Saturday, 16 May 2020

আকাঙ্খায় পূর্ন প্রাপ্তি

"আকাঙ্খায় পূর্ন প্রাপ্তি" 
    ~ দেবযানী ঘোষাল


বহু দিনের সুপ্ত বাসনা ছিল গদাধর আর মা সারদার জন্মের পবিত্র স্থান অন্তত একবার যেন চাক্ষুস করি l সুযোগটা এসেই গেল সেদিন l আমাদের ওয়ার্ড থেকে প্রায় দুশো জন তিনটে ট্যুরিস্ট বাসে করে রওনা দিলাম কামারপুকুর আর জয়রামবাটির উদ্দেশ্যে l গেছিলাম আমি নীচের ঘরের জেঠিকে নিয়ে পূণ্যভূমি  দর্শন করতে l বয়ঃজ্যেষ্ঠ মানুষকে এসব জায়গায় নিয়ে যাওয়ায় একটা অন্য অনুভূতী হয় l বাস ছাড়লো ভোর সাড়ে পাঁচটায় l মিনিট দশেক পরেই ব্রেকফাস্ট প্যাকেটে করে l বান পাঁউরুটি , ডিম সেদ্ধ , অমৃত্তি আর হলদিরামের চানাচুড় ভরা প্যাকেট l সাথে মিনারেল ওয়াটার l প্রত্যেকের একটা করে বোতল l প্রায় ঘন্টা খানেক পর ওগুলো একটু একটু করে সাবার করতে লাগলাম l শহর পেরিয়ে গ্রাম , দুপাশে চাষের জমি পেরিয়ে যাচ্ছে সাই সাই করে l রোদের তাপও বাড়তে লাগলো l নিত্য কর্মরত মানুষের রোজনামচা আহরন করতে করতে অবশেষে পৌঁছালাম , আমার রুন আকাঙ্খিত গন্তব্যে l প্রথমেই জয়রামবাটি l বাস স্ট্যান্ড থেকে খানিকটা হেঁটে বিশালাকার ফটকে প্রবেশ করলাম l মায়ের বাড়ি l মায়ের জন্মস্থানের ওপরেই এখন পাকা মন্দির l সেখানে শ্বেত পাথরের অপরূপ শোভায় শ্রী শ্রী মা বিদ্যমান l মুখ , হাত , পা  ধুয়ে মন্দিরে ঢুকে বসলাম খানিকক্ষন প্রার্থনার জন্য l শ্বেত পাথরের মেঝেতে বসে মাতৃ মুর্তি দর্শনে প্রাণ জুরিয়ে গেল l কিছু পরে ঘুরে দেখলাম , মায়ের প্রকৃত কুটির l মাটির দেওয়াল , মেঝে আর খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ছোট্ট ঘর নিয়ে তিন চারটে ঘর l কোনটা সারদার মা ( শ্যামাসুন্দরী ) য়ের ঘর , কোনটা অন্য ভাইদের l পশ্চিম দিকে কাকা জ্যাঠাদের ভিটে l মন্দির থেকে সারদামনির ঘর অবধি যেতে বিশালাকার ফুলের বাগান l রঙিন ফুলেদের বাহারী রং যেন প্রানবন্ত মায়ের স্নেহ স্পর্শে l এগারোটায় ভোগ বিতরন l মন্দিরের পাশেই লাইন দিতে হল প্রায় ঘন্টা খানেক l ঠিক এগারোটা l গেট খুললো l জুতো খুলে প্রবেশ lএকসাথে প্রায় পাঁচশো মানুষের ব্যবস্থা l লোহার বেঞ্চ , স্টিলের থালা গ্লাশ l অসম্ভব ভালো লাগলো ভোগ গ্রহনের প্রাথমিক পর্ব দেখে l প্রত্যেক সেবাইত প্রার্থনা সঙ্গীতের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে অন্ন নিবেদন l প্রত্যেক দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে পরলো নিবেদনের জন্য l প্রত্যেকের খাবার কুপনে লেখা ছিল , আগে ঈশ্বরকে নিবেদন করে তারপর নিজে গ্রহন l মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আগুন গরম সাদা ভাত , ডাল , দুররকম তরকারি , চাটনি আর পায়েস l খাওয়া শেষে নিজের নিজের থালা একটা বিশালাকার জায়গায় রাখতে হয় l

হাত মুখ ধুয়ে একটু জল দিলাম মাথায় l একটু টিপ টাপ হয়ে , ফটোসেসন পর্ব l খানিক পরে মা জগদম্বা ( জগদ্ধাত্রী ) দর্শন l একটু হাঁটা পথ l পাড়ার মধ্যে l শুনেছি ঐ থানের মাটি মুখে দিয়ে নাকি সারদা মায়ের কঠিন অসুখ সেরেছিলো l একমুঠো মাটি  কাগজে টোপলা করে নিয়ে এলাম l একটু টুকটাক কেনাকাটি করে দুপুর আড়াইটে নাগাদ রওনা হলাম কামার পুকুরের উদ্দ্যেশ্যে l মিনিট কুড়ির মধ্যে পৌঁছালাম সেখানে  l সারে তিনটের সময় গেট খুললো l ঢুকেই বিশাল আম গাছ l ঠাকুরের নিজের হাতে লাগানো l একটু এগিয়ে ডানদিকে ঠাকুরের জন্ম ভিটে l ছোট ছোট খড়ের ছাউনি দেওয়া তিন চারটে মাটির ঘর , রঘুবীরের  ঘর l ঠিক যেখানে ঠাকুর জন্মেছিলেন , সেখানে মন্দির স্থাপন হয়েছেl শ্বেত পাথরের মুর্তিতে ঠাকুর বিরাজমান l বেশ ভিড় l একবার তো জেঠি হারিয়ে গেল l অনেক পরে খুঁজে পেলাম সেখানে , যেখানে ঠাকুরের জন্ম বৃত্যান্ত দেওয়ালে চিত্রায়িত হয়েছে l বড় ইচ্ছা ছিল , চিনু শ্যাকারির বাড়িটা একটু দর্শন করি l যিনিই একমাত্র প্রথম অনুধাবন করেছিলেন যে ঠাকুর আমার তোমার মত সাধারন নয় l ঈশ্বরের অবতার l কপালে নেই দেখা l সময় হয়েছে ফেরার l ওখানকার আঁখের রসের স্বাদ কখনো ভুলবো না l দুজনে তেষ্টা মেটালাম l আর নিয়ে এলাম কিলো খানেক ওখানকার শ্পেশাল সাদা বোঁদে l বাস ছাড়লো সন্ধ্যে সাড়ে ছটায় l সাতটা নাগাদ বাস থামিয়ে বিকেলের টিফিন l ঠোঙায় করে মুড়ি , আলুর চপ আর বেগুনী l তার সাথে চা l আবার বাস এগোতে লাগলো l বাড়ি পৌঁছালাম সাড়ে দশটা l শান্ত হল মন বহু আকাঙ্খিত তীর্থস্থান ভ্রমণ করে ll

Copyrights@ Debjani Ghoshal 
---------------------------------------------------------------

শ্রীমতি দেবযানী ঘোষাল 
কবি-লেখিকা 
---------------------------------------------------------------

       Voice Literary Blog 
       Editor - Bijoy Sarkar 

Sub-Editor - Monowar Hossain 

       ..... Chief Organizer.....
           Chandan Mahanta  

Voice Literary-Cultural Organization
---------------------Voice-----------------


No comments:

Post a Comment