনী, ছোট নাটক, অনুকথা ( অনুগল্প, অনুকবিতা), ছোটোদের বিভাগ; তেমনি পাশাপাশি  থাকবে চিত্রশিল্পীদের তুলিতে ফুটিয়ে তোলা চিত্র ও  ক্যামেরায় বন্ধী করা সেরা ছবি এবং আমাদের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হস্তশিল্পীরঃ- পরিচিত ও অপরিচিত মুখ ও তাদের শিল্পকলা। 

যারা পত্রিকায়  লেখা/ চিত্র / শিল্পকলা তুলে ধরতে চান ; তারা উল্লেখিত নিম্নে বিভাগ ও নিয়মাবলি অনুযায়ী আপনাদের সৃষ্টিশীল বিষয়গুলি প্রেরণ করবেন-

🏵 ২৫ ই সেপ্টেম্বরে মধ্যে পাঠাবেন। 

                    🏵বিভাগ-ক (কবিতা) 🏵
  নিয়মাবলিঃ-
  ১. সাধারণ  বাংলা টাইপিং বা অভ্র কীবোর্ড  ব্যবহার করবেন।
  ২. কোনো প্রকার ছবিতে লেখে লেখা পাঠাবেন না।
  ৩. আধুনিক প্রচলিত বাংলা বানান পদ্ধতিতে বানান লিখবেন।
  ৪. বিরাম চিহ্নের সঠিক প্রয়োগ।
  ৫. কবিতা  ১৬ লাইনের উর্ধ্বে নয়। 
  ৬. আপনার এককপি ছবি সাথে নাম লিখে পাঠাবেন।
  ৭. লেখা পাঠানোর পূর্বে একবার সব (বানান+ বিরাম চিহ্ন ) মিলিয়ে নিবেন।
  ৮.লেখা ভুল পাঠালে তার দ্বায়ভার সম্পূর্ণ রূপে কবিদের ।  
  ৯. কবিতা অবশ্যই অপ্রকাশিত হতে হবে।

                       🏵  বিভাগ- খ (গল্প ) 🏵
  নিয়মাবলিঃ-
    ১. সাধারণ  বাংলা টাইপিং বা অভ্র কীবোর্ড  ব্যবহার করবেন।
  ২. কোনো প্রকার ছবিতে লেখে লেখা পাঠাবেন না।
  ৩. আধুনিক প্রচলিত বাংলা বানান পদ্ধতিতে বানান লিখবেন।
  ৪. বিরাম চিহ্নের সঠিক প্রয়োগ।
  ৫. গল্পের শিরনাম থাকা আবশ্যক। 
  ৬. আপনার এককপি ছবি সাথে নাম লিখে পাঠাবেন।
  ৭. লেখা পাঠানোর পূর্বে একবার সব (বানান+ বিরাম চিহ্ন ) মিলিয়ে নিবেন।
  ৮.লেখা ভুল পাঠালে তার দ্বায়ভার সম্পূর্ণ রূপে লেখকদের।  
  ৯. গল্প অবশ্যই অপ্রকাশিত হতে হবে।

               🏵 বিভাগ- গ ( প্রবন্ধ ) 🏵
  নিয়মাবলিঃ-
    ১. সাধারণ  বাংলা টাইপিং বা অভ্র কীবোর্ড  ব্যবহার করবেন।
  ২. কোনো প্রকার ছবিতে লেখে লেখা পাঠাবেন না।
  ৩. আধুনিক প্রচলিত বাংলা বানান পদ্ধতিতে বানান লিখবেন।
  ৪. বিরাম চিহ্নের সঠিক প্রয়োগ।
  ৫.প্রবন্ধের শিরনাম আবশ্যক। 
  ৬. আপনার এককপি ছবি সাথে নাম লিখে পাঠাবেন।
  ৭. লেখা পাঠানোর পূর্বে একবার সব (বানান+ বিরাম চিহ্ন ) মিলিয়ে নিবেন।
  ৮.লেখা ভুল পাঠালে তার দ্বায়ভার সম্পূর্ণ রূপে লেখকদের।  
  ৯. প্রবন্ধ অবশ্যই অপ্রকাশিত হতে হবে।

           🏵 বিভাগ - ঘ (ভ্রমণ কাহিনী) 🏵
  নিয়মাবলিঃ-
    ১. সাধারণ  বাংলা টাইপিং বা অভ্র কীবোর্ড  ব্যবহার করবেন।
  ২. কোনো প্রকার ছবিতে লেখে লেখা পাঠাবেন না।
  ৩. আধুনিক প্রচলিত বাংলা বানান পদ্ধতিতে বানান লিখবেন।
  ৪. বিরাম চিহ্নের সঠিক প্রয়োগ।
  ৫. নিজের দেওয়া পছন্দের শিরনাম ও সেই জায়গায় নিজের তোলা ছবি। ( ছবি আবশ্যক নয় ) 
  ৬. আপনার এককপি ছবি সাথে নাম লিখে পাঠাবেন।
  ৭. লেখা পাঠানোর পূর্বে একবার সব (বানান+ বিরাম চিহ্ন ) মিলিয়ে নিবেন।
  ৮.লেখা ভুল পাঠালে তার দ্বায়ভার সম্পূর্ণ রূপে  লেখকদের।  
  ৯. ভ্রমণ কাহিনী অবশ্যই অপ্রকাশিত হতে হবে।

                🏵 বিভাগ- ঙ ( অনুকথা)  🏵
নিয়মাবলিঃ-
  ১. সাধারণ  বাংলা টাইপিং বা অভ্র কীবোর্ড  ব্যবহার করবেন।
  ২. কোনো প্রকার ছবিতে লেখে লেখা পাঠাবেন না।
  ৩. আধুনিক প্রচলিত বাংলা বানান পদ্ধতিতে বানান লিখবেন।
  ৪. বিরাম চিহ্নের সঠিক প্রয়োগ।
  ৫. কবিতা  ৬ লাইনের উর্ধ্বে নয়। 
  ৬. আপনার এককপি ছবি সাথে নাম লিখে পাঠাবেন।
  ৭. লেখা পাঠানোর পূর্বে একবার সব (বানান+ বিরাম চিহ্ন ) মিলিয়ে নিবেন।
  ৮.লেখা ভুল পাঠালে তার দ্বায়ভার সম্পূর্ণ রূপে কবিদের।  
  ৯. কবিতা অবশ্যই অপ্রকাশিত হতে হবে।

                  🏵  বিভাগ-চ (চিত্র / ফোটোগ্রাফি) 🏵
  নিয়মাবলিঃ-
  ১. ছবি তোলে পাঠাতে পারবেন এমন সব পেপারের আঁকা ছবি গ্রহণযোগ্য।
  ২. ছবি পরিষ্কার হতে হবে।
  ৩. পেনসিল স্কেচ গ্রহণযোগ্য। 
  ৪. ওয়েল পেন্টিং ও ওয়াটার কালার গ্রহণযোগ্য।
  ৫. ছবি পাঠানোর সময় নিজের নাম ও নিজের ছবি অবশ্যই পাঠাবেন।
  ৬. পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে গেছে এমন ছবি পাঠাবেন না। 
  ৭. ক্যামেরা বন্ধি ছবির স্থান উল্লেখ করতে হবে।
  
  🏵 বিভাগ-চ (হস্তশিল্পের পরিচিত ও অপরিচিত মুখ)
নিয়মাবলিঃ-
১. কোন ধরনের কাজের সাথে যুক্ত তা উল্লেখ করতে হবে।
২. আপনার কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কি তা উল্লেখ করতে হবে।
৩. একাকী না গ্রুপ হিসাবে কাজ করেন তা উল্লেখ করতে হবে।
৪. কি কি সমস্যার সন্মুখীন হয়েছেন তা উল্লেখ করতে  হবে?
৫. বর্তমানে কোনো সমস্যা থাকলে উল্লেখ করতে হবে।
৬. আপনাদের তৈরি জিনিসের ছবি পাঠাতে হবে।
৭. আপনাদের গ্রুপের বা একাকী হলে নিজের ছবি পাঠাতে হবে।

        🏵বিভাগ- ছ (ছোটদের বিভাগ)🏵
নিয়মাবলিঃ-
১. কেবলমাত্র (৩-১২) বয়স সীমার মধ্যে খুদে প্রতিভাদের তুলে ধরা হবে এই বিভাগে।
২.তাদের নিজের আঁকা ছবি,  কবিতা, গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, চিঠি, চিন্তাধারা এই বিভাগে তুলে ধরা হবে।
৩. লেখা/ছবি/ গল্প/ ভ্রমণ কাহিনী এর সাথে খুদে প্রতিভার ছবি পাঠাতে হবে। 
৪. অবশ্যিই অপ্রকাশিত হতে হবে।

      🏵বিভাগ-জ(ছোট নাটক/ চিত্রনাট্য)  🏵
১. সামাজিক, মানুষকে অনুপ্রেরণাকারী, রোমান্টিক, হাস্যকর ইত্যাদি বিষয়ে ছোট নাটক পাঠাতে পারেন।
২. নাটকের ভাষা সহজ সরল হতে হবে।
৩. নাটকের শিরনাম থাকা আবশ্যক।
৪.চিত্রনাট্যের বিষয়বস্তু  সকলের বোধসাম্য হওয়া আবশ্যক।
৫. চিত্রনাট্য  আকারে খুব বড়ো হবে না। 

উপরিউক্ত  যে কোনো বিভাগের লেখা অর্থাৎ কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, অনুকথা, পাঠাবেনঃ-
            
💢        +918918172319 (whatsapp)
            
উপরিউক্ত  যে কোনো বিভাগের চিত্র / তুলিতে ফুটিয়ে তোলা ছবি / ক্যামেরা বন্ধি ছবি/ চিত্রনাট্য /হস্তশিল্পীরঃ- পরিচিত ও অপরিচিত মুখ ও তাদের শিল্পকলা বিভাগের তথ্য পাঠাবেন-

💢 +916295392549 ( whatsapp)

অথবা নীচে উল্লিখিত ইমেল আইডিতেও আপনাদের সৃষ্টিশীলতা প্রেরণ করতে পারেনঃ - 

Email : voiceculturalteam@gmail.com 

★ কেবলমাত্র যে কোনো বিভাগে  একটি লেখা দিতে পারবেন।
★ লেখা/ ছবি/চিত্রনাট্য  মনোনীত হলে আপনাকে জানানো হবে।

আপনাদের ভালোবাসা ও সহোযোগিতাই আমাদের চলার পথে পাথেয়। 

এছাড়া আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ  করুনঃ-

 +918918172319 বিজয় সরকার (রায়গঞ্জ) 
+916295392549 চন্দন মহন্ত (ফুলবাড়ি)
+8101324201 মনোয়ার হুসেন ( কালিয়াগঞ্জ) 
+917001807331 গুরুদাস বিশ্বাস (গঙ্গারামপুর)
+917679836119 শিপ্রা দেবনাথ (টুলটুল দি), কর্ণজোড়া,রায়গঞ্জ 
+917001739316 গোলাপ সিংহ,  শিলিগুড়ি মোড়, রায়গঞ্জ
+918670578090 মৃত্যঞ্জয়, (গঙ্গারামপুর) 
+918637084691 উৎপল সরকার, দূর্গাপুর, ইটাহার

 🌼ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছান্তে🌼
ভয়েস সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন
   

শারদীয়া সংখ্যায় চিত্রাঙ্কন আহ্বান


☘️☘ নিয়মাবলি পড়ে চিত্রাঙ্কন পাঠান☘️ ☘️

Voice Blog App এ শারদীয়া সংখ্যায় চিত্রাঙ্কন আহ্বান

☘️ একমাত্র অপ্রকাশিত চিত্রাঙ্কন ই পাঠাবেন। 

☘️ চিত্রাঙ্কনের সাথে চিত্রশিল্পীর  নাম ও ছবিসহ সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জিও ভয়েস ব্লগ অ্যাপ এ প্রকাশ করা হবে।

☘️ একজন চিত্রশিল্পী চারটি চিত্রাঙ্কন পাঠাবেন। তার মধ্য থেকে নির্বাচিত সেরা দুটি চিত্রাঙ্কন ভয়েস  ব্লগ অ্যাপে প্রকাশিত হবে। 


☘️আপনার চিত্রাঙ্কনগুলি নির্বাচিত হলে তবেই "ভয়েস ব্লগ অ্যাপ" এ স্থান পাবে।

☘️চিত্রাঙ্কন নির্বাচিত হলে আপনাকে App Registration Fee হিসাবে ৩০ টাকা জমা করতে হবে। 

☘️ব্যানার পোস্টে উল্লিখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার বা ইমেল আইডির যে কোনো একটিতে চিত্রাঙ্কন পাঠাবেন। 

         চিত্রাঙ্কন নির্বাচিত হলে আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে বা ইমেলে জানিয়ে দেওয়া হবে  এবং তারপর পেমেন্ট করবেন ও সাথে আপনার এক কপি ছবিসহ সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী পাঠাবেন। 
 

☘️চিত্রাঙ্কন পাঠান ১০ ই সেপ্টেম্ব,  ২০২০ এর মধ্যে। 

☘️ভয়েস ব্লগ অ্যাপে শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত প্রত্যেক চিত্রশিল্পীর অপরুপ সৃষ্টিশীল চিত্রাঙ্কন কে কুর্নিশ জানিয়ে ভয়েস এর পক্ষ থেকে প্রত্যেককে "ভয়েস চিত্রশিল্পী শারদ রত্ন সম্মানননা পত্র" প্রদান করা হবে। 

☘️শারদীয়া সংখ্যা প্রকাশিত হলে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। 
  
☘️কোনো কিছু জানার জন্য যোগাযোগ করুন - 

6295392549 
8918172319 

☘️আপনাদের সৃষ্টিশীল চিত্রাঙ্কনগুলি Google Play Store  এ "ভয়েস ব্লগ  অ্যাপ" এ সারাজীবন থেকে যাবে। 

☘️পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে যে কেউ Google Play Store থেকে "ভয়েস ব্লগ" অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন। 

বর্তমানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবনের সামগ্রিকতার পরিবর্তন ঘটছে এবং উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে আমাদের মানব সভ্যতা। সভ্যতার এই উন্নত পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে দিতেই এ প্রয়াস। 
      
     আসলে এই ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে বিনা খরচে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছে দিতে। ভয়েস সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের এই নব প্রয়াসে আপনাদের সকলের সহযোগিতা ও ভালোবাসা একান্তভাবে কামনা করি। 

আপনারা সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ও ভয়েস এর মুক্ত প্রাঙ্গণের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি সুখের আনন্দ যাপন করুন।

Voice Group Link :- 

https://www.facebook.com/groups/509230129852741/?ref=share
(Please join us) 

Voice Page Link :- 

https://www.facebook.com/voiceliterarypage/

(Please like voice page) 


Subscribe voice youtube channel :- 

https://www.youtube.com/channel/UCyVKQg2BeBIoiLnQP5imn6g


শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন সহ, 
ভয়েস সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন
☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️

চিত্রাঙ্কন পাঠান


"সাপ্তাহিক চিত্রাঙ্কন সংখ্যা" 

প্রতি সপ্তাহে সাপ্তাহিক চিত্রাঙ্কন সংখ্যা প্রকাশিত হবে। 

চিত্রাঙ্কন পাঠান : 

Email : voiceculturalteam@gmai.com 


চিত্রাঙ্কন পাঠানোর নিয়মাবলি
--------------------------------
  
অপ্রকাশিত চিত্র পাঠাতে হবে। 

চিত্রের সাথে চিত্রশিল্পীর নাম ও ঠিকানা অবশ্যই পাঠাতে হবে।   

    চিত্রঙ্কলন নির্বাচিত হলে ভয়েস ব্লগ অ্যাপে প্রকাশিত হবে। 

চিত্রাঙ্কন প্রকাশিত হলে চিত্রশিল্পীকে জানিয়ে দেওয়া হবে।     

লেখা আহ্বান

🌹🌹মনের কথামালায় লেখা আহ্বান🌹🌹


আপনার মনের সুপ্ত ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করুন কালিকলমে আমরা আপনার  মনের কথামালা তুলে ধরবো ভয়েসের মুক্ত প্রাঙ্গনে |

🍁 নিয়মাবলী পড়ে লেখা পাঠান🍁

☘️ আপনার মনের ভাবনাকে প্রকাশ করুন অনধিক আট লাইনের মধ্যে |

☘️লেখা হতে হবে অপ্রকাশিত |

☘️ উল্লেখিত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে কিংবা ইমেলে লেখা পাঠান  |

☘️ লেখা নির্বাচিত হলে ভয়েস পেজ এবং ভয়েস রাইটারস গ্রূপে প্রকাশ করা  হবে |

☘️ একজন কবি দিনে একটি লেখা পাঠাতে পারবেন |

☘️ আপনারা প্রতিদিন লেখা পাঠাতে পারবেন |

    সদা ভয়েসের সাথে থেকে সৃষ্টি সুখের আনন্দ যাপন করুন।।

শুভেচ্ছান্তে- 
ভয়েস লিটারারি ব্লগ 
ভয়েস লিটারারি কালচারাল অর্গানাইজেশন 
-----------------------------------------------------------------------------------------

ভয়েস ব্লগ এ লেখা আহ্বান



☘️কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমন কাহিনী প্রভৃতি বিভাগের যে কোনো একটিতে  লেখা পাঠাতে পারেন। 

☘️বলেখা হতে হবে অপ্রকাশিত।  
লেখা নির্বাচিত হলে ভয়েস ব্লগ অ্যাপ  এ প্রকাশিত হবে।

শুভেচ্ছান্তে- 
ভয়েস লিটারারি ব্লগ 
ভয়েস লিটারারি কালচারাল অর্গানাইজেশন 
-------------------------------------------------------------------------- 

Sunday, 16 August 2020

কাজী আনারকলি

মৃত্যুঞ্জয়ী নারী 
---------------


বহুদিন ধরে কপোত কপোতীর চলে প্রেম লীলা 
নীরবে নিভৃতে লাল পলাশরূপ গোপন প্রণয়,
পাহাড়ের পাদদেশে ঝর্ণার কুলু কুলু ধ্বনিতে
মিলেমিশে একাকার মোহিনী মায়ার প্রলয়।

হঠাৎ একদিন প্রেমিকা কহে, এবার ঘরে তুলে নাও
দেহটা যে কেমন লাগে ভারী ভারী,
বিষাদের ছায়া নেমে আসে প্রেমিকের মনে
নারী কহে, আর তো লুকাতে নাহি পারি।

রক্ত চক্ষু করে প্রেমিক পুরুষ শুধায় , ভালো কি বাসিস আমারে ?
মৃদু হেসে নারী কহে, কোনো সন্দেহ আছে কি তোমার মনে ?
উদ্ভ্রান্ত পুরুষ কহে , ভালো যদি বেসেই থাকিস 
আমার মাথার দিব্যি রইলো, একথা বলবিনে জনে জনে।

তুই তো বারবণিতা ! তুই তো অসতী !
গঙ্গার জলে ডুবে মরে আমারে মুক্তি দে,
আমার কাছে হবেনা কোনো আশ্রয়
এ চরম সত্যি কথাটা আজ জেনে নে।

 প্রেমিক পুরুষের পায়ে ঠেকিয়ে মাথা-
কহে নারী
তুমি যা বলবে, আমি তাই মেনে নেব ,
যদি বল,  কৃষ্ণ পক্ষের যে কোনো তিথিতে
 নদীতে ঝাঁপ দিতে , তবে তাই দেব।

গহীন রাতের আঁধারে মনের কষ্ট লুকায়ে
প্রেমিক পুরুষের হাত ধরে পাপিষ্ঠা নারী কহে,
ওগো বন্ধু, আমারে নিয়ে চল সেথায়
 যেথায় উদ্দাম গতিবেগে নদী বহে।

 প্রেমিক পুরুষ হাতে ঝাঁকানি দিয়ে রুষ্ট চিত্তে বলে
পায়ে শক্তি নাই ? হারামি,অপয়া ! চল তাড়াতাড়ি, 
কলঙ্কিত করিস নে, এখনো কাকপক্ষী  উঠেনি ডাকি, 
লোকে দেখলে তোকে বলবে তুই কুলটা, অসতী নারী।

দক্ষিণ সমুদ্র হতে উত্তাল অনিল আসে ধেয়ে
হতচ্ছাড়া নারীর চোখে মুখে আছড়ে পড়ে,
কালনাগিনী ফণা তুলে ছোবলে ছোবলে
তার আবীর মাখা ঠোঁটকে রক্তাক্ত করে ।

হৃদয় আকাশে বিজলী চমকে চমকে ওঠে
 পুরুষের হাত ধরা নারীর হাত হয় আরও শক্ত,
জরায়ুর মুখে বিষ ঢেলে অসতীর চিত্র এঁকে 
তারে অসতী বানালো কোন সে ভক্ত ?

প্রেম সমাজ সংসার সব আজ তার কাছে মিছে 
নদীতে মিশে যাবে - এটাই ইতিহাস ! এটাই সত্যি ,
ঐ তো নদী ! এখনি ভেসে যাবে সব প্রেম- রাগ-অনুরাগ
তার শ্লথ পায়ে ফিরে আসে বাঁধ ভাঙ্গা গতি।

পুলকে নারী  উথলি উথলি শিহরিয়া ওঠে
গগনের পুঞ্জিভূত মেঘ বজ্রপাত হয়ে ঝরে,
মাতাল নদীর ঘূর্ণাবর্তে আজ প্রেমের সমাধি হবে 
মৃত্যুঞ্জয়ী হবে নারী ! আলতো চুমু খায় পুরুষের করে।

বিদায় বন্ধু বরেষু , বিদায় ! ভালো থেকো
রূপ রস গন্ধ ভরা এই বসুন্ধরা কত সুন্দর !
 আরও বেশি সুন্দর এ নদীর নিকষ কালো জল !
নারীর হাত ধীরে ধীরে শিথিল হয়, তাকায় প্রেমিক নর।

দৃঢ় কণ্ঠে বলে, তোরে বড্ড ভালোবেসেছিলাম
দুজনার মাঝে এসে দাঁড়ালো যে কিন্তু
কেমনে রুখি তারে ,
আমি যে ব্রাহ্মণ, তুই শূদ্র ! আমাদের প্রেম
সমাজ মানবে না
আমি এসে খুঁজে নেব, অপেক্ষায় থাকিস ওপাড়ে !

মটামট পত্রে ভরা বৃক্ষ শাখা ভেঙ্গে পড়ে
নারী চক্ষুপত্র উন্মীলন করে ,অধরপল্লব কামড়ে বলে,
আমি ভালোবাসিলাম অনাদি কালের মৃত্যুকে
আমি মৃত্যুঞ্জয়ী হব ! নদীই আমার ভালোবাসা ! হাত চেপে ধরে গলে।

পরদিন খুব প্রত্যুষে প্রেমিক পুরুষ নদীর পাড় ধরে হেঁটে যায়
ঐ তো ! ওই খানে- বালুচরে কী দেখা যায় ?
কার অসাড় দেহ পড়ে আছে ? কিংকর্তব্যবিমূঢ় যেন !
লোকে লোকারণ্য হলো নদীপাড়, কান্নার রোল উঠে বায়।

কে যেন বলে উঠে ক্ষীণ কণ্ঠে ,দেখছ ? ঠোঁটের কোণে এখনও হাসিটি লেগে আছে !
নারীর মৃত্যু রহস্য- রহস্যই থেকে যায়-
বালি মাখা নারীর নগ্ন পদতলে
 ছোট ছোট প্রশান্ত ঢেউ এসে প্রণাম জানায়। 

চারিদিকে উঠে রব, শ্মশানে নিয়ে চল, শ্মশানে-
প্রেমিক পুরুষ কাছে গিয়ে মাথায় হাত রেখে কহে ছাড়িয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস,
না, শ্মশানে নয়। এখানেই, নদী পাড়ে হবে তার সমাধি স্থল
ও যে সতী ! ও যে মৃত্যুঞ্জয়ী ! ও যে আমার বিশ্বাস !

ও ! তাহলে তুমিই নাটের গুরু ! চুপ কর।
ঘনিষ্ঠ বন্ধুবর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
মুহূর্তেই দুচারজন শবচৌকি নিয়ে আসে, 
ত্বরা করে নারীকে নেয় কাঁধে তুলে ‌।

নারীর বাড়ির উঠোনে রাখা হয় শবচৌকি
মা দেয়ালে মাথা ঠুকে, বাবা বুক চাপড়ায়,
ডাণ্ডা হাতে খাকি পোশাকধারীরা আসে , 
পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে , নারীর শব মর্গে যায়।

অতঃপর ! কত কাটাছেঁড়া ! আবার কত জোড়া তালি ! 
প্রেমিক পুরুষ বারবার কহে , নদী পাড়ে হবে তার সমাধি,
 শ্মশানে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে চিতার আগুন
কে শোনে কার কথা ! অশান্ত নদী বয়ে চলে নিরবধি।

 কাব্যিক রাতের গভীরতা বাড়তে থাকে ক্রমশ
 সুনসান নীরবতা ! ইপ্সিত ইচ্ছে পূরণ করতে প্রেমিক হয় শ্মশানচারী !
নারীর দেহভস্ম মুঠোয় পুরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়
যদি পাপমুক্ত হওয়া যায় ! পারায়ে যায় বালিয়াড়ি !

----------------------------------------------------------------------

কাজী আনারকলি
কবি ও লেখক 
ঢাকা, বাংলাদেশ 


 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------



Saturday, 15 August 2020

শিপ্রা দেবনাথ (টুলটুল)



আমরা কতটা স্বাধীন
*******************


কী অর্থ বহন করে এই শব্দ "স্বাধীন"?
স্বাধীন অর্থাৎ স্বীয় অধীন অথবা আমি বা আপনি নিজের অধীনে। এর অর্থ দাঁড়ায় আমরা অন্যের অধীনে নয়। এই স্বাধীন শব্দের সাথে জড়িত শব্দ স্বাধীনতা। এ শব্দে আমরা নিজের দেশ স্বাধীন এই কথাই বুঝি।নিজের দেশে যখন আমরা নিজেরা স্বতস্ফুর্ত ভাবে চলাফেরা করতে পারি, নির্দ্বিধায় নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে পারি, অন্যায় প্রতিরোধ করতে পারি, স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারি তখন আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্থক হয়। বস্তুত সেটা দেখা যায় না, তাই সন্দেহ থেকেই যায় আমি বা আমার দেশ কতটা স্বাধীন?

   স্বাধীনতা শব্দটির ব্যাপ্তি বিরাট পরিসরে।কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে পরিবারে সমাজে বা দেশে আমরা কে কতটা স্বাধীন সে কথা কিন্তু সকলেই কম বেশি উপলব্ধি করতে পারি।
   
   দেশের স্বাধীনতার পূর্ব ইতিহাসে এখানে তুলে এনে লাভ নেই। অনেক কষ্টের বলে আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এ কোন নতুন কথা নয়। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীন দেশে আমরা কে কতটা স্বাধীন?
   
   আমরা সেই স্বাধীন দেশে আছি যেখানে যোগ্যতা মূল্যহীন। সুচারু মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ তার যোগ্য পদ মর্যাদা পায় না, কেন? আমরা স্বাধীন? তাই? দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব কাদের উপর? স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব কারা নিয়েছেন? সাধারন একটা অসুখের বিল লক্ষ  টাকায় দাঁড়ায়, কেন? এটা স্বাধীন দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা?একজন গরিব পরিবারের রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাকে অনেক হেনস্থার শিকার হতে হয়, কেন? কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে সেই রোগী মারা যায়, এবং তারা দায় অস্বীকার করেন, কেন?
   
   সরকারি স্কুলের শিশুদের দু'জোড়া ইউনীফর্ম দেওয়া হয় বছরে। কিন্তু একবারও বিচার করে দেখা হয় না যে ইউনিফর্ম জোড়া সরকারের তরফে বাচ্চাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে সেটা আদৌ বাচ্চারা পড়তে পারবে কিনা? এটা স্বাধীন দেশের সিস্টেম? যদি বাচ্চাদের দু'জোড়া জামা না দিয়ে একজোড়া একটু ভালো কোয়ালিটির দেওয়া হতো অথবা যদি প্রতিটি স্কুলে বাচ্চাদের মাথা পিছু কিছু টাকা দিয়ে দেওয়া হতোঅথবা বাচ্চাদের শরীরের মাপ নিয়ে একটা নির্দিষ্ট দর্জির দোকান থেকে সেই ইউনিফর্ম জোড়া  বানিয়ে দেওয়া হতো তাহলে হয়তো সরকারের ইউনিফর্ম দেওয়ার পেছনে খরচ করা টাকা জলে যেত না। একটি বাচ্চা একজোড়া ইউনিফর্ম দিয়েই কোনরকমে একটা বছর কাটিয়ে দিতে পারত। ওই ঢিলে ঢালা পোশাক পড়ে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। এবং বাচ্চারা পড়তেও চায় না সেই পোশাক অতঃপর বাবা-মাকে খরচ করে বাচ্চার জন্য পোশাক বানাতে হয়। এত লক্ষ টাকা খরচ করে বাচ্চাদের পোশাক দেওয়ার পর যদি সেটা কাজেই না লাগে তবে সে দেওয়ার মানেটাই কি আর খরচ করার মানেটাই কি?এই অপব্যয় কাজে লাগলে বুঝতে পারতাম যে আমরা স্বাধীন দেশে রয়েছি আমাদের বাচ্চারা স্বাধীন দেশের স্কুলে যাচ্ছে।
   
   স্বাধীন দেশের সরকারি স্কুলের অনলাইন ক্লাসের রুটিন এগারোটা থেকে একটা আবার তিনটা থেকে পাঁচটা। সপ্তাহে 5 দিন। কিন্তু শিক্ষকদের কোনদিন দেখা যায়নি। শুধু 1-2 পাতা
 জেরক্স মেসেজ আকারে।আর এই মেসেজটা করতে মাত্র 2-4 সেকেন্ড ব্যয় হয়। এভাবে কি পড়া হয়?
 
 প্রশ্ন হল স্কুল চলাকালীন কত ঘন্টা পড়ানো হয় এবং কিভাবে পড়ানো হয়? এটা কি অনলাইন ক্লাসের নামে প্রহসন নয়? এই হলো আমাদের স্বাধীনদেশের সরকারি স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা।
 
স্বাধীন দেশে অবৈধ প্রেমেও ছার। ডাস্টবিনে স্তূপাকারে অবৈধ প্রেমের পরিণতি। এটাই স্বাধীনতা?

একটা মেয়ে একা পড়তে অথবা অন্যকোন কাজে যাওয়া আসা করার সময় যে ছেরখানির সম্মুখীন হয় সেটা কি ওই দুর্বৃত্তদের স্বাধীনতা? ছেলের সামনে মায়ের শ্লীলতাহানি বাবার সামনে মেয়ের ইজ্জত লুট এটাই তো আমাদের স্বাধীন দেশের চিত্র! ছ বছর বয়সী মেয়ের ধর্ষণ করে খুন এটা কোন স্বাধীন দেশের চিত্র হতে পারে? স্বাধীনতা মানে কি যা ইচ্ছে তাই করা যায়? উশৃংখলতা কে স্বাধীনতার আওতায় পড়ে? যদি না হয় শক্ত হাতে কেন অন্যায় দমন করছে না প্রশাসন?

স্বাধীনতা মানে কি সাম্প্রদায়িকতা? ধর্মের নামে রাজনীতি, স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা, সামাজিক অরাজকতা এসব স্বাধীনতার কোন স্তরে পরে! কেউ কি বলতে পারে?

 স্বাধীনতা হোক  সম্প্রীতি, সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য। স্বাধীনতা হোক ভালোবাসার বন্ধন। স্বাধীনতা হোক মানবতা। স্বাধীনতা হোক ভাতৃত্বের দৃঢ় বন্ধন। স্বাধীনতা হোক  বন্ধুত্ব। সব অরাজকতা দূর করে সবাই প্রাণের টানে মিলিত হোক। শান্তি আর ঐক্য বিরাজ করুক সর্বত্র। শাসক এবং জনগণের মধ্যে গড়ে উঠুক এক নিবিড় বন্ধন। মানুষের সাথে মানুষের আত্মিক বন্ধন ঘটুক। মানুষ মানুষের জন্য এই কথাই সত্যি হোক। স্বাধীনতা নিয়ে আসুক শান্তি হাসিখুশি আনন্দ নিয়ে আসুক বিশ্বাস ভরসা।

------------------------------------------------------------------


 শিপ্রা দেবনাথ (টুলটুল) 
কবি ও লেখিকা 
রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ 

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------

Friday, 14 August 2020

সুব্রত মিত্র

গল্প 

কথা শুনি মাধবীর


আজ ৬ই মার্চ। কচি পাতাদের কত গল্প মাথার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তা কখনো তাকিয়ে দেখা হয়নি।দেখা হয়নি জীবনের সাথেসাথে আজও যেসকল পাখিরা আমাদের গান শোনায় তাদেরকে।সেইভাবেখোঁজ নেওয়ার অবকাশও হয়নি আসলে।এখন আমি আমার বাগানের লাগোয়া বাড়ির প্রধান দরজায় গাছের নিচে একটি মাদুর বিছিয়ে তাতে অর্ধ নিদ্রায় শুয়ে আছি।সারা পৃথিবীর সাথে আমাদের ভারতবর্ষও মহামারী করোনার মোকাবিলায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লকডাউন ঘোষণা করেছে।এখন সকলে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক পাখার তলায়।আমি একটা বালিশ নিয়ে মাদুরের ওপরে শুয়েশুয়ে মাধবীলতার কচি পাতার সাথে মাধবীর কিছু হাসিমুখের কথা আড়ি পেতে শুনছি।মাধবীলতার সাথে পাশের জাম গাছটিরও খুব মিল।জাম গাছেও খুব কচি পাতা এসেছে।এসেছে মুকুল।দুপুরের এই আগুনের মতো উত্তাপ নিয়েও কেমনভাবে ওরা হেসে আছে ওরা আমাকেও হাসায়।আজ দুপুরে আর ঘুম হবেনা।চোখ বন্ধ করলেই পাখিদের কলকাকলি।চোখ মেললেই কি চমৎকার সবুজ আলোতে যেন একটা নতুন আকাশের তলায় আমি শুয়ে আছি।গাছের ডালে সবুজ আলোর মাঝে পাখিগুলোও কথা বলছে ,নেচে বেড়াচ্ছে অবিরত।মাধবীর তলায় দখিনা বাতাসের সাথে সবুজ পাতাদের কথা শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়েই পড়লাম।ওমা!সন্ধ্যে ছটা বেজে গেছে!অতি নিকটেই আমার ঘর থেকে স্ত্রী ডাকছে,চা খাবে এসো।চা খেতে ইচ্ছে করছে ঠিকই,কিন্তু----------।আমি যে এখন থেকে যেতেই পারছিনা।এখনই যে মাধবীর আসল জাদু।একটু অবাক লাগলেও সত্যি।আমার মাধবী প্রতিদিন সন্ধ্যে থেকে সারারাত তার রূপ ও গুণের জাদু দেখায়।ওকে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি।আমি জানি।আজকাল আমার স্ত্রীও মাধবীকে খুব ভালোবাসে।ইতিমধ্যেই মাধবীকে বলে চা পর্বটা সেরে নিলাম।রাতের অন্ধকার যত গাঢ় হয় মাধবীর ফুলগুলো অন্ধকারের মাঝে যেন তারার মতো জেগে থাকে।সারাটাদিন যেন মাধবী রোদে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল।তাই ও রাতে জেগে ওঠে।সেজে ওঠে।তাহলে আমিতো সারাদিন বাড়ির প্রধান দরজায় মাধবীর মাচার তলায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম সবুজের সাথে ওরা হাসছিল।উত্তরে আমাকে মাধবীলতার ফুলগুলো ডেকে বললো,"শোনো"।দিনেরবেলা আমার শরীর এবং হাত,পা,হাসে।তখন আমি রোদের প্রখরতায় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি।আমার পাশে ঐ জাম গাছের কচি পাতা গুলো আমাদের আত্মীয় হয়।সেই জন্যইতো সব পাখিগুলোও একবার এডাল,একবার ওডাল, করতে থাকে।ওরা আমাকে বলেছে,তুমি আর মা (আমার স্ত্রী)আমাকে খুব ভালোবাসো।যাও বাবা।এবার ঘুমিয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।আমি সারারাতই এখানে জেগে থাকবো।তোমাদের সুগন্ধ দেব। 

-----------------------------------------------------------------------

শ্রী সুব্রত মিত্র 
কবি ও লেখক 

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------

Sunday, 9 August 2020

পাপিয়া খাতুন

গল্প
-----

প্রেম- বিরহ

ক্যান্টনমেন্টের এক কোণে বসে ছিল পলাশ। তার পর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে,কি যেন মনে মনে বলছিল।
কিছু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল পলাশের বন্ধুরা।
পলাশ ও শাপলা কে নিয়ে ওদের কথা হচ্ছিল।
শাপলা কে নিয়ে বান্ধবীরা মজা করছিল, বান্ধবীদের ভিতর থেকে একজন বলে উঠল,,
কি রে শাপলা সবাই বলাবলি করছে,তুই নাকি প্রেমে পরেছিস?
শাপলা ওর কথায় রেগে যাচ্ছিল বটে, তবে মনে মনে সুখের ভেলায় ভাসছিল।
শাপলা অনেক দিন ধরেই পলাশ কে মনের মণিকোঠায় ঠাঁই দিয়ে ফেলেছে, শুধু বলার অপেক্ষা!
একি সহপাঠী ওরা তাই হয়তো দ্বিধাবোধ করে।
এদিকে পলাশও শাপলা বলতে অস্থির।
ঠাট্টার ছলে যদি বন্ধুরা শাপলা কে নিয়ে কথা বলে, তাহলে পলাশ বলে প্রেম করে বন্ধুত্বের কবর দিই কি করে।
আবার উদাস কবির মতো বলে, তবে মনও যে মানে না।
আমি শাপলা কে ভালোবাসি ,সে কথা শাপলা ও হয়তো বা জানে।
তবে শাপলা ও তো আমায় বলতে পারে!
বন্ধুদের মধ্যে একজন বললো,
ওরে গাধা, মেয়েদের বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না! তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, শালা হনুমান!
আচ্ছা কলেজে তুই তো খুব ভালো ছাত্র, তবে এ সব কথা তোর মাথায় এলো কি করে। দেবদাসের মতো চেহারা টাও করছিস।
পলাশ এতক্ষণ চুপ ছিল,স্ব বেগে ওর মুখ টা চেপে ধরে,
আচ্ছা-আচ্ছা হয়েছে, এবার একটু থাম দেকি।
এই কেমন বন্ধু তোরা , একটু উপকার না করে শুকনো ডাইলক দিবি।
আরেক জন বন্ধু বলে,, তাহলে আজকেই বলি কি বলিস তোরা?
সবাই এক বাক্যে,
তবে তাই হোক।
পলাশ দারুন চমকে, সত্যি বলবি?
প্রথম বন্ধু বললো, কেনো শাপলা কে ভয় করিস বুঝি?
পলাশ লজ্জা পেলো, এবং বলল কেন ভয় কেন পাবো?
বাজে কথা রাখ চল সবাই।

পলাশ যেতেই মুখোমুখি শাপলার, ভয়ে ভয়ে বললো,
শাপলা তুমি, তুমি কতক্ষণ?
শাপলা কোন কথা বলে না, শুধু প্রিয় মানুষটির আননে অপলকে চেয়ে থাকে। মনে হয় দুজন দুজনার চোখের ভাষায় কত আপন কত চেনা।
দুজনে গোপনে গভীর ভাবে জেনে গেছে ওরা।
শুধু জানে না আকাশ বাতাস পাহাড় সাগর নদী। নীরবতা ভেদ করে শাপলা বললো,
এভাবে চেয়ে রয়েছো যে?
কিছু বলো?
মনে মনে পলাশ বললো,বলার তো অনেক কথাই ছিল, কিন্তু ভরসা হয় না।
শাপলা আবার বললো, কি হল?। পলাশ থতমত খেয়ে বললো,কি ? কিছু না?
কিছুই না শাপলা বললো।
পলাশ ঘার নাড়ল,
মুচকি হেসে আবার নিজেকে সামলিয়ে শাপলা বললো,
সত্যি বলছো?
পলাশ দুরু দুরু বুকে বললো সত্যি টা তাহলে তুমিই বলো।
শাপলা লাজুক হয়ে বললো, আমি জানি না!
মৃদু স্বরে পলাশ বললো সেটা আমারো তো জানা নেই শাপলা।
শাপলা দুহাত মসলাতে মসলাতে বললো আমি আসি।
অমনি পলাশ শাপলার ডান হাতটা খপ করে ধরে ফেলে স্বজরে বুকে টেনে নেয়।
শাপলা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,হাত ধরলে কেন?
পলাশ শাপলার কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বলল হাত না ধরলে যে হৃদয় ছোঁয়া যাবে না।
শাপলা বললো কেনো হৃদয় ছোঁয়া যাবে না আমি হৃদয় দিয়ে হৃদয় কে কিনেছি।
পলাশ গভীর ভাবে বুকে জড়িয়ে বলে ওঠে ওরে দুষ্টু তলে তলে এতো কিছু। কেন এতো দিন বলনি।
তুমি ও তো বলনি?
পলাশ বললো আমি ভয়ে বলিনি, যদি তোমায় চেয়ে না পায়।
আচ্ছা পলাশ এখন ভয় করছে না।
না এখন কোন ভয় করছে না পলাশ বললো।
পলাশের তৃষ্ণার্ত অধর প্রিয়তমার গোলাপের পাপড়ি মতো অধরে ঘসতে ঘসতে মনে হল যেন এক পশলা বৃষ্টি নামলো উষ্ণ মরুর বুকে।
শাপলা এক দৌড়ে পালিয়ে গেল।
ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ টা একটু আগে প্রেমিক পুরুষ হয়ে উঠেছিল।আবেগ ভরা হাসি নিয়ে লজের দিয়ে রওনা দিল পলাশ।
এমনি করে নব যৌবনের তারণ্যে উদ্ভাসিত হল দুটি সবুজ হৃদয়।বিনা সূতোর মালা যেন একে অন্যে গাঁথা ।এ যেন জন্ম জন্মান্তর এ বাঁধন যদি কভু ছিঁড়ে যায় দুজন এই ধূলির ধরা হতে হয়তো বিলিন হয়ে যাবে।

এমনি করে বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেল।
তার পর এক দিন পলাশ বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মগ্ন ছিল।
আর এদিকে শাপলা কে কথা দিয়ে ছিল যে দুজনে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাবে।
কিন্তু পলাশের। সে কথা একটু খেয়াল ছিল না।আর যখন মনে হল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। শাপলা একা সমুদ্র সৈকতে হাঁটছে, রোদ্দুর নড়বড়ে  শান্ত বিকেল।
পলাশ পিছন থেকে ডাকলো শাপলা আ আ!
শাপলা শুধু একটিবার পিছন ফিরে দেখলো।
তার পর আবার হাঁটতে শুরু করলো, পলাশ দৌড়ে সাথ ধরলো‌
রাগে গজগজ শাপলা, অবিরাম হাঁটছে হেঁটেই চলেছে।
সমভাবে পা ফেলতে ফেলতে পলাশ বললো রাগ করেছো শাপলা।
ইমন রাগের রাগিনী সাবলীল ভাবে বললো না!
তাহলে দাঁড়াও, আমার কথা শোন।
উত্তেজিত হয়ে শাপলা বললো তুমি ফিরে যাও পলাশ।
সত্যি বলছো? সত্যিই ফিরে যাবো?
কাঁদু কাঁদু সুরে শাপলা বললো, আমি যে তোমার সাথে ঠাট্টা বা মজা করছি না সে তুমি ঠিক বুঝতে পারছো।
পলাশ এক বুক অভিমান নিয়ে বললো আমি সত্যি সত্যিই ফিরে যাচ্ছি। আমাকে কিন্তু আর ফেরাতে পারবে না।
দুজন চলেছে দুই মেরুতে। কিছু দূর গিয়ে শাপলা পিছন ফিরে দেখলো পলাশ অনেক দূর চলে গেছে ওকে ফেরাতে হবে বলে ছুট ধরলো।
শাপলা দৌড়াই আর নাম ধরে ডাকে পলাশ দাঁড়াও । দাঁড়াও প্লিজ। পলাশ সৈকত ছেড়ে শিশু বাগান , সেও ছাড় ছাড়। শাপলা উন্মাদের মত ছুটছে।
পলাশ কানে শুনেও না শোনার ভান করে চলেছে।একবারো পিছন ফিরে দেখলো না।
শাপলা উন্মাদের মত ছুটতে ছুটতে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ওখানেই পড়ে রইলো।
এদিকে শাপলা ডাকছে না দেখে পলাশ পিছন ফিরে তাকালো কিন্তু কেউ নেই গেল কোথায় শাপলা।
পলাশ দূর থেকে দেখতে পেল শুধু সমুদ্রের মাতামাতি, ‌পলাশ ছুট ধরলো। শাপলা আ আ আ।
জনমানবহীন শূন্যস্থান শুধু একটি শব্দের প্রতিধ্বনি ভাসছে বাতাসের কানে কানে। পলাশ একছুটে সমুদ্রে নেমে পড়লো।
উন্মাদের মত হাতরাচ্ছে আর চিৎকার করে করে বলছে, শাপলা তুমি কোথায়?
কলকল ধ্বনির সাথে সমুদ্র যেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয়ার খোঁজ বলে দিচ্ছে।
পলাশের কোমরে আছরে পরছে ঢেউ ।আর ভাঙা ভাঙা তরঙ্গের সাথে ইমন রাগের অনুরাগ চলছে।হীতগ্যান  হীন পলাশ যেন দুমড়ে মুচড়ে পড়ছে।
পিছনে নির্মিত হয়ে যাওয়া তরঙ্গে। পলাশ শুধু হেঁটে চলেছে গভীরে আরো গভীরে।
অশান্ত ঢেউ চিরদিনের মতো পলাশ কে নিয়ে গেল তার প্রাণপ্রিয়ার খোঁজে অনন্ত কালের জন্য সেই স্বপ্ন পুরীতে।
দিশাহীন অলৌকিক রাজ্যে সমুদ্রে বিলিন হয়ে গেল পলাশ। পলাশ নামের সেই ছেলেটির যার কৃষ্ণচূড়া মন, কঠিন মরন তারে বন্দি করলো সারাক্ষণ।

Copyrights@ P Khatun  
-----------------------------------------------------------------------

পাপিয়া খাতুন 
লেখিকা 
নাকাশি পাড়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ,  ভারতবর্ষ  

 ---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice------------------


Friday, 7 August 2020

যাদব চৌধুরী

প্রবন্ধ 

লেখক পরিচিতিঃ যাদব কুমার চৌধুরীর জন্ম ১৯৬০ সালে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার চৌকী গ্রামে l প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামে l কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ১৯৭৬ সালে রায়গঞ্জ করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে l ১৯৮০ সালে রায়গঞ্জ কলেজ থেকে স্নাতক হন l ১৯৮৩ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজীতে এম. এ. পাশ করেন l হাই স্কুলে শিক্ষক পদে যোগ দেন ১৯৮৩ সালে l মিল্কী হাই স্কুল, আড়াইডাঙ্গা ডি. বি. এম. একাডেমী হয়ে ইটাহার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন l 


সাহিত্যচর্চা কলেজজীবন থেকে l "অঙ্গন" ও "অগ্রণী" নামে দুটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন l "উত্তরবঙ্গ সংবাদ" দৈনিকে মালদা জেলার প্রতিনিধি হয়ে সাংবাদিকতা করেছেন l সাহিত্য আলোচনায় বিশেষ রুচি আছে l বহু পত্র-পত্রিকায় কবিতা গল্প প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে l "গল্পকথার গল্পগুচ্ছ" ও "গল্পের জাদুঘর" নামে দুটি গল্প সংকলনে গল্প প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ সালে  "কল্পপথে কাব্যরথে" নামে একটি একক কাব্যগ্রন্থ এবং ২০১৯ সালে "কল্পপথে গল্পরথে" নামে একক গল্পসংকলন প্রকাশিত হয়েছে l ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে "প্রাসঙ্গিকতায় ভাষা ও সাহিত্য" নামে একটি প্রবন্ধগ্রন্থ l


---------------------------------------------------------------------

সত্তরোর্ধ বাংলা উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণ

   


সাহিত্য জীবনের দর্পন, সমাজের দর্পন l জীবন ও সমাজের মনুষ্যকৃত শিল্পিত রূপ সাহিত্য বা যে কোনো শিল্পকর্ম l মানুষের জীবনের যতো কিছু সাহিত্যকে অনুপ্রাণিত করে তার মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ একটি অন্যতম বিষয় l যুদ্ধ একটি ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ জিনিস l দীর্ঘদিনের সাধনায়, পরিশ্রমে মানবজাতি যে সৃষ্টি গড়ে তোলে যুদ্ধে তার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় l যুদ্ধ এমন একটি বিষয় যা উভয়পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে l যারা জেতে এবং যারা হারে - উভয়েই কমবেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় l এবং এই ক্ষতি হয় বহুমুখী l সম্পত্তির হানি হয়, জীবনহানি হয়, জীবনের যে স্বাভাবিক ছন্দ তা বাধাপ্রাপ্ত হয় l মানুষের জীবনযাপনের মৌলিক চাহিদার যে জিনিসগুলি তার জোগানে বাধা পড়ে l উন্নত জীবনযাপনের যে অনুসঙ্গগুলো সেগুলোও বাধাপ্রাপ্ত হয় l শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাজারব্যবস্থা সবক্ষেত্রে ছন্দ পতন হয় l সর্বোপরি মানবাধিকার হরণ হয় l শোষণ, নিপীড়ন, লুটপাট চলে l নারী নিপীড়ন হয় l বিশেষ করে পরাজিত পক্ষের নারীদের সম্মান সম্ভ্রম লুট করা হয় l এতদসত্ত্বেও যুদ্ধবিগ্রহ হলো সাহিত্যের আঁতুরঘর l পৃথিবীর সকল ভাষাতেই বহু বহু কাব্য মহাকাব্য উপন্যাস যুদ্ধ বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে l শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যগুলি ইলিয়াড, ওডিসি, রামায়ণ, মহাভারত সব যুদ্ধের পটভূমিতেই রচিত l ইংরাজি সাহিত্যের প্রথম মহাকাব্য 'বেউলফ' যুদ্ধের পটভূমিতে রচিত l বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক আধুনিক মহাকাব্য 'মেঘনাদ বধ' কাব্য যুদ্ধের কাব্য l বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য বলতে তলস্তয়ের 'ওয়ার এন্ড পিস', আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘আ ফেয়ারঅয়েল টু দি আর্মস’, ট্রোজানদের যুদ্ধ, আমেরিকার গৃহযুদ্ধ, স্পেনের গৃহযুদ্ধ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে নাৎসিবিরোধী সংগ্রাম, ফ্রান্স বা রুশবিপ্লব, ভূ-ভারতে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন ও বিপ্লব নিয়েও একাধিক বড় মাপের সাহিত্য রচিত হয়েছে l শিল্পী ও সাহিত্যিকরা বরাবরই স্বাধীনতা পছন্দ করেন, মুক্ত কণ্ঠ পছন্দ করেন, তাই তাঁদের কলম ও তুলি থেকে রচিত হয় সেরা শিল্পকর্ম। একথা সত্য যে যুদ্ধের ভয়াবহতা অনেক, কিন্তু এটাও সত্য যে  যুদ্ধের কারণেই আমরা বিশ্ব সাহিত্যের সেরা কিছু উপন্যাস পেয়েছি। এই উপন্যাসগুলোতে মানুষের মুক্তি চেতনা, তাঁর আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

যুদ্ধের প্রভাব যতোই ভয়ংকর ও ক্ষতিকর হোক, তবু মানুষ নিরন্তর যুদ্ধ করে l যুদ্ধ করে মুক্তির জন্য, এমনকি শান্তির জন্য l

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো মুক্তির জন্য লড়াই l 

কাদের মুক্তি?  পূর্ববঙ্গের মানুষদের মুক্তি l  মুক্তিকামী ও স্বাধীনচেতা বাঙালির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের এই যুদ্ধে আমরা প্রিয়জন হারিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি অর্থনৈতিকভাবে, বেছে বেছে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছে, নারীর অবমাননা হয়েছে, এসব কিছুই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে ফুটে উঠেছে। বাঙালি জাতির সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেশের প্রধান সব লেখকের হাতেই পেয়েছে নতুন মাত্রা।


বিশ্ব সাহিত্যের দিকে নজর দিলে আর একটি বিষয় স্পষ্ট হয় l তা হলো সাহিত্য সর্বদা এক খাতে চলে না l কালের বাঁকে বাঁকে সাহিত্যের নতুন নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে। ইংরেজী সাহিত্যে রোমান আক্রমণের ফলে, জার্মান উপজাতিদের আক্রমণের কারণে, তারপরে নর্মান বিজয়, চতুর্দশ শতকে চসারের হাত ধরে ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্যের পুনর্জন্ম, তারপরেও শেক্সপিয়ার, ক্লাসিকাল ধারা, রোমান্টিক ধারা, ভিক্টোরিয়ান যুগ এবং আধুনিক যুগ এ সবই এক একটি বাঁক। বাংলা সাহিত্যেও এমন বিভিন্ন ধারা বর্তমান। মুক্তিযুদ্ধ এমনই একটি বাঁক l 

মুক্তিযুদ্ধ কি ?  এক কথায় বলতে পারি একাত্তর সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামীদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে নয়মাস ব্যাপী অসাধারণ লড়াই, সেটাই মুক্তিযুদ্ধ l এই মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য, বর্তমানের গৌরব এবং ভবিষ্যতের প্রেরণা l 

এই যুদ্ধের পরিণতিতে একাত্তর সালের ষোলোই ডিসেম্বর পাক বাহিনীর পরাজয় স্বীকার ও আত্মসমর্পনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয় l নয়মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের নানা অভিমুখ ধরে কবি সাহিত্যিকেরা কালজয়ী সব সাহিত্য রচনা করে গেছেন l রচিত হয়েছে শতাধিক উপন্যাস l সবগুলোই শিল্পের মানে হয়তো উত্তীর্ন হয় নি, কিন্তু যেগুলি হয়েছে সেগুলির সংখ্যাও নেহাত কম নয় l দেশের প্রায় সকল বড়ো লেখক  এই কাজে হাত দিয়েছেন l মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে অমর সাহিত্য রচিত হয়েছে l 

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কি দিয়েছে ?  

প্রথমত, বাঙালিকে বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মানের মুকুট পরিয়েছে, স্বাধীনতা উপহার দিয়েছে l মুক্তিযুদ্ধ শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, চলচ্চিত্রে বারবার অনুষঙ্গ হয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণ ও বৈপ্লবিক চেতনা সাহিত্যকে আলোকিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র ধারার সাহিত্য - মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে লেখকেরা মুক্তিযুদ্ধকে তাঁদের সৃষ্টিকর্মে তুলে এনেছেন।


মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে পাঁচটি উপন্যাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো l উপন্যাসগুলি নির্বাচন করেছি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র কথাটি মনে রেখে l কোনো উপন্যাসে হয়তো পাক হানাদারদের নৃশংসতার দিক তুলে ধরা হয়েছে, কোনো উপন্যাসে এই নৃশংসতার অন্য একটি রূপ, কোনোটিতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে এই আভাস পাই এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়ে উপন্যাসটি শেষ হচ্ছে, কোনো উপন্যাসে পাচ্ছি নয় মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত ধারাবিবরণী l 


যে পাঁচটি উপন্যাস নিয়ে বলবো সেগুলি হলো -

১) রাইফেল রোটি আওরাত’ : শহীদ আনোয়ার পাশা

২) 'নেকড়ে অরণ্য’ : শওকত ওসমান

৩) হাঙর নদী গ্রেনেড’ : সেলিনা হোসেন

৪) 'সাড়ে তিন হাত ভূমি'’: ইমদাদুল হক মিলন

৫) ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ : হুমায়ূন আহমেদ


এই উপন্যাসগুলি সম্বন্ধে বলবার আগে একটু ইতিহাসের দিকে ফিরে চাই l মুক্তিযুদ্ধ কেন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের কাছে অনিবার্য হয়ে উঠলো সেই সম্বন্ধে কিছু কথা l মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক প্রায় সকল উপন্যাসেই কথাগুলি ঘুরেফিরে এসেছে l সেই কথাগুলি একটু ঝালিয়ে নেয়া l ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলো l একহাজার মাইলের ব্যবধানে একই দেশ দুটো ভিন্ন ভূখণ্ডে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে পরিচিত হলো l কিন্তু ১৪ই আগস্ট স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রথম দিন থেকে যে বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিলো, ধারাবাহিকভাবে, তা হলো পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের দাদাগিরি l রাজনীতি, অর্থনীতি উন্নয়নের প্রতিটি প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করা হলো l পূর্বপাকিস্তানের অপরাধ ছিলো তাঁদের বাংলাভাষার প্রতি প্রীতি l পশ্চিম পাকিস্তানের পাক শাসকদের চোখে বাংলাভাষা ছিলো হিন্দুদের ভাষা l পূর্ববাংলার বাঙালি মুসলমান যারা মাতৃভাষা বাংলার অনুগামী ছিলেন, তাঁরা পাক শাসকদের চোখে সাচ্চা মুসলমান বলে বিবেচিত হতেন না l তাই তাঁদের সাচ্চা মুসলমান করার লক্ষ্যে বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষা প্রচলনের প্রয়াস হলো l পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা, হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে প্রতিবাদ আন্দোলন করলেন l বাহান্নর আন্দোলন সঙ্ঘটিত হলো l ভাষার জন্য আন্দোলনে রক্ত ঝরলো l ভাষার প্রশ্নে পাক শাসকেরা সাময়িকভাবে পিছিয়ে গেলেন l কিন্তু নানাভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে অসুবিধায় রাখা, সমস্যায় রাখা এই অপপ্রয়াস চলতে থাকলো l 

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তখনও অনিবার্য হয়ে ওঠে নি l পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তি তখনও প্রধান দাবি ছিলো না l এর মধ্যে শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সর্বজনসম্মত বলিষ্ঠ নেতা হিসাবে  উঠে এসেছেন l আওয়ামীলীগ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে l নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সারা দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলো l কিন্তু তাকে সরকার গড়তে দেয়া হলো না l এটা ৭০-৭১ সালের গল্প l কিন্তু তখনও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি ভাবনায় ছিলো না l আলোচনা চলছে l সমাধান কিছু একটা হবে দেশবাসী আশায় বুক বেঁধে আছেন l 

মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠলো একাত্তরের পঁচিশে মার্চের রাতে যে রাতে আলোচনার সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়ে পাক হানাদার সেনা ঢাকা শহরের ওপর আছড়ে পড়লো, মানবিকতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে পাক হানাদারেরা নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো l রাতের অন্ধকারে বাড়ি বাড়ি ঢুকে পুরুষদের হত্যা করলো, শিশু বৃদ্ধেরাও বাদ গেলো না, টাকা পয়সা, অলঙ্কার, খাদ্যসামগ্রী লুঠ করলো আর মহিলাদের ধরে নিয়ে গেলো ভোগের জন্য l এই নৃশংসতা চললো পরপর তিনদিন l পঁচিশ থেকে সাতাশে মার্চ l বাজার লুঠ করা হলো এবং শেষে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হলো l রাস্তায়, মাঠে, শিক্ষায়তনে, শয়ে শয়ে লাশ পড়ে আছে, সাংবাদিকদের তাড়িয়ে দেয়া হলো, প্রমাণ লোপাটের জন্য গণকবর হতে লাগলো, সঙ্গে চললো প্রোপাগান্ডা, অপপ্রচার l পাক সেনার নেতৃত্বে বাজার লুঠ হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি ঢুকে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, মহিলাদের তুলে নেয়া হচ্ছে, আগুন লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে, আর পাক শাসকেরা প্রচার করছে এসবই করছে বাঙালিরা, করছে আওয়ামীলীগ - আওয়ামীলীগ দেশকে টুকরো করতে চাইছে, বিশ্ববাসীর কাছে পাক সরকার প্রচার করছে সম্পত্তি রক্ষার জন্য, দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে এবং ফলত কিছুসংখ্যক বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসী মারা গেছে l এই নৃশংসতা ও অপপ্রচারের কারণে একটা বিষয় স্পষ্ট হলো এখন আর আলোচনার কোনো জায়গা নেই l সংগ্রামের পথই একমাত্র পথ l মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠলো l প্রশিক্ষণ শুরু হলো l পাক হানাদারদের ওপর গেরিলা আক্রমণ চলতে লাগলো l ক্রমে সংগ্রাম জোরদার হলো l ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে এগিয়ে এলো l নয়মাসের সংগ্রাম শেষে এলো বিজয় l 


প্রথম যে উপন্যাসটি নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ l লেখক শহীদ আনোয়ার পাশা l শহীদ বলা হচ্ছে কারণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিজয়ের মাত্র দু দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর হানাদারেরা বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হত্যা করে l 

সম্ভবত এটি বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস হিসেবে প্রথম l উপন্যাসটি লেখা হয়েছে একাত্তর সালে এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস অবধি l অর্থাৎ সেই ভয়ঙ্কর পঁচিশ থেকে সাতাশে মার্চের পরপরই l উপন্যাসটি আত্মজীবনীমূলক l উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীন যেন লেখক আনোয়ার পাশারই প্রতিচিত্র। আনোয়ার পাশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছিলেন এ উপন্যাস। উপন্যাসজুড়ে যে অনিশ্চয়তা আর মৃত্যু বিভীষিকা খেলা করে তা সত্যি হয়ে উঠেছিল লেখকের জীবনে। উপন্যাসের নায়ক সুদীপ্ত শাহীন ২৫ মার্চের পর তিন দিন অবরুদ্ধ থাকে। পাক বাহিনীর ঘেরাটোপে বন্দী সুদীপ্ত এই অস্থির সময় পার করে অপরিসীম বেদনা, শঙ্কা ও অনিশ্চয়তায়। কিন্তু এর মধ্যেও সে অনুভব করে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির বার্তা,  স্বাধীনতার আগমন ধ্বনি, "নতুন মানুষ, নতুন পরিচয়, এবং নতুন একটি প্রভা l সে আর কতো দূরে l বেশি দূরে হতে পারে না l মাত্র এই রাতটুকু তো l মা ভৈঃ l কেটে যাবে l" ১৯৭৩ সালের মে মাসে প্রকাশ পায় উপন্যাসটি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত এই প্রথম উপন্যাসটির জন্য লেখক অমর হয়ে থাকবেন বাংলার মানুষের মাঝে। 


এই উপন্যাসের যে শিরোনাম, 'রোটি, রাইফেল, আওরাত' - তার থেকে মুক্তিযুদ্ধের কোন বিষয়টিকে এই উপন্যাসে মূলত তুলে ধরা হয়েছে সেটা বোঝা যায় l মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ নয়, পাক সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বর্ননা আছে এই উপন্যাসে l আছে সেই তিনদিনের বীভৎসতার বর্ণনা l লেখক বলছেন পাক বাহিনী আক্রমণ করে প্রথমে বাঙালিদের রোটি অর্থাৎ খাবার রসদ কেড়ে নিচ্ছে, নিজেরা তা খেয়ে বলবান হচ্ছে, রাইফেল দিয়ে বাঙালি পুরুষদের নিধন করছে এবং আওরাতদের তুলে নিয়ে গিয়ে ফুর্তি করছে l সারা উপন্যাস জুড়ে এই নৃশংসতার চিত্র পাই l আর পাই বাঙালি বীরের প্রতিশোধের শপথ l হালিম শেখ বলছেন, "আমাদের ভাইবন্ধুদের ওরা মেরেছে, মা বোনের ইজ্জত নিয়েছে, আমরা তার শোধ নেব l.......   খোদার কসম, মায়ের কসম, রক্তের কসম, এর প্রতিশোধ নিব l"


দ্বিতীয় উপন্যাস ‘নেকড়ে অরণ্য’ l লেখক শওকত ওসমান l ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্ঠার ছোট্ট উপন্যাস l উপন্যাসে লেখক একটি গুদামঘরের বর্ণনা দিয়েছেন। টিনে ছাওয়া, সমতল মেঝের বিশাল এক গুদামঘর। এই ঘরটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন রেজা খান, আলী খানদের নারী ধর্ষণের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সে আস্তানায় তানিমা, জায়েদা, রশিদারা ধর্ষিত হয় l  কখনো পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের দ্বারা, কখনো বা  সাধারণ সৈনিকের দ্বারা। তাদের চিৎকার, আর্তনাদ, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, বিপর্যস্ততার রূপটি লেখক তুলে এনেছেন এ উপন্যাসে। অর্থাৎ এখানেও ফুটে উঠেছে পাক বাহিনীর নৃশংসতার রূপ যা নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিলো l  উপন্যাসের শিরোনামে একটি চিত্রকল্পকে তুলে ধরা হয়েছে l নেকড়ে অর্থাৎ পাক সেনাবাহিনী, অরণ্য অর্থাৎ অরণ্যের নিরীহ প্রাণী, এক্ষেত্রে বাঙালি মহিলারা l নেকড়ের মতোই হিংস্র এই হানাদারবাহিনী l তার চেয়েও বেশি l 


বনের ভেতর নেকড়ের নৃশংসতাও হার মানে যেন ছোট্ট একটুকরো গুদামঘরে। কিন্তু তার পরও থেমে থাকে না প্রতিবাদ। তানিমা প্রতিবাদ করে 

ক্যাপ্টেনের গুলি বুক পেতে নেয় l আত্মহত্যার মাধ্যমে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় বীরাঙ্গানারা।


‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ : 

মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন সেলিনা হোসেন। তার মধ্যে ভীষণ আলোচিত উপন্যাস হলো 'হাঙর নদী গ্রেনেড'। মুক্তিযুদ্ধের এক আবেগী ও প্রতিবাদী উপন্যাস এটি। হলদী গ্রামের এক বয়স্ক নারীর জীবন এই উপন্যাসে মূর্ত হয়ে ওঠে। এই নারী তাঁর নিজের ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যেমন উদ্বুদ্ধ করেন, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নিজের মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে তুলে দেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। উপন্যাসে এই মায়ের আত্মসংগ্রাম, দেশের জন্য ত্যাগের অপার মহিমা ভাস্বর হয়ে ওঠে। 


চতুর্থ উপন্যাস 'সাড়ে তিন হাত ভূমি'’ l লেখক  ইমদাদুল হক মিলন l লিও তলস্তয়ের অনুরূপ একটি গল্প আছে l একটি কবরের আয়তন কত? এই প্রশ্নের উত্তর, 'সাড়ে তিন হাত ভূমি'। 

উপন্যাসে পাই মুক্তিযোদ্ধা রবি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গ্রামে আসেন পরিবারের খোঁজ নিতে। এসে দেখেন উঠানে পড়ে আছে বাবার মৃতদেহ, ঘরে মা ও বোনের লাশ। আর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে আছে বাড়ির পেছনে। হতবিহ্বল, অসাড়, অনুভূতিহীন রবি উঠানে নিজ হাতেই খুঁড়ে চলেন প্রিয় স্বজনদের কবর। এবং তার সঙ্গে যেন খুঁড়ে চলেন স্মৃতির গহিন পরিখা। মা-বাবা, বোন, স্ত্রী; এমনকি অনাগত সন্তানের সঙ্গেও তার মিলন হয়, সংলাপ চলে। আর তা দৃশ্যমান হতে থাকে পাঠকের চোখের সামনে। একেবারে অন্য ধরণের উপস্থাপন l প্রতিটি শব্দ পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায় l  


শেষ উপন্যাস 'জোছনা ও জননীর গল্প’ l লেখক কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ l 

হুমায়ূন আহমেদ সম্বন্ধে একটু বলি l তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আটটি উপন্যাস রচনা করেন। এগুলো হলো- শ্যামল ছায়া (১৯৭৩), নির্বাসন (১৯৮৩), সৌরভ (১৯৮৪), ১৯৭১ (১৯৮৬), আগুনের পরশমণি (১৯৮৮), সূর্য্যের দিন (১৯৮৬), অনিল বাগচীর একদিন (১৯৯২) এবং জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প (২০০৬)। 

এই আটটি উপন্যাসে ঔপন্যাসিক বিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে ধরার চেষ্টা করেছেন। শেষের দিকে লেখা 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল। এখানে পাই নয় মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য, বিবরণ, ঐতিহাসিক চরিত্র ও তার ভূমিকা ইত্যাদি l নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণকে উপজীব্য করে লেখক  এই দীর্ঘ উপন্যাসটি লিখেছেন । একাত্তরের পুরো ৯ মাসের গল্প পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসে। লেখকের চিরায়ত গল্প বলার সৌন্দর্য এ উপন্যাসেও যে পাঠক উপভোগ করেন, তা বলা বাহুল্য।


'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসটি প্রসঙ্গে বলার এই উপন্যাসে একটি বিষয় আছে যা অন্য মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসগুলিতে নেই, এবং একটি বিষয় নেই যা অধিকাংশ উপন্যাসে আছে l যেটি আছে সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান ও আত্মবলিদানের স্বীকৃতি, যা অন্য বহু ঔপন্যাসিক এড়িয়ে গেছেন l কেন এড়িয়ে গেছেন ?  হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাসের পূর্বকথা অংশে নিজেই উত্তর দিয়েছেন, "ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছোট করে দেখানোর একটি প্রবণতাও আমাদের আছে l আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে কেউ যদি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ও ছোটগল্প পড়ে যুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা করতে চায় তাহলে তারা ভারতীয় সেনাবাহিনী বিষয়ে কিছুই জানবে না l আমাদের গল্প উপন্যাসে বিদেশী সৈন্যবাহিনীর বিষয় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত l লেখকরা হয়তো ভেবেছেন এতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের  গৌরবের হানি হবে l

 ঋণ স্বীকারে অগৌরবের কিছু নাই l মহান জাতি এবং মহান মানুষরাই ঋণ স্বীকার করেন l"


হুমায়ুন আহমেদ লেখক হিসাবে, মানুষ হিসাবে মহান বলেই তাঁর উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদান ও তাঁদের আত্মবলিদানের বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপিত করেছেন l তিনি তো ভারতীয় সেনাবাহিনীর যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তার একটি তালিকাও জুড়তে চেয়েছিলেন l তার জন্য সাড়ে পাঁচশত পৃষ্ঠার বইটি আরো একশো পাতার মতো বড়ো হতো l কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নামও থাকতো l কিন্তু পারেন নি কারণ সমস্ত শহীদের নাম তিনি পান নি l যুদ্ধ শেষ হবার তেত্রিশ বছর পরেও সরকার, প্রশাসন সেই তালিকা শেষ করতে পারে নি l এখনও তালিকা তৈরি চলছে l 


আর যে বিষয়টি এই উপন্যাসে নেই অথচ অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে আছে তা হলো পাক সেনাবাহিনী কর্তৃক নারী নির্যাতনের বিবরণী l লেখক তার কারণ হিসাবে নিজে বলছেন, "আমার এই বইটির অসম্পূর্ণতার মধ্যে একটি হলো আমি পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত নারীদের বিষয়টি আনতে পারি নি l বিষয়টি এতই স্পর্শকাতর এবং এতই কষ্টকর যে কিছুতেই লিখতে পারলাম না l আশা করছি অন্যরা লিখবেন l তাদের কলমে এইসব হতভাগ্য তরুণীর অশ্রুজল উঠে আসবে l"


হুমায়ুন আহমেদ এই উপন্যাস প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি ইতিহাস লেখেন নি, উপন্যাস লিখেছেন l তবে তিনি চেষ্টা করেছেন ইতিহাসের কাছাকাছি থাকতে, ইতিহাসের প্রতি সত্যনিষ্ঠ থাকতে l বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের দলিলের প্রথম সাতটি খন্ড তিনি পড়েছেন l নিজের বিচার বিবেচনা সাপেক্ষে সেই তথ্য লেখায় এনেছেন l পড়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে প্রকাশিত অন্য উপন্যাসগুলি l রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর লেখা 'একাত্তরের দশমাস' গ্রন্থটি থেকেও তিনি তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন l সেই সময়ের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলি তাঁর উপন্যাসে এসেছে l সেই চরিত্রগুলির সৃষ্টিতে প্রয়োজনে তিনি লেখকের স্বাধীনতাও ব্যবহার করেছেন রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে, 

"সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যা তা সব সত্য নহে 

কবি, তব মনোভূমি রামের জনম স্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো l"


'সাড়ে তিন হাত ভূমি'’ উপন্যাসের লেখক ‘ইমদাদুল হক মিলনের সঙ্গে হুমায়ুন আহমেদ এর একটি কথোপকথনে হুমায়ুন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা তাঁর উপন্যাসগুলির মধ্যে মূল সুরটা কী তার উল্লেখ করেছেন l হুমায়ূন আহমেদ বলছেন একদল মুক্তিযোদ্ধা, যারা যুদ্ধ করছে, তাদের প্রচণ্ড ভালোবাসা দেশের জন্য এবং দেশের জন্য যে কোনো সময় তারা তাদের জীবন বিসর্জন দিতে তৈরি- তাদের সেই ডেডিকেশন, সেটাই মূল সুর।


আবার একদল মানুষের কথা তিনি লিখেছেন, যারা যুদ্ধে যেতে পারেনি। একজন খোঁড়া লোক, সে কিন্তু ঘরে বসা, যুদ্ধে যেতে পারছে না। তারপরও তার সমস্ত মন, সমস্ত ইন্দ্রিয়, সমস্ত শরীর কিন্তু পড়ে আছে যুদ্ধের ময়দানে। সে মানসিকভাবে একজন যোদ্ধা। একদল যারা সরাসরি যোদ্ধা, আরেক দল যোদ্ধা, যারা মানসিকভাবে যুদ্ধ করছে। এটাও একটা মূল সুর l 


কিশোর উপন্যাস :

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে কিছু কিশোর উপন্যাসও রচিত হয়েছে l মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে এই  উপন্যাসগুলিরও ভূমিকা আছে। রাবেয়া খাতুনের ‘একাত্তরের নিশান’,  পান্না কায়সারের ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’, শওকত ওসমানের ‘পঞ্চসঙ্গী’,

শাহরিয়ার কবিরের ‘ভয়ঙ্করের মুখোমুখি’, মঞ্জু সরকারের ‘যুদ্ধে যাবার সময়’, ফরিদুর রহমানের ‘দিন বদলের ডাক’, মমতাজউদ্দিন আহমদের ‘সজল তোমার ঠিকানা’ এমন কিছু উপন্যাস l এসব উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা পায় । খুঁজে পায় স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কিশোর উপযোগী উপন্যাসগুলি বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন।


গবেষণাপত্র : ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উপন্যাস’ : ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উপন্যাস’ শীর্ষক গবেষণা করেছেন l  তিনি দেখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহিত্যের এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধের উপাদানকে ব্যবহার করে কথাসাহিত্যের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরিতে সমর্থ হয়েছেন।’ 

১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৯ এই যে সময়কাল, এই পর্বে রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে থেকে চব্বিশজন ঔপন্যাসিকের সাতান্নটি উপন্যাসকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন।

সেখানে আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’,  সেলিনা হোসেনের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’, শওকত ওসমানের ‘‘নেকড়ে অরণ্য’ প্রভৃতি  উপন্যাসগুলি আছে l 


এই গবেষণাপত্রে তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কথাচিত্রের বিবর্তন, বিকাশ, গতিমুখ ও প্রবণতাকে শনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসগুলোকে তিনি সত্তর, আশি ও নব্বই দশক শীর্ষক তিনিটি অধ্যায়ে ভাগ করে বিশ্লেষণ করেছেন। উপসংহারে উল্লেখ করেছেন দশকভিত্তিক উপন্যাসের প্রবণতা। তাঁর কথায়, 


‘সত্তর দশকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধকালীন রক্তাক্ত সময় ও সমাজবাস্তবতা, যুদ্ধের বিভীষিকা, ব্যক্তিমানসের নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং প্রত্যক্ষ বাস্তব অবলোকনই ঔপন্যাসিকদের মানসচিন্তায় ক্রিয়াশীল ছিল।’


‘আশি দশকের মূল প্রবণতায় মুক্তিযুদ্ধোত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার রূপায়ন এবং লেখকদের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধকে নানামুখী দৃষ্টিকোণ থেকে অবলোকনের প্রয়াস লক্ষ্যণীয়।’


‘নব্বই দশকের উপন্যাস রচয়িতারা মুক্তিযুদ্ধের বস্তুগত সত্য উদঘাটনের চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের সমাজ ও জীবনের মর্মসত্য উদঘাটনেই অধিক তৎপর ছিলেন। সেজন্যই মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনাই হয়ে উঠে এই দশকের উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’


সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে অতীতে আরও অনেক গবেষণা হয়েছে। যেমন, আমিনুর রহমান সুলতানের ‘বাংলাদেশের কবিতা ও উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, শহীদ ইকবালের ‘রাজনৈতিক চেতনা: বাংলাদেশের উপন্যাস’, সাহিদা বেগমের ‘কথাসাহিত্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’, নূরুউল করিম খসরুর ‘উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ’ ইত্যাদি অন্যতম।


মুক্তিযুদ্ধ ও পশ্চিমবঙ্গ : 

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আলোড়িত করেছে পশ্চিম বাংলার লেখকদেরও। তার মধ্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘১৯৭১’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

১৯৭১ সালে কলকাতার মিত্র এন্ড ঘোষ থেকে প্রকাশিত হয় তারাশঙ্করের এই উপন্যাস।

 এখানে উঠে এসেছে পূর্ববাংলায় বাংলাভাষার দাবি, মুজিব প্রসঙ্গ, পুরোনো পল্টনে শ্রমিক ফেডারেশনের মিটিং, ভুট্টোর ঘাড় হেঁট করে ফিরে যাওয়া, জামাতে উলেমার দালালি, আছে দেশে মার্শাল ল জারি, টিক্কা খাঁর কথা, মুজিব নগরে বাংলাদেশ সরকার তৈরির কথা। মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতার অবস্থান, শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত বাঙালিদের জীবনযাত্রাও উঠে এসেছে।


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "পূর্ব পশ্চিম" উপন্যাসও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ ছুঁয়ে গেছে l 


উপসংহার :

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের প্রেরণা। দমিত, দলিত জনগোষ্ঠীর আত্ম-আবিষ্কারের নাম মুক্তিযুদ্ধ। এই ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নির্মম ও নৃশংস অত্যাচারের কাহিনী। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসনবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে এবং আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক জীবনের মতো শিল্পসাহিত্যের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের সৃজনশীল সাহিত্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। 


তথ্যসূত্র : 

১) দৈনিক সংগ্রাম : "বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ : আহমদ মনসুর : শুক্রবার ১৬ আগস্ট ২০১৩,  প্রিন্ট সংস্করণ

২) কালের কণ্ঠ ২০ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০

মুক্তিযুদ্ধের ১০ উপন্যাস : মাহমুদ শাওন

৩) বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ : চৌধুরী শাহজাহান শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ : 

৪) প্রবন্ধ : বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ : ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর. কম 

৫) গবেষণাপত্র : "মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের উপন্যাস" - চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ 

৬) মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে লিখিত প্রবন্ধে আলোচিত উপন্যাসসমূহ

৭) মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ও হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’ প্রকাশ: ২০১৭-১২-১৫ ৮:৩৩:৫৮ এএম, মুম রহমান | রাইজিংবিডি.কম



---------------------------------------------------------------------

কবি লেখকদের দায়বদ্ধতা
          

কবি লেখক লেখেন তাঁর ভেতর থেকে উঠে আসা তাগিদে l সকলে লেখেন না l যারা লেখেন তারাও সবাই একরকম তাগিদ অনুভব করেন না l লেখা একটি সাধনা এবং লেখকভেদে এই সাধনার রকমফের আছে l প্রাথমিকতা একেকজনের কাছে ভিন্ন ভিন্ন l প্রতিভার চরিত্রও বিভিন্ন রকমের l সবাই একরকম হতে পারেন না l দায়বদ্ধ সবাই l কিন্তু একেকজন লেখক একেক রকম দায় অনুভব করেন l বা হয়ত সচেতনভাবে কোনো দায় অনুভব করেন না l এমনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেখেন l লেখার নানা উদ্দেশ্য থাকে l বিনোদনের জন্য, নির্মল সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য, আবার সচেতনভাবে সমাজ সংশোধনের মানসিকতা নিয়ে l 


'ঐকতান' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ একইসঙ্গে দুটো কথা বলছেন l প্রথমে বলছেন


"আমি পৃথিবীর কবি, যেথা তার যত উঠে ধ্বনি

আমার বাঁশির সুরে সাড়া তার জাগিবে তখনি," 


পরের পংক্তিগুলিতেই বলছেন, 


"এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক-

রয়ে গেছে ফাঁক।" 


ঠিক এই সুরেই কবিগুরু তাঁর ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার কথা নানা কবিতায় নানা কথায় তুলে ধরেছেন 


'এবার ফিরাও মোরে' কবিতার শুরুতে বলছেন, 


"সংসারে সবাই যবে সারাক্ষণ শত কর্মে রত,

তুই শুধু ছিন্নবাধা পলাতক বালকের মতো

মধ্যাহ্নে মাঠের মাঝে একাকী বিষণ্ন তরুচ্ছায়ে

দূরবনগন্ধবহ মন্দগতি ক্লান্ত তপ্তবায়ে

সারাদিন বাজাইলি বাঁশি।" 


একটু পরেই বলছেন, 


"এবার ফিরাও মোরে, লয়ে যাও সংসারের তীরে

হে কল্পনে, রঙ্গময়ী! দুলায়ো না সমীরে সমীরে

তরঙ্গে তরঙ্গে আর, ভুলায়ো না মোহিনী মায়ায়।

বিজন বিষাদঘন অন্তরের নিকুঞ্জচ্ছায়ায়

রেখো না বসায়ে আর।"


দায়বদ্ধতার প্রশ্নে এই দ্বিধা, সংশয় বরাবর রবীন্দ্রনাথকে ভাবিত করেছে l তুলনায় নজরুল ছিলেন সংশয়হীন l নিজেকে তিনি প্রকাশ করেছিলেন এইভাবে, "আমি যুগের কবি নই, আমি হুজুগের কবি"। নজরুল বলতে চেয়েছিলেন, যে দক্ষতার গুণে একজন কবি যুগ যুগ ধরে টিকে থাকেন, সেই গুন তাঁর নেই। তাঁর যেটা আছে সেটা হলো বর্তমান সময়কে ধরে তীব্র ঝাঁকুনি দেয়ার ক্ষমতা l সেটাই তিনি করে গেছেন। 


'আমার কৈফিয়ত' কবিতার অন্তিম অংশে কবি বলছেন,

"বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে,

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে,

রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা,

তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,

বড় কথা বড় ভাব আসেনাক' মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে !

অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে !

পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,

মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে ।

প্রার্থনা ক'রো-যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটী মুখের গ্রাস,

যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ ।"


তারপরেও কবি নজরুল টিকে আছেন যুগ যুগ ধরে। প্রশ্ন হলো, যদি তাঁর রচনা হুজুগে সৃষ্টি হয়ে থাকে, তবে তা কেন আজও বেঁচে আছে ? কেন মরে যায়নি ? আর এই হুজুগটাই বা কি ছিলো ?


কবি নজরুলের সাহিত্যচর্চার স্থায়িত্ব ছিল খুব কম,  মাত্র চব্বিশ বছর। ১৮৯৯ সালে জন্ম, ১৯৭৬ সালে মৃত্যু, ৭৭ বছরের তাঁর আয়ুষ্কালের শেষ ৩৬ বছর ছিল সৃষ্টিহীন l ১৯৪২ সালে এক ভয়াবহ দুরারোগ্য অসুস্থতার (পিক্‌স ডিজিজ) মধ্যে দিয়ে নতুন করে কিছু ভাবা বা সৃজন করার ক্ষমতা হারান তিনি l তখন থেকে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি l


তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটা সত্য যে তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। কিন্তু এর বাইরেও তাঁর অনেক ধ্রুপদী রচনা রয়েছে l রয়েছে তিন হাজারের মতো গান l


সময়টা ছিল পরাধীনতার, নিপীড়ন, নির্যাতন ও দাসত্বের। ঐ সময়টার দাবী ছিল এইসব অন্যায়-দুঃশাসনের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া। তাই তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, গল্প সকল সৃষ্টির মধ্যে এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এই সমসাময়িকতার দাবীকেই তিনি হুজুগ বলে অভিহিত করেছেন এবং এই হুজুগের লেখনী দিয়েই তিনি তাঁর সময়কে তীব্র ঝাঁকুনি দেয়ার চেষ্টা করে গেছেন। তাই নিজেকে হুজুগের কবি বলে অভিহিত করতে তিনি দ্বিধা করেননি। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল l ইংরেজ বিদেয় হলো। দাসত্ব গেল ঘুচে। হুজুগ তো আর থাকলো না l নজরুল কি তাহলে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলেন ? কিন্তু বাস্তবে তা ঘটলো না। যত দিন যেতে লাগলো নজরুল ততো বেশী প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে লাগলেন বাঙালীর কাছে। 

১৯৭১ সালে নজরুলের চাহিদা অনুভূত হলো প্রবলভাবে। যে নজরুলকে দরকার হয়েছিল ১৯৪৭ সালের আগে, ১৯৭১ সালে সেই নজরুলের জনপ্রিয়তা আকাশ স্পর্শ করলো ওপার বাংলায়। নজরুল স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধলেন নির্যাতিত মানুষের মুক্তিতে উদ্দীপনা যোগাতে l নজরুল অত্যাচারী, শোষক রাজা-হটানো বিপ্লবের আর এক নাম । সেই সূত্রে ওপার বাংলায় আরেক প্রস্থ রাজা বদল হলো l স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলো l


১৯৭১ এর প্রয়োজনও মিটেছে l প্রশ্ন, তাহলে কি নজরুল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছেন ? এর উত্তর হলো, প্রথমত, সমাজ থেকে শোষণ অত্যাচার এখনও পুরোপুরি মুছে যায় নি l যতদিন তা মুছে যাচ্ছে না, ততদিন নজরুল প্রাসঙ্গিক থাকবেন l 

দ্বিতীয়ত,  হুজুগের লেখা ছাড়াও নজরুলের প্রচুর ভাল ধ্রুপদী রচনা আছে l তার জন্যই তিনি চিরকাল প্রাসঙ্গিক থাকবেন l এছাড়াও যেগুলোকে হুজুগের লেখা বলা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যেও প্রচুর কালজয়ী লেখা রয়েছে l 

আলোচনার মূল বিষয় ছিলো লেখক কবিদের দায়বদ্ধতা l কবি লেখক যে সমাজে বাস করেন, যে সময়ে বাস করেন, সেই সমাজ, সেই সময় কখনো কখনো অস্থির হয়ে ওঠে l বলা যেতে পারে সকল সময়ই কিছু না কিছু কারণে অস্থির l মানুষ যে পেশায় নিযুক্ত থাকেন, মানুষ যে সমাজে বাস করেন সেখানে নিয়ত একটা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তাকে চলতে হয় l এই সংগ্রাম আসে পরস্পরবিরোধী স্বার্থ থেকে l যখন পরস্পরের স্বার্থ মেলে না, কোনো এক পক্ষ তার স্বার্থ আদায় করে নেবার জন্য বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে, তার মধ্যে দুর্নীতির পথ, হিংসার পথ থাকে l দুর্নীতি ও হিংসার পথ অবলম্বন করলে যেটা হয় যে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত, সে ক্ষেত্রে তৃতীয় কোন পক্ষের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে l বলা যায় পুরো সমাজেরই স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে l

আমাদের বহুত্ববাদী এই যে সমাজব্যবস্থা, সেখানে একটি পক্ষের সঙ্গে অপর একটি পক্ষের সংঘাত লাগলে অন্য বহু পক্ষের আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে l এবং সামগ্রিকভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রভাব পড়ে l যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হয়, অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয় l এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও আছে l কারণ রাষ্ট্রও একটি পক্ষ l

এমন সংকট যখন দেখা দেয় সেই সময়ে যারা লেখক কবি থাকেন তাদের কলম থেকে বেরিয়ে আসে, প্রথমত সেই সময়ের একটি বস্তুনিষ্ঠ চিত্র এবং দ্বিতীয়ত, তার থেকে মুক্তির পথ l এক্ষেত্রে লেখক, কবিকে সততার সঙ্গে সময়কে পর্যবেক্ষণ করতে হয় এবং সাহসের সঙ্গে এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে সমাজকে তার সঠিক পথ চিনিয়ে দেবার জন্য লেখনীর কাজ পরিচালনা করতে হয় l 

কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি ? আমরা যে সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি বা বিভিন্ন সময়ে চলে থাকি, সেই সময়ে স্বাধীন চিন্তা, স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যা দেখা যাচ্ছে l নির্ভয়ে লেখার পরিবেশ নেই l একটা আতঙ্কের পরিবেশ রচনা করা হয়েছে l পত্রপত্রিকা, সংবাদপত্রগুলি যে সঠিকভাবে ও নিরপেক্ষভাবে বিষয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন সেই পরিবেশ যেন দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে l সংবাদপত্রগুলি একটি গোষ্ঠীর দখলে চলে যাচ্ছেন l একটা বিশেষ দল ও মতের পক্ষে সমস্ত খবরা-খবর লেখালেখি প্রকাশিত হচ্ছে l প্রথম শ্রেণীর পত্রিকাগুলিকে দেখা যাচ্ছে তারা যেন এই বিষয়গুলোতে একটি পক্ষ অবলম্বন করছেন l এমন অবস্থায় সত্তিকারের একটা নিরপেক্ষ অবস্থান কবি লেখকদের কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে l

এটা কিন্তু একটা বড় সংকট l চারিদিকে অন্যায় অত্যাচার শোষণ নিপীড়ন পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে সেটা একটা সমস্যা l কিন্তু তার থেকেও বেশি সংকট হচ্ছে সেই সংকটকে যথাযথভাবে অন্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারার অক্ষমতা এবং যথার্থ পথনির্দেশ দেবার মত সাহসের অভাব l

এক্ষেত্রে লেখক-কবিদের একটা বিরাট সামাজিক দায়িত্ব আছে এবং এটা চিরকালই দেখা গেছে যে গণ আন্দোলনের পরিণতিতে অত্যাচার শোষণের এক একটি পর্ব যখন সমাজ থেকে মুছে গেছে সেক্ষেত্রে লেখক-কবিদের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল l যে সমস্ত কবি লেখক নিজের সময়ের দ্বারা আতঙ্কিত না হয়ে দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়েছেন এবং যথার্থ পথে লেখনী পরিচালনা করেছেন তারাই কালজয়ী লেখক হয়েছেন এবং তাদের লেখাগুলোই সময় ধরে রেখেছে l সময়ের প্রাচীর ডিঙিয়ে আমাদের মহাসময়ের জন্য লিখে যেতে হবে এবং বর্তমান সময়ের প্রকৃত অবস্থার সঠিক চিত্রন করতে হবে এবং সেই অস্থিরতা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বার করতে হবে l সমাজ সংস্কারের জন্য মানুষের মন সংস্কারের প্রয়োজন l তার জন্য কবি-লেখকদের নির্ভয়ে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে l

 

যখন লেখক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণি নিরবচ্ছিন্ন সংস্কারচিন্তা ও কর্ম থেকে সরে আসেন, তখন সেটা সমাজের পক্ষে খুব বড় দুর্দিন। তখন মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার দুঃশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। মানুষের সামাজিক চরিত্রে সংস্কারপ্রক্রিয়া চালু রাখার কাজটা লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের। এই কাজ রাজা হটানো বিপ্লবের চেয়েও জরুরী ও উন্নত। একটা সর্ববঞ্চিত জাতি তার বঞ্চনা থেকে উঠে আসার জন্যে যে জিনিসটা লেখক কবিদের কাছে দাবী করতে পারে সেটা আর কিছু না, সেটা তার আবহমান কালের সামাজিক চরিত্রের সংস্কার। সেই সংস্কারপ্রক্রিয়া নিরবিচ্ছিন্নভাবে লেখক কবিদের দ্বারা চালিত হয় l   

-----------------------------------------------------------------