মাথা নিচু করে প্রতিবাদহীন মানুষ হয়ে সবার সবটা মেনে নিলে , কেউ তোমার শত্রু হবে না সত্যি এবং অবশ্যই তোমার বন্ধুর সংখ্যাও বেড়ে যাবে অনেক ....
কিন্তু খোলা মাঠকে জঞ্জাল মুক্ত না করলে গাছের সাথে সাথে আগাছাদের ভিড়টা অধিক বেড়ে যায় তাতে মাঠকে উপর থেকে যত সবুজই লাগুক না কেনো মাঠের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে এটা বলা যায় না ।উপরন্তু মাঠে যে সুগন্ধী ফুলের গাছটার জন্য মাঠ প্রশংসা পেতো সেই গাছটিকে একলা পেয়ে আগাছারা সবাই মিলে ঢেকে দেবে । তখন মাঠটি বাগানের পরিবর্তে আগাছার জঙ্গল হয়ে ওঠে যা অসম্মানের এবং অবশ্যই অমর্যাদার ।
অবশ্য মর্যাদা এবং সম্মান ব্যক্তি বিশেষে , সামাজিক -রাজনৈতিক -অর্থনৈতিক ভিন্নতায় বিভিন্ন হতে পারে ।
শুধু ভিন্ন মতাদর্শী বলে কোনো রাজনৈতিক প্রভু তার আনুগত্যহীন কবিকে যদি সম্মান দিতে অস্বীকার করে তখন সে অসম্মান গাহ্য নয় । ব্যক্তিগত মতবিরোধ যখন যোগ্য প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে তখন গুণীর অমর্যাদা হয় না । বরং ভয়ে বা দক্ষিণা বা অনুগ্রহ পাওয়ার লোভে সে কবি যদি পেন ছেড়ে 'ঝাণ্ডা 'হাতে তুলে নেয়, গায়ক গান ছেড়ে নেতার স্তব ধ্বনি দিতে শুরু করে তবে সেটাই অনভিপ্রেত , সেটাই শিল্পের এবং সৃষ্টির অপমান ।
তা বলে শুধু মাথা নিচু করে লিখলেই চলবে না। তেমন সময় এলে দেশ ও দশের প্রয়োজনে কবিকে অবশ্যই পথে নামতে হবে , গায়ককে মিছিলে হেঁটে গান গাইতে হবে । সমাজের প্রতি ,সহ নাগরিকদের প্রতি কর্তব্য পালন করাটাও দায়িত্ব ।দেশের প্রতি শিল্পীরও দায় আছে । অত্যাচার মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সদা জাগ্রত লেখক শুধু লিখে নয় মিছিলের একদম প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেবে , যে কোনো আগ্রাসনের বিপক্ষে(বিশেষত ধর্মীয় ) ,প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ....
সংখ্যাধিক্কের কাছে আত্মসমর্পণ বা গতানুগতিকতাকে অন্ধের মতো বয়ে নিয়ে চলা রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হলেও সেটা কোনদিন-ই শিল্পীর লক্ষ্য নয় ।
আমার জীবনের ক্ষেত্রে আমি তার প্রমাণ ।আমার ডান দিকে ছিলেন গুটি কতক মানুষ যারা আমাকে প্রায়ই সমালোচনা করতেন কিন্তু বাঁ দিকে ছিলেন প্রচুর মানুষ যারা আমাকে সর্বদা প্রশংসায় ভরিয়ে দিতেন । এতএব আমি বাঁ দিকে ঘেসতে ঘেসতে ডান দিকের থেকে অনেক দূরে চলে আসি , সহজেই হাততালি কুড়ানোর লোভে আমিও সস্তায় পরিণত হই । এর ফলে বিস্তার পেয়েছি বটে তবে পরিপুষ্ট হতে পারিনি । অনেক গুলি কবিতা আমি প্রসব করেছি সত্য কিন্তু একটাও সু সন্তান হয়ে ওঠেনি , হুজুগে মেতেছি খালি কিন্তু যুগের হতে পারিনি ।
ডানদিকে থাকা দু চারজনের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে ছিলাম কারন সংখ্যালঘুদের কথায় কি যায় আসে ? এ ছাড়া তাঁরা আমায় বলেছিলো -'রাজা তোর কাপড় কোথায়?'আমি রুষ্ট হয়েছিলাম যদিও পরে বুঝেছি -- কাপড় আমি সত্যিই পরে নেই । এখন একবাক্যেই স্বীকার করি যারা শুধু প্রশংসা করে সংখ্যায় তাঁরা যতবেশিই হোক না কেনো , তাঁরা মিথ্যাচার করেন কিন্তু যারা সমালোচনা করেন তাঁরাই জীবনের প্রকৃত শিক্ষক তারাই আত্মীয় ।আর আমি অতিথিকে মধ্যমণি করতে গিয়ে আত্মীয়কে করেছি অনাদর ।
স্বভাবতই আত্ম সম্মান বোধ সম্পন্ন মানুষের জায়গাটা সমগ্র পৃথিবী জুড়েই কমে এসেছে ।চারি পাশেই চলছে ' মাত্স্যন্যায়' । সংবিধানে স্পষ্টত উল্লেখ আছে ,বিরোধীরা গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ । যারা সংবিধান কস্মিণ কালেও পড়েন নি কথাটা তারাও জানেন কারন বিরোধী শিবির প্রতিমুহূর্তে এত বার , এত জোরে কথাটা বলে চলেছে যে সরল নিরক্ষর জনগণেরও কান পর্যন্ত কথাগুলি পৌছে গেছে , কিন্তু যখন আজকের বিরোধী , কাল সরকারে আসে তখন সে নিজেই কথা গুলি ভুলে যায় ।পরিস্থিতি এমন যিনি জানেন বেশি তিনি মানেন কম ।
এই মানা না মানা নিয়েই জীবন । প্রেমিকা যদি স্ত্রী হয়ে ওঠে এবং সেই ভিত্তিটাই যদি কাব্য লেখার একমাত্র শর্ত হতো তবে তা হতো দৈনন্দিন জীবন গাঁথা তাতে শব্দ থাকতো ছন্দ থাকতো , বিজয় করবার গর্ব থাকতো , প্রাপ্তির সুখ থাকতো কিন্তু বিচ্ছেদের করুন রস থাকতো না , মিলনের উন্মুখতা থাকতো না , উদাসী মনের কল্পিত কল্পনা থাকতো না, না পাওয়ার ব্যথা থাকতো না..,আর বিরহ- বঞ্চিত সাহিত্য কক্ষনো চিরকালীন সাহিত্য হতে পারে না । বুদ্ধির চেয়েও মন ও আবেগ শিল্পে বেশি সমাদৃত ,সর্বোপরি কাঙ্খিত ।
তাই হতে হবে নম্র তবে তা সত্যের কাছে , হতে হবে শিষ্য তবে তা প্রকৃত শিক্ষিকের কাছে , হতে হবে ধার্মিক অবশ্যই সঠিক গুরুর কাছে ।
অর্থাৎ এক জন সত্য কারের বন্ধু হাজারটা মুখোশ ধারী বন্ধুর চেয়ে দামী।
copyrights@ Mantu Haldar
--------------------------------------------------------------
শ্রী মন্টু হালদার
কবি-প্রাবন্ধিক
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ
---------------------------------------------------------------
Voice Literary Blog
Editor - Bijoy Sarkar
Sub-Editor - Monowar Hossain
..... Chief Organizer.....
Chandan Mahanta
Voice Literary-Cultural Organization
---------------.------Voice------------------
No comments:
Post a Comment